আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলবদর প্রধান নিজামীর জেল গমন, টরন্টোয় যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবীতে সমাবেশের প্রস্তুতি আর ব্লগের এটিমের জন্মদিন।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

[শিরোনামে তিনটি বিষয় নিয়ে তিনটা ভিন্নভিন্ন পোস্ট হয়তো দেওয়া যেত - কিন্তু ভেবে দেখলাম সবগুলো বিষয়ের সাথে একটা বিষয়ের গভীর যোগসূত্র আছে - তা হলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। তাই একটা পোস্টেই কথাগুলো সেরে ফেলা যাবে বলে মনে করছি। ] বাংলাদেশে গতকাল ৭১ এর পাকিস্থানী সেনাবাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাদানকারী আধা সামরিক বাহিনীর প্রধান এবং বর্তমানে জঙ্গীবাদ আর মৌলবাদের পৃষ্ঠপোষক জামায়াতে ইসলামী নামক একটা আন্তর্জাতিক সংগঠনের বাংলাদেশ শাখার প্রধান দূর্নীতির অভিযোগে আদালতের নির্দেশে জেলবন্ধী হয়েছে। যদিও ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক রাজনীতিক দূর্নীতির অভিযোগে জেলে - তারপরও আলবদর প্রধানে জেলে যাওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটা গুরুত্বপূর্ন ঘটনা বটে। এটা লক্ষ্যনীয় যে - মামলা করার মাত্র ছয় ঘন্টার মধ্যে যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার করতে পুলিশকে সক্রিয় দেখা গেছে - সেখানে আদালত কর্তৃক গ্রেফতারী পরোয়ানার পরও চারদিন পুলিশের নাকের ডগায় বসে সংবাদ সন্মেলন আর আদালতে গিয়ে জামিনের আবেদন করার সময়ও পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকে।

অবশেষ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলায় কি ফলাফল হবে সেটা কোর্টেই নির্ধারিত হবে। তারপর দূর্নীতির অভিযোগে জামাতে শীর্ষনেতা সহ অধিকাংশ নেতারা অভিযুক্ত এবং জেলে। বিগত ৩৪ বছরে পেট্রোডলারের বিরাট বিনিয়োগ করে যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন যেভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে একটা সততার যে বুদবুদ তৈরী করে ধর্মপ্রান জনগনকে বিভ্রান্ত করে ক্ষমতায় যাওয়া যে পরিকল্পনা করছিলো - তা অনেকাংশে তিরোধিত হলো। সতলোকের শাসনের ধূয়া তোলে বিশেষ সুবিধা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছিনা।

তা ছাড়াও বিগত ৩৭ বছরে কমবেশী সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের আদালতে যেতে হয়েছে - কারনে বা অকারনে - কিন্তু অদৃশ্য কারনে জামাত সকল কুকর্মের সহযোগী হয়েও নিজেকে হাঁসের মতো ময়লার উপর ভাসিয়ে রেখেছে। এবার হাঁসটা ময়লা চেহারা আসলেই বের হয়ে এলো। আর দশজন রাজনীতিকের মতো ময়লা গায়েই জনসমক্ষে আসতে হবে ওদের। এখানে লক্ষ্যনীয় যে - রিলিফের ঢেউটিন চুরি অপরাধে এমপি মিজানুর রহমান যখন ধরা পড়ে তখন জামাত দ্রুত মজলিসের সুরার সভা ডেকে তাকে বহিষ্কার করে নিজেদের সাফসাফা ঘোষনা দিয়েছিলো। সর্বশেষ খবর অনুসারে এখন দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত দলপ্রধান নিজামীকে বহিষ্কারের জন্যে সুরার বৈঠক হয়নি - কারন বোধগম্য - ঠক বাছতে গিয়ে গাঁ উজাড় হবার সম্ভাবনা।

(২) টরন্টো প্রবাসী বিশিষ্ট জনের একটা সভায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো আজ। সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধ, সাবেক ছাত্র নেতা আর প্রবাসে থাকা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কয়েকজন কর্মী। তাদের আলোচনার বিষয় ছিলো - দেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবীতে চলমান আন্দোলনের সাথে কিভাবে প্রবাসীদের সম্পৃক্ত করা যায়। দুই ঘন্টা আলোচনার পর কয়েকটা সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। - টরন্টো পাবলিক লাইব্রেরী সিস্টেমে মুক্তিযুদ্ধে দলিল ও প্রামান্য বইপত্র দান করা।

ইতোমধ্যে টরন্টো লাইব্রেরীতে বাংলা বিভাগ চালু হয়েছে। সেই বিভাগকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্যে একটা কর্মপন্থা গ্রহন করা। সভায় উপস্থিত অনেকেই বই দেওয়া অঙ্গীকার করেন - তার মধ্যে সাংবাদিক সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল দশটা বইএর অঙ্গীকার অন্যতম। - আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধাদের একটা সম্বর্ধনার আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করা। - কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত ছাত্রদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সচেতনতা বাড়ানোর একটা পরিকল্পনার প্রস্তাব নেওয়া হয়।

- এই সকল কর্মকান্ড ও মুক্তিযুদ্ধের অনলাইন দলিল একত্রে পাওয়া যাবে এমন একটা ওয়েব সাইট তৈরীর সিদ্ধান্তও গৃহিত হয়। সভায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও সচেতনতা বিষয়কে একটা দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রম হিসাবে বিবেচনা করে একটা কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে সবাই একমত হয়ে আগামী সভায় তা খসড়া আকারে উপস্থাপনের জন্যে কয়েকজনকে অনুরোধ করা হয়। (৩) একটা পোস্টে দেখলাম আজ ব্লগের 'এটিম' এর জন্মদিন। শুভ জন্মদিন এটিম। কাকতালীয় ভাবে আজ আলবদর বাহিনীর প্রধানের জেলগমন দিবসও।

এটিমে সদস্যদের জন্যে নিশ্চয় এক টিকিটে দু্ই ছবি দেখার আনন্দ হচ্ছে! এটিমের ব্লগে কর্মপদ্ধতির বিষয়ে খানিকটা বিতর্ক থাকলেও মুক্তিযুদ্ধ আর রাজাকারী প্রপাগান্ডার বিষয়ে তাদের অনোমনীয় মনোভাব নিশ্চয় সকলের সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। গত বছর মার্চে যখন ব্লগে আসি - তখন মাঝে মধ্যে নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখতে হতো আমি কি বেঁচে আছি না মরে গেছি। এখন লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য আর প্রত্যক্ষদর্শী বেঁচে আছে - এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে জামাত/শিবিরে ব্লগাররা যেভাবে আমাদের মহান অর্জনকে হেয় করতো - বিকৃত করতো - অবাক হয়ে যাওয়া মতো ছিলো বিষয়গলো। ব্লগে বিতর্ক হতে পারে - তাই ছিলো কাম্য - কিন্তু ইতিহাসের বিকৃতি নিয়ে বিতর্ক করার মতো বোকামী আর হয়না। ব্লগে ক্রমাগত শহীদের সংখ্যা, মুক্তিযুদ্ধে চেতনা আর মহানায়কদের বিতর্কিত করে পোস্ট দেওয়া হতো।

প্রথম প্রথম আমিও চেষ্টা করেছি বিতর্ক করতে - তথ্য উপস্থাপন করতে - কিন্তু যারা ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে তাদের পূর্বপুরুষের অপকর্ম আর কূর্কীতিকে আড়াল করার মিশনে নেমেছে - তারা কেন যুক্তি শুনবে! সেই প্রেক্ষাপটে ব্লগে জন্ম নেয় এটিম। যেখানে ইতিহাস বিকৃতি - যেখানে প্রগতি বিরোধী প্রপাগান্ডা - সেখাসেই এটিম। অনেক চড়াইউতড়াই এরপর মাধ্যমে ব্লগের নীতিয় পরিবর্তন এসেছে - দেশ আর ইতিহাস বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহনের ধারা সংযুক্ত হয়েছে। ফলে রাজাকারের সন্তান পরিচয় দিয়ে ব্লগিং আর হাই প্রোফাইল শিবিরের ম্যানুয়াল কপি-পেস্ট ব্লগারদের তেমন সুবিধা করতে দেখা যায় না। ব্লগের একটা বিরাট অংশ এটিমের সমর্থক গোষ্ঠী রূপান্তরিত হয়েছে।

কারন একটাই - এটিমের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনঢ় অবস্থান। একজন সমর্থক হিসাবে আমিও এটিমকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। ছবি কৃতজ্ঞতা - ডেইলি স্টার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.