আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলবদর ছিল জামায়াতের ‘সশস্ত্র শাখা’

পলাতক চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বলেছেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর বাহিনী ছিল ফ্যাসিস্ট জামায়াতে ইসলামীর ‘সশস্ত্র শাখা’। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ছিল এই আলবদর বাহিনী।

ট্রাইব্যুনাল-২ আজ রোববার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। রায়ে মুঈনুদ্দীনকে আলবদরের অপারেশন ইনচার্জ ও আশরাফুজ্জানকে চিফ এক্সিকিউটর বলা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, একাত্তরের ২৯ ডিসেম্বর দৈনিক পাকিস্তান  পত্রিকার এক প্রতিবেদনে আলবদরকে জল্লাদ বাহিনী উল্লেখ করে তাদের ধরিয়ে দিতে বলা হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের নির্মূল করার জন্য বাংলার জঘন্যতম শত্রু ফ্যাসিস্ট জামায়াতে ইসলামী যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল এবং যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আলবদর নামে জল্লাদ বাহিনী গঠন করেছিল, তাদের সম্পর্কে আরও তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। এই জল্লাদদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লালমাটিয়ার শরীরচর্চা কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করা এসব তথ্যে বদর জল্লাদদের আরও কয়েকজনের নাম-পরিচয়-ঠিকানা পাওয়া গেছে...।

ট্রাইব্যুনাল ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত ফক্স বাটারফিল্ডের ‘বাঙালিদের হত্যায় এক সাংবাদিকের হাত রয়েছে’ শীর্ষক প্রতিবেদনের উল্লেখ করেন। প্রতিবেদনটিতে একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে মুক্তি পাওয়া শ্রী চন্দ্রপালের জবানি প্রকাশিত হয়। চন্দ্রপাল বলেছিলেন, ‘...সেখানে আমরা ৪২ জন ছিলাম।

আমাদের সবার হাত ও চোখ শক্ত করে বাঁধা ছিল। বেশির ভাগ মানুষই ছিলেন অধ্যাপক...চিকিত্সক...। আমরা পাশের কক্ষ থেকে চিত্কার-চেঁচামেচি শুনছিলাম। ’ পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এই ভাষ্য প্রমাণ করে মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ছিল আলবদর ও রাজাকারের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও নির্যাতনকেন্দ্র।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, একাত্তরের ১৯ ডিসেম্বর ডেইলি অবজারভার-এ ‘ঠান্ডা মাথায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দায়িত্বশীল গণমাধ্যম ঘৃণ্য অপরাধের স্থানগুলো দেখে নৃশংসতা অনুধাবন করেছে। তারা ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে নির্যাতনের রক্তমাখা কক্ষ, নির্যাতনের উপকরণ দেখে এর পাশবিকতার ভয়াবহতা আঁচ করেছে।

ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সাংসদ জন স্টোনহাউস একাত্তরের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকা পরিদর্শনে আসেন। পরদিন দিল্লি অবজারভার  পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাত্কারে তিনি আলবদর বাহিনীর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের কথা উল্লেখ করেছিলেন। ওই সাক্ষাত্কারে তিনি বুদ্বিজীবীদের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের জন্য আলবদরের দায়িত্বশীল ভূমিকা ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন।

একাত্তরের ৩০ ডিসেম্বর লন্ডনের দ্য টাইমস  পত্রিকায় সাংবাদিক পিটার হ্যাজেলহার্স্টের নেওয়া রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে একমাত্র জীবিত ফিরে আসা দেলোয়ার হোসেনের (রাষ্ট্রপক্ষের ২২তম সাক্ষী) সাক্ষাত্কার প্রকাশিত হয়। সেখানে দেলোয়ার বলেন, ১৪ ডিসেম্বর আলবদররা তাঁকে চোখ-মুখ বেঁধে ধরে নিয়ে একটি কক্ষে বন্দী রাখে। পরে তাঁর চোখ খুলে গেলে তিনি বেশ কয়েকজন নির্যাতিত বন্দীকে সেখানে দেখেন। নির্যাতনের সময় নির্যাতনকারীদের প্রশ্নের জবাবে তাঁদের কেউ অধ্যাপক, কেউ চিকিত্সক, কেউ সাংবাদিক, কেউ আইনজীবী বলে পরিচয় দেন। পরে বাসে করে আহত বন্দীদের একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রায় ১৩০ জন বন্দীকে একটি গাছের নিচে একত্র করা হয়। একপর্যায়ে বন্দীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। কাউকে কাউকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এ সময় তিনি কৌশলে দৌড়ে নদীতে ঝাঁপ দেন এবং সাঁতরে তীরে উঠে প্রাণ বাঁচান।

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, একাত্তরের ২৩ ডিসেম্বর নিউ দিল্লি পেট্রিয়ট-এ ‘কসাই আলবদর’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে চিহ্নিত করে বলা হয়, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আলবদর বাহিনী ছিল জামায়াতের ‘সশস্ত্র শাখা’।

আলবদররা শহীদুল্লা কায়সার, মুনীর চৌধুরীসহ অন্তত ২০০ জন বুদ্ধিজীবী তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, চিকিত্সক, সাংবাদিককে হত্যা করেছে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.