বাঙালি জাতির স্বাধীনতা লাভের পরম মুহূর্ত যতই এগিয়ে আসছিল দীর্ঘ ৯ মাসের বন্দী জীবনের আশু অবসান ততটাই এ দেশের মুক্তিকামি মানুষের ব্যাকুলতাকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। পাকবাহিনীর পরাজয় এরই মধ্যে সুনির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ঢাকার চারদিক থেকে এগিয়ে আসছিল মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী। একাত্তরের এই দিন যশোরের কেশবপুর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, বগুড়ার শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা মুক্ত হয়। এদিকে পাকিস্তানিদের দোসর আলবদর, রাজাকাররা মেতে উঠেছিল বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিধন করতে।
যার চরম পর্যায়ে এদিন তারা অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে নৃৃশংসভাবে হত্যা করে। এদের কারও কারও পরিচয় পাওয়া গেলেও আজও অনেকেরই পরিচয় পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও সে সময় হারিয়ে যাওয়া বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা প্রকাশিত হয়নি, যা বাঙালি জাতির জন্য অতি লজ্জার। একাত্তরের এই দিনে ঢাকার খিলগাঁও-বাসাবো এলাকার কাছাকাছি চলে এসেছিল মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা।
এদিকে সাভার পেরিয়ে ঢাকার বেশ কাছাকাছি এগিয়ে এসেছিল মিত্রবাহিনী।
কিন্তু তখনও চুপ করে বসেছিলেন জেনারেল নিয়াজি, বাকি সবার হৃদকম্প বেড়ে গেছে। ১৩ ডিসেম্বর রাত থেকে ১৪ ডিসেম্বর ভোর পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে মিত্রবাহিনীর কামান অবিরাম গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছিল। বোমাগুলো গিয়ে পড়ল বেশিরভাগই ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে। গভর্নর মালিক সেদিন সকালেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য গভর্নর হাউসে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকলেন। এ বৈঠকে বসার ব্যাপারে জেনারেল রাও ফরমান আলী ও চিফ সেক্রেটারি মুজাফফর হোসেনের হাত ছিল।
তারা তখন মনে করেছেন আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কোন গতি নেই। বৈঠক চলাকালে গভর্নর হাউসের ওপর ভারতীয় বিমান রকেট ছুড়ল। এ অবস্থায় ঢাকায় জেনারেল নিয়াজির আর কোথাও থেকে কোন আশ্বাস বাণী ছিল না। ফলে তিনি আত্মসমর্পণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় মধ্যস্থতা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেলকে অনুরোধ জানাতে নিয়াজি মার্কিন দূতাবাসে যান।
কনসাল জেনারেল তার এ প্রস্তাবে রাজি হননি। তবে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধানের কাছে জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পণের বার্তা পেঁৗছে দিতে রাজি হন। ওই প্রস্তাবে নিয়াজি জেনারেল মানেকশকে আত্মসমর্পণের আয়োজন করার এবং ঢাকার উদ্দেশে একটি অগ্রবর্তী যোগাযোগ বাহিনী পাঠানোর জন্য তাকে অনুরোধ করেন। নিয়াজির অনুরোধক্রমে ১৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় গোলাবর্ষণ বন্ধ রাখা হয়।
বিদেশিরা নিরপেক্ষ এলাকা বলে ঘোষিত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমানে রূপসী বাংলা হোটেল) আশ্রয় নেয়।
অন্যদিকে জাতিসংঘ দুই পরাশক্তি ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কালক্ষেপণের পথ ধরে। পাকিস্তানের জন্য সরাসরি বা পরোক্ষে বাস্তব পদক্ষেপ নেয়ার কোন ইচ্ছা যেমন ছিল না, তেমনি সোভিয়েত ইউনিয়নও চাচ্ছিল যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত হোক। যাতে এর মধ্যে ভারতীয় বাহিনী পূূর্ব পাকিস্তানে বিজয় অর্জন করতে পারে। এদিকে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর আজকের এদিনে পরাজয়ের আগ মুহূর্তেও নৃশংসতার নতুন অধ্যায় শুরু করেছিল পাকিস্তানি দোসররা। এক অন্যায় ও অযৌক্তিক আক্রোশে মেতে ওঠে তারা।
শুরু করে বুদ্ধিজীবী হত্যা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।