আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সকিনা ওরফে জরিনা ওরফে ফুলবানু

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

কুতুকুতু! হোয়াট মানে তুমি! তুমি আমার কুতুকুতু! ভালোবাসার এমন ডায়লগ শুনিয়ে সকিনা ওরফে জরিনা ওরফে ফুলবানু ওরফে আকলিমা ওরফে আসমা কোলে চরে বসলো। ১৪ বছরের একটা মেয়ে তার অফুটন্ত স্তন্য এমনভাবে মিঃ রহমত সাহেবের বুকের সাথে চেপে ধরেছে যে সেটা বড়সড় ফোঁড়া বলে ভ্রম হতে পারে। রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে আড্ডারত সংগীরা তামাশা দেখতে ব্যস্ত। পিজি আর আজিজের মাঝখানে ঘটনার শুরু। এর আগে দেশ নিয়ে বিভাজন, সাম্রাজ্যবাদের পোলারাইজেশন নিয়ে আলোচনায় লাভের ঘরে জমা পড়েছে তিনজনের ৯টা সিগারেটের সুকা আর কয়েকপ্রস্থ চায়ের ঘূর্ণি ।

কিন্তু সকিনার দিকে নজর দেয়ার পরে, দুয়েকটা ঔৎসুক্যমূলক জিজ্ঞাসার পরে সে যে হাত-পা ছড়িয়ে কোলে এসে গলা পেচানো ঘটনা ঘটাবে তা পূর্বনির্ধারিত না থাকায় আপাতত রাজনীতির বদলে সমাজনীতি অবশ্যপাঠ্য হয়ে গেল আড্ডাকারীদের। রহমত, স্ত্রী সহচর্যে জীবনযাপিত প্রানী, অন্য মেয়ের সাথে যৌন আচরণে অনভ্যস্ত, অবিশ্বাসী। রাগ, অস্মানিত হবার বোধ তার মধ্যে ক্রিয়াশীল হয়। বেগুন, পটল আর আনারস এখনও হেসে চলছে আর রহমত সকিনাকে দূরদূর করার চেষ্টা করছেন। সকিনা বলে, কি হলো, এমন করছো কেন? তোমার ঘরে নিয়ে চলো! এবার রহমত ঘেউ ঘেউ করে ওঠে।

ভাগ, এখান থেকে, গলার স্বর উচুঁ হয়। সেইসাথে সকিনার গলাও। চ্যাচাও কেন! মাইয়া দেখলে ঠিকই তো বাঁকা চোখে দ্যাখ! কেউ না থাকলে পাছায় চিমটি কাটতেও তো ছাড়ো না, এখন এত ফাল মারোস কেন! টিপিক্যাল টাংগাইলের টোনে সকিনা আরো যোগ করে, বাঞ্চোত! সালারা সব বেহায়া, কচি মাইয়া দেখলে ইসের গোড়া দিয়ে লোল পড়ে! চল তোদের সবগুলার লোল আজকে বের করে দেই চিরতরে! বন্ধুদের মধ্যে বেগুন নামে পরিচিত হলেও আজিুজুল কায়েস একজন ভাল লেখক। মদে, কবিতায় তিনি যতটা প্রানবন্ত, নারীতে ততট নয়। বিবাহিত জীবনে স্ত্রীকে যতটা মানষিক অশান্তি দিয়েছেন তার চেয়ে ঢের বেশী কষ্ট দিয়েছেন রমনে।

পত্রিকা অফিসে চাকুরীর সুবাদে অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতে হয়। তারপরে সাকুরা হয়ে বাসায় ফিরে তিনি ঘুমে অচেতন হয়ে পড়েন। লোকলজ্জার বিষয়টাতে একটু ঘাটতি আছে, সেই সাথে অর্থও কিন্তু আইডিয়া কিলবিল করা মাথায় হঠাৎ করে কবিতা চাউর দেয়ার প্রবণতা আছে পুরো মাত্রায়। রহমতের কোল থেকে উঠে আসা সকিনাকে নিয়ে তিনি পড়েন, কবিতার নতুন আইটেম হিসাবে সকিনাকে বলেন, তোমার বাসায় যাবো আমি! হৈহৈ করে ওঠে পটল আর আনারস, আর রহমত বলে, তোর মাথা খারাপ, একটা রাস্তার প্রোসের বাড়ী যাবি! বেগুন বলে, হে হে হে, চলনা! দেখে আসি ওদের জীবন। একটু আগে গেলা মদের রস তার মনে হয় গলা দিয়ে এখনও সরেনি।

সকিনা এবার বেগুনের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলে, দেখবি! চল বাঞ্চোত, কিন্তু ঘরে তো লাগাইতে পারবি না! বেগুন চাট্টি মারে সকিনার মাথায়! ধুরো! তোর লগে আইজকা রাইতের খাবার খামু! সকিনা, ফোস করে ওঠে। খাওয়াইতে পারুম না। তোগো মত অনেক পাবলিক ঘর দেইখা গেছে, কিন্তু কামের কিছু হয় নাই। শাহবাগ বস্তীতে সকিনার বাসা। রহমত যাবে না।

কারণ তার বাসা প্রিয়-প্রাঙ্গনে, বস্তীর ঠিক উলটো দিকেই, বাসার কাজের মহিলাও থাকে ঐ বস্তীতে। সে বলে, তোরা যা! পটল আর আনারস যাবে। তিন দোস্ত মিলে রওনা হয় সকিনার সাথে। রহমতের আভিজাত্যের টান ছেড়ে সকিনা প্রগলভ বকে। ভাবে লোকগুলানরে দেখতে তো ভদ্র মনে হইতেছে।

জনদরদী মনে কয়, ঘরে যাইয়া নিশ্চয়ই টাকা পয়সা দেবে! আর খিলখিল করে ছেনালী করে, আমার রেট কিন্তু ২০০ টাকা, তয় তিনজনে একলগে করতে পারবেন না, একজন আইবেন তারপরে ৫ মিনিট রেস্ট, তারপরে আরেকজন। আর রাইতে কিন্তু ভাল হোটেলে খাওয়াইতে হবে। আর একটা কথা হোটেলে যামু না, বাসা বাড়ী ছাড়া কাম করি না! পটল ওরফে রিংকু ওরফে তানভীর হোসেন যে শর্ট ফিল্ম বানায় হো হো করে হেসে ওঠে। আনারসকে কনুই দিয়ে ঘুতিয়ে ফিসফিস করে, কিরে তোর কি আউট হয়ে গেল! আনারস ভ্রু কুচকায়, সে আসলে হায়দার আলী, এনজিওতে কাজ করে, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা একটা ফ্রেঞ্চ ইন্টারন্যাশনাল চ্যারিটি অর্গনাইজেশনে, পটলের নায়িকা প্রীতি, বেশ্যা প্রীতি সবই জানে। বললো, ব্যাটা তোর ফিলমের সবগুলা একস্ট্রার দিকেই তো তোর বদনজর, এখন একটা বাচ্চামেয়ে ছেদনের তোরজোর করছিস! সকিনা কি বোঝে না বোঝে, পটলের হাতটা ধরে, স্যার, আমারে এট্টু ফিলমে চানস দিবেন! আপনারে ফ্রি দিমু! মদখোর বেগুন হো হো করে হেসে ওঠে।

আনারাসরূপী হায়দার গলা খাকরি দেয়, দেখে সাকুরার সামনে জটলা পাকিয়ে পুলিশ দাড়িয়ে আছে। তাদের কাছে বিষয়টা একটা নিষিদ্ধ অভিযানের মত মনে হতে থাকে। আজিজুল কায়েস বেশ কায়েস্ত গাম্ভীর্যে বলে, এটা আমার কবিতা লেখার প্লট, আমার কপিরাইটেড থিম, তোরা শুধু দেখবি আর বগল বাজাবি, নো কমেন্ট করবি! অন্য দুজন জ্বী সার বলে জোরে শোরে, সকিনা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, ভাবে সম্ভ্রান্ত ঘরের পাগল হবেটবে। সাকুরাকে ক্রস করে পেট্রল পাম্প, তারপরে পরীবাগের রাস্তায় ঢুকে একটু এগুলেই বামপাশে বস্তি। ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত বস্তি বলা যায়।

সরকারী জায়গায় টিনের ঘর, ইটের বাড়ী করে বসবাস করছে বংশ পরম্পরায়, অনেক মালিক আবার এখানের ভাড়ায় অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকে। প্রিয়প্রাংগনের ঠিক সামনে দিয়ে একটা ঢোকার জায়গা, ভেতরে ঢুকলেই দুপাশে মুদি দোকান, ফোনের দোকান। বেগুন, পটল আর আনারসকে নিয়ে সকিনা গলির পর গলি পার হয়ে একটা ঘরের সামনে এসে দাড়ালো। দোতালা একটা টিনের ঘর। একটা বেসমেন্টের মতও আছে মনে হলো।

সেটা রান্নাঘর। সকিনার ঘর দোতালায়। ভেতর দিয়ে একটা সিড়ি। ঘরে ঢোকার দরজা থেকে সে সিড়ির গোড়া পর্যন্ত তিনটা বাচ্চা, এক বৃদ্ধ এককোনে একটা চেয়ারের উপরে বসে আর বেসমেন্টের মত জায়গাটাতে দুজন ভদ্রমহিলা। সেখানে একটা পানির কলও আছে।

সকিনা সিড়ির গোড়ায় গিয়ে হাক ছাড়ে, কই আসেন আপনারা! দোতালার ঘরে একজন বৃদ্ধা মহিলা শুয়ে আছে পাটাতনে। হাড্ডি কালসিটে অবস্থা। বাইরে হালকা শীত। কিন্তু ঐ ক্ষুদ্র ডেরাটিকে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান। সকিনাসহ চারজন দোতালায় বসার মত জায়গা নেই।

সকিনা বলে, আপনারা সিড়ির গোড়ায় দাড়ান। পাটাতনেই কাম সারতে হবে! পুনঃপ্রকাশিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।