আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন সকিনা খাতুন এবং আমরা মনুষ্যরূপীগণ..

ভাল তোমায় বাসবো বলে বাড়িয়েছিলাম হাত, তোমায় ভেবে সকাল দুপুর সন্ধ্যা বিকেল রাত।

সকিনা খাতুন, তিনি হয়তোবা আমাদের বাসায়ও এসেছিলেন, এক মুঠো ভাতের জন্যে..একটা বাঁসি রুটি..দুটো টাকা...। ব্যস্ততার মাঝে ভিক্ষুকতো আমরা ঝামেলা হিসেবেই নেই। তাকেও হয়তোবা তাড়িয়ে দিয়েছি, অভুক্ত মানুষটার দিকে তাকানোর সময়ও হয়তো কারো ছিলনা অথবা ক্ষুধার চোটে হয়তোবা তার কন্ঠরোধ হয়ে গিয়েছিল, তিনি হয়তো বলতেও পারেননি যে তিনি চার দিনের অভুক্ত। আমরা কেউ তাকাইনি তার দিকে, হয়তোবা রাস্তায় কোনভাবে তাল সামলিয়ে আমার কাছেও পেতেছিলেন হাত..শুধু দুটো টাকার জন্যে, আমি হয়তোবা সাত সকালে অফিসে ছুটছি, সময় কই? কোন পার্কে হয়তো হাত পেতেছিলেন আমার কাছে, আর আমি তখন পার্কে বসে প্রেমিকার হাতে হাত রেখে বাদাম ছিলায় ব্যস্ত।

রাস্তায় কোন শিশুকে চিপস আর জুস খেতে দেখে, ক্ষুধায়/তৃষ্ণায় হয়তো হাত পেতেছিলেন তার কাছেও, ফেলে দেয়া খালি জুসের প্যাকেটটা নিয়ে হয়তো শেষ বিন্দুটা পান করেছেন অমৃত মনে করে, চিপসের প্যাকেটের তলানির গুড়োগুলো খেয়ে হয়তোবা নিবারণ করতে চেয়েছিলেন ক্ষুধা। ফেলে দেয়া কোন হোটেলের উচ্ছিষ্ট খাবার খেতে হয়তোবা বসে ছিলেন সারারাত..হয়তোবা উচ্ছিষ্টগুলো তার পোষা কুকুরের জন্যে জমিয়ে রেখেছিলেন হোটেল মালিক অথবা হয়তো হোটেল বয় সেগুলো ফেলে এসেছিল ডাষ্টবিনে...সে খাবারটাই খেতে গিয়েছিলেন তার পিছু পিছু...খাবারটা তার আর খাওয়া হয়নি, তার আগেই জ্ঞানহীন হয়ে লুটিয়ে পড়েন মাটিতে... পত্রিকার খবর: মারা গেলেন সেই সকিনা খাতুন অবশেষে চাঁদপুরের সকিনা খাতুন নগরীর পাহাড়তলীস্হ মাদার তেরেসা হোমে ইন্তেকাল করেছেন। প্রায় তিন মাস মৃত্যুর সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টায় তিনি মারা যান। সকিনা খাতুনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে মানবাধীকার নেত্রী এডভোকেট তুতুল বাহার মাদার তেরেসা হোমে ছুটে যান। সেখান থেকে সকিনা খাতুনের লাশ নিয়ে নগরীর চৈতন্যগলি কবরস্থানে দাফন করার ব্যবস্থা করেন তিনি।

উল্লেখ্য সকিনা খাতুন জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে ভিক্ষা করতে চট্টগ্রাম আসেন। তিন চারদিন কিছু খেতে না পেরে মুমূর্ষ অবস্থায় আন্দরকিল্লার ডাষ্টবিনে পড়ে থাকতে দেখে এডভোকেট তুতুল বাহার তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করান। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকিনা খাতুনকে নিয়ে ১৬ই সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে মাদার তেরেসা হোমে তার থাকার জায়গা হয়। শেষ পর্যন্ত সেখানেও তার বেশিদিন ঠাঁই হলোনা। সূত্র: দৈনিক আজাদী, পৃষ্ঠা - ৯, ২৫ নভেম্বর বুধবার ২০০৯ খৃঃ তার মৃত্যুর জন্যে কি, আমি/আমরা মনুষ্যরূপীগণ দায়ী নই? ক্রমে এতটা নিষ্ঠুর কেন হয়ে উঠছি আমরা? ব্যস্ততা কি আমাদের এতটাই যন্ত্র বানিয়ে ফেলেছে? ক্ষমা করো সকিনা খাতুন..তুমি ক্ষমা না করলে যে স্রষ্টাও আমাদের ক্ষমা করবেনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.