আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সবাই মিলে একটু চা খাওয়া যাক !!!

আমি পার্থিব বাস্তবতায় অস্থির, অপার্থিব স্বপ্নপায়ী কেউ একজন . . .

সব ব্লগ বন্ধু যারা সিলেট যান নি তাদেরকে এই লেখাটা বেশ গাইড করবে আশা করি। গত বছরের অগাস্ট এ আমার সেমেস্টার গ্যাপ এ আমি আর আমার ফ্যামিলি-র সবাই সিলেট-এর শ্রীমঙ্গল গিয়েছিলাম। স্বপ্নের মতো সুন্দর একটা জায়গা। ওখানের ফিনলে-র টি-রিসোর্ট এ ছিলাম আমরা। তারপর লাউয়াছড়া বন, খাসিয়াগ্রাম এ ঘুরাঘুরি করে মাধবকুন্ড গিয়েছি।

মাধবকুন্ড ছাড়া বাকি সব জায়গাই অপরিচিত ছিল আমার কাছে। সেই সাতদিন আমার জীবনের খুব বিশেষ কিছু দিন। এমন-ই বিশেষ আর ঘটনাপূর্ণ ছিল দিনগুলো যে প্রত্যেকটা জায়গা নিয়েই একটা একটা গল্প লিখে ফেলা যায়! যাই হোক, এবার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। শ্রীমঙ্গল সবচেয়ে বিশেষ সাজ নেয় বৃষ্টির সময়। আমরা গিয়েছিলাম যখন তখন সারাদিন-ই টিপটিপ বৃষ্টি।

সবুজ থেকে সবুজ চা বাগান আর বড়বড় বন। আমরা সেই বৃষ্টি-র মধ্য-ই ভিজে ভিজে দেখেছি বাংলা মায়ের অসাধারণ সুন্দর এক মেয়ের সৌন্দর্য! লাউয়াছড়া বন বিশাল এক বন অদ্ভুত সব পাহাড়ি ফুলে ভরা আর তার গাছে গাছে হাজার হাজার বানর। আমার বাবা আমাদের ছেড়ে দিয়ে হাসি দিয়ে বল্লেন, " যাও হারিয়ে বনের মধ্য। দেখো তোমাদের বন্ধুরা গাছে গাছে আছে, যেখানেই যাবা ওরাই খুজে দিবে ! " আমরা সত্যি-ই বেশ স্বাধীণ হয়েই ঘুরেছি সেই গহীন বনে, রোমান্চকর ব্যাপার-স্যাপার ! এমন-ই অবস্থা যে আমার ভাইয়ার ৫-৬ বছরের মেয়েটা একটা কাল কুকুর দেখে চিৎকার দিয়ে বললো, " ফুপ্পিমা'! দেখো দেখো একটা বাঘ ! " গল্প বড় হয়েই যাচ্ছে তাও প্রসঙ্গে আসতে পারছি না ! এবার প্রসঙ্গে আসি। বন থেকে বের হয়ে হলো মজাটা ! বাবা বললো, এখন আমরা লোকাল কোনো দোকানে বসে চা খাবো।

তো বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর মিললো "নীলকন্ঠ চা কেবিন"। এই দোকানের সাইনবোর্ডটা দেখে আমি ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না ! এতোরকম চা ! যাই হোক... সবার চোখ পাঁচ কালারের চা -এর দিকে ( আমার ব্লগ এর পরের পোস্ট-এ চা-এর ছবিটা দিয়েছি)। ওদের একজন কে ডেকে বললাম, "মামা, পাঁচ কালার বুঝিয়ে দেন। " সে মজা পেয়ে বেশ গর্ব নিয়ে যা বললো তা হলো...পাঁচ কালারের চা হলো এক-ই গ্লাস-এ পর পর পাঁচ স্তরের পাঁচ রঙের চা। একেক স্তরে একেক রং আবার একেক রং-এর একেক টেস্ট !!! তারপর বললাম, " কি আজিব! মিলে যায় না! " সে আরো গর্ব নিয়ে বললো, "আপা, একটা তো নিয়া দেখেন! মিলে নি মিলে না!" বাবা দুই কাপ অর্ডার করলো।

বাকি কালার গুলার-ও এক-ই নিয়ম, একেক স্তরে একেক ফ্লেভার। অবশেষে আসলো পাঁচ কালারের চা। কমলা রং -এর নানান শেড এর পাঁচটা স্তর। প্রথম স্তরে দুধ-চা, তার নিচে আদা-চা, তার নিচে লেবু-চা, তার নিচে "হাই-স্পেশাল" দুধ-চা আর সবশেষে "লাল গ্রিন টি" ("***"- এভাবে লেখা চা-গুলো ওখানের মামার ভাষা বুঝাতে চেয়েছি)। দুঃখিত হয়ে বলছি, চা -টার টেস্ট এতো-ই খারাপ যে বলার মতো না ! গরম কাশির ওসুধের মতো।

চা-টায় কোন লেবু বা আদা কিছুর টেস্ট-ই পাওয়া যায় না। কেউ গিয়ে ভুলেও মিক্সড কালার এর কোনো চা খাবেন না এটা হলো আমার লেখার মূল কথা। কিন্তু আমি একটা ব্যপার-এ এখনো অবাক যে আসলেই চা-গুলো মিলে যায় না। আলাদা হয়ে থাকে কিভাবে যেন রংটা !!! আসলে এই নানান ধরনের চা-এর আবিষ্কার হয়েছে টুরিস্টদের একটু অবাক করে দেয়ার জন্য। আমাদের দেশের মানুষগুলোর জীবিকার তাগিদে খুব কষ্ট পেতে হয়, একটু বাড়তি উপার্জনের জন্য-ই আবিষ্কার করতে হয় "পাঁচ কালারের চা" !!! আমি ব্যপারটার প্রতিবাদ করার সময় এটা আমাকে আস্তে করে বুঝিয়ে দিয়ে-ই আমার বাবা চা-মামাদের বললেন, "ভাই চা টা খুব ভাল ! তাই না মা ??" এই পোস্টে পাঁচ কালারের চায়ের ছবিটা পাবেন : Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.