এ লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আমার যুদ্ধাপরাধ
ন্যায় বিচার ও প্রতারণা কী এরই মধ্যে আঁতাত করে ফেলেছে?
যখন আরববিশ্বে ওয়াশিটনের ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন সাদ্দাম হোসেন, তখন সংগঠিত একটি যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির আদেশ দেয়া হলো তাকে। ইঙ্গ-মার্কিনিরা এর সবই জানে এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে। এমনকি সেই প্রাণঘাতী গ্যাসও সরবরাহ করেছিল তারাই। নিঃসন্দেহে হোয়াইট হাউস আজকের এ দিনটিকে ইরাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে দেখবে। ২০০৩-এর ডিসেম্বরে যখন সাদ্দামকে আটক করল মার্কিন সেনাবাহিনী-- সেদিন টনি ব্লেয়ার একই কথা বলেছিলেন।
যে আবু গারিব সাদ্দামের স্বৈরশাসনের লজ্জা ছিল, তা আজ মার্কিন মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের কলঙ্ক। তাই বলে কি আমরা এ জঘন্য ব্যক্তিটির মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করতে পারি? সাদ্দাম শাসনামলের চেয়ে এখন কি ভালো আছে ইরাকিরা? যে বিচারকরা ১৪৮ ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে তাকে ফাঁসিতে ঝোলালো, ৬ লাখ ইরাকি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে আমাদেরকে কী বলবেন তারা?
`আল্লাহু আকবার' আদালত প্রাঙ্গণে চিৎকার করে উঠলেন সাদ্দাম। এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। ইরাকের জাতীয় পতাকায় তিনিই এ শব্দগুচ্ছ লিখেছিলেন। জর্জ বুশ সিনিয়রের সময় রামসফেল্ডের সঙ্গে সাদ্দামের সেই ঘনিষ্ট দিনগুলোর কথা তখন মনে পড়ছিল আমার।
আরো একটি তথ্য মনে পড়ল, যুক্তরাষ্ট্রে মিডটার্ম নির্বাচনকে সামনে রেখেই তড়িঘড়ি করে এ মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতে যাচ্ছে বলে গত সপ্তাহে এক ইরাকি সরকারি কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছিলেন।
পশ্চিমা মদদে সাদ্দাম নিজ দেশে গণহত্যাকারী হলেও সে সম্পর্কে তাকে মুখ খোলার অধিকার দেয়নি আদালত। সাদ্দামের মৃত্যুদণ্ড সম্পর্কে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রম জন রেইড বলেন, এটা একটি সার্বভৌম জাতির সার্বভৌম সিদ্ধান্ত। ভাগ্যিস মুখ ফসকে তিনি বলে ফেলেননি, ১৯৮৮ সালে ইরাকে আড়াই লাখ পাউন্ডের মাস্টার্ড গ্যাস বিক্রির ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন।
আশির দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের আমি প্রত্যক্ষদর্শী।
ইরানের হাসপাতালগুলো তখন রণক্ষেত্র ফেরত বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত সেনা সদস্যে ছেয়ে গেছে। ইঙ্গ-মার্কিনিরা তখন নিরব-- তারা জানতেও চায়নি এ সব কী হচ্ছে?
এখন আমরা ইরাকিদের সার্কাস দেখচ্ছি। মিডিয়া বলছে, আমরা নাকি রুটিও বিলাচ্ছি। হয়তো এক অচেনা বাতাসে দুলবে ফাঁসি ঝোলা সাদ্দামের মৃতদেহ। সাদ্দামের আইনজীবী প্যানেলের এক সদস্য বাউচরা খলিল লেবাননে কিছুদিন আগে বৈরুতে আমাকে বলেছিলেন, ‘কারাগার থেকে সাদ্দামের রেরুনোর মাত্র দুটি পথ আছে-- হয় আবারো ইরাকের প্রেসিডেন্ট হতে হবে, নয়তো কবরে যেতে হবে।
চসেস্কু, মিলেসোভিচ বা নরিয়েগার মতো তাকে হয়তো থাকতে হবে আজীবন ১৪ শিকের ভেতর। ’
গণহত্যা, গণধর্ষণ এবং নির্যাতনেই লুকিয়ে আছে ইরাকের সা¤ক্স্রতিক স্বাধীনতা। ইরাকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোও গড়ে উঠছে। যে যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির আদেশ হলো, তাকে তো আমরাই নির্মাণ করেছি। আমাদেরই নিয়ন্ত্রিত আদালত এ রায় দিলো।
ন্যায় বিচার ও প্রতারণা কী এরই মধ্যে আঁতাত করে ফেলেছে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।