দুশ্চিন্তা আর টেনশন
সিরিয়ায় রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহার করে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো যখন বিশ্ব উত্তাল, তখন এ উত্তেজনায় ঘি ঢেলেছে আমেরিকার পক্ষ থেকে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালানোর হুমকি। এর ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব রাজনীতিতে দুটি পক্ষও তৈরি হয়ে গেছে। এর মধ্যে আসাদ সরকারের পক্ষে থাকা ইরান এবং রাশিয়া সিরিয়ায় হামলা না চালানোর পরামর্শ দিয়েছে আমেরিকাকে। কেননা তাদের মতে, সেটা সমস্যা বাড়াবে বৈ কমাবে না। তবে সম্প্রতি আরেকটি খবর রাসায়নিক গ্যাস নিয়ে আমেরিকার বর্তমান অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আর সেটি হলো, ইরাক-ইরান যুদ্ধে (২২ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ থেকে ২০ আগস্ট ১৯৮৮) তেহরানের বিরুদ্ধে রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারে প্ররোচিত করেছিলেন তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। সম্প্রতি আমেরিকার ন্যাশনাল আর্কাইভে সিআইএর অবিন্যস্ত নথিতে এ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া গেছে।
ইরাক-ইরান যুদ্ধে তেহরানকে পরাজিত করতে আমেরিকার তৎকালীন প্রশাসন বিভিন্নভাবেই সহায়তা করেছিল বাগদাদকে। বিভিন্নভাবে সহায়তার মধ্যে ছিল- স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইরানি সেনাদের অবস্থান জানানো, তাদের সামরিক শক্তি সম্পর্কে অবহিত করা এবং ইরানি সেনাদের দুর্বল দিকের সন্ধান জানানো। তবে আমেরিকার পক্ষ থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ যে কাজটি করা হয়, তা ছিল ইরানের সেনাদের ওপর রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহার করতে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্ররোচিত করা।
আর ইরান বিষয়টি অাঁচ করতে পেরে জাতিসংঘের কাছে এ বিষয়ে সরাসরি অভিযোগ করে বসে। কিন্তু যথাযথ প্রমাণের অভাবে তাদের অভিযোগ তখন ধোপে টেকেনি। যদিও ইরানি সেনাদের ওপর রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন আমেরিকা প্রশাসন সমপূর্ণভাবে সচেতন ছিল এবং ওইসব তথ্য গোপন রেখে তখন ইরানের সব চেষ্টায় বাধা দিয়েছিল।
আমেরিকার মেরিল্যান্ডে ন্যাশনাল আর্কাইভে সিআইএর নথিতে এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রমাণও রয়েছে। তবে এ ধরনের সংশ্লিষ্টতা জানার পর সিআইএর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে গুপ্তচর সংস্থাটি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
সিআইএর অবিন্যস্ত নথিতে দেখা যায়, ইরানি সেনা এবং সীমান্ত এলাকায় রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারের বিষয়টি তৎকালীন আমেরিকার সিনিয়র কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি জেনেও নিশ্চুপ ছিলেন আমেরিকান কর্মকর্তারা। যদিও জেনেভা প্রটোকলে কোনো ভূখ-ের বিরুদ্ধে রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়াও অন্য কোনো ভূখ-ে রাসায়নিক হামলা চালাতে প্ররোচিত করার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইরাক এ প্রটোকলে স্বাক্ষর না করলেও আমেরিকা ১৯৭৫ সালে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
তারপরও তারা ইরানের বিরুদ্ধে ইরাককে রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্ররোচিত করে রোনাল্ড রিগ্যানের তৎকালীন প্রশাসন।
আমেরিকার প্ররোচনায় ইরাকের সেনাবাহিনী এবং সীমান্ত এলাকায় রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারের ফলে হাজারো ইরানি অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থদের মধ্যে বড় একটি সংখ্যা ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বলেও সিআইএর নথিতে উল্লেখ আছে। উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালের শুরুর দিকে ইরানে চারটি বড় ধরনের হামলার আগে মাস্টার্ড গ্যাস এবং সারিন গ্যাস হামলা চালানো হয়েছিল।
সিআইএর নথি ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ও তৎকালীন ইরাকে আমেরিকান সামরিক অ্যাটাশের দায়িত্ব পালনকারী সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফ্রাংকোনাও ইরানে রাসায়নিক গ্যাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেছেন।
আর ইরানের বিরুদ্ধে এ হামলা চালাতে আমেরিকার যে প্ররোচনা ছিল, সে বিষয়টিও তিনি এড়িয়ে যাননি। ওই রাসায়নিক হামলায় আমেরিকার প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিল বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। ফ্রাংকোনা বলেন, 'ইরাক কখনো আমাদের বলেনি, তারা নার্ভ গ্যাস ব্যবহার করতে চায়। আর সেটা তাদের কাছে ছিলও না। কিন্তু আমরা ব্যাপারটা জানতাম।
'
আর সম্প্রতি রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারে সিরিয়ায় রেকর্ডসংখ্যক মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সামরিক হুমকির পরিপ্রেক্ষিতেই ইরানের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে রিগ্যানের প্ররোচনার বিষয়টি উঠে এসেছে। কেন না পরিবর্তিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বারাক ওবামা রাসায়নিক গ্যাসের বিপক্ষে আজ মুখে বড় বড় কথা বললেও, কিংবা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও তার পূর্বসূরিদের একজন রোনাল্ড রিগ্যান আরেকটি ভূখ-ে বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারে প্ররোচনা দিয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে সিরিয়ার সরকার বা বিদ্রোহী যে পক্ষই রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহার করুক না কেন, এ বিষয়ে শাসানোর আগে ওবামাকে নিজেদের ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই। তাদের মতে, ওবামার পূর্বসূরিরা রাসায়নিক গ্যাস সরাসরি ব্যবহার না করলেও আরেকটি দেশকে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে। আর এ কারণেই সিরিয়ায় সামরিক হামলার হুমকি দিয়ে ওবামাও এ ধরনের স্বার্থ হাসিলের পথে রয়েছেন বলেই ধারণা অনেকের।
তথ্যসূত্র : ফরেন পলিসি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।