আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীলগিরি মাশালা টি



নীলগিরি মাশালা টি ব্যঙ্গালোর থেকে আমি আর দুলাভাই বদরুল ইসলাম উটি'তে ঘুরতে গিয়েছিলাম। প্যাকেজ এই ট্যুরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল ভারতীয় সরকারী পর্যটন সংস্থা ITDC. উটি শহর সমতল ভুমি থেকে ৭৪০০ ফুট উপরে। ঠান্ডা বাতাস বইছে। মে-জুন মাস উটিতে যাবার উপযুক্ত সময়। এখানে এখন গ্রীষ্মকাল।

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি আর শীতকালে শুন্য ডিগ্রির নীচে চলে যায়! পাহাড়ের চুড়া এখনও দেখতে পাচ্ছি না। ITDC এর পক্ষ থেকে সবাইকে নীলগিরি চা বাগানে নিয়ে গিয়ে নীলগিরি মাশালা চা খাওয়ানো হলো। আমি প্রথমবারের মত চা বাগান দেখছি। যত দেখছি তত বিমোহিত হচ্ছি! বিশাল পাহাড়কে সবুজ চাদরে জড়িয়ে রেখেছে এই চা বাগান। নীলগিরি চা এর সাথে মশলা মিশিয়ে আমাদের সবাইকে খেতে দেয়া হল।

এত সুস্বাদু চা আমি এর আগে খাইনি। পাহাড়ী ঠান্ডা বাতাসে যখন হাত পা জমে আসছিল তখন এ চা খেয়েছিলাম বলেই হয়ত এত ভাল লেগেছিল। বাসায় ফিরে সেরকম সুস্বাদুভাবে আর চা তৈরী করতে পারিনি। অতি সুস্বাদু এই চা সম্পুর্ন রপ্তানিযোগ্য, খোদ ভারতেই পাওয়া যায় না। তবে বাগানে কেনার ব্যবস্থা আছে।

পাশের পাহাড়ের গায়ে কালাহাটি ফল্স। উপর থেকে প্রায় ২০০ ফুটের বেশী নীচে পানি পড়ছে। খুবই সুন্দর দৃশ্য। দুই পাহাড়ের মাঝে আবছা চেন্নাইগামী রাস্তা দেখা যাচ্ছে। গাইড সবাইকে বললেন, 'এখান থেকে কেউ লাফ দিয়ে নীচে পড়লে তার জন্য ITDC র পক্ষ থেকে চেন্নাইর টিকিট ফ্রি!' উটি বোটানিক্যাল গার্ডেন ফুলের রাজ্য।

অনেক রকম ফুল আর সবুজ গাছের সমারোহ। বিভিন্নদিকে ইতালিয়ান গার্ডেন, অষ্ট্রেলিয়ান গার্ডেন ও অন্যান্য নামে ফুল বাগান। একদিকে ঝাউ বাগান ও গ্লাস হাউস। যা হলিউড ছবি 'প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া'র সুটিং স্পটের জন্য বিখ্যাত। পুরো উটি ঘুরতে আমাদের সব সময়ের সঙ্গী ছিল 'নীলগিরি মাশালা টি'।

খ. চা অনেক আগে যখন প্রথমদিকে ঢাকা আসি তখনকার কথা। বঙ্গবন্ধু সেতু প্রথম খুলে দেয়া হয়েছে। সেতুর পশ্চিম পাশে অনেক হোটেল গড়ে উঠেছে। ঢাকা - রাজশাহী রুটের বেশীর ভাগ বাসগুলো তখন দুপুরে বা সন্ধ্যায় খাবার জন্য হোটেল 'ফুড ভিলেজে' ব্রেক দিত। বাস থেকে নেমে আমরা কয়েক জন টেবিলের চারদিকে বসেছি।

ওয়েটার এসে বলল, 'স্যার চা না কফি লাগবে!' বয়স কম। ওয়েটারের মুখে স্যার শুনে ভেতর ভেতর আনন্দে একটু উত্তেজিত হয়ে গেছি! তাড়াতাড়ি বলে ফেললাম কফি লাগবে। কেউ কেউ বলল, চা খাবে। তাই তিন জনের জন্য কফি আর বাকি সবার জন্য চায়ের অর্ডার দিলাম। তারপর ওয়েটার সব আলাদা আলাদা করে দিয়ে গেল.. কফি, গরম পানি, দুধ.. নিজে বানিয়ে খেতে হবে! বাকি সবাইকে চা।

চায়ের কাপের মধ্যে টি ব্যাগ। টিম লিডার হিসেবে অন্যরা আমার কাছে জানতে চাইছে কিভাবে চা বানিয়ে খাবে। কিন্তু আমি নিজেই এর আগে এমন জিনিষ দেখিনি! পাশের টেবিলেও এরকম টি ব্যাগ দিয়েছে। আমি সবাইকে বললাম, পাশের টেবিলে ফলো কর কিভাবে বানাচ্ছে তারপর আমরা আমাদের চা বানাব! ওয়েটারকে যেভাবে ভাব নিয়ে চা কফির অর্ডার দিয়েছি তাতে ডেকেও জিজ্ঞেস করতে পারছি না, কিভাবে চা খাব! পাশের টেবিলের লোকটি টি ব্যাগ নিয়ে একটু গবেষণা করল কিন্তু শেষতক কোন রকম কুল কিনারা না পেয়ে টি ব্যাগ ছিঁড়ে চা পাতি কাপের মধ্যে ঢেলে দিল। একটু ক্ষণ চামচ দিয়ে নাড়ার পর ওয়েটারকে বলল, 'এই এদিকে একটা ছাকনি নিয়ে আয় চা তৈরী হয়ে গেছে!' চারদিকে মৃদু একটা হুলস্থুল পড়ে গেছে।

ওয়েটার এসে বলছে, স্যার এটা আপনি কি করেছেন! টি ব্যাগ তো ছিঁড়তে হবে না। সুতো ধরে কিছুক্ষণ উপর নিচ নাড়ানাড়ি করলেই চা তৈরী হয়ে যাবে। লোকটি এবার রেগে গিয়ে বলল, তো ব্যাটা আগে বলবি না যে এটা 'ঝুকাঝুকি' চা! এবার আমাদের ঝুকাঝুকি চা খাবার পালা কিন্তু পানি ততক্ষনে প্রায় ঠান্ডা হয়ে গেছে। তবু কি আর করা অম্লান বদনে সবাই চা খাচ্ছে! শাপলা ভাবী যেদিন প্রথম কফি বানিয়ে দিয়েছিলেন আমি বলেছিলাম, ভাবী চা তো পুড়ে গেছে! ভাবী বলেছিলেন, এটা চা না কফি। কফিটা খেয়ে তৃপ্তি পেয়েছিলাম কিন্তু এবার নিজেরা যে কি কফি বানালাম বুঝলাম না।

একবার দুধ মেশাই, একবার পানি ... তবু তিতা কাটেনা! একেবারে চিরতা'র মত বিস্বাদ হয়ে গেছে। মুখটা অবিকৃত রাখার চেষ্টা করে কয়েক চুমুক দিলাম। ওয়েটার বিল দিয়ে গেল। তিনটা কফি'র দাম ১০৫ টাকা! প্রতি কাপের দাম ৩৫ টাকা শুনে আমার বন্ধুরা আমার উপর ভীষণ ক্ষেপে গেছে। একজন চিৎকার করে বলছে, 'শালা ১ টাকা দামের চা খাই তবু বানিয়ে দিয়ে যায় আর এখন এত টাকা দেবার পরও নিজে বানিয়ে এমন বিষ খেতে হল!' গজগজ করে সবাই আমার গুষ্টি উদ্ধার করছে কফি খাওয়ানোর জন্য।

বলে কয়ে কোন রকমে সবাইকে বাসে উঠালাম। বাসে উঠেই অনুভব করলাম পেটের ভেতর মোচড় দিচ্ছে! পাশের জনেরও একই অবস্থা। যারা চা খেয়েছে তারা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করছে। একজন মিটমিটে হাসি মুখে বলছে, 'কুত্তার পেটে কি আর ঘি হজম হয়! বোঝ অবস্থা চা বাদ দিয়ে কফি খাওয়ার পরিনাম!' আমাদের তিন জনের অবস্থা ভয়ানক খারাপ যে কোন মুহুর্তে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হতে পারে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।