মানবতার গান গেঁয়ে যায়-তারুণ্যের প্রেরণায়
রাসুল (সা বলেছেন-কিয়ামত সংগঠিত হবে না যে পযÐন্ত না তোমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি কোন ইহুদী পাথরের আড়ালে আত্মগোপন করে থাকলে,পাথর বলবে, হে মুসলিম আমার পেছনে ইহুদী রয়েছে,তাকে হত্যা কর। (সহীহ বুখারি পঞ্চম খন্ড হাদীস নং-২৭২৫) এটি হলো ভবিষ্যতে ইহুদী সম্প্রদায়ের করুণ পরিণতির বিবরণ। যা তাদের অপকমেÐর ফল হিসাবে প্রাপ্ত হবে। বতÐমান ইহুদীদের মানবতা বিধ্বংসী কমকান্ড সম্পকেÐ রাসুল (সা অনেক আগেই আমাদের সতÐক করেছেন।
পবিত্র কোরআন শরীফে ইহুদী সম্পকেÐÐÐ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ইহুদী সম্প্রদায় পৃথিবীর ইতিহাসে একটি পুরাতন ও সম্মানিয় সম্প্রদায় ছিল। যাদের কাছে আল্লাহর অসংখ্য নবী এবং রাসুলের আগমন হয়েছে। যাদের জন্য ফোরাত নদীর মাঝখানে রাস্তা তৈরি হয়েছিল, যাদের জন্য মরুর বুকে পানির ঝরনা প্রবাহিত হয়েছিল, যাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে মান্না ও সালওয়া নামক আহার পাঠানো হতো। সেই সম্মানিত ইহুদী সম্প্রদায় তাদের অপকমেÐর কারণে এক সময় পৃথিবীর সবচেয়ে নিগৃহিত সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছিল।
যাদের আশ্রয়ের কোন ঠিকানা পযÐন্ত ছিল না। আজ সেই নিপীড়িত সম্প্রদায় বতÐমানে পৃথিবীর সুপার পাওয়ার হয়ে পৃথিবীর কুখ্যাত নিপীড়কের ভূমিকা পালন করছে। পৃথিবী ব্যাপী মানবতা ধ্বংস, মানবাধিকার লংঘন, যুদ্ধ সংঘাত এবং পৃথিবীর সমস্ত অপকমেÐর পেছনে আজ ইহুদীদের কালো হাত রয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের ধ্বংস সাধনে তারা সদা তৎপর।
ইহুদি সম্প্রদায় বা জুইশ কমিউনিটির ইতিহাস প্রায় ৩০০০ হাজার বছরের পুরনো।
পৃথিবীর ইতিহাস টেনে আনলে দেখা যায়, ইহুদিরা হলো সবচেয়ে অত্যাচারিত সম্প্রদায়, যাদের উপর শুধু বছরের পর বছর, শতশত বছর ধরে অত্যাচার করা হয়েছে। একটি নির্যাতিত ও অত্যাচারিত সম্প্রদায় কিভাবে নিজেরাই অত্যাচারী হয়ে উঠল সে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইহুদী সম্প্রদায়ের ইতিহাস
তিন হাজার বছর আগে ইহুদি সম্প্রদায়ের যাত্রা শুরু হয়। ইহুদীধর্ম পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীনতম ধর্ম যা এখনো অনেক মানুষ পালন করছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাঈলদের আদি নিবাস ছিল।
তবে তারা এখন যে জায়গা চিহ্নিত করছে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। আল্লার নবী মুসা (আঃ) বা মোজেস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই সম্প্রদায়ের সবচেয়ে সুন্দর সময় গিয়েছে খৃষ্টপূর্ব এক হাজার বছর আগে (হজরত) সম্রাট দাওদ (আঃ) বা ডেভিডের সময়। দাবি করা হয় বর্তমান সময়ের লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান ও মিশরের বড় অংশই ছিল তখনকার কিংডম অব ইসরাঈলের অংশ। ডেভিডের ছেলে (হজরত) সলোমন বা সোলাইমান (আঃ) এর সময়ও তাদের অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর এ-জাতি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
এ-সময় আসিরিয়ানরা ধীরে ধীরে এই অঞ্চলে ঢুকে পড়ে ও দখল করে নেয়। এরপর বিভিন্ন সময় ব্যাবিলনিয়ান, পার্সিয়ান, হেলেনেষ্টিক, রোমান, বাইজেনটাইন, অটোম্যান, বৃটিশ শাসনসহ বিভিন্ন পর্যায় পাড়ি দেয় এই অঞ্চল। আর এর প্রায় অনেকটা সময় জুড়েই ইহুদিদের তাড়া থেতে হয়।
ঈজিপশিয়ান ফারাওদের (কোরানে, ফেরাউন-মুসা আঃ এর ঘটনা) সময় থেকে শুরু করে জার্মানির হিটলারের সময় পর্যন্ত তাদের বিতাড়িত হতে হয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে। তবে এখন যেমন ইহুদিদের সাথে মুসলমানদের সংঘাত চলছে এক সময় তা ছিল কৃশ্চিয়ান ও ইহুদি সংঘাত।
স্পেনে মুসলমানদের রাজত্বে ইহুদিরা খুবই ভালো ছিল। তারা এ-সময় তাদের বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করার ব্যাপক সুযোগ পায়। মুসলমানদের এই উদারতার কথা ফুটে উঠেছে ইহুদিদের লেখা ইতিহাস বইয়ের পাতায়।
শুরু থেকেই বিভিন্ন সমাজে ইহুদিদের ঘৃণিত, অবহেলিত ও খারাপভাবে দেখা হতো। প্রায় প্রতিটি জায়গায় তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকতো।
উগ্র কৃশ্চিয়ানরা তাদের কখনোই সহ্য করতে পারেনি। এদের অনেকেই যিশুর হত্যাকারী হিসেবে ইহুদিদের চিত্রিত করেছে। অনেকেই তাদের অভিশপ্ত জাতি মনে করে।
ইহুদিরা যেহেতু তাড়া খেত বেশী সেহেতু তারা যাযাবর জীবনে স্থায়ী কাজের চেয়ে বুদ্ধিনির্ভর ও কম শারীরিক পরিশ্রমের কাজ বেছে নেয়। ব্যবসার প্রতি কৃশ্চিয়ানদের অনিহা তাদের সামনে বড় সুযোগ এনে দেয়।
তাদের বসবাসের পরিবেশ ছিল খুব খারাপ। ভালো খাবার দাবারও ছিল না। ফলে তারা এমন কাজে আত্মনিয়োগ করে যেখানে বুদ্ধির চর্চা বেশী। ব্যবসা, টাকাপয়সা, লেনদেন, দালালি - এসব কাজে তারা এগিয়ে যায় বেচে থাকার সহজাত প্রবৃত্তির জন্য।
ইহুদি সম্প্রদায়কে ইউরোপে কিভাবে দেখা হতো তার বড় উদাহরণ হতে পারে উইলিয়াম শেকসপিয়ারের “ মার্চেন্ট অব ভেনিস “ নাটকের শাইলক চরিত্রটি।
যে শরীরের মাংশ কেটে তার পাওনা আদায়ের দাবী জানায়। সম্পূর্ণ ভিন্ন সমাজের প্রেক্ষাপটে নিয়ে লেখা রাশিয়ান লেখক নিকোলাই গোগল তার তারাস বুলবা উপন্যাসে আরেক ইহুদি সুযোগ সন্ধানী চরিত্র ইয়ানকেল-কে সৃষ্টি করে দেখিয়েছেন তাদের সম্পর্কে তখনকার শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবিদের মনোভাব।
ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্স, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়মিত তাড়া খেয়ে তাড়া মিডল ইস্টে ঢুকতে থাকে। এর মধ্যে ইউরোপিয়ান একটি চালও ছিলো। কৃশ্চিয়ানরা যেহেতু ইহুদিদের পছন্দ করতো না তাই তারাও চাচ্ছিল মুসলমানদের এলাকায় তাদের ঢুকিয়ে দিতে।
আর প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে যাযাবর জীবনের অবসানও চাচ্ছিলো ইহুদিরা।
এতোগুলো বছর তাদের ঐক্য ধরে রাখার বড়া শক্তি ছিল ধর্ম। বিশ্বের বহু দেশে ছড়িয়ে পড়লেও ইহুদি সম্প্রদায়ের সব সময় স্বপ্ন ছিল তারা তাদের নিজ দেশ ইসরাঈলে ফিরে যাবে যদিও তখনো এর কোনো ভৌগলিক অস্তিত্ব ছিল না। ইসরাঈল তাদের মাতৃভূমি ও ধর্মভূমিই শুধু নয়, তাদের স্বপ্ন ভূমিও বটে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্বপ্ন দেখেছে ইসরাঈল নামের দেশের।
নেক্সট ইয়ার ইন জেরুজালেম - এই শ্লোগান মাথায় রেখে বহু ইহুদি মারা গিয়েছে। ইসরাঈলের জন্য তারা সাধ্যমতো দান করেছে, ধর্ম ও বিশ্বাস দিয়ে নিজেদের এক করে রেখেছে। সংখ্যায় অত্যন্ত কম হওয়ার পরও ক্ষুরধার বুদ্ধি, কৌশল ও মেধার বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে নিজেদের বসিয়েছে।
কোনো মেধাবী ইহুদী ছাত্র বা ছাত্রীর পড়াশুনার জন্য চিন্তা করতে হয় না। এখনো বহু ওয়েব সাইটে এদের জন্য দান গ্রহণ করা হয়।
তারা প্রধানতঃ মাতৃতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখে। কমিউনিটির কেউ বিপদে পড়লে তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এমন অনেক ওয়েব সাইট আছে যেখানে ইহুদি পরিবারগুলোর বংশলতিকা বা ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করতে সাহায্য করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধাওয়া খেয়ে ইহুদিরা বহু দেশে ছড়িয়ে পড়লেও তাদের স্বপ্নভূমির কথা কখনো ভোলোনি। এক্ষেত্রে তারা কট্টর ও চরমপন্থি।
কারণ মিডল ইস্টের কোনো এক জায়গায় তাদের জন্মভূমি ছিলো তিন হাজার বছর আগে সেই যুক্তিতে একটি জায়গার দখল নেয়া একটি অবাস্তব বিষয়। কেননা এর কোনো সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। কিন্তু ইহুদিরা তা তৈরি করে নিয়েছে। তারা বিশ্ব শক্তিকে তাদের পক্ষে কাজে লাগিয়েছে।
ইরাক যখন কুয়েত দখল করে নেয় তখন সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন, কুয়েত ঐতিহাসিকভাবে ইরাকের অংশ।
কিন্তু সে যুক্তি বাতিল হলেও ইহুদিদের যুক্তি বাতিল হয়নি। এ-কারণে ইসরেল রাষ্ট্রটির জন্ম হলো ১৯৪৮ সালে তখন একসঙ্গে আরব দেশগুলো আক্রমন চালিয়ে চরমভাবে ব্যর্থ হয়।
বর্তমান বিশ্বে ইহুদি সম্প্রদায়ের লোক সংখ্যা দেড় কোটির কিছু বেশী। তা-ও তারা ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন দেশে। যেমন আমেরিকায় আছে প্রায় ৬১ লাখ, ইসরেলে আছে প্রায় ৫২ লাখ, কানাডায় আছে প্রায় ৪ লাখ, বৃটেনে প্রায় ৩ লাখসহ ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, অষ্ট্রেলিয়া, পোল্যাণ্ড, রাশিয়া, সাউথ আফ্রিকা, ইউক্রেন, ওয়েস্টার্ণ ইউরোপ, ইথিওপিয়া প্রভৃতি দেশে।
ইহুদীর সম্প্রদায়ের অবদান
জনসংখ্যার দিক দিয়ে ঢাকা শহরের কাছাকাছি হলেও বিশ্বে ইহুদি সম্প্রদায় থেকে যুগে যুগে বেরিয়ে এসেছে অসংখ্য প্রতিভাবান ব্যক্তি। প্রধান ধর্মগুলোর পর পৃথিবীতে যে মতবাদটি সবচেয়ে প্রভাব ফেলেছে সেই কমিউনিজমের স্বপ্নদ্রষ্টা কার্ল মার্কস ইহুদি সম্প্রদায় থেকে এসেছেন। বিশ্বের মানুষকে মুগ্ধ করে রাখা যাদু শিল্পি হুডিনি ও বর্তমানে ডেভিড কপারফিল্ড এসেছেন একই কমিউনিটি থেকে। আর আছে, মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড। লেখকদের মধ্যে আর্থার মিলার, ফ্রানজ কাফকা, জন ষ্টাইনব্যাক যেমন এসেছেন তেমনি এসেছেন সাইন্স ফিকশান জগতের সবচেয়ে আলোচিত লেখক আইজাক আসিমভ।
মিউজিকে ইহুদি মেনুহিনের অসাধারণ ভায়োলিনের পাশাপাশি রিঙ্গো ষ্টার, মার্ক নাফলারের মতো বাদক যেমন এসেছেন তেমনি বব ডিলান, বব মার্লির মতো গায়কও এসেছেন।
মাত্র কয়েকজনের নাম দেওয়া হলো। এ-ধরণের নাম অসংখ্য আছে।
ইহুদি কমিউনিটির সদস্যদের হাতে মেডিসিন, ফিজিক্স, কেমিষ্ট্রি, ইকোনোমিক্স, লিটারেচার ও পিচ বিভাগে এখন পর্যন্ত ১৭৫টিরও বেশী নোবেল পুরষ্কার এসেছে। এ থেকে তাদের মেধার বিস্তার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া সম্ভব।
ইসরেলের প্রয়োজনে এসব বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, মিডিয়া মুঘল, রাজনীতিবিদ সবাই মিলিতভাবে তাদের স্বপ্নভূমিকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। তারা যে যেই মতেরই হোক না কেন, এ-বিষয়ে তাদের কোন মতভেদ থাকে না। ফলে হাজার অপরাধ করার পরও ইসরেলকে স্পর্শ করা যায় না। শুধু আবেগ বা অভিশাপ দিয়ে ইসরেলকে দমন করা সম্ভব নয়। কেননা এর ভূমিটুকু আছে মিডল ইস্টে কিন্তু এর নিয়ন্ত্রকরা আছেন বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।
মুসলমান অধ্যুষিত মিডল ইস্টে ছোট একটি রাষ্ট্র হলেও ইসরেলকে স্পর্শ করতে পারে না কেউ। ইসরেল প্রতিষ্টার সময় ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৬, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সালে আরবদের সঙ্গে ইসরেলের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধগুলোতে ইসরেল এগিয়ে যায়। আরবরা কিছুই করতে পারেনি বরং অনেক সময় নিজেদের জায়গা হারিয়েছে।
প্যালেষ্টিনিয়ানদের নিজ আবাস ভূমি থেকে উৎখাত করে জুইশ (Jewish) কমিউনিটি বা ইহুদি সম্প্রদায়ের নিজস্ব আবাসভূমি ইসরেল সৃষ্টি ও তাকে রক্ষা করার প্রতিটি পর্যায়ে পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে আমেরিকা, সবসময়ই সর্বাত্মক সমর্থন যুগিয়ে এসেছে।
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন, পরোক্ষভাবে ইহুদিরাই বিশ্বকে শাসন করছে। একটি সম্প্রদায়ের অল্প কিছু মানুষ কিভাবে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরো বলা হয়, আমেরিকা পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করে আর আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রণ করে জুইশ কমিউনিটি।
বিশ্বের অস্ত্র, মিডিয়া, ব্যাংক থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই জুইশ কমিউনিটির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে পুরোপুরি। আর এ কারণে গত ৫০ বছরেরও বেশী সময় ধরে প্যালেষ্টিনিয়ানদের উপর যে নিপীড়ন তারা চালিয়েছে তাকে ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন (Clash of Civilization)-এর মোড়কে ঢুকিয়ে বৈধ করে নিয়েছে পশ্চিমি সমাজ।
আমরিকার ইসরেল প্রীতি
বিশ্বের নিয়ন্ত্রক আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তি আমেরিকার প্রেসিডেন্টগণ বিশেষ করে জর্জ বুশ বরাবরই প্রকাশ্যে ইহুদিদের সমর্থন করে এসেছেন। আমেরিকা সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইস তার ইসরেল সফরকে বর্ণনা করেন নিজের বাড়িতে ফিরে আসা বলে।
বুশ প্রশাসনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদেই বসে আছেন জুইশ কমিউনিটির সদস্যরা। এরা আছেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজার, চীফ পলিসি ডিরেক্টর, পলিটিক্যাল মিলিটারি এফেয়ার্স কর্মকর্তা, বাজেট ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা, ফরেন সার্ভিস ডিরেক্টর, হোয়াইট হাউজের স্পিচ রাইটারসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ এবং পলিসি নির্ধারণের পদগুলোতে। শুধু ভূমিতে নয়, মহাশূন্যে কাজ করার প্রতিষ্ঠান নাসার এডমিনিষ্ট্রেটর হিসেবে ডেনিয়েল গোল্ডিন ইসরেলের স্যাটেলাইট পাঠানোতে অনেক ছাড় দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক তাদের দখলে। বছর কয়েক আগে দি ইউনাইটেড জুইশ কমিউনিটি ঘোষণা দিয়েছিল, ২০০৭ সালে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটিতে আরে ২৫ মিলিয়ন ডলারের একটি ফান্ড দেবে।
ফলে আমেরিকার কেউ চাইলেও এদের কিছু করতে পারবে না। বরং জুইশ কমিউনিটি বা ইহুদি সম্প্রদাকে হাতে না-রাখলে ক্ষমতায় টেকা যাবে না। এসব কারণে শুধু জুইশ কমিইনিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসেডেন্টের প্রশাসনের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যেতে হয়।
আমেরিকার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে মূলতঃ কর্পোরেট হাউজগুলো। তারা প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত বানাতে পারে, সরাতে পারে। এসব কর্পোরেট হাউজগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় এদের মালিক কিংবা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কম্পানিগুলোর মূল দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা চীফ এক্সজিকিউটিভ অফিসার, সিইও হলেন জুইশ কমিউনিটির মানুষ। এ কথা মাইক্রোসফটের ক্ষেত্রে যেমন সত্য তেমনি জাপানিজ কোম্পানি সনির আমেরিকান অফিসের জন্যও সত্য। প্রায় অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পদে জুইশ আমেরিকানরা কাজ করছেন।
জুইশ কমিউনিটির ক্ষমতাধর বিলিয়নেয়াররা মিলিতভাবে যে-কোনো ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারেন। সেটা হতে পারে অর্থে, অস্ত্রে কিংবা মিডিয়ায়।
ইহুদীদের বিশ্ব মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ
বিশ্বের এবং বিশেষ করে আমেরিকার জনগনের মূল নিয়ন্ত্রক মিডিয়া। তারা টিভি দেখে, মুভি দেখে, অনলাইনে কিছু নির্দিষ্ট সাইট দেখে এবং পেপার পড়ে। স্কলারদের বাদ দিলে সাধারণ আমেরিকানদের মন এবং মনন পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে মিডিয়া, বিশেষ করে টিভি চ্যানেলগুলো।
আমেরিকার অন্যতম বড় মিডিয়া গ্রুপের নাম টাইম-ওয়ার্নার। এ গ্রুপের অধীনে পত্রিকা, অনলাইন বিজনেস, মুভি প্রডাকশন হাউজ এবং টিভি চ্যানেল সবই আছে। যারা নিয়মিত টিভি দেখেন বা মুভি সম্পর্কে খোঁজ রাখেন তাদের কাছে ওয়ার্নার ব্রাদার্স নামটা খুবই পরিচিত। প্রায় ১০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন ইহুদি এবং বর্তমান চীফ এক্সজিকিউটিভ অফিসার বা সিইও জেরাল্ড লেভিন-সহ এর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পদই ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে।
টাইম ওয়ার্নারের আরেক প্রতিষ্ঠান আমেরিকা অনলাইন (AOL)।
এই প্রতিষ্ঠানটি ৩৪ মিলিয়ন আমেরিকান সাবস্ক্রাইভার (Subscriber) নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে পরিচিত। টিনএজার, নারী ও শিশুদের টার্গেট করে নামা এওএল (AOL) এখন জুইশ কমিউনিটির প্ল্যাটফরমে পরিণত হয়েছে।
নব্বই এর দশকে ইরাক ওয়ার কাভার করে আমেরিকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে CNN টিভি চ্যানেলটি। এর মালিক টেড টার্নার বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেলেও এক পর্যায়ে চ্যানেলটি চালাতে ব্যর্থ হয়ে আত্মসমর্পণ করেন টাইম ওয়ার্নার গ্রুপের কাছে। তিনি নামে থাকলেও মূল ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছে টাইম ওয়ার্নার।
৭০ মিলিয়ন দর্শকের চ্যানেল CNN কিভাবে খবর বিকৃত করে তার একটি ছোট উদাহরণ হিসেবে আসতে পারে নাইন ইলেভেন টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দৃশ্য দেখানো হচ্ছিলো প্রতিক্রিয়া হিসেবে। হঠাৎ দেখা গেল প্যালেষ্টাইনিরা আকাশে গুলি ছুড়ে আনন্দ প্রকাশ করছে। এতে বোঝা যায় তারা টুইন টাওয়ার ধ্বংসে খুশী। কিছুদিন পর CNN খুব গুরুত্বহীনভাবে টেলপে জানায়, প্যালেষ্টিনিয়ান ফুটেজটি ছিলো পুরনো।
তা ভুল করে সেদিন দেখানো হয়। কিন্তু ততদিনে পৃথিবীতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে এ কাজ মুসলমানদের।
আমেরিকার সবচেয়ে বড় পে-টিভি চ্যানেলের নাম এইচবিও (HBO) । যা বাংলাদেশেও খুবই জনপ্রিয়। আমেরিকায় এর দর্শক ২৬ মিলিয়ন।
HBO চ্যানেলটি টাইম ওয়ার্নার-এর অর্থাৎ পুরোপুরি ইহুদি নিয়ন্ত্রিত এবং এর কথিত প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে পরিচিত CINEMAX আরেকটি টাইম ওয়ার্নারের অঙ্গ সংগঠন। আমেরিকার সবচেয়ে বড় মিউজিক রেকর্ড কোম্পানি পলিগ্রাম মিউজিকও তাদের দখলে।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ম্যাগাজিনের নাম এলে প্রথমেই উচ্চারিত হয় যে নামটি তা হলো টাইম। এই পত্রিকাসহ টাইম ওয়ার্নার গ্রুপে আছে লাইফ, স্পোর্টস ইলাসট্রেটেড, পিপল - এর মতো বিশ্বনন্দিত পত্রিকাসহ ৫০ টি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন। টাইমসহ এ-ম্যাগাজিনগুলোর মাথার উপরে বসে এডিটর ইন চীফ হিসেবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন নরম্যান পার্লষ্টাইন।
যিনি একজন ইহুদি।
বিশ্বজুড়ে শিশুকিশোরদের মনে রঙিন স্বপ্ন তৈরি করে যে প্রতিষ্ঠানটি তার নাম ওয়াল্ট ডিজনি কম্পানি। এই কম্পানির ওয়াল্ট ডিজনি টেলিভিশন, টাচষ্টোন টেলিভিশান, বুয়েনা ভিসটা (Buena Vista) টেলিভিশনের আছে কমপক্ষে ১০০ মিলিয়ন নিয়মিত দর্শক। সিনেমা তৈরিতে কাজ করছে ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স, টাচষ্টোন পিকচার্স, হলিউড পিকচার্স, ক্যারাভান পিকচার্সসহ আরো অনেক কিছু। ইনডিপেনডেন্ট মুভি তৈরিতে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান Miramax Films-ও কিনে নিয়েছে ডিজনি।
বিকল্প ধারার মুভি তৈরিতে Miramax অত্যন্ত জনপ্রিয়। ওয়াল্ট ডিজনি কম্পানির বর্তমান সিইও একজন ইহুদি। তার নাম মাইকেল আইসনার।
আমেরিকার আরেকটি প্রভাবশালী মিডিয়া গ্রুপের নাম ভিয়াকম (Viacom)। এর প্রধান সুমনার রেডষ্টোন-সহ বড়বড় অধিকাংশ পদেই আছেন ইহুদিরা।
জনপ্রিয় সিবিএস টেলিভিশন নেটওয়ার্কসহ ৩৯টি টেলিভিশন ষ্টেশন, ২০০টি সহযোগী ষ্টেশন, ১৮৫টি রেডিও ষ্টেশন, সিনেমা তৈরির বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট পিকচার্স, - তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন। ভিয়াকমের আর এক ইহুদি কো-প্রেসিডেন্ট টম ফ্রেসটন-এর নিয়ন্ত্রণে আছে মিউজিক চ্যানেল এমটিভি। মুভি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল মিলে গিয়েছে এনবিসি গ্রুপের সঙ্গে। এনবিসি খুবই প্রভাবশালী টিভি চ্যানেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এদের মূল সংগঠন সিগ্রাম (Seagram) সহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন ইহুদি মিডিয়া মুগল এডগার ব্রনফম্যান জুনিয়র।
তার বাবা এডগার ব্রনফম্যান সিনিয়র হলেন ওয়ার্ল্ড জুইশ কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট।
ইরাকের বিরুদ্ধে আমেরিকার আগ্রাসনকে আমেরিকানদের কাছে বৈধ হিসেবে চিত্রায়িত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ফক্স নিউজ। বিশ্ববিখ্যাত মিডিয়া মুগল রুপার্ট মারডকের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই জুইশদের সমর্থন দিয়ে এসেছে। কথিত আছে, মারডকের মা ইহুদি ছিলেন। বাংলাদেশে জনপ্রিয় ষ্টারপ্লাস-সহ বিভিন্ন দেশে নানান ধরণের এমনকি বিপরীতধর্মী চ্যানেলও তিনি পরিচালনা করেন।
ভারতের ষ্টার প্লাস চ্যানেলের লোগো এবং ইহুদিদের প্রধান ধর্মীয় প্রতীক ষ্টার অব ডেভিড এর সাদৃশ্য লক্ষ্যণীয়।
টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে এবিসি, স্পোর্টস চ্যানেল, ইএসপিএন, ইতিহাস বিষয়ক হিস্টৃ চ্যানেলসহ আমেরিকার প্রভাবশালী অধিকাংশ টিভি-ই ইহুদিরা নিয়ন্ত্রণ করছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। আমেরিকায় দৈনিক পত্রিকা বিক্রি হয় প্রতিদিন কমপক্ষে ৫৮ মিলিয়ন কপি। জাতীয় ও স্থানীয় মিলিয়ে দেড় হাজার পত্রিকা সেখানে প্রকাশিত হয়। এসব পত্রিকাসহ বিশ্বের অধিকাংশ পত্রিকা যে নিউজ সার্ভিসের সাহায্য নেয় তার নাম দি এসোসিয়েটেড প্রেস বা এপি (AP)।
এ প্রতিষ্ঠানটি এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন এর ইহুদি ম্যানেজিং এডিটর ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল সিলভারম্যান। তিনি প্রতিদিনের খবর কী যাবে, না-যাবে তা ঠিক করেন।
আমেরিকার পত্রিকাগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী তিনটি পত্রিকা হলো নিউইয়র্ক টাইমস্ , ওয়াল ষ্টৃট জার্ণাল এবং ওয়াশিংটন পোষ্ট। এ তিনটি পত্রিকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন ইহুদিদের হাতে।
ওয়াটারগেট কেলেংকারীর জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলো ওয়াশিংটন পোষ্ট।
এর বর্তমান সিইও ডোনাল্ড গ্রেহাম ইহুদি মালিকানার তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে কাজ করছেন। উগ্রবাদী ইহুদী হিসেবে তিনি পরিচিত। ওয়াশিংটন পোষ্ট আরও অনেক পত্রিকা প্রকাশ করে। এর মধ্যে আর্মিদের জন্যই করে ১১টি পত্রিকা। এই গ্রুপের আরেকটি সাপ্তাহিক পত্রিকা পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত।
পত্রিকাটির ইনটারন্যাশনাল এডিশনের সম্পাদক হিসেবে মুসলমান নাম ফরিদ জাকারিয়া দেখে বা কিছু ক্ষেত্রে এর উদারতার জন্য অনেকেই একে লিবারাল পত্রিকা বা ডেমক্রেট সমর্থক হিসেবে মনে করেন। টাইম এর পরে বিশ্বের দ্বিতীয় প্রভাবশালী এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটির নাম নিউজউইক।
আমেরিকার রাজনৈতিক জগতে প্রভাবশালী নিউইয়র্ক টাইমস্-এর প্রকাশক প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ইহুদিরা হয়ে আসছেন। বর্তমান প্রকাশক ও চেয়ারম্যান আর্থার শুলজবার্জার প্রসিডেন্ট ও সিইও রাসেল টি লুইস এবং ভাইস চেয়ারম্যান মাইকেল গোলডেন সবাই ইহুদি।
বিশ্বের অর্থনীতি যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করে ওয়াল ষ্টৃট জার্নাল।
আঠার লাখেরও বেশী কপি চলা এই পত্রিকার ইহুদি প্রকাশক ও চেয়ারম্যান পিটার আর কান তেত্রিশটিরও বেশী পত্রিকা ও প্রকাশনা সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন।
আমেরিকান মুভি ইণ্ডাষ্টৃ-র শুধু নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই নয়, এর মুভি নির্মাতা, পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যেও রয়েছে ইহুদিদের প্রাধান্য। বিশ্বখ্যাত অভিনেতা মার্লোন ব্রান্ডো কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, হলিউড চালায় ইহুদিরা। এর মালিকও ইহুদিরা।
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ট্যালেনটেড পরিচালক হিসেবে পরিচিত ষ্টিভেন স্পিলবার্গ আরো দুই ইহুদি ব্যবসায়ী ডেভিড গেফিন ও জেফরি ক্যাজেনবার্গ-কে নিয়ে গড়ে তুলেছেন তার কোম্পানি ডৃমওয়ার্কস্ এসকেজি।
হলিউডে এমন অসংখ্য ব্যক্তি আছেন যারা জুইশ কমিউনিটি থেকে এসেছেন। পরিচালক বিলি ওয়াল্ডার, স্ট্যানলি কুবরিক, রোমান পোলানস্কি, উডি এলেন যেমন আছেন এই তালিকায় তেমনি আছেন কার্ক ডগলাস, মাইকেল ডগলাস, পিটার সেলার্স, জেসিকা টেনডি, এলিজাবেথ টেইলর, পল নিউম্যান, বিলি কৃস্টাল, ডাস্টিন হফম্যান, জেরি লুইস, রবিন উইলিয়ামস্। মায়ের দিক থেকে জুইশ কমিউনিটি থেকে এসেছেন রবার্ট ডি নিরো, হ্যারিসন ফোর্ড, ড্যানিয়েল ডে লুইস এর মতো সুপারষ্টাররা। এই তালিকা অনেক লম্বা। সহজে শেষ হবে না।
এসব ষ্টারের অংশগ্রহণই শুধু নয়, জুইশদের পক্ষে জনমত গঠনে হলিউড বা অন্যান্য অঞ্চলের মুভিগুলো ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এসব মুভির নির্মাণ কৌশল, গুণগত মান, বুদ্ধির প্রয়োগ ও বক্তব্য সবই উঁচু মাপের। ইহুদিদের নিয়ে যে বিষয়টি বেশী জায়গা করে নিয়েছে তা হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি নির্যাতন বা হলোকস্ট (Holocaust) । বলা হয়, এ সময় প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা ও অসংখ্য ইহুদি নর-নারী ও শিশুকে নির্যাতন করে হিটলার-মুসোলিনির অক্ষ শক্তি। যুদ্ধ চলার সময়ই বিশ্বখ্যাত মুভি নির্মাতা চার্লি চ্যাপলিন দি গ্রেট ডিকটেটর নির্মাণ করে দুনিয়া কাপিয়ে দেন।
হিটলার এবং গরীব ইহুদি নাপিত দুই চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন। জুইশদের প্রতি তিনি অনুরক্ত কি-না এই ধরণের প্রশ্ন করা হলে চ্যাপলিন উত্তর দিয়েছিলেন, হিটলারের বিরোধী হওয়ার জন্য ইহুদি হওয়ার প্রয়োজন নেই।
যুদ্ধের ৬০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো হলোকস্ট নিয়ে অসংখ্য মুভি তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে এ ধরনের একাধিক মুভি অস্কার পুরষ্কার পেয়েছে। রোমান পোলানস্কির দি পিয়ানিস্ট, ইটালিয়ান মুভি ডিরেক্টর রবার্টো বেনিনির আধুনিক ক্লাসিক মুভি হিসেবে বিবেচিত লাইফ ইজ বিউটিফুল, এর আগে স্পিলবার্গের শিলডার্স লিস্ট এর অন্যতম।
স্পিলবার্গ বছর কয়েক আগে তৈরি করেছেন মিউনিখ নামের একটি মুভি যেখানে প্যালিস্টিনিয়ান গেরিলাদের হামলায় ইসরেলি এথলেটদের হত্যা করার বিষয়টি এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে টেন কমান্ডমেন্টস্ , ফিডলার অন দি রুফ , ফেটলেস , ডাউনফল-এর মতো মুভিগুলোতে ইহুদিদের দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে।
এসব মুভির ক্ষমতা এত বেশী যে, তা যে কোন দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পারে। তারা যেভাবে চিন্তা করতে বলবে, সবাইকে সেভাবেই চিন্তা করতে হবে। শক্তি, বুদ্ধি এবং আবেগ সবকিছুই জুইশ কমিউনিটি মুঠোবন্দী করে রেখেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিতে ব্যাপকভাবে ইহুদি নিধন শুরু হয়। এসময় অসংখ্য ইহুদি জার্মানি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে আছেন গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। বিশ্ব জুড়ে ইহুদিদের উপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, - There are no German Jews, there are no Russian Jews, there are no American Jews …….. There are in fact only Jews.
অর্থাৎ জার্মান ইহুদি বলে কিছু নেই, রাশিয়ান বা আমেরিকান ইহুদি বলেও নয় .... আসলে ইহুদিরা সবাই এক। মাত্র ৫০/৬০ বছর পেরিয়ে এসেই কথার মানেটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে।
আসলেই জুইশরা সব এক। তবে তারা এখন নির্যাতিত হচ্ছে না। আর নিয়তির পরিহাস এই যে এখন তারা নির্যাতন করছে এবং বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে। মূলতঃ ফক্স নিউজ যিনি পরিচালনা করেন তার নাম পিটার শেরনিন। অবধারিতভাবেই তিনি ইহুদি।
রুপার্ট মারডকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সারা বিশ্বের অসংখ্য পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেল। ঈজিপশিয়ান ফারাওদের (কোরানে, ফেরাউন-মুসা আঃ এর ঘটনা) সময় থেকে শুরু করে জার্মানির হিটলারের সময় পর্যন্ত তাদের বিতাড়িত হতে হয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে। তবে এখন যেমন ইহুদিদের সাথে মুসলমানদের সংঘাত চলছে এক সময় তা ছিল কৃশ্চিয়ান ও ইহুদি সংঘাত। স্পেনে মুসলমানদের রাজত্বে ইহুদিরা খুবই ভালো ছিল। তারা এ-সময় তাদের বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করার ব্যাপক সুযোগ পায়।
মুসলমানদের এই উদারতার কথা ফুটে উঠেছে ইহুদিদের লেখা ইতিহাস বইয়ের পাতায়।
শুরু থেকেই বিভিন্ন সমাজে ইহুদিদের ঘৃণিত, অবহেলিত ও খারাপভাবে দেখা হতো। প্রায় প্রতিটি জায়গায় তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকতো। উগ্র কৃশ্চিয়ানরা তাদের কখনোই সহ্য করতে পারেনি। এদের অনেকেই যিশুর হত্যাকারী হিসেবে ইহুদিদের চিত্রিত করেছে।
অনেকেই তাদের অভিশপ্ত জাতি মনে করে। উপরের কথাগুলোর আলোকে ইহুদিদের প্রধানতম শত্রু খৃস্টানরা হওয়াই বাঞ্ছনীয় ছিলো, কিন্তু, মুসলমানদের সাথে তাদের দ্বন্দ্ব বা বৈরিতার কারণ কী?
আরব-ইসরাইল দ্বন্দ্বের কারণ
ইহুদি খৃস্টানদের মধ্যে স্বজাতির প্রতি উগ্র শ্রেষ্ঠত্বের (Racism) অনুরাগ জন্মে বাইবেলের বিকৃত পাঠ হতে। দেখুন নিচে:
But he who was of the bondwoman was born after the flesh; but he of the free woman was by promise. (Galatians: 4:23): Bible, King James Version: 18 Feb 1997)
Now we, brethren, as Isaac was, are the children of promise (Galatians: 4:28): Bible, King James Version: 18 Feb 1997)
So then, brethren, we are not children of the bondwoman, but of the free. (Galatians 4:31): Bible, King James Version: 18 Feb 1997) বাংলায় অনুবাদ ও বিস্তারিত লিখলে দাড়ায়, হজরত ইব্রাহিম (আঃ) (বাইবেলে, Abraham) - এর সারা ও হাজেরা (বাইবেলে, Sarah এবং Hagar) নাম্নী দু’জন স্ত্রী ছিলেন। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী ইহুদিদের ধারণা এই যে, সারা ছিলেন ইব্রাহীম (আঃ)-এর স্বাধীন স্ত্রী আর হাজেরা ছিলেন তাঁর বাঁদী। উল্লেখ্য যে ইহুদিরা সারার মাধ্যমে এবং আরবরা হাজেরার মাধ্যমে ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর।
কাজে কাজেই ইহুদি-খৃস্টানদের বদ্ধমূল ধারণা এই যে, স্বাধীন স্ত্রীর ছেলে হজরত ইসহাক (আঃ) (Issac)-এর বংশধর "ইয়াহুদিরা" হল উৎকৃষ্টতর আর বাঁদীর ছেলে ইসমাইলের বংশধর "আরবরা" নিকৃষ্টতর। প্রকৃতপক্ষে, হাজেরার বংশগত আভিজাত্য কম নয়। তিনি ছিলেন মিশরের সম্রাটের কন্যা। সম্রাট নম্রতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে স্বীয় কন্যাকে খাদেমা বলে হজরত সারার হাতে তুলে দিলেও পরে তো তিনি ইব্রাহীম (আঃ)-এর স্বাধীন স্ত্রী হয়েছিলেন। (ফয়জুল বারী/ বুখারী শরীফ)
বাইবেলেও এর স্বীকৃতি আছে।
দেখুন : Gen.16 (3 , 15, 16 )
[3] And Sarai Abram's wife took Hagar her maid the Egyptian, after Abram had dwelt ten years in the land of Canaan, and gave her to her husband Abram to be his wife.
[15] And Hagar bare Abram a son: and Abram called his son's name, which Hagar bare, Ishmael.
[16] And Abram was fourscore and six years old, when Hagar bare Ishmael to Abram.
আর হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর আদি পিতা হজরত ইসমাইল (আঃ) সম্পর্কে নকল তৌরাতে বর্ণনা এসেছে এভাবে, -
[12] And he will be a wild man; his hand will be against every man, and every man's hand against him; and he shall dwell in the presence of all his brethren. (Gen 16:12)
(... একটি মানুষের আকৃতিতে বন্য গর্দভ। তার হাত ও কাজ পৃথিবীর যাবতীয় মানুষের বিরুদ্ধে এবং পৃথিবীর যাবতীয় মানুষের ঘৃণা ও প্রতিরোধ তার বিরুদ্ধে ..................... ) (Gen 16:12)
(ইহুদি রেসিজম এর একটি নমুনা)
কিন্তু, কোরআনে হজরত ইসমাইল (আঃ) এর চরিত্র সম্পর্কে আছে ভিন্ন বর্ণনা:
And mention in the Book (the Qur'ân) Ismâ'il (Ishmael). Verily! he was true to what he promised, and he was a Messenger, (and) a Prophet. (54) And he used to enjoin on his family and his people As-Salât (the prayers) and the Zakât, and his Lord was pleased with him. (19:54)
(এই কিতাবে ইসমাঈলের কথা বর্ণনা করুন, তিনি প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং তিনি ছিলেন রসূল, নবী। তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে নামায ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিতেন এবং তিনি তাঁর পালনকর্তার কাছে পছন্দনীয় ছিলেন। ) (১৯:৫৪)
(86) And also some of their fathers and their progeny and their brethren, We chose them, and We guided them to a Straight Path. (6:86)
(আর ও তাদের কিছু সংখ্যক পিতৃপুরুষ, সন্তান-সন্ততি ও ভ্রাতাদেরকে; আমি তাদেরকে মনোনীত করেছি এবং সরল পথ প্রদর্শন করেছি। ) (৬:৮৬)
(101) And, when he (his son) was old enough to walk with him, he said: "O my son! I have seen in a dream that I am slaughtering you (offer you in sacrifice to Allâh), so look what you think!" He said: "O my father! Do that which you are commanded, Inshâ' Allâh (if Allâh will), you shall find me of As-Sâbirun (the patient)." (37:101)
(অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ।
সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। ) (৩৭:১০১)
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে স্বজাতির উগ্র শ্রেষ্ঠত্বের (Racism) আর একটি নমুনা দেখুনঃ
Deuteronomy 11:18-25, (তোমাদের প্রভু তোমাদের জন্য তোমাদের সামনে জাতির পর জাতিকে পতন ঘটিয়ে দেবে। তোমরা তোমাদের চাইতে সংখ্যায় বৃহত্তর জাতিকে পদানত করবে, পৃথিবীর যে যে স্থানে তোমাদের পদচিহ্ন পড়বে, তোমরা সে সব স্থানের মালিকানা প্রাপ্ত হবে। তোমাদের ভূমিটির সীমানা হবে লেবাননের বনাঞ্চল হতে এবং নদী হতে ইয়োফ্রেতিশ (ইরাক) নদী পর্যন্ত।
কোন জাতি তোমাদের সামনে দাড়াবে না, তোমাদের প্রভু জগৎবাসীর মনে তোমাদের সম্পর্কে ভীতি সৃষ্টি করে দেবেন ................ ।
অন্য দিকে, হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বাইবেল কী বলছে দেখুনঃ
[হে মুসা] আমি উহাদের জন্য উহাদের (ইহুদিদের) ভ্রাতৃ [আরব] গণের মধ্য হইতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী [নবী] উৎপন্ন করিব (Deut 18:18)
[18] I will raise them up a Prophet from among their brethren, like unto thee, and will put my words in his mouth; and he shall speak unto them all that I shall command him. (Deut 18:18)
একই কথা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়ও বর্ণিত হয়েছে বাইবেলে যেমন,
[22] For Moses truly said unto the fathers, A prophet shall the Lord your God raise up unto you of your brethren, like unto me; him shall ye hear in all things whatsoever he shall say unto you. (The Acts 3:22)
[37] This is that Moses, which said unto the children of Israel, A prophet shall the Lord your God raise up unto you of your brethren, like unto me; him shall ye hear. (The Acts7:37)
অথচ, প্রায় তিন হাজার বছর যাবৎ ইহুদিরা তাদের আরব ভাইদের প্রতি ঘৃণা ও অবজ্ঞার ভাব পোষণ করে আসছে; বিশেষ করে ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থগুলোতে উল্লিখিত প্রতিশ্রুত (Promised) নবী মোহাম্মদ (সাঃ) ইহুদি বংশ হতে না-এসে আরব জাতির মধ্য হতে আসায় ইহুদি-খৃস্টানদের বৈরী মনোভাব চরমে পৌঁছে গেল। তাই ইসমাইল (আঃ) এবং তাঁর বংশধর মোহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কিত বিষয় সমূহ বিকৃত করে, আর না-হয় মুছে ফেলে বাইবেল রদবদল করতে শুরু করে দিল। উল্লেখ্য বাইবেলের অনেকগুলো ভারশান (Version) বাজারে প্রচলিত আছে। অর্থাৎ “ বাইবেল ” মুসলমানদের মত একটি মাত্র ধর্মগ্রন্থ “কোরানের ” মতো নয়।
ছোট্ট একটি রেফারেন্স দিলেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যাবে। খৃস্টধ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।