সামনে আছে অনেক কি ছু, দেখতে চাই আর ও কিছু
বৃহস্প্রতিবার কাজ শেষে মালিক সবাইকে নিয়ে খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিল । ৩ দিন আগে মালিকের বাবা মারা গিয়েছে । তাই মালিকের মন খারাপ ছিল । খাওয়া দাওয়ার সাথে প্রচুর ড্রিং করেছি সবাই প্রায় রাত সাড়ে এগারটা পর্যন্ত । এর পর যে যার মত চলে গিয়েছে ।
আমি ও শিপন ভাই আমাদের বাসায় চলে আসি । ড্রিং করায় আমরা দুজনই ছিলাম কিছুটা ভারসাম্যহীন । বাসায় এসে শিপন ভাই দেশে তার বান্ধবীর সাথে ফোনে কথা বলা শুরু করেন , যার সাথে তার বিয়ে হবার কথা । আমি ঘুমিয়ে পড়ি । কিছুক্ষন পর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে শিপন ভাইয়ের ফোনে বড় বড় কথার কারনে ।
আমি শিপন ভাইকে বললাম শিপন ভাই ঘুমান অনেক রাত হয়েছে কাল আবার ডিউটি আছে । উনি উত্তেজিত হয়ে আমাকে গালাগালি শুরু করেন । আমিও পাল্টা গালি দেই । আসলে শিপন ভাই খুব ভালো মানুষ । ড্রিং করায় হয়তো এমন করছেন ।
আমার ও একই অবস্হা ড্রিং করায় আমিও বেসামাল । দু'জনে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে হাতাহাতি শুরু করি । ৩ বছর এক সাথে কাজ করি যা এর আগে কখনই হয়নি ।
এক পর্যায়ে শিপন ভাই রুম থেকে বাইর হয়ে ফ্যাক্টোরীতে গিয়ে হাতুরী নিয়ে আসছেন আর গালাগালি করছেন বলছেন , আজ আমাকে মেরে ফেলবেন । আমি দৌড়ে গিয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেই ।
উনার হাত থেকে হাতুরী নিয়ে উনার মাথায় বাড়ি দেই । রক্ত বাইর হতে থাকে । আরও কয়েকটা বাড়ি দেই উনার মাথায় ও শরীরে । দেখি উনি আর নড়াছড়া করেন না । এবার আমি বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি ।
ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম ভাঙলে দেখি রুমে লাইট জ্বলছে । কি ব্যাপার শিপন ভাই কোথায় ? হঠাৎ মনে পড়ে রাত্রেতো আমরা মারামারি করেছিলাম । দৌড়ে বাইরে গিয়ে দেখি অফিসের সামনে শিপন ভাই পড়ে আছে । আমি নাড়া দিয়ে দেখি শক্ত হয়ে আছেন । আমি বুঝতে পারি শিপন ভাই মরে গেছেন ।
আমি ভয় পেয়ে যাই । হায় হায় আমি একি করলাম । শিপন ভাইকে আমি মেরে ফেললাম ? অপরাধের পর সব অপরাধীই বাঁচার চেষ্টা করে আমি ও তাই করলাম । শিপন ভাইর লাশ টেনে নিয়ে ফ্যাক্টোরীর আবর্জনা ফেলার স্হনে রেখে লবন ছিটিয়ে দিয়ে রুমে এসে কিছু কাপড়চোপড় নিয়ে টেক্সি কল করে আমি পালিয়ে যাই ...... ।
ধরাপড়ার পর থানা হাজতে দেখা করতে যাওয়া লোকজনের কাছে এভাবেই ঘটনার বর্ননা করেছে এই ঘাতক ।
প্রিয় পাঠক ,ঘাতকের জবান বন্দীতে যে রোমহর্ষক,মর্মান্তিক ঘটনার বিবরন শুনলেনতা দক্ষিন কোরিয়ার উজম্বু সিটির নারে আপাত এলাকায় গত ১৭ই এপ্রিল বৃহস্প্রতিবাররাটে সংঘঠিত বাংলাদেশী যুবক আক্তার হোসেন শিপন (৩৪)হত্যাকান্ডের ঘাতক মাসুদের (৩২)জবানব্দী। শিপন এবং মাসুদ গত প্রায় ৩ বছর এক সাথে এই ফ্যাক্টোরীতে কাজ করতো । দু জনের মধ্যে মোটামুটি ভাল সম্পর্ক ছিল বলে তাদের বন্ধু বান্ধবরা জানিয়েছে ।
ভাগ্য অন্মেষনে শিপন ১৯৯৯ সালের কোন এক সকালে প্রিয় দেশ , প্রিয় মাটি,প্রিয় মা-বাবা ,ভাই বোন ,আত্নীয়স্বজনদের ছেড়ে নোয়াখালি জেলার চাটখিল থকে একবুক স্বপ্ব আর উজ্জল ভবিষ্যতের আসায় শিপন এসেছিল এই কোরিয়ায় । চোখে মুখে ছিল যার সোনালী স্বপ্ন সেই তরতাজা যুবক শিপন এখন হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে অনাদরে ।
৬ ভাই ৪ বোনের মধ্যে তৃতীয় শিপনের দেশে যাওয়ার কথা ছিল কিছু দিনের মধ্যেই । যার সাথে ফোনে কতা বলার সুত্রপাত থেকে এই হত্যাকান্ড সেই বান্ধবীর সাথে শিপনের বিয়ের কথাবার্তা পাকাপোক্ত হয়েছিল । বান্ধবীর হাতে মেহেদীর রং আর গলায় মালা পড়িয়ে দেওয়ার আগেই শিপন চলে গেছে এমন এক যায়গায় যেখান থেকে আর কেউ ফিরে আসেনা । শিপনরা ৩ ভাই কোরিয়াতে ছিল । ছোট ভাইটি কিছি দিন আগে ধরা পড়ে দেশে চলে গেছে ।
অন্য ভাইটি ভাইয়ের হত্যাকান্ডের পর এখন পাগল প্রায় ।
মাসুদের দেশের বাড়ী মুন্সগন্জ জেলার বিক্রমপুরে । প্রায়১২ বছর আগে মাসুদ ও ভাগ্য অন্মেষনে কোরিয়ায় আসে । তার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা সম্ভব হয়নি । এই হত্যাকান্ডের ফলে মাসুদ এখন একজন খুনী ,ঘাতক হিসাবে কোরিয়ার জেলে বন্দী ।
তার বিচার কিভাবে হে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি ।
যে ভাবে ধরা হয় ঘাতককেঃ
প্রতিদিনকার মত মালিক সকাল ৮টায় ফ্যাক্টোরীতে আসেন । অফিসের সামনে রক্ত দেখে মালিক ভয় পেয়ে যান । ডিউটির সময় হয়ে গেলেও ফ্যাক্টোরীর দরজা খোলা নাই কারন কি ? মালিক শিপনকে ডাকতে ডাকতে বাসার সামনে গিয়ে দেখেন বাসার দরজা খোলা কিন্তু বাসায় কেউ নেই । মালিক এবার আরও ভয় পেয়ে যান ।
খোজাখুঁজি করতে করতে দেখতে পান শিপনের নিথর মরদেহ পড়ে আছে আবর্জনার স্হানে ।
মালিক বুঝতে পারেন মাসুদই শিপনকে খুন করে রাত্রে পালিয়ে গেছে । মালিক পুলিশের সাহায্য চেয়ে ১১২ নাম্বারে ফোন করেন । কিছুক্ষনের মধ্যেই পুলিশ এবং এম্বুলেন্স এসে হাজির হয় ।
ঘটনাস্হল পরিদর্শন এবং মালিকের বক্তব্য শুনে পুলিশ নিশ্চিত হন সহকর্মী মাসুদই শিপনের ঘাতক ।
কিন্তু ঘাতক মাসুদকে কিভাবে সনাক্ত করা যায় ? একেতো মাসুদ অবৈধ । তাছাড়া নিদৃষ্ট কোন ঠিকানা ও নাই ।
পুলিশ কর্মকর্তারা ভাবলেন যে এলাকায় হত্যাকান্ড ঘটেছে সেখান থেকে পালানোর একমাত্র পথ হল টেক্সি । কারন রাত্রে এই এলাকায় বাস চলাচল নাই । সুতরাং একটা পথ পাওয়া গেল ।
পুলিশ সাহায্য চাইল স্হানীয় টেক্সি পরিচালনাকারী সংস্হার কাছে । জানতে চাইল গতরাত বারটার পর থেকে ভোর পর্যন্ত কোন ড্রাইভার উক্ত স্হানের আশপাশ থেকে কোন বিদেশী পেসেন্জার বহন করেছে কিনা সেই তথ্য দিতে ।
মূহুর্তেই টেক্সপরিচালনা সংস্হা থেকে কন্ট্রোল রেডিওতে ঘোষনা দেওয়া হল। সাথে সাথে পাল্টা জাবাব পাওয়াগেল ভোর ছয়টার সময় এক বাংলাদেশী পেসেন্জার বহন করেছে এক ড্রাইভার। যেখানেই থাকুক ড্রাইভারকে অফিসে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হল ।
মূহুর্তেই ড্রাইভার এসে হাজির হল । পুলিশ ড্রাইভারকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে যেখানে নামিয়ে দিয়েছিল সেখানকার উদ্দেশ্যে ।
সেখানে নামিয়েদিয়েছিল তার আশেপাশেই পাওয়াগেল এক বাংলাদেশীকে । তার কাছেই খুন করে পালি্য়ে উঠেছিল মাসুদ ।
উল্ল্যেখিত জবান বন্দীটি মাসুদ তার সাথে দেখা করতে যাওয়া লোকজনের কাছে দিয়েছিল ।
সত্যমিথ্যা নির্নয় করা কঠিন । কারন এই ঘটনার কোন স্বাক্ষী নাই ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।