মনের খোলা জানালয় কত আলো কত রঙ, খেলা করে চুপি সারে, আসে যায় কড়া নাড়ে ... ...
আমরা বার জন বাঙালী আছি এখানে, হারাধণের বার ছেলের মত। দু-জন আগে থেকে ছিলেন, RF Opt. আর MW এ। ডিপার্টমেন্টে তাদের সুনাম ACG কে উৎসাহিত করে বাংলাদেশ থেকে আরও ইন্জিনীয়ার আনতে। সেই সুবাদে আমাদের ১০ জনের আফগানিস্থান আসা। শেরাটনে আমাদের ইন্টারভিউ (৬-৮ নভেম্বর' ২০০৭), পুরানো চাকরি ছাড়া, কাপড়-জামা-ব্যাগ কেনা, মায়ের হাতের মোয়া-মুটকি প্যাক করার যন্ত্রণা (ভাগ্যিশ এনেছিলাম, আরেকটু বেশি আনিনাই বলে যা আফসোস হচ্ছে!), আত্মীয়-বান্ধবদের কাছে বিদায় নেয়া (রেস্টুরেন্টে নিয়া যা কোপানি কোপাইছে!) ছাড়াও অনেক জটিলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে।
ক-বার যে ঢাকা- চট্টগ্রাম করলাম! ফেব্রুয়ারীর যাওয়া গেলাম মার্চে। মাঝেত আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম, যাওয়াই হবে কি-না? ব্লগে বসে ক-এক লাইন লিখেছিলাম সে কথা, লিখা শেষ হয় নাই। পরে কিছু মডিফাই করেছি। মনে হল এক পার্ট শেষ হয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে সেটা সহস্র ব্লগের নিচে চাপা পড়ে গেছে।
জুয়েল ভাই বল্লেন এটা আবার প্রথম পাতায় দিয়ে দিতে, লোক জনের উপকার হবে। তাকি হয়? আমি লিংকটা দিলাম। পড়ে ভাল না লাগলে গাল দিতে পারেন, দেশের মায়ায় সেটাই আপন করে নেব।
২৫শে ফেবরুয়ারী শেষ বার ব্লগ এ ঢুকছিলাম, মাঝের প্রলম্বিত বিরতির পর। ভেবেছিলাম হয়ত নিয়মিত হব।
আর এর পর এত ব্যস্ত সময় কাটল, কত প্রহষন, যন্ত্রণা, সম্ভব-অসম্ভব কত ঝামেলা যে গেল তা বলার মত না।
তবে অভিজ্ঞতা বিফলে যায় না। কেউ যদি চাকরি নিয়ে বিদেশ যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এবং সেটা আফগানিস্তানের মত জায়গা হয়, তাহলে আমি আশা করি অনেক প্রয়োজনীয় logistic support দিতে পারব, কাকরাইল থেকে সচিবালয় ঘুরে ঘুরে জুতার শুকতলার ক্ষতি বৃদ্ধি করতে হবে না! দেড় মাস আমরা ১০ জন ভিসা-NOC processing এর জন্য কত-কি করেছি সেটা বাংলাদেশের আফগানিস্তান এমবেসী কাউন্সিলর এর ড্রাইভার (He is having all the power of an Ambasador there in BD), সচিবালয়ে প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয়ের হর্তা-কর্তারা, করাইলের জনশক্তি অফিসের লোকজন জানে আর জানে আমাদের খোদা ... ।
ফাইল যুগ্ন সচিব সাহেবের টেবিল থেকে উপদেষ্টার টেবিলে পৌছানোর জন্য কত দোয়া কত দাওয়ার শুভ-অশুভ প্রয়োগ হয়েছে তার ইয়াত্ত নাই। প্রতিদিন সচিবালয়ের সামনে সবাই সেজে গুজে দাড়িয়ে থাকা, একে ওকে ধরে পাশ যোগার করে কোন এক জনকে ভেতরে পারকর।
কি খাইবার পাস, আর কি পুল্শি রাত, সবই তার কাছে নস্যি। বাইরে বসে আমরা আল্লা-খোদার নাম নেই, ভুলে যাওয়া হাদিস-কোরান আওডাই, আর নকিয়া কম্পানির টকটাইমের প্রশংশা করি (অবশ্য টেলিটকরে বহুত গাইল্যাইছি, চট্টগ্রামে চলে, ঢাকায় যা-তা অবস্থা)। আর যারা ভিতরে, তাদের এক্কেবারে হালুয়া টাইট। কেরানি আর পিওনের পিছে কতক্ষণ, পিএস এর পিছে কতক্ষণ... কবির ভাই আর মিন্টু অনেক কষ্ট করেছে। শেষ পর্যন্ত এক আঙ্কেল (এক সময়ের যুগ্ন সচিব) এসে হারানো ফাইলটা অনেক ঝামেলার পর খুজে বার করলেন।
আমাকে ফোনে ঘটনা বলার সময় রাগে ওনার কথা আটকে যাচ্ছিল। হয়ত কর্তারা Speed Mony/ Under table এর ধার ধারেন না, নিতান্তই সৎ, কিন্তু তাতে আমাদের ভোগান্তির কি-ইবা হের ফের হল? এমন দক্ষ- অভীজ্ঞ কর্মকর্তাদের কার্যক্ষমতা ও দক্ষতা থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে কেবল মাত্র Processing এর অব্যবস্থাপনার কারনে। এবং নিচুশ্রেণীর কর্মচারীদের কারসাজিতেই যে এই লুকুচুরি, কেউ কি তা দেখে না? এই ফায়ারওয়াল ভাংবে কে? যারা পারে তারাই মহাপুরুষ, তারাই হিমু, তারাই বিদেশ গিয়ে দেশের মায়ায় গুমরে মরে।
সেই গল্প বলতে গেলে দিন যাবে, লিখতে গেলে ব্লগ আমার কাছে Tera Byte জায়গার দাম চেয়ে বসব। পড়তে গিয়ে আপনাদের চোখে লেন্স লাগবে, যাদের আছে- পাওয়ার বাড়বে।
তাই মনো কষ্টে আছি। দেশে ফেরার পর মায়াবতী টাইপের কোন মেয়ের দেখা যদি পাই এবং তার হৃদয় যদি প্রসন্ন হয় আমার প্রতি, তবে খোদা চাহে ত একদিন আমার ক-এক ডজন নাতি-নাতনি থাকবে। তাদের মনোরন্জনের জন্য আমার সুদীর্ঘ গল্প-মালা সঞ্চিত থাক। আর ততদিন না হ্য় আমি সহ্যের উপর থাকলাম...
আমাদের প্রথম ফ্লাইট ছিল ২রা মার্চ সকাল ০৭:৩০ এ।
JETAIR আমাদেরকে Boarding Pass দিল না, কারন আমাদের ২৫ ঘন্টা ট্রানজিট ছিল Delhi তে।
মাথা-মোটা আফগানী ট্রাভেল এজেন্ট হয়ত জানেই না ২৫ ঘন্টা ট্রানজিট, ভিসা ছাড়া হ্য় না। বাংলা-আফগানিস্তানের জন্য এর সবই সম্ভব! রউট-ব্রেক হয়েছে তবুও অনেক মজা করলাম ১০ জন ভাগ্যাহত যুবক। ট্রলি ঠেলা-ঠেলী, আড্ডা, হাসাহাসি, দুষ্টুমি। আমি সব চাইতে কম বয়ষ্ক, তাই সবচেয়ে Careless ভাব নেবার চান্স পেলাম, হোক যা হবার। ফটো সেশন, ভিডিও হল জিয়াতে।
আমাদের আফগানের কন্টাক্ট ভরষা দিল এবং পরবর্তি পদক্ষেপের ব্যপারে পরামর্শ দিল। তারপর তল্পি-তল্পা নিয়ে Back to the pavilion. হাসি শেষে নিরবতা, বিষন্ন-আশাহত-হতাশ ১০ যুবক, সবার ভাল চাকরি ছিল, ৩ জন একটেল সহ আমরা বিভিন্ন Reknown Telecom firm ছেডে এসেছি।
২৫ ঘন্টার ট্রানজিটের ইনডিয়ান ভিসার জন্য দাড়াব, শুরু হল নতুন করে দৌড়-ঝাপ। এয়ারপোর্ট থেকেই অ্যামবেসী। গুলশান-১ এ দুই দিন চর্কি-বাজী করার পর ৩ তারিখ দুপুরে আমরা বুঝলাম কপালে দূঃখ আছে বৈ-কি! শফিভাইর (NOC manager, আমাদের গ্রুপ লিডার) নেতৃত্বে আমরা Dr. Shaheer (HR. Diractor, Our Contact and organizer in Kabul) কে ফোন করে জানালাম এই প্রসেসিং শেষ হতে ৬/৭ দিন লাগতে পারে।
ফাপড় নেয়া ছাড়া গতি ছিল না!!! আরো এক সপ্তা দেশে বসে থাকা? অসম্ভব! আর আমরা জানতাম শাহির আমাদের এত দেরী সহ্য করতে পারবে না। এবং তাই হল, সে-দিনই ই-মেইল পেলাম আমাদের নতুন রূট দুবাই হয়ে, দিল্লী বাতিল! বিন্দাস!!! চার তারিখ মেইলে নতুন ই-টিকেট পৌছে গেল।
Next Flight ছিল মার্চের ৫ তারিখ, সকাল ০৯:৪৫ এ। নতুন আর কি বিপদ আসে, প্রস্তুত হচ্ছিলাম। কিন্তু ইমিরেটস্ Boarding Pass দিয়েই দিল।
ব্যাগেজ চলে যাবার পর একটু রিলাক্স হব, উপায় নাই। ইমিগ্রেশনের লাইন চরম লম্বা, গোলমেলে। নির্বিঘ্নে পার হব সে উপায় কি আছে? এ দেশে? একজন অফিসার এসে বলে গেল NOC কাউন্টারে এন্ট্রি করাতে। ভালয় ভালয় আমাদের কাজ হয়ে গেল। ঝামেলা হল জুয়েল ভাইর কাগজে।
সবই ঠিক আছে, কেবল ছবিটা হচ্ছে মিন্টুর। কুকামটা কাকরাইল অফিশের। ঝামেলা হলনা বেশি কারন সব ঠিক মত চেক করার পর সহজেই সমাধান হল। ভাগ্যিশ অন-লাইনের ব্যবহার ছিল এখানে। লাইনে দাডিয়ে আছি আর পুলিশের দূর্ব্যবহার দেখছি! মিডল-ইষ্টের শ্রমিকদের সাথে কি ভাবে আচরন করছে! মনে পড়ল মুহম্মদ জাফর ইকবালের ''বৃষ্টির ঠিকানা'', আট বিলিয়ন ডলার * সত্তর = ছাপ্পান্ন হাজার কোটি টাকা।
মাথার ঘাম পায়ে ফেলা, রক্ত-পানি করা টাকা। এই রেমিটেন্সের টাকাই দেশের ইন্জিনের অন্যতম জ্বালানী। আরেকটু মনোজোগ, সহযোগী মনিভাব, একটু যত্ন হলে ব্যপারটা কি অনেক সুন্দর হত না? এদিকে শফিভাই দেখি
একজনের এম্বারগেশন ফর্ম পূরণ করে দিচ্ছেন। এই সব লোক-জনের সাহায্যের জন্যে একটা কাউন্টার দিলে সরকারের খরচ কি অনেক বেডে যায়?
ইমিগ্রেশন কাউন্টারে আমারা আটকা পড়লাম। আমাদের সব কাগজ-পত্র ঠিক আছে, প্রবাসীকল্যান মন্ত্রণালয়ের অনুমুতি-পত্র, বৈদেশীক কর্মসংস্থান ব্যুরোর ছাড়-পত্র (NOC) সব দেখানো হল।
তারপরও ঠোলারা এমন পাট নিল যেটা ইউনিফর্ম ছাড়া অসম্ভব। সে নাকি মন্ত্রণালয়-সচিব-ছাড়-পত্র-চিঠি কিছু চিনে না। বোধহয় কেবল তৈলাক্ত চকচকে বস্তুই চিনে। তারই অন্বেসনে ছিল বুঝিবা! সময়ে ওসির ক্ষমতা সচিবের চেয়ে বেশি হয় এদেশে এ আর নতুন কি? আমাদের দাড়িয়ে রেখে কার সাথে যোগাযোগ করতে গেল। তাই সাথে যখন কবির ভাইকে নিয়ে গেল, আমরা নিশ্চন্ত হলাম।
আমাদের সবার প্রশ্ন ছিল কি হচ্ছে , মনে পড়ে গেল বাংলাদেশের আফগানএমবেসী কাউন্সিলর এর ড্রাইভারের কথা। ভিসার সব কাজে আমাদের হাত-পা ঐ বেটার কাছে বাধা ছিল। সেও বহুত হাইকোর্ট-জজকোর্ট দেখাইছে। যাই হোক, এবার কিন্তু ঠোলার মনের আশা পূর্ণহয় নাই। কবির ভাই অনেক স্মার্ট, আর সব চেয়ে বড় ব্যপার হল উনি চরম আশাবাদী, আত্মবিশ্বাসী।
ওনার কারনেই কঠিন সময় গুলোয় আমরা আশা হারাই নি, না হইলে বহুত আগেই হাল ছাইরা দিয়া পাঙ্খা হইয়া যাইতাম। আমরা ওনার কাছে সর্বৈব কৃতজ্ঞ। এই সব ঝামেলায় আমরা বেসামাল, কিন্তু ইমিরেটস্ Boarding Pass দিয়ে দিয়েছে, আমাদের না নিয়ে যায় কিভাবে? দেরি হচ্ছে, তাই ওদের লোক এসে পুসিং শুরু করল। ... আধা-ঘন্টা দেরীতে হলেও বোঈং-৭৭৭ নীল আকাশে ডানা মেলে দিল।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।