যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
প্রবাস জীবনের অনেক ঘটনা মাঝে মধ্যে নিজের কাছেই অবাক লাগে। দেশে থাকলে যা হতো খুবই স্বাভাবিক - প্রবাসে সেইটা হয়ে উঠে দারুন
অস্বাভাবিক। যেমন - মোগলাই পরোটা বিষয়টা। ঢাকার রাস্তা ঘাটে - আলিতে গলিতে হাজারো দোকানে মোগলাই পরোটা পাওয়া যায়। যদিও
স্বাদ আর দামের প্রকারভেদে অনেকের পছন্দের হেরফের থাকতে পারে - তবো ঢাকায় বসে মোগলাই খাওয়া কোন ঘটনা বা গল্প হতে পারে না।
যা প্রবাসীদের ক্ষেত্রে হয়তো একটা মজাদার ঘটনা হয়ে যাবে। আমারও তেমনি মোগলাই ভক্ষনের একটা ঘটনা আছে - সেটাই আজ বলি।
একটা পরিবার নতুন অভিবাসী হয়ে আমাদের বাসায় উঠেছে। প্রাথমিক কাজকর্ম - যেমন বাসা ভাড়া, বিভিন্ন পরিচয়পত্র তৈরীসহ কেনাকাটা করে
ভদ্রলোক পরিবারবর্গ নিয়ে বাসায় উঠেছে। যতদিন আমাদের বাসায় ওরা ছিলো - স্বভাববসত আড্ডা দিয়েছি গভীর রাত অব্দি।
অনেক কথা আর
ঘটনার মধ্যে যা আমাদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষন করেছিলো - তা হলো ভদ্রমহিলা দেশে থাকতে কোনদিন রান্না ঘরে যাননি। তবে এই দেশে
নিজে রান্না করে খেতে হবে জেনে উনি তিন মাস স্কুলে গিয়ে রান্নার উপর কোর্স করে এসেছেন। উনার ভাষ্যমতে বাংলাদেশের সকল মজাদার
রেসিপি উনার ঝুলিতে জমা হয়ে গেছে।
যাই হোক - গিন্নী আমাকে একটা সতর্ক বানী দিয়ে রাখলো এই বলে যে, রান্না কিন্তু স্কুলে শেখার বিষয় নয় - চর্চার বিষয়। আর উনারা কিন্তু
দ্রুতই আমাদের দাওয়া দেবে - আমাকে ভাবীর রান্নার গিনিপিগ হতে হবে।
সতর্ক থাকো!
পরের সপ্তাহান্তে এসে হাজির হলো সেই মহেদ্রক্ষন। সকাল থেকেই ফোন আসলো কয়েকবার - আপনারা কিন্তু অবশ্যই বিকালে চলে আসবেন।
"মোগলাই পরোটা" বানানো হচ্ছে। সকাল নয়টা থেকে মোগলাই পরোটা বানানো শুরু হয়েছে। কি অসাধারন এই মোগলাই হবে ভেবে সারাদিন
সিক্ত রসনা নিয়ে দিন পার করে বিকালে গেলাম সেই বাসায়।
এখানে বলা দরকার - দেশে থাকতে মোগলাই খেতে মাঝে মধ্যে পুরানো ঢাকার নারিন্দা যেতাম। দীর্ঘ চারবছর পর মোগলাই এর দাওয়াত
মনটাকে উচাটন করে দিলো।
সেই বাসায় আরো একটা পরিবার এসে বসে আছে। অনেক্ষন বসে গল্পগুজব করার পর ভাবী রান্না ঘর থেকে আওয়াজ দিলো - মোগলাই রেডি।
আমরা বেশ আগ্রহ নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলাম।
মোগলাই কেটে বিতরনের দায়িত্ব আমার গিন্নীর হাতে চলে আসলো বা নিজেই নিয়ে নিলো।
গিন্নীর সাথে চোখাচোখি হতেই আমাকে ইশারায় কিছু বলার চেষ্টা করলো। ইশারা বিষয় শাস্ত্রে আমার দূর্বলতা সীমাহীন। গিন্নীর অভিযোগ - আমি
ইচ্ছা করেই ইশারার বিষয়টা এড়িয়ে যাই। হয়তো তাই হবে - কারন ইশারা বিদ্যাটা আমার মতে খুবই রিস্কি বিজনেস - ইন্টারপ্রিশেনানে ভুল হলে
ভয়াবহ বিপদের সমভাবনা তৈরী হতে পারে।
যাই হোক। মোগলাই এর একটা টুকরা ছিড়ে মুখে দিতেই প্রচন্ড ধাক্কা খেলাম। এই জিনিস বানালো কিভাবে! এক পাশ পুরো কালো - অন্যপাশ
সাদা। ভিতরে যে ডিম দেওয়া হয়েছে - ইচ্ছা করলে সেই ডিম দেওয়া মুরগীর জেনেটিক পরিচয় জানা যাবে। কাঁচা ডিমের গন্ধওয়ালা মোগলাই
তৈরীর বিষয়টা আগে জানা থাকলে হয়তো সুসীর মতো কিছু একটা জিনিস ভাবতাম।
মনটা মারাত্বক খারাপ হয়ে গেল। রাগও বোধ হয় একটু উঠেছিলো। সকাল থেকে এতো আওয়াজ দিয়ে অবশেষে আমার চার বছরের পুরোনো
স্বপ্নটাকে ভেঙে খান খান করে দেবার অপরাধ ক্ষমা করা কঠিন বটে। গিন্নিও বোধ হয় টের পেয়েছিলো। কাছে এসে আস্তে আস্তে বললো - প্লিজ।
মোগলাই বাদ দিয়ে চা নিয়ে উঠে পড়লাম। সোফায় বসে টিভির দিকে মনোযোগ সরিয়ে মোগলাইএর দাগাটা ভুলার চেষ্টা করছি। কিন্তু নতুন
রাধুনী - যিনি সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছেন - দস্তুরমতো দাবী করে বললে - "ভাই, আপনাকে আরেকটা মোগলাই খেতেই হবে। আমি জানি আপনি
মোগলাই পছন্দ করেন। " জীবনে চলার জন্যে আরেকটা শিক্ষা পেলাম - সব পাত্র সব কিছু বলতে নেই।
চাপাচাপির মাত্রা বেড়ে গেলে বললামা - ভাবী, আমাকে ক্ষমা করুন। আমি খেতে পারবো না।
উনি বেশ আবদার সুরে বললেন - কেন ভাই, মোগলাই ভাল হয়নি।
গিন্নি দেখলাম অসহায় ভংগীতে দুরে বসে আছে। কারন বোধ হয় এই পরিস্থিততে আমার পুরোনো ঘটনাগুলোর কথা মনে এসেছে।
আমি বললাম - ভাবী, মোগলাই হয়নি।
-কেন?
- সত্য বলতে কি, আপনি মনে হয় ইতিহাসের ছাত্র না - মোগলদের ইতিহাস জানলে মোগলদের খাবার দাবার নিয়ে এই ধরনের রসিকতা করার
সাহস করতে না।
ভাবী হাসি হাসি মুখে বললেন - কেন ভাই?
আমি বললাম - দেখেন মোগলদের অবস্থা ছিলো - তাতে আপনাকে ওদের নামের খাবার নিয়ে এই ধরনের পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্যে হয়তো
কামানের সামনে বেধে গোলাবষর্নের নির্দেশ দিতো।
আশে পাশের সবাই সশব্দের হেসে উঠলেও আমার গিন্নি আর মোগলাই ভাবী হাসেনি। এতো উচ্চমানের রসিকতায় কেন যে ওরা হাসলো না -
আজও ধরতে পারিনি।
তবে - বাসায় আসার পর গিন্নি ভানুর ভাষায় ঐতিহাসিক নাটকের মতো বচনে কিছু বলার চেষ্টা করেছিলো - কিন্তু আমি
মোগলদের অপমানের বিষয়ে কোন সমজোতায় বিশ্বাসী না - সে অবস্থান থেকে সরে যাইনি। অন্যদিকে কেন যেন সেই বাসায় আর কোন দিন
আমাদের দাওয়াতও আসেনি। হয়তো ভালই হয়েছে - না হলে হয়তো ফ্রাঞ্চ বা চাইনিজ অথবা ইংলিশদের আরো বড় অপমান সহ্য করতে হতো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।