মানুষ হয়েও মানুষ হতে হয় পুনরায়।
৩০ জানুয়ারি’ ১৯৭২
এই দিনেই নিখোঁজ ভাই বিশিষ্ট কথা শিল্পি ‘শহিদুল্লাহ কায়সার’কে খুঁজতে গিয়ে মিরপুরে যান এবং সেখান থেকেই নিজেও নিখোঁজ হয়ে যান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রথম চলচিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’র নির্মাতা “জহির রায়হান। ”
সকালে এক টুকরো রুটি মুখে দিয়ে বেরিয়ে যান নিখোঁজ ভাই এর সন্ধানে। কেউ কি জানতো তার সেই যাওয়া ই শেষ যাওয়া হবে!!! দুর্বৃত্তরা মিথ্যে তথ্য দিয়ে জহির রায়হান কে মিরপুরে ডেকে নিয়ে নিখোঁজ করে দেয়। জহির রায়হান কে আমরা কোনোদিনও ফিরে পাবোনা।
পাবোনা শহিদুল্লাহ কায়সার কেও। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় দুটি নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে আজীবন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনসাইড’ এর নির্মাতা জহির রায়হান। তার প্রতি রইল আমার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
মৃত্যুর সময় কি জহির রায়হান এর চোখ বাধা ছিল? হাত পা কি বাধা ছিল পিছনে? তখন কি সে কিছু বলতে চেয়েছিল? কি রকম অনুভূতি তার লেগেছিল তখন? সে কি তখন তার মা’কে একবার দেখতে চেয়েছিল?নাকি তার সন্তান কে শেষ দেখা দেখতে চেয়েছিল? তার শেষ ইচ্ছা কি ছিল ? এসব প্রশ্ন আজীবন থেকেই যাবে জাতির কাছে।
তাকে কি গুলি করে মারা হয়েছিলো নাকি বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়েছিলো!!! খুব জানতে ইচ্ছা করে। জানি আমার এই জানার ইচ্ছা শুধুই আমার নয়। সকল দেশপ্রেমিকের মনের আকাঙ্খা।
তার নিখোঁজ হওয়ার পর জাতির জনক স্বাধীনতার ঘোষক ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রাহমান’ তার অসহায় পরিবারকে ঢাকা’র বনানী তে একটি বাড়ী উপহারস্বরূপ দেন। কিন্তু কালক্রমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ পরবর্তী সরকার সেই বাড়ীটি'কেও নিয়ে নেয়।
তারা চায়নি তার পরিবারগন একটু শান্তিতে থাকুক। কি দোষ ছিল তার পরিবারের, কি শত্রুতা ছিল তার পরিবারের সাথে তাদের??? কি কারনে তারা বাড়ীটি কে নিয়ে নিলো???
৭৫’ পরবর্তী সরকার তার বনানী’র বাড়ীটি কেন নিয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তর ধরে যদি পিছনে যাওয়া যায়, তবে হয়তবা তার নিখোঁজ হওয়ার কারন খুঁজে পাওয়া যাবে অনায়াসে। হয়তবা তাহলেই বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনা, আসল ইতিহাস। এখনও যদি সঠিক তদন্ত করা হয় তবে তা অসম্ভব বলে আমি মনে করি না। বেরিয়ে আসবে সেই হুলো বিড়ালটি যার চক্রান্তে আমরা একে একে অনেক বুদ্ধিজীবী হারিয়েছি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও।
স্বাধীন দেশের সেই জালিমকে আজও চাইলে বের করা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য চাই সুষ্ঠু তদন্ত। আমরা চাইনা আর কোনও জহির রায়হান আমাদের মাঝ থেকে এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।