অতীতকে নিয়ে নস্টালজিক হতে ভালোবাসি, ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেও।
Chocolate is nice,
But when I'm depressed
You shall suffice.
তেরতম জন্মদিনে চিকন একটা খাতা নিয়ে ডায়েরি লেখা শুরু করেছিলাম। খুব শখ করে প্রথম কয়েকদিন সাদা পাতায় হৃদয় খুলে দিয়েছি। রাগ লাগলেই খাতাটা নিয়ে বসতাম ও বিস্তারিত অনুভূতির কথা লিখতাম। এই কাজটায় কোথায় ভুল করছিলাম বুঝতে কয়েক মাস লেগে গিয়েছিলো - রাগের সময় লেখা মোটেই উচিত না, এক মুহূর্তে যা মনে হয় সেটা আর কখনোও হয়তো মনে হবে না।
কিন্তু কোথাও লেখা থাকলে কেও না কেও একদিন সেটা পড়বেই! জিনিসটা অদৃশ্য না, তাই যতই বলি নিজের জন্য লিখি, নিজের জন্য আসলে কিছুই লেখা সম্ভব না।
তার পরের বছরই আরেকটা পাগলামি ঢুকলো মাথায় - ছোট্ট, হার্ডকভারের নীল প্যাডে চিঠির আকারে লেখালেখি। কাকে লেখতাম সেটা ঠিক করতে পারিনি, তবে কল্পিত চরিত্রের নাম দেওয়া হলো মিস্টার এ্যানোনিমাস। এবার শুধু রোজনামচা ছাড়াও আরও কিছু যোগ হলো। ভবিষ্যতের সমস্ত স্বপ্ন, সব ইচ্ছা লিখে ফেলে মনে মনে অর্ধেক সত্যি করে ফেলতাম।
আমি অবশ্য অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো জিনিস লিখে রাখতাম। বারো বছরের জন্মদিনের দিন আপুনির কাছ থেকে বেশ সুন্দর চারকোনা বেগুনি খাতা পেয়েছিলাম। সেটাতে আমার প্রিয় মানুষ, অপ্রিয় মানুষের লিস্ট থেকে শুরু করে শপিং লিস্ট পর্যন্ত ছিলো! সেটা যেখানে সেখানে পড়ে থাকতো, কেও দেখলেও কিছু হতো না, না দেখলেও না। কিন্তু ঐ চৌদ্দের ডায়রীটার সামনে ইংরেজিতে বিরাট অক্ষরে লেখা ছিলো: দয়া করে কেহ পড়িবেন না। আজকাল পড়লে হাস্যকর লাগে, অতি ব্যক্তিগত কিছুই ছিলো না সেখানে।
ওই বাক্যটা ছিলো নিজের ক্ষমতা প্রকাশ করার জন্য।
পরের বছর লিখেছি? মনে নেই। ততদিনে কিছু ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলো, যাদেরকে জীবনের অনেকটুকুই বলতে পারতাম। মে মাস থেকে সামহোয়ার ইনে লেখা শুরু করলাম, তাই ডায়েরি লেখার প্রয়োজন আরও কমে গেলো।
তবে গত বছর পুরোদমে লেখা হয়েছে।
লেখার সাথে সাথে আঁকিবুকি। এতো লিখেছি যে, বছর শেষ হতে না হতেই আরেকটার দরকার পড়লো। এবারও ঘরে এলো নীল রঙের খাতা। তবে কয়েক পাতা লিখেই উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম। আমার মনে হতো, লাভ কি? যার লুকোনোর কিছু নেই, তার পার্সোনাল ডায়েরি দিয়ে কি হবে?
মাঝখানে কিছুদিন ভার্চুয়াল জার্নাল ব্যবহার করেছি।
চার-পাঁচবারের পর আর লেখা হয় নি। তাহলে কেন করেছিলাম? উত্তর জানা নেই।
এর মধ্যে আরেকটা ব্যাপার শুরু করলাম। ক্লাস নাইনে কমার্স পরীক্ষার আগের রাতে বসে বসে ম্যাগাজিন ঘেটে মজার কিছু শব্দ ও ছবি খুঁজে বের করে অনেকদিনের পুরোনো কবিতার খাতায় লাগালাম। এ কর্ম চলতে থাকলো দু'বছর ধরে।
যখনই পড়াশুনা থাকতো, তখনই আমার সব ট্যালেন্ট বের হয়ে পড়তো। এখন মাঝে মাঝে মন খারাপ থাকলে সেটা দেখলে মন ভালো হয়ে যায় একটুখানি। বিভিন্ন সময়ের স্মৃতি মনে পড়ে যায়। নতুন কবিতার খাতায় অবশ্য সেরকম কিছু নেই। সেটা এখনও নতুন!
দু'দিন আগে মা এ বছরের একটা ডায়রি দিলো।
প্রতিদিনের জন্য একটা করে বিরাট পাতা। এটা আমার জন্য বেশ বড় ঘটনা, কারন এতোদিন পর্যন্ত শুধু তারিখ ছাড়া কিংবা কয়েক বছর আগেরগুলো ব্যবহার করেছি। তাছাড়া ২৯শে ফেব্রুয়ারিকে মনে রাখার আরেকটা উপায় বের হয়ে গেলো!
কালকে রাতে একদম পড়তে ইচ্ছা করছিলো না। উইকেন্ড ম্যাগাজিনগুলো ঘেটে ঘেটে কাটাকাটি করে টেবিল ভরে ফেলেছি। সেগুলো আস্তে আস্তে নতুন ডায়রিতে ঢুকবে।
আজকাল আরেকটা মজার কাজ আবিষ্কার করেছি। ছোট্ট একটা পাতায় বিভিন্ন রঙের কলম, পেনসিল ও হাইলাইটার দিয়ে অনেক কিছু লেখা যায়। তাই গত দু'দিনের জায়গা ভর্তি দাগাদাগি করেছি।
আজকাল আমার যেটা হচ্ছে সেটাকে বলে 'চকলেট ওভারডোস' বা সাইন কার্ভ। কথায় কথায় কবিতা লিখে ফেলি।
এক মূহুর্ত মন খারাপ থাকে, পরের মূহুর্তেই মন ভালো হয়ে যায়। যেমন, পরশুদিন পরীক্ষা দেওয়ার পর খালি কাঁদতে ইচ্ছা করছিলো, আবার কালকে বিভিন্ন কারনে মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে হাসতে ইচ্ছা করছিলো। আজকে সেই মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে গেলো। তবুও মন খুশি খুশি লাগছে। নাহ, মেঘের সাথে মনের কোন সম্পর্ক নেই।
The turtle wished that it could fly
Really high into the sky,
Over rooftops and then dive
Deep into the sea.
কিমিয়া ডওসনের কচ্ছপটা হতে ইচ্ছা করে না, একদম, একদম করে না। ঐ ক্লাস এইটের স্বপ্নগুলো পুরোপুরি সত্যি করতে ইচ্ছা করে। আর এর পরের সব মেঘ ছোঁয়া স্বপ্নগুলোও।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।