সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
গতকাল, ১৯ মার্চ ৯০ বছর বয়সে মারা গেলেন আর্থার সি ক্লার্ক। বৃটিশ এ সায়েন্স ফিকশন লেখক, আবিষ্কারক ও ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা ১৯৫৬ সাল থেকে কাটিয়েছেন আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রী লংকার উনাওয়াতুনা ও কলোম্বোতে। মারা গেছেন সেখানেই। কার্ক ফিকশন নন-ফিকশন মিলিয়ে ১০০টি বই লিখেছেন।
লেখার পেশায় জড়িত থেকেছেন সাত দশক। ডিরেক্টর স্ট্যানলি কুব্রিক তার লেখা সায়েন্স ফিকশন ২০০১ : এ স্পেস অডিসি থেকে একই নামে একটি মুভি তৈরি করেন। মুভি ও উপন্যাস দুটি বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও গৃহীত হয়েছে। এ মুভির জন্য তিনি ও স্ট্যানলি কুব্রিক ১৯৬৮ সালে অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। ক্লার্ক মুভির চিত্রনাট্য তৈরি করেছিলেন।
জীবিত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন গ্যালাক্সির মধ্যে মানুষের যোগাযোগের স্বপ্ন এবং অন্য গ্রহে উপনিবেশ স্থাপনের আইডিয়া বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে তিনি যে ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন তার অনেকই বাস্তবায়িত হতে পেরেছে। তিনিই প্রথম বলেছিলেন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ করা সম্ভব। ১৯৪০ সালে ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন মানুষ ২০০০ সালের মধ্যে চাদে যেতে পারবে। কার্কের বন্ধু জ্যোর্তিবিদ প্যাট্রিক মুর বলেন, আন্তর্জাতিক কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন তিনি।
সায়েন্স ফিকশন লেখক টেরি প্র্যাটচেট বলেন, এই মহান ব্যক্তি সায়েন্স ফিকশনের জগতে সায়েন্সকে বাস্তবায়িত করতে পেরেছিলেন।
ইংল্যান্ডের সমারসেটে ১৯১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম আর্থার সি কার্কের। ছোটবেলা থেকেই সায়েন্স ফিকশনের প্রতি উৎসাহী ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রয়াল এয়ার ফোর্সে রেডার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। যুদ্ধের পর বৃটিশ ইন্টারপ্লেনটারি সোসাইটিতে যোগ দেন এবং এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৬ সালে তিনি দি রেসকিউ পার্টি গল্পটি বিক্রি করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি সেনটিনেল বিবিসিতে প্রতিযোগিতার জন্য জমা দেন। বলা হয়ে থাকে, এটি তার লেখক জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এ গল্প থেকেই পরে স্পেস অডিসির জন্ম হয়। ১৯৫২ সালে তার নন-ফিকশন দি এক্সপ্লোরেশন অফ স্পেস সারা পৃথিবীতে বেস্টসেলার হয়।
২০০০ সালে শ্রী লংকার রাজধানী কলোম্বোতে তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করা হয়। পোলিও রোগের কারণে ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি হুইল চেয়ারের সাহায্যে চলাফেরা করতেন। দীর্ঘ সময়ের এই রোগভোগের পরও তিনি বিশ্ব জুড়ে বিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিদ ও সায়েন্স ফিকশন লেখকদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে বেচে ছিলেন। আর্থার সি. কার্কের কিছু বাণী বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হয়।
যেমন :
# জীবন হলো একটা বড় কলা।
সায়েন্স ফিকশন এ কলাকে ছুলে এর ভেতরের হলুদ বস্তুটাকে দেখতে সাহায্য করে।
# সত্য সব সময়ের মতোই আগামীতেও হবে ভীষণ অচেনা।
# আমাদের সব সময় ভবিষ্যতের প্রযুক্তির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, নইলে সেগুলো নিজে থেকে আসবে এবং আমাদের পরাভূত করে ফেলবে।
তার মৃত্যুতে বিশ্ব একজন স্বপ্নদ্রষ্টাকে হারালো।
#ফ্রি ইনকোয়ারির সঙ্গে আর্থার সি কার্কের ইলেকট্রনিক ইন্টারভিউ থেকে#
আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারা অসাধারণ একটা ঘটনা।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
তা বটে। আমার এজেন্ট যদি এ কথা শোনে তবে হয়তো আমাকে গুলিই করে বসবে। আমি এমনিতেই সবাইকে না করি। কিন্তু ফ্রি ইনকোয়ারি বলে কথা, একটা ব্যতিক্রম ঘটাতে পেরে আমি বরং একটু পুলকিত হচ্ছি।
আপনার চিন্তার সঙ্গে আমাদের পাঠকদের কিছু পরিচয় আছে। বিশেষ করে, প্রাকৃতিক জগৎকে বোঝার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অনেক বেশি মনোযোগী হওয়ার ব্যাপারে আপনি বিশেষ গুরুত্ব দেন। নৈতিক বিষয়ে আপনার চিন্তার বিষয়ে কিছু কথা বলেন।
মানব জাতির সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি সম্ভবত এই যে, ধর্ম নৈতিকতার বিষয়টিকে হাইজ্যাক করে ফেলেছে। ফলে, মানুষ এখন সহজেই মনে করে, ধর্ম ও নৈতিকতার অঙ্গাঙ্গি যোগাযোগ আছে।
কিন্তু নৈতিকতার ভিত্তি আসলেই খুব সাধারণ। এর জন্য ধর্মের আশ্রয় নিতে হয় না। এটা এই রকম : অন্যের প্রতি এমন কোনো আচরণ করো না যা তোমার প্রতি করলে তুমি গ্রহণ করতে পারবে না। আমার তো মনে হয়, এর মধ্যে সব কথা আছে।
পরের কথা হলো, কেন মানুষ এই নীতির ভিত্তিতে বসবাস করতে পারে না? মানুষের যা করা উচিত কেন তা করতে পারে না? প্রতিদিনের খবরে ধ্বংস, হিংসা, অবিচার, বিক্ষোভ এসব দেখে আমি খুব বিপন্ন বোধ করি।
এসব দেখে মাঝে মধ্যে চিন্তা করি, মানব জাতির কি আসলেই বেচে থাকার অধিকার আছে?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু নৈতিক বিষয় সামনে এসেছে। যেমন ক্লোনিং।
হ্যা। এ ধরনের বিষয় আসতেই থাকবে এবং বাড়বে। এগুলো আমাদের সবাইকে চ্যালেঞ্জ করবে।
বিশেষ করে তাদের যারা খুব বদ্ধ নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে, ধর্মে প্রচ- আস্থা রাখে।
কিন্তু আমি খুব অবাক করা এক উপায়ে ক্লোনিং প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। একটা প্রজেক্ট নেয়া হয়েছিল যেখানে আমাকে অনেক মানুষের সঙ্গে স্পেসে পাঠানো হবে। আমার পুরোটা নয়, শুধু চুল। তখন মাথায় চুল ছিল বটে।
খুব সিরিয়াস এ প্রজেক্টটা নিয়েছিল একটা কম্পানি যারা নাকি আবার স্পেসক্র্যাফট তৈরির সঙ্গে জড়িত। আইডিয়াটা ছিল এরকম যে, একশ মিলিয়ন বছর পর কেউ হয়তো স্পেসে একটা ছোট ক্যাপসুলে রাখা এগুলো খুজে পাবে। আমার চুল থেকে আরেকজন আর্থার সি ক্লার্ক জন্ম নেবে। এভাবেই আমি আরেক গ্যালাক্সিতে ভবিষ্যতে আবির্ভূত হবো। মজার চিন্তা।
কিন্তু এটা সম্ভবত বিরক্তিকর একটা আইডিয়া।
এটা চেলেসটেস প্রজেক্টের চেয়ে ভালো। সেখানে তো আপনার মরদেহর ছাই স্পেসে পাঠানোর আগে আপনাকে মরতে হবে।
ভূমিকা ও অনুবাদ : মাহবুব মোর্শেদ
(আজকের যায়যায়দিনে প্রকাশিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।