আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদায় 'লৌহ-স্টেইন' ম্যাডাম! simply stunning, u can have a look

হিলাল ফয়েজী এ দেশে তিন বছর ছিলেন ম্যাডাম। এ দেশের একটি ঐতিহ্য অবশ্য অবলুপ্তপ্রায়। এ দেশে স্কুল-কলেজ-সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বিদায় উপলক্ষে 'মানপত্র' দেওয়ার একটা তেজিয়ান রেওয়াজ ছিল। আজ আপনি এই দুনিয়ার মহাবৃহত্তম ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে তিন তিনটি বছর পদ্মা-কাঁপানো প্রকাণ্ড কাণ্ড পরিচালনা করে গেছেন। আপনাদের মহাব্যাংকের জাগতিক নিয়মে আপনি এখন ইউরোপের কেন্দ্রে বদলি হয়ে গেছেন।

আপনাকে একটি নিম্নবর্ণিত বিদায়ী মানপত্র দিতে মনে ভারি সাধ জেগেছে মাডাম! হে মহি-ব্যাংকের মহামহীয়সী, বাংলাদেশের সকলের পক্ষ থেকে একজন ক্ষুদ্র বাক্যপ্রণেতা অধমস্য অধম হিলাল ফয়েজীর সালাম-স্যালিউট-অভিবাদন গ্রহণ করুন। আমরা এ দেশের মানুষরা চলি্লশ বছরেরও আগে একদিন 'পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা'_ এই গর্জনে বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটি অনেক কষ্টে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। সেই সুবাদে আপনি এমন একটি স্বাধীন দেশ এবং তার পদ্মা নদীকে নিয়ে তিন তিনটি বছর নিজেকে সুপার-ব্যস্ত রাখবার সুযোগধন্যা ছিলেন। আজ আপনি চলে যাচ্ছেন। জগৎ সংসারে এমনি চলে যাওয়া নিয়ে কত গদ্য, কত পদ্য, কত লহরী রচিত হয়েছে ম্যাডাম।

তবে আপনার বেলায় মনে হয় সবচেয়ে বেশি বেদনা-ব্যথিত হয়েছে খোদ পদ্মা নদীটি। কেননা হে ম্যাডাম, আমাদের এই দুঃখিনী পদ্মা তিন তিনটি বছর আপনার পরম, নরম ও চরম বৈশিষ্ট্যের নানারূপ দেখে অতিশয় কৃতার্থ বোধ করেছে। এই পদ্মার ফারাক্কা-দুঃখের কথা তো জানা কথাই। সে কথা নয়। এ দেশে মেঘনা ও যমুনা পাড়ি দেওয়ার ভালো-মন্দ এক এবং একাধিক সেতু নির্মিত হলেও পদ্মা নদীটি পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন সেতুটির জন্য এ দেশের কোটি কোটি মানুষ হাজার হাজার দিন ধরে অপেক্ষমাণ।

পারাপারের সেই সেতুটি নির্মাণের প্রকল্পটির প্রস্তুতি কাজের দেখভাল করার মহান নেত্রী ছিলেন আপনিই দাতাপ্রধান দুনিয়া-ব্যাংকের এতদঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেবে। হে দৃঢ়চেতা, নিষ্ঠাবতী, কর্মপটীয়সী, আপনার জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নামখানি বড়ই স্বর্ণাভ, গোল্টস্টেইন। এমন নাম দেখে বোধহয় ওইসব 'চতুর বেনিয়া-ফাটকা-বজ্জাত' গোষ্ঠী বুঝতে পারেনি যে আপনার আপাত নরম বদন-বচনের আড়ালে কী লৌহকঠিন চিত্ত এবং সূক্ষ্ম-নজরী নিত্যকঠোর দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজমান। মানবেতিহাসে বোধকরি দুর্নীতির জন্য 'ষড়যন্ত্রের' দায়ে এমনভাবে কোথাও কেউ কোনো প্রকল্পে এভাবে ধৃত হয়নি এবং সে জন্য মাথাব্যথার জন্য খোদ মস্তক ইস্তক কর্তনের মতো এমন প্রকল্প থেকে প্রত্যাহারের দৃপ্ত ঘোষণা প্রদানের নজির দেখা গেছে কি! তাই তো চারদিকে আজ ধন্য-ধন্য-মহাধন্য রব উঠেছে। এসবের পেছনে আপনার মতো ব্যক্তিত্বের দৃঢ়চেতা-নিষ্ঠাপূর্ণ-কর্মপটুত্বের যে স্বাক্ষর জগৎ দেখেছে, তাতে আপনারই প্রতিভামুগ্ধদের কেউ কেউ বলছে, ম্যাডামের নামটি গোল্ডস্টেইন না হয়ে আয়রন-স্টেইন অর্থাৎ 'লৌহ-স্টেইন' হলে দারুণ হতো।

জগৎ-ব্যাংকটির জন্ম হয়েছিল ১৯৪৪ সালে। এত বছর এমন একক বৃহত্তম প্রকল্প আর ওই ব্যাংকটি হাতে নেয়নি এবং হাতে নিয়েও তাই এমন বৃহত্তম প্রকল্প ফেলে দেয়নি। আপনার এই ধরিত্রী ব্যাংকের একই সঙ্গে একজোড়া রেকর্ড গড়ার পেছনে যে বিদায়ী ম্যাডাম আপনার ভূমিকার কথা আপনি নিজেই শেষের বেলায় জানিয়ে গেলেন সুস্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে। হে মিষ্টকথার শিষ্ট এবং স্পষ্টভাষিণী, আপনি জানিয়ে গেলেন আপনি বাংলাদেশের যেখানেই যান, সেখানেই প্রশংসার বান ডাকে। বলেছেন, ইতিহাস আপনাকে স্মরণ রাখবে।

তবে জেনে রাখুন, পাশাপাশি অবশ্যই স্মরণে রাখবে 'বিশ্ব চালাক-চতুর-বেনিয়া-ফাটকা-বজ্জাত' গোষ্ঠীও। কেননা তারা জানে এই নিখিল-অখিল সংসারে ক্ষুদ্র-মাঝারি-বৃহৎ প্রকল্পের কোনো না কোনো পর্যায়ে কোনো না কোনো রকমের 'দুর্নীতির ষড়যন্ত্র' কোনো না কোনোভাবে হয়ে যাবে, হয়েছে। সেই দুর্নীতি 'সূক্ষ্ম-স্থূল-মধ্যম' যে কোনোভাবেই হতে পারে। যেমন ধরুন, আমাদের যমুনা সেতুটির কথা। সেই প্রকল্পে তো কত প্রকারের 'দুর্নীতির ষড়যন্ত্র' হয়েছে, কোনোটা ফেইল মেরেছে, কোনোটা সফল হয়েছে, কত সুশীল বদনকে দেখলাম সামান্য পাথর সরবরাহের সাব-কন্ট্রাক্ট বাগিয়ে লালে লাল হতে।

ওইসব চতুরেরা এখন বিশ্বজুড়েই ভাবছে, বেঁচে গেছি, বেঁচে গেছি, লৌহ-স্টেইন ম্যাডামের নজর পড়েনি। এমন নজর পড়লে যে 'দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের' দায়ে পৃথিবীর প্রায় সকল প্রকল্পই বাতিল করে দিতে হয়! তা ম্যাডাম, যারা আপনাকে প্রশংসার মহাবন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন, সামান্য একটা বিজ্ঞানসম্মত জরিপ করে দেখবেন, তারা সুশীলই হন, মিডিয়া টাইকুনই হন কিংবা সুবচন ব্যারিস্টারই হন, সমাজের যত পর্যায় থেকে যেখানেই যে মধুবচন পেয়েছেন তারা সব্বাই পদ্মা সেতু বিষয়ে আপনাদের অ্যাকশনকে 'জব্বর খব্বর' হিসেবে গণ্য করেছেন। কেননা এদের সকলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-বিধেয় একটিই। তারা কোনোভাবেই কেউ এক মুহূর্তের জন্যও আমাদের প্রধান ক্ষমতাসীন ব্যক্তিকে সহ্য করতে নারাজ। ক্ষমতার ওই প্রধান ব্যক্তিকে যেভাবে সম্ভব বিরক্ত-বিব্রত-বিপর্যস্ত করে দাও।

নিজের তথা দেশের নাক কেটে হলেও ওই ক্ষমতাসীনার ক্ষমতা-যাত্রা বন্ধ করে দাও। তিনি যেন পুনঃক্ষমতাসীন হওয়ার সব সম্ভাবনা সব পথ রুখে দাও। লৌহ-স্টেইন, ম্যাডাম, ওরা তাই আপনার লৌহদৃঢ় ভূমিকায় আজ খুশির প্লাবনে বাগবাগ। ওদের কাছে আপনি আজ পরপর তিন বছরের হ্যাটট্রিক-ব্যক্তিত্ব। আপনাদের ট্রিক দেখে তারা সব আশ্চর্য, মুগ্ধ, হতবাক।

যে 'আবুল' ওই কানাডীয় পরামর্শক কোম্পানির পক্ষ থেকে 'দুর্নীতির-সন্দেশ' নিয়ে এলো, সেই আবুলকে আপনারা এড়িয়ে গেলেন। আর যেই 'আবুল'কে এই সন্দেশটি দেওয়া হলো, তার লোভ-চকচক চোখটিকেই আপনারা যেভাবে টার্গেট করেছেন, এমন বুদ্ধির তারিফ না করে কি উপায় আছে! সত্যিই 'তুলনা' শব্দটিও আপনার বেলায় কেমন হতবাক-হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে থাকে! 'প্রথম আবুলকে ছাড়িয়ে নাও, দ্বিতীয় আবুলকে ধরিয়ে দাও'_ এমন অসাধারণ-অনবদ্য কারুকার্যের জন্য পৃথিবীর সকল সমুদ্রসমান প্রশংসা যে লৌহ-স্টেইন ম্যাডাম, আপনার চরণেই লুটাবে। হে প্রশংসিতা, সুধন্যা, মার্কিনিকন্যা, নীতি রক্ষা এবং দুর্নীতি রোখা_ এই কাজে পদ্মা সেতু প্রকল্প ঘিরে আপনার সাফল্যে আপনি আত্মঘোষিত গর্বিতা। আপনার উত্তরোত্তর মঙ্গল হোক। আপনি বিশ্বব্যাংক প্রধান হন, মার্কিনি অর্থমন্ত্রী হন কিংবা হিলারিসম মাপে উঠুন, সেই দোয়াই করি।

সবশেষে শুধু একটি কথাই সুধাই ম্যাডাম! বাংলাদেশের কমপক্ষে যে ২১টি জেলার কোটি কোটি মানুষ পদ্মা সেতুর পানে তাকিয়েছিল, তারা প্রথম আবুলও বোঝে না, দ্বিতীয় আবুলও বোঝে না। 'দুর্নীতি করা' আর 'দুর্নীতির ষড়যন্ত্র' করা_ এর ফারাকও বোঝে না। আমাদের পদ্মা নদীও তা বোঝে না। ওই কোটি কোটি লোক কেমন বেকুব বনে গেছে। এই পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হয় হয়, ফের গুরু গুরু ডম্বরু, পদ্মা সেতু হয় না।

এমনি অবস্থায় ওই চাতক পাখির মতো বাংলা জনতা পদ্মা সেতুপানে তাকিয়ে। ওরা এমনকি আপনাকে পাশে পেলেও আজ প্রশংসা কিংবা নিন্দা_ সব ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে। 'দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের' বিশাল অভিযোগ অস্ত্রে যে জবাই হয়ে গেছে ওদের সকল আশা। তবুও আপনাকে অশেষ প্রশংসা। কেননা বাংলাদেশের ক্ষমতা-কারবারিদের একাংশ অন্তত আজ আপনাকে ২৪ ক্যারট গোল্ডসম জ্ঞান করে আপনার কাছে মহাকৃতজ্ঞ।

ওদের ক্ষমতা দখল অভিপ্রায়-অভিযানে আপনি দারুণ কাজে লেগে থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পটিকে আপাতত নিদারুণ পর্যায়ে রেখে যাওয়ার সাফল্য দেখিয়েছেন। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।