আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একাত্তরের ২৯শে অক্টবর হাদাপান্ডো, সিলেট (কবি: মাসুম সরকার)



(আমার মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু কোরবানকে উৎসর্গ করে) আহত শারীরিক যন্ত্রণা আর প্রচুর রক্ত ক্ষরণে আমি তখন ভীষণ ক্লান্ত, শুধুই ইচ্ছে করছিল ঘুমিয়ে পরতে, সেই বষর্ণসিক্ত মাটি কাদায় শুয়ে। মুখ থুবরে কাদায় প্রায় ডুবন্ত শরীর পিন খোলা দুটো গ্রেনেড হাতে শরীরের নিচে লুকানো সেই হাত যেন সামান্য আঙুলের নড়াচড়াও বুঝতে না পারে শুকনোয় দাঁড়ানো ক্ষুব্ধ সেপাইগুলো। পাশে শুয়ে আছে গ্রুপের সবচেয়ে সাহসী যোদ্ধা কোরবান আলী। বুকের উপর তার আড়াআড়ি স্টেনগান, চাপাকন্ঠে প্রত্যয়ি উচ্চারণ তার কাছ থেকে শুয়োর মারার এইতো সুযোগ, মনে মনে কাউন্ট ডাউন শুরু হয় আমার, তিন, দুই. . . একজন সেপাই এর উল্লসিত ঘোষণা "উধার ঘায়েল দ্যো শ্যালে, মুজিব কা আওলাদ" যেনো অনেক সময় নিয়ে শেষহলো মুহূর্ত গোনা এক, শূন্য. . . মুহূর্তে কোরবান আলীর রণহুঙ্কার, ' জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ' স্টেনগানের শব্দ, শুয়রের আর্তচিৎকার, রিটার্ন ফায়ারিং, কোরবান আলীর মরণে আত্মসমর্পণ। হে খোদা ! বীরের প্রশস্ত উচ্চারণে কালেমা তৈয়েবা শেষ হয়, ঢলে পড়ে উদ্যত অস্ত্র হাতে বর্ষণসিক্ত কাদায় সেই দেহ সহযোদ্ধাকে আড়াল করে। বীরের শারীরিক ঢাল, তার তপ্ত রক্তের উত্তাপ প্রশমিত করে আমার যন্ত্রণা, ঘুম, ক্লান্তি। আমি জেগে থাকি অপেক্ষায়, শুয়রের পাল আমাদের ঘিরে এলে স্ট্যাটেজিক নিকটে, টান টান আঙুল মেলে দেব অপেক্ষায় থাকি গ্রেনেড ফাটাবার। মনে মনে কাউন্ট ডাউন আবার মা-বাবার উৎকন্ঠিত মুখ, ছোট বনের ঝুলন্ত বেণি, ছায়া ঘন ভিটা, নদী পাখির কলরব আর আমরা ' মুজিবকা আওলাদ ' মুহূর্ত গুনতে থাকি তিন, দুই, এক, শূন্য. . . শেষ শুয়োরটি মারবার প্রতীক্ষায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।