সেপাই থেকে জেনারেল-- সবাই এক সঙ্গে চিতকার করে বলছেন, চির উন্নত মম শির। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মটো। কাজী নজরুল ইসলাম আর তাদের কাছে নগন্য কোনো হাবিলদার নয়, জাতীয় কবি। সমরবিদ্যাও দিন দিন আধুনিক হচ্ছে। এখন সমাজতত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান এমনকি রাষ্ট্রবিজ্ঞানও পড়ানো হচ্ছে সেনা কর্মকর্তাদের।
তবে এটা নিশ্চিত, এখনো কবিতার অনুপ্রবেশ ঘটেনি সামরিক বিজ্ঞানে। অথচ কবিতার দীর্ঘ মেয়াদী ইতিহাসে এরই মধ্যে রণাঙ্গণের কবিতা আলাদা একটি ডিসকোর্সে পরিণত হয়েছে।
সামরিক ব্যক্তিত্বদের কবিতা চর্চার বিষয়টি একটু বেখাপ্পা লাগার কথা। পেশার বৈপরীত্য ছাপিয়ে অনেকেই কবিতা লিখেছেন। শত্রুর অপেক্ষায় ট্রেঞ্চে ওঁত পেতে থাকার ফাঁকেও কবিতা লেখা হয়েছে।
প্রথম মহাযুদ্ধের সময় ইংরেজি কবিতায় রুপার্ট ব্রুক, আইজ্যাক রোসেনবার্গ, উইলফ্রেড ওয়েন বা চার্লস সোরলের মতো সেনারা রীতিমতো কবিতাকে শাসন করতে শুরু করলেন-- তখন ওয়ার পোয়েট্র টার্মটি ব্যবহৃত হতে শুরু করলো। প্রথম মহাযুদ্ধের রণক্ষেত্র আরো যে সব কবিদের এনেছে, তারা হলেন: আলফ্রেড এডওয়ার্ড হাউসম্যান, আলফ্রেড জয়েস ক্লিম্বান, কর্নেল জন ম্যাককেয়ার, আইজ্যাক রোসেনবার্গ, লরেন্স বিনইওন, রবার্ট নিকোলস, রুপার্ট ব্রুক, উইলফ্রেড উইলসন গিবসন। কালের পরিক্রমায় যুদ্ধবিষয়ক কবিতার আঙ্গিকও বাঁক নিয়েছে। এখন যুদ্ধবিরোধিতাও ওয়ার পোয়েট্রির অংশ।
সাহিত্যে যুদ্ধের অনুপ্রবেশ মোটেই নতুন কোনো ঘটনা নয়।
পৌরাণিক সাহিত্যেও যুদ্ধের অস্তিত্ব আছে, আছে বীরের স্তুতিগাঁথাও। তবে রণাঙ্গণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে উতসারিত কবিতা সাহিত্য পেয়েছে অনেক পরে। গত শতাব্দিতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রণাঙ্গণ থেকে পাঠানো তাজা কবিতা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল পাঠক মহলে। জার্মানদের চেয়ে ইংরেজরাই বেশি কবিতা লিখেছিল এ সময়।
ইংল্যান্ডে উইলফ্রেড ওয়েন বেশ জনপ্রিয় কবি ছিলেন। জার্মান কবিদের মধ্যে আ্যন স্কম্যাকের কবিতা ছিল বেশ জনপ্রিয়। ওয়ার পোয়েট্র শব্দবন্ধকে এখনো যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত করা না গেলেও, ইউনিফর্মের কবিদের কাছ থেকে বাঁক পরিবর্তনের মতো গ্রহণযোগ্য ও গভীর তাতপর্যপূর্ণ লেখা নয়, রণক্ষেত্রে সরাসরি আবেগতাড়িত বর্ণণা ও রিপোর্টিংই প্রত্যাশা করা হয়েছে। সহজবোধ্যতার কারণেই হয়তো তারা পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও সেনাদের মধ্যে কাব্য চর্চার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
১৯৩৯ সালের শেষের দিকে দ্য টাইমসের সাহিত্য সাময়িকীতে ওয়ার পোয়েট্রি প্রসঙ্গে `টু দ্য পোয়েট অফ ১৯৪০' শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। সাহিত্যাঙ্গণে রণক্ষেত্রের কবিদের নিয়ে আলোচনা আরো বিস্তৃত হতে থাকে তখন। ১৯৪১-এ যখন বিশ্বযুদ্ধ চলছে পুরোদমে, তখন এক ব্রিটিশ রেডিওতে আলোচনার বিষয় ছিল হোয়াই হ্যাজ দিস ওয়ার প্রোডিউজড নো ওয়ার?' অ্যালোন লুইস ও কেইথ ডগলাসের কবিতা এ প্রশ্নে সমুচিত জবাব দিয়ে দেয় ব্রিটিশ সমালোচকদের। কার্ল শাপিরোও পিছিয়ে নেই। যা হোক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজির চেয়ে ফরাসি ভাষায় বেশি কবিতা লেখা হয়েছিল রণক্ষেত্র থেকে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে ওয়ার পোয়েট্রির বিশাল অংশজুড়ে মানবতাবাদ আশ্রয় নেয়। যুদ্ধবিরোধিতা প্রাধান্য পায় কবিতায়। বর্তমানে ইরাক রণাঙ্গণ থেকে ই-মেইলে বা ব্লগে যে সব কবিতা আসছে-- তাতেও সেই যুদ্ধবিরোধিতার সুর। আরো একটি বিষয় এখানে লক্ষণীয়, সেনাবাহিনীর অফিসার র্যাংকের কর্মকর্তাদের চেয়ে সাধারণ সেপাইরাই বেশি মাত্রায় কাব্য চর্চায় আসক্ত। হতে পারে, অফিসাররা যে সামরিক বিদ্যায় বুদ হয়ে থাকেন-- সেখানে কবিতা নেই।
যুদ্ধবিরোধিতার সুযোগে বেসামরিক কবিরাও সেনাছাউনিতে আশ্রয় নিচ্ছেন। ইরাক যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ফের চাঙ্গা হয়েছে `ওয়ার পোয়েট্রি'।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।