মুশতাহির কল্পবাবু
ভাই,
ভালো আছো? আমার ইচ্ছে ছিল কবিতার মাঝে কথাগুলো বলার। কিন্তু আবেগ যে ছন্দের বশ মানতে চায় না। তাই পত্রাকারেই লিখছি।
এমাসের এগারো তারিখ রাতে তুমি যখন প্রবাসে চলে যাচ্ছ, মা অনেক কেঁদেছিলেন। জল ছিল তোমার চোখেও।
তখন বুকফাটা কষ্ট এসে জমা হয়েছিল আমার মাঝে। কাঁদিনি। মা একদিন বলেছিলেন পুরুষমানুষ কাঁদেনা। আত্মসম্মান বাঁচাতে সেদিন চোখ বড় বড় করেছি, কচলেছি। তবু হৃদয় নিংড়ানো অশ্রুর স্বাদ পায়নি তোমার স্বদেশ।
মা কেঁদেছেন অনেক। শেষমেশ ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।
আমি সারারাত অনিদ্রায় এপাশ ওপাশ গড়িয়েছি। ভেবেছি অনেককিছু।
ভাই , জীবন একটাই।
এতে কেউ পাকা হাতের খেলোয়াড় হয়, কেউ হয়না। কিন্তু সব যোগবিয়োগ প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি মিলিয়ে জীবন শূন্যের কোঠা ছাড়িয়ে বেশিদূর এগোতে পারেনা। এটাই ঈশ্বরের নিয়ম। তিনি সাম্যবাদী। হযরত(স) র পিতা মাতা হারানোর কষ্ট, 'অশিক্ষিত' অপবাদ ঘোচাতে ঈশ্বর নিজেই তার ভার নিয়েছেন।
তবু কতটা মুহূর্ত স্বস্তিতে কাটিয়েছিলেন তিনি? শ্রেষ্ঠতম মানুষটিও যে জীবনের ঘাত প্রতিঘাতে জর্জরিত হয়েছিলেন।
তুমি আর আমি দুজনই সুকান্তের ভক্ত ছিলাম। এই ভক্তি তাঁর প্রাপ্তি , আর অপ্রাপ্তি-জীবনের আরও কিছু মুহূর্ত। আর দেখো আমার গুরু জীবনানন্দের দাশের কথা। একজন অসাধারণ কবি কেমন ট্রাম দুর্ঘটনায় মরল!
ভাই, এজীবন চালিয়ে নিলেই চলে।
রেলগাড়ীর মত ঝমাঝম এগোলে স্টেশনগুলোতে পৌছাবে আগে, পথের মানুষের গোচরেও আসবে আগে। কিন্তু যতই গতিময় হবে, দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ততই বেশি। আর যদি পায়ে হেঁটে চল, কেউ হয়ত তোমায় দেখবেনা, কিন্তু তুমি মন ভরে দেখবে মাঝনদীর পালতোলা নৌকা, সবুজ ধানক্ষেতের দোলা, গোধূলিতে লালচে রবির আলোতে পাখির নীড়ে ফেরা। হয়ত এ-ই তুমি চাও, ঈশ্বর চান। হয়ত গন্তব্য নয়, গন্তব্যের পথে তুমি খুঁজে পাবে জীবনের স্বাদ।
তবু বেশির ভাগ মানুষ বলবে তুমি রেলগাড়ি হও, কিন্তু তোমার এই ছোটভাই বলবে-তুমি সুখে থাকো , আর বেছে নাও সেই জীবন তোমার আত্মা যেখানে আনন্দ খুঁজে পায়।
ব্যর্থ জীবন বলে কিছু নেই। তুমি নিরাশ হয়োনা। ভেঙ্গে পড়ো না। সাফল্য বা অর্থ পেলেই জীবন সার্থক হয়না।
একেকজনের কাছে জীবনের সংজ্ঞা একেক রকম। আপন সংজ্ঞাটি খুঁজে পাওয়াই জীবনের সার্থকতা।
আজ ইতি টানছি। প্রবাসে নিজের যত্ন নিও।
জীবনানন্দ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।