চোখ মেলে পাইনি,চোখ বুজে পেতে তো মানা নেই...
((লেখাটি আলী মাহমেদ এর ব্লগ থেকে পাওয়া। তবে এটি তারো মৌলিক রচনা নয়। একটি বই থেকে নেয়া।
সূত্রঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অষ্টম খন্ড, পৃষ্টা: ৬০৫-৬০৮ ))
ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ। চীফ কর্নেল মনজুরুর রহমান।
এই কলেজের অসম্ভব প্রিয় একটি মুখ। যুদ্ধের সময় ক্যাডেট কলেজ থেকে সবাই পালিয়ে যান কিন্তু কর্নেল রহমান কয়েকজনের সঙ্গে থেকে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার পাশাপাশি তিল তিল করে গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যেতে তাঁর মন সায় দিচ্ছিল না।
পাক আর্মি ঘিরে ফেলে একদিন এই কলেজ। নেতৃত্ব দিচ্ছিল ১২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন ইকবাল।
সঙ্গে ঝিনাইদহের অল্প কয়েকজন স্থানীয় মানুষ। টমেটো নামের একজন মিথ্যা অভিযোগ করে, কর্নেল রহমান তার পরিবারের লোকজনকে মেরে ফেলেছেন।
পাক আর্মিরা একেক করে মারা শুরু করে।
পাক আর্মির ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কর্নেল রহমানের কথা কাটাকাটি হয়। কর্নেল রহমান বলেন, আমি একজন সামরিক অফিসার।
আমাকে এভাবে মারা অন্যায়। আমার অপরাধের বিচার একমাত্র সামরিক আদালতেই হতে পারে। একজন আর্মি কর্নেল একজন ক্যাপ্টেনের কাছে যে আচরণ পেতে পারে- আমাকে সেটা দেয়া হচ্ছে না কেন?
কর্নেল রহমানের কোন যুক্তিই এদেরকে প্রভাবিত করলো না। কর্নেল রহমান মৃত্যুর জন্য প্রস্তত হলেন। হাত থেকে খুলে দিলেন ঘড়ি, পকেট থেকে বের করে দিলেন কলেজের চাবি, যা ছিল তাঁর কাছে।
একজন সিপাই তাঁর ঘড়ি উঠিয়ে নিজের হাতে দিয়ে দেখলো কেমন মানাচ্ছে তাকে- আর হ্যা হ্যা করে হাসতে থাকলো।
কর্নেল রহমান প্রাণ ভিক্ষা চাইতে রাজী হলেন না। শুধু ৫ মিনিট সময় চাইলেন।
ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন নিজ হাতে লাগানো গোলাপ গাছটার দিকে। হাঁটু গেড়ে বসলেন।
কি যেন বিড়বিড় করে বলছিলেন- দূর থেকে শুধু ঠোঁটনড়া দেখা গেল। তারপর হাত তুলে মোনাজাত করলেন। মোনাজাত শেষ করে বললেন, আয়্যাম রেডী, তাকিয়ে রইলেন ক্যাপ্টেনের চোখে চোখ রেখে।
ক্যাপ্টেন ইকবাল পরপর ৩টা গুলি করলো।
লুটিয়ে পড়লেন কর্নেল রহমান।
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে প্রায় শোনা যায় না একটা স্বর শোনা গিয়েছিল,
"মা আয়েশা, তোকে দেখে যেতে পারলাম না। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।