বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে
(সকল মতামত এই ব্লগারের নিজস্ব মতমত বলে বিবেচিত হবে)
সামহোয়্যারইনব্লগ আমাদের সাধারণ ব্লগারদের জন্য লেখালেখির একটা প্ল্যাটফর্ম করে দিয়েছে। লেখালেখির এই সুযোগটা আমরা গ্রহণ করেছি। এর মাধ্যমে আমরা ব্লগাররা যেমন সামহোয়্যার কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ ঠিক তেমনি কর্তৃপক্ষেরও উচিত আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। এই যে কর্তৃপক্ষ বারবার বলছে আপনাদের ব্লগ, আদতে কি তা ঘটছে? এই ব্লগে কি সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্লগারের মতামত প্রকাশিত হতে পেরেছে এই পর্যন্ত ? এটা বড় ধরনের প্রশ্নই থেকে যাবে।
সামহোয়্যারইনব্লগ বর্তমান সময় যে অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা একেবারেই নতুন নয়।
এর আগেও অনেকবার অস্থিরতা এসেছিল। মনে করিয়ে দিতে চাই ,এই গেল জুন মাসেও একটা অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সেই অস্থির অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে সামহোয়্যারইনব্লগ। এর মুল কৃতিত্ব ব্লগারদের। আন্তরিক এবং বিনীতভাবে সেই বিষয়টি মনে করিয়ে দিতে চাই ব্লগ কর্তৃপক্ষকে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে যে কারনে অস্থিরতা হয়েছে, তা প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অন্যমাত্রার। গত রাতের ঘটনায় বেশ কয়েকজন ব্লগারকে ব্যান করা হয়। বিবাদ শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা এবং ব্লগীয় রাজাকারদের বাড়াবাড়ি বিষয়ক বিষয় থেকে। অবাক করা বিষয় হলো, আমার জানামতে যাদের ব্যান করা হয়েছে তাদের সবাই মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার প্রতি সম্মান রাখেন। কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীতভাবে জানাতে চাই ঐ ঘটনায় দায়ী করলে দুইপক্ষকেই দায়ী করা যেতো (সাধারণ বিবেচনায়)।
কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই কোন রাজাকার কিংবা রাজাকার সমর্থনকারীকে ব্যান করা হয়েছে কি?
আবারও বলি, সাধারণ বিবেচনায় দুইপক্ষকেই দোষী ধরে দুইপক্ষকেই ব্যান করা যেতো।
এতক্ষণ বলছিলাম সাধারণ বিবেচনার কথা। কিন্তু পাশাপাশি আরো বিবেচনায় আনতে হবে কোন পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। আগেই পরিস্কার করে নেই, একাত্তর এবং মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চেতনার সাথে মিশে আছে। সেই ১৯৭১ সালেই কিছু দেশোদ্রোহী আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল।
আমাদের ঘৃণা তাদের প্রতি। আমরা দৃঢ়মনে সেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।
অবাক হতে হয়, ১৯৭১ সালের এত বছর পরও সেই স্বাধীনতাবিরোধী এবং তাদের পরবতী প্রজম্ম অদ্ভুত উল্লাসে মাতে। অনলাইন কমিউনিটিকে প্রভাবিত করেত চায় সেই দলটি। সামহোয়্যারইনব্লগ নামক বাংলা ব্লগিংয়ের সাইটটিকেও তাদের দখলে নিতে চায়।
আরিল, স্বাভাবিকভাবেই আমরা তা মেনে নিতে পারি না। কিন্তু দিনকে দিন ব্লগীয় রাজাকারদের এবং রাজাকার সমর্থনকারীদের আধিপত্য বেড়েই চলছিল। এখন ভাবনার বিষয় হলো, আমরা তাদের কিভাবে প্রতিরোধ করবো। যেহেতু রাজাকারদের এবং রাজাকার সমর্থনকারীদের প্রতিরোধ করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের অস্তিত্ত্বের সাথে, আমাদের প্রেরণার সাথে ,আমাদের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে একই ব্লগিং প্ল্যাটফর্মে রাজাকার এবং রাজাকার সমর্থনকারীদের সঙ্গে আমরা লেখালেখি করবো এটা মেনে নেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
এখন কথা হলো আমাদের প্রতিবাদের ভাষা কি হবে। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে গালাগালিকে কখনোই সমর্থন করি না।
কর্তৃপক্ষ, এই ব্লগের অনেক ব্লগারই যুক্তির মাধ্যমে রাজাকার এবং রাজাকার সমর্থনকারীদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু যুক্তির সীমারেখায় তারা আসে নি। এজন্যই হয়তো কিছু ব্লগার ফ্লাডিং করে (আপনাদের ভাষায় )তাদের বিরোদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
সামহোয়্যারইনব্লগের নীতি অনুযায়ী এটি অপরাধ। এজন্য তাদের ব্যান করা হলো। কিন্তু কোন পরিস্থিতি থেকে তারা এরকম কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল তা একবারও ভেবে দেখা হলো না! হায় কি অদ্ভুত বিবেচনা।
আরিল, আপনার এই অবস্থানকে আমি পূর্ণসমর্থন করতে পারলাম না। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত,আরিল।
এই সমস্যা অনেক আগেই সমাধান করা যেতো। কিন্তু সেই সমস্যাকে কেন জানি দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। তা কোনভাবেই বোধগম্য নয়। ব্লগে রাজাকারদের এবং রাজাকার সমর্থনকারীদের কোনভাবেই সুযোগ দেয়া উচিত নয়। এই কাজটি করতে পারলেই ব্লগের পরিবেশ অনেক ভালো হয়ে যাবে।
এখানে বিষয়টা আরেকটু পরিস্কার না করলে এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। এই ব্লগে যারা স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধ চেতনার বিরোধী কথা বলেন তাদের বেশিরভাগই ৭১ পরবর্তী জেনারেশনের ব্লগীয় রাজাকার। যারা চিন্তাভাবনায় স্বাধীনতাবিরোধীর পরিচয় দিচ্ছেন স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরেও। আমাদের সংবিধান অনুযায়ীও এই ধরনের কাজ করা যাবে না। এই প্রসঙ্গে নিয়ে আসি ব্লগ নীতিমালার বিষয়।
এই ব্লগ নীতিমালা ১৬ জুলাই ২০০৭ সালে থেকে কার্যকর হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছিল-
১ক.
বাক স্বাধীনতা প্রসঙ্গ:
সামহোয়্যার ইন ব্লগের যাত্রা শুরু হয়েছিলো সাধারণ মানুষের কথা বলার একটি স্বাধীন মঞ্চ হিসাবে, যেখানে সবাই তাদের চিন্তা, মতামত, সৃজনশীলতা বিনিময় করতে পারবে। চিন্তাধারা যতই চরম-পন্থী(radical) কিংবা রক্ষণশীল(conservative) হোক না কেন, তার স্বাধীন মত প্রকাশকে আমরা সমর্থন করি, যতক্ষণ না তা রাষ্টীয় আইন বা অন্যের ব্যাক্তি স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে।
কর্তৃপক্ষ, আপনাদের কি মনে হয় না রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান? যেখানে আমাদের সংবিধানের মুখবন্ধতেই মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার কথা বলা হয়েছে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার পরিপন্থি কোন পোস্ট আমাদের রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য নয়? তা হলে ব্লগ বিধির ১ (ক) আইনটি তাদের জন্য কার্যকরা করেন না কেন?
আর একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়, ইসলামের সাথে কোন ধর্মবিত্তিক রাজনীতিক দলকে মিলিয়ে ফেলা কখনোই উচিত নয়। ধর্মভিত্তিক দলের কথা মানেই ইসলাম ধর্মের কথা নয়।
সুতরাং এই ধরণের সুযোগ যারা নিতে চান তাদের এই ব্লগে স্থান হওয়া উচিত নয়।
বলছি না ধর্ম ভিত্তিক পোস্ট হতে পারবে না । শুধু ইসলাম কেন হিন্দু, খ্রীস্টান সহ সব ধর্মের বিষয়েই পোস্ট আসতে পারে। সেক্ষেত্রে কোন সমস্যা নাই। ধর্মভীরুদের পোস্টও আসতে পারে।
কিন্তু আমাদের পবিত্র চেতনা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পোস্ট আসবে এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।
বলছি না, ব্লগারদের স্বাধীন মত প্রকাশে আমরা বাধা দিবো। স্বাধীন মত যে কোন ব্লগার প্রকাশ করতেই পারেন। কিন্তু আমাদের এই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার সঙ্গে স্বাধীন মতের আপোষ হতে পারে না। স্বাধীন মত প্রকাশের নামে, মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থী কথা বললে আমাদের বাংলাদেশকে অপমান করা হয়।
আরিল, আমি নিতান্তই সাধারণ একজন ব্লগার। মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরে আমার জম্ম। কিন্তু আমি মনে প্রাণে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাকে ধারণ করি। মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার পক্ষে কথা বলে কেউ এই ব্লগে ব্যান হোক তা আমি কখনোই চাই না। কিন্তু এটিই হয়েছে।
যাদের নাম এসেছে ব্যান তালিকায় আমার জানামতে তাদের বেশিরভাগই ভাল ব্লগার। অনেককে আমি ব্যক্তিগতভাবে ভালো বলে জানি। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির অদ্ভুত উল্লাসে সাময়িকভাবে তারা হয়তো কোনো কারণে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। ফলে তারা ব্যানের শিকার হয়েছেন। সুতরাং আন্তরিকভাবে ব্লগ কর্তৃপক্ষকে বলবো – যাদের ব্যান করা হয়েছে সেসব ব্লগারদের ওপর থেকে ব্যান উঠিয়ে নেয়া হোক।
এজন্য ব্লগারদের কাছ থেকে ক্ষমাপ্রার্থনা করা কোনভাবেই প্রত্যাশিত বিষয় নয়। তবে অবশ্যই ব্লগ কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত পোস্টের মাধ্যমে বিষয়গুলো পরিস্কার করে দিতে হবে। কর্তৃপক্ষ ব্লগের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে খুব তাড়াতাড়িই করতে হবে কাজগুলো।
আরিল, আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি কোনটা চান। আপনি কি চান সবকিছু যাক নষ্টদের অধিকারে ? মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, রাজাকার, আল বদর, আল শামস, যুদ্ধাপরাধীরা আমাদের কাছে নষ্ট হিসেবেই খ্যাত।
দুঃখিত আরিল, আমি সচেতনভাবেই নষ্ট বলছি তাদের। আর এটিকে যদি গালি মনে করে আমাকে ব্যান করে দেয়া হয় আমি তাতে মোটেও বিচলিত হবো না, কষ্টও পাবো না। আবারও সচেতনভাবেই বলছি, আমরা চাই না সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাক। আরিল, আপনিও নিশ্চয়ই তা চান না।
এখনই তাহলে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সামহোয়ারইনব্লগের মুক্ত প্ল্যাটফর্মে কাদের আপনি চান ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।