আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্রদলের কমিটি যেন আসামিদের আশ্রয়স্থল

বুয়েটের ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি হত্যা মামলার আসামি নিয়াজ মাখদুম মাসুম বিল্লাহ এখন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর সহসাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান হলেন পুরান ঢাকার ইসলামপুরে পুলিশ হত্যা মামলার আসামি। এমনকি নিজ সংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মী হত্যা মামলার আসামিরাও কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
অছাত্র, চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীরা তো রয়েছেনই। বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাসাস ও শ্রমিক দলের বিভিন্ন পদে থাকা ব্যক্তিরাও পদ পেয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে।


২৯১ সদস্যবিশিষ্ট ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ১৫ এপ্রিল অনুমোদন করেন। এ কমিটি নিয়ে ছাত্রদলের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। একাধিক অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষও হয়েছে। সংগঠনের একাংশ বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই অংশের একজন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক রুহুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বর্তমান কমিটির বড় অংশ চাঁদাবাজ, দুর্বৃত্ত ও হত্যা মামলার আসামি।

এঁদের অনেকে অর্থের বিনিময়ে কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের ছাত্রদলের নেতা খোকন হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি সোয়েব খন্দকার হয়েছেন বর্তমান কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক। একই মামলার আসামি আবু আতিক আল হাসান ও গাজী সুলতান জুয়েল হলেন যথাক্রমে সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সহপাঠাগার সম্পাদক।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কর্মী কাজল দেবনাথ হত্যা মামলার আসামি এমরান হোসেন হয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। অপর দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ও নাজমুল হাসান এবং সহসাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান গাজী বিভিন্ন সময়ে চাঁদাবজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।


এঁরা কীভাবে কমিটিতে ঠাঁই পেলেন, জানতে চাইলে ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া বলেন, গত কমিটিতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই এ কমিটিতেও স্থান পেয়েছেন। সেভাবে হয়তো কেউ কেউ এসেছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।
জানা যায়, ছাত্রদলের নেতা খোকন হত্যা মামলার আসামি সোয়েব খন্দকার ও পুলিশ হত্যা মামলার আসামি তারেকুজ্জামান আগের কমিটিতে ছিলেন না।
এদিকে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে একাংশ প্রকাশ্যে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছে, বর্তমান কমিটিতে অযোগ্যদের স্থান দেওয়া হয়েছে।

তাঁরা ব্যক্তিগত ব্যবসা ও চাকরি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ফলে সরকারের শেষ সময়ে বিরোধী দলের রাজনীতির অংশ হিসেবে মাঠে সক্রিয় হতে পারছে না ছাত্রদল।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান কমিটি তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী করা ছাড়া আর কোনো কর্মসূচি পালন করেনি। খালেদা জিয়ার নির্দেশ সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি।
তবে এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া।

তাঁর দাবি, পদবঞ্চিতরা এসব অভিযোগ তুলছেন। তাঁরা সংগঠনবিরোধী আর কোনো কার্যক্রম চালালে তা মেনে নেওয়া হবে না। তিনি দাবি করেন, বিএনপি যত কর্মসূচি দিয়েছে, সবগুলোতেই ছাত্রদল সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। এ ছাড়া কর্মিসভাসহ জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন ১২৩ জন স্থান পেয়েছেন।

বাকি ১৬৯ জনই এসেছেন ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে। এঁদের মধ্যে ১৪ জন রয়েছেন কেন্দ্রীয় সভাপতির গ্রামের বাড়ি নরসিংদী এলাকার।
সাভার পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান, আশুলিয়া থানা যুবদলের আহ্বায়ক আইয়ুব খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপক বর্মণকে ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক পদ দেওয়া হয়েছে। বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা আমজাদ হোসেন ও ইতালি-প্রবাসী গোলাম মোর্শেদকে দেওয়া হয়েছে সদস্য পদ।
৩১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া আদনান আলম স্কুলবিষয়ক সহসম্পাদক, তৈরি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা আবদুল হান্নান মিয়া ও ঢাকা ব্যাংকের ওমর ফারুক সহসাধারণ সম্পাদক, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান যোগাযোগ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন।


এ বিষয়ে আবদুল কাদের ভূঁইয়া দাবি করেন, মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এবং বিএনপির ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে কমিটি করা হয়েছে। যাঁদের যোগ্য মনে হয়েছে, তাঁদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। দলীয় কোন্দল সম্পর্কে তিনি বলেন, আলোচনা করে সংকট সমাধানের পথ বের করা সম্ভব। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.