ইমরোজ
১৯৭১ সালে আমি ছিলাম না। আমার বাবা ছিলেন। আমার দাদা ছিলেন। আমার সব চাচাই ছিলেন, মামা খালা সবাই যুদ্ধের প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
সবাই একবাক্যে জামাতকে ঘৃণা করে।
তার কিছু কারণ আমি তুলে ধরছি।
১৯৭১ সালের আমাদের সুনামগঞ্জ জেলায়, আমার দাদার বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়, সেখানকার জামাত নেতার প্রত্যক্ষ যোগসাজোসে। (সুত্র কবি আশরাফ আহমদের বই)। আমার দাদা একজন কলেজ শিক্ষক ছিলেন। যদিও তার থেকে বেশি যোগ্যতা তাঁর ছিলো।
কিন্তু তবুও তিনি গ্রামেই থাকতেন। ১৯৬৬ সালে নিজের জোগাড় করা টাকা আর জমি বিক্রি করে বাড়ি বানিয়ে ছিলেন পাকা করে। সেই বাড়িতে লাইব্রেরী ছিলো যাতে কয়েক ভাষায় অনূদিত কুর-আন শরীফ ছিলো। সেগুলোর পোড়ানো অবশেষ আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে এখনও।
আমাদের বালু নদীর ঘাটে রাজাকার আলবদর বাহিনীর নৃশংসতায় মারা গ্যাছে হাজার হাজার নিরীহ গ্রামের ছেলে।
যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলো না। শুধু সন্দেহে তাদের ধরে হত্যা করা হয়েছে।
ঘরে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক ছিলো। তা না করলে, সেই বাড়ির ছেলেকে ধরিয়ে দেওয়া হতো। আমাদের অঞ্চলের রাজাকার কমান্ডার ছিল, মওলানা হামিদ খান।
যিনি মারা গ্যাছেন ৯০ সালে। তার জানাযা পড়তে অস্বীকৃতি জানান আমাদের গ্রামের মওলানারা। জানাযা ছাড়াই একজন মুসলমানের কবর হয়েছিলো। তার নিজের ছেলে তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন কয়েকবার করে।
আমার মামা একজন মুক্তিযোদ্ধা।
সরকারী চাকরি করেছেন সারা জীবন। তিনি এখন রিটায়ার্ড। তাঁর বই-"সবুজের হলুদ রোগ"-শওকত ওসমান।
আমার প্রশ্ন হলো একটাই। যদি আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত না হত তাহলে কি মুক্তিযোদ্ধাদের ফাসি হত না? আর যেহেতু স্বাধীন হয়েছে, তাহলে যারা এর বিরোধিতা করেছিলো তাদের বিচার হবে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর আমাকে কেউই দিল না আজ পর্যন্ত।
পাকিস্তানের যে ক্যাপ্টেন আমার দাদার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিলেন, তিনি জাতে বাঙ্গালি ছিলেন। কিন্তু তাকে সেখানে পাকিস্তানিরাই মেরে ফেলে, যেহেতু তিনি মেয়েদের রেপ এর ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছিলেন। পরবর্তিতে যে ক্যাপ্টেন এসেছিলেন, তিনি দাদাকে প্রস্তাব দেন যদি দাদা বলেন কাজটা মুক্তির লোক করেছে, তাহলে তারা তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিবে। কিন্তু দাদা সেটি করেন নাই। ফলশ্রুতিতে আমার দাদার মামাতো ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো।
আমার খালা, মামা সবাই মিথ্যা বলছেন? কেন? তাতে তাদের কি-লাভ। আমি মুসলমান হয়ে দাদার পোড়া কুর-আন শরীফ যখন দেখি, আমার কি খারাপ লাগে না। সেই বইগুলোর পোড়া পাতা কি মিথ্যা বলছে। নাকি আমার বাবা, দাদা ইচ্ছা করে নিজের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন?
জামাত এই দেশের জন্মের বিরোধিতা করেছিলো। আজকে তারা এই দেশে থাকে, এই দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলেন স্বপক্ষে।
তারা কি হিপোক্রেট নন? শিবির কর্মী ভাই আমার প্রশ্নের জবাব দেন।
জামাত যদি দেশের স্বাধীনতাই চায়, তাহলে কেন একটা ১৬ই ডিসেম্বরে তারা স্মৃতি সৌধে ফুল দিলো না, অথবা একটা একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপন করলো না। শিবির ভাল কি খারাপ সে কথা বাদই দিলাম। কিন্তু তারা কোন মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করছেন। যে মসজীদের মওলানা হামিদ খানের জানাযা পড়াতে অস্বীকৃতি জানান, তিনি কি মুসলমান নন?
যাই হোক যদি জামাতের লোক এখন বলেন, এসবই মিথ্যা তাহলে আমি বুঝবো আমার বাবা, মা, মামা, চাচা, খালা, নানা, নানু সবাই মিথ্যা বলেছেন।
কেন একবার জামাতিরা বুঝতে চায় না মানুষ কেন তাদের অপছন্দ করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।