!!!
মিলিটা ইদানিং খুব অদ্ভূত আচরন শুরু করেছে-সারাদিন চিন্তায় মগ্ন হয়ে থাকে।
আমার প্রতি তার যেই সিনসিয়ারিটি ছিলো সেটাও এখন আর তার মধ্যে দেখিনা-
মিলির এই পরিবর্তনটা হয়েছে রাশেদ আসার পর থেকে-
রাশেদ মিলির ইউনিভার্সিটির ফ্রেন্ড-ভার্সিটিতে
পড়ার সময় তাদের মধ্যে প্রেম ছিলো। রাশেদ হুট করে অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে তাদের মধ্যে অটোমেটিক বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
মিলি ভাবলো রাশেদ তার সাথে ফ্রট করেছে।
আমাদের বিয়ের তিনমাস পর রাশেদ মিলির সাথে যোগাযোগ করে জানায়,ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারনে সে মিলির সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।
আমাদের বিয়ের পর মিলিই এসব আমাকে বলেছে-আমার এসব ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিলোনা।
মিলিকে শুধু বললাম বাদ দাও-পাস্ট ইজ পাস্ট। তুমি শুধু রাশেদকে জানিয়ে দাও তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। মিলি তাই করলো।
রাশেদের সাথে আমিও দুএকবার ফোনে
কথা বলেছি-
রাশেদও মিলির বিয়েকে ইজিলি নিয়েছে বলেই আমার মনে হয়েছে।
রাশেদ গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকায় এসেছে-
আমাদের বাসায় প্রায়ই আসে-গল্প-গুজব করে।
আমি সাংবাদিক মানুষ,সারাদিন এটা-ওটা নিয়ে ব্যস্ত থাকি।
মিলিকে তেমন একটা সময় দিতে পারিনা।
রাশেদ আসার পর মিলির অতিরিক্ত উল্লসিত চেহারা দেখে কিছুটা খারাপ লাগলেও এই ভেবে ভালো লেগেছিলো যে-সময় কাটানোর জন্য মিলি একটা মানুষ পেলো-
দুদিন আগেও সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো। হঠাত করে মিলির কি হলো-বুঝতে পারছিনা?
প্রায়ই অন্যমনস্ক থাকে-কথাবার্তাও
খুব একটা বলছেনা।
কিছু জিজ্ঞেস করলেই এড়িয়ে যায়।
সবচেয়ে আনেসপেকটেড হলো কাল রাতে যখন মিলিকে খেতে ডাকলাম সে আমার উপর ক্ষেপে
গেলো-
মিলির স্বভাবে এমনটা কখনোই ছিলোনা।
আচ্ছা রাশেদের সাথে কোনো ঝগড়া-ঝাটি হয়নি তো?
নাকি সে আমার উপর কোনো কারনে রেগে আছে?
কিন্তু আমার উপর রাগার তো কোন কারন দেখছিনা-
মিলি যেদিন রাশেদকে আমাদের বাসায় ডিনারের দাওয়াত করলো-সেদিন তো মিলির কথা মতো রাশেদের পছন্দের সব খাবার খুজেখুজে নিজেই বাজার থেকে কিনে এনেছিলাম,শুধু টক দইটা পেতে একটু অসুবিধা হয়েছিলো-পরে সেটাও ম্যানেজ করে ছিলাম।
তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
রাশেদের সাথেও কিছু হয়েছে বলে মনে হচ্ছেনা-
গতকাল হুট করে শরীর খারাপ লাগছিলো বলে অফিস থেকে হাফ আওয়ারেই বাসায় চলে এলাম।
ড্রয়িং রুমে ডুকে দেখি-তারা দুজন পাশাপাশি বসে আছে-মিলি রাশেদের হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে।
বুঝতে পেরেছিলাম-রাশেদ আমাকে দেখে খানিকটা বিব্রত হয়েছে।
মিলি বললো তুমিতো এই সময় কখনো ফেরোনা-আজ হঠাত?
আমি বললাম শরীর ভালো লাগছিলোনা তাই চলে এলাম।
ওমা কি হয়েছে!বলে মিলি দৌড়ে এসে আমার মাথায় হাত রেখে বললো-জ্বর-টর কিছু নাতো?
আমি জবাব দিলাম-না তেমন কিছুনা। তুমি বরং আমাদের জন্য চা করে নিয়ে আসো-রাশেদ সাহেবের সাথে চা খেতেখেতে গল্প করা যাবে।
মিলি বললো তুমি মেহেদী লাগাবে-এসো আমি লাগিয়ে দি?
আমি তাতে অসম্মতি জানালাম।
মিলি বললো ঠিকাছে তোমরা বসে কথা বলো আমি চা নিয়ে আসছি। মিলি চা নিয়ে এলে আমরা তিনজন সেদিন অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম-রাশেদ বাংলাদেশে এসেছে একমাত্র বিয়ে করার জন্য-বিয়ে করে বউ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাবে একথাও সে জানিয়েছিলো।
তখন এক মুহূর্তের জন্যেও মনে হয়নি রাশেদ আর মিলির মধ্যে কোনো মনোমালিন্য হতে পারে!
এসব ভাবতে ভাবতেই মিলি এলো আমার ঘরে-তার হাতে চা-আমার দিকে চায়ের কাপ বাডিয়ে দিয়ে বললো-তোমার লেখালেখি কেমন চলছে?
আমি বললাম-তুমি সবসময় আমি কি লিখেছি না-লিখেছি তার জন্য অস্থির হয়ে থাকতে-পড়তে-লেখা ভালো না লাগলে বলতে-এই জায়গাটা একটু এডিট করো অথচ গত কিছুদিন......
আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই মিলি বললো-চলোনা আমরা দুএকদিনের জন্য কোথাও থেকে ঘুরে আসি-কত্তোদিন কোথাও যাইনা!
আমি বললাম-কোথায় যাবে?
কক্সেসবাজার-কান্তা(মিলি আর রাশেদের ভার্সিটির ফ্রেন্ড) আর তার হাজবেন্ড যাচ্ছে সামনের সপ্তাহে-আমাদেরকেও ইনভাইট করেছে-চলোনা আমরাও যাই-রাশেদও যাবে।
আমি বললাম-মিলি আগামী একমাস আমার ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ।
উপন্যাসের বাকী অংশটা শেষ করে নেই তারপর এক মাসের জন্য তোমাকে নিয়ে সোজা সেন্টমাটিন চলে যাবো।
মিলি বললো-আমি কান্তাকে বলেছি যে করেই হোক তোমাকে
রাজি করাবো।
আমি বললাম;বেশতো তাহলে তোমরা যাও-পরে না হয় আমরা আবার যাবো।
আমাদের তো ঢাকার বাইরে খুব একটা যাওয়া হয়না তাছাড়া গত ক”দিন ধরে দেখছি তোমার মুডও অফ-তুমি বরং ওদের সাথে ঘুরে আসো-ভালো লাগবে।
মিলি শেষ অবধি আমাকে ছাড়া কক্সেসবাজার যেতে চায়নি;
নিজে না যেতে পারার কারনে হোক কিংবা মিলিকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে না যেতে পারার অপরাধবোধ থেকেই হোক কান্তাদের সাথে মিলিকে কক্সেসবাজার যেতে অনুরোধ করলাম।
অদ্ভূত ব্যাপার হলো কক্সেসবাজার থেকে ফিরে আসার পর মিলি আগের মতোই স্বাভাবিক হয়ে গেলো।
কক্সেসবাজার যাবার আগে আমার সাথে করা মিস-বিহেভের জন্যও সে অনুতপ্ত হলো-
তাকে আগের মতো কাছে ফিরে পেয়ে আমারো বেশ আনন্দ হলো এবং চিন্তা দূর হলো।
মিলিরা কক্সেসবাজার ছিলো চারদিন।
আমি অবাক হয়ে লক্ষ করেছি চারদিনের মাত্র ব্যবধানে মিলি আগের চেয়ে অনেক বেশী প্রফুল্ল্য হয়ে উঠলো-তাকে দেখাচ্ছিলোও আগের চাইতে অনেক বেশী পোলাইট-মিলির খুশীতে আমিও বেজায় খুশী।
কাজের প্রেসারে পড়ে সেক্সের কথাও ভুলে গিয়েছিলাম তাই সব কাজকর্ম
রেখে সন্ধ্যার আগে আগেই সেদিন বাসায় চলে এলাম। আসার সময় দুই প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে এলাম।
ঠিক করলাম সারারাত মিলির সাথে বিছানায়ই
কাটাবো। রাতের খাবার শেষ করে দুজন শোবার ঘরে এলাম-মিলির কাছে যেতেই সে বললো-এতো অস্থির হয়ে আছো কেনো?পুরো রাত পড়ে আছ্র!
একথা বলেই
মিলি আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেকটা উন্মাদের মতো চুমু খেতে লাগলো।
আমিও একটানে মিলির ব্লাউজ খুলে পেললাম-তারপর ব্রা।
উন্মাদনায় আমিও তাকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে চুমু খেতে থাকলাম অবিরত।
সারারাত বিছানায় কাটিয়ে আমরা একটা সুন্দর সকাল এনেছিলাম সেদিন।
দুদিন পর উপলব্ধি করলাম-সামথিং ইজ রঙ।
মিলি সবকিছুই ঠিকঠাক করছে কিন্তু আমি তার মধ্যে কোন প্রাণ খুজে পাচ্ছিলাম না।
কখনো কখনো মনে হতো-মিলি আমাকে কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু পারছেনা।
একদিন আমিই তাকে বললাম-তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাইছো মিলি?
আমার মনে হচ্ছে তুমি কোন একটা প্রবলেমে পড়েছো। যদি সে রকম কিছু হয়ে থাকে তুমি আমার সাথে শেয়ার করতে পারো-আমিতো তোমার সাথে খুব কাছ থেকে মিশেছি তবে আমাকে বলতে সংকোচ কেনো?
মিলি আমার কাছে এসে বসল আর বললো-আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি-তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা-জহির।
তুমি কি আমায় ক্ষমা করবে?
মিলি যখন আমাকে কথাগুলো বলছিলো তার দুচোখ জলে টলমল করছিলো। আমি তার হাত ধরে আশ্বস্ত করার মতো করে বললাম-বোকা মেয়ে কাঁদছো
কেনো-কি হয়েছে আমাকে বলবে তো?
এরপর মিলি আমাকে যা বললো তার সার-সংক্ষেপ এরকম-
মিলিরা কক্সেসবাজার গিয়ে হোটেলে তিনটা রুম ভাড়া করলো-একটা রুম কান্তা আর কান্তার হাজবেন্ডের জন্যে,একটা মিলির অন্যটা রাশেদের জন্য। তিনটা রুমই ছিলো পাশপাশি। মাঝরাতে সবাই যখন ঘুমাচ্ছিলো মিলির তখন রাশেদকে নিয়ে কাটানো সেই উচ্ছল রোমানঞ্চকর দিন গুলোর কথা মনে পড়লো। তারপর কি যে হলো-সে ঘুমের ঘোরে রাশেদের রুমে গিয়ে তাকে নিজের রুমে ডেকে আনলো,তার সাথে সারারাত কাটালো।
সকাল বেলা যখন তার ঘুম ভাংলো মিলি বুঝতে পারলো-সে বিরাট ভুল করে পেলেছে-সে আমাকে ছাড়া পৃথিবীর কাউকে ভালোবাসেনা। ইতিমধ্যে সে রাশেদের সাথে সব রকমের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ইভেন রাশেদকে আর কোনদিন বাসায় আসতেও বারণ করেছে।
মিলি নিচের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে যাচ্ছিলো আর তার দুচোখ বেয়ে অনবরত পানি পড়ছিলো।
মিলি কথাকটি আবার বললো-জহির আমি বুঝতে পারছি আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি-তুমি কি আমায় ক্ষমা করবে?
আমি মিলিকে তেমন কোন ভরসা দিতে পারলামনা।
পারার কথাওনা-মনেমনে বললাম মিলি তুমি ভুল করছো-আমি মহাপুরুষ না।
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে- ঝুমবৃষ্টি।
উপন্যাসের শেষাংশটা লিখে পেলা দরকার। তার আগে দরকার বৃষ্টিতে ভিজা।
আমার ঠান্ডার সমস্যা আছে বলে এর আগে যতবার বৃষ্টি ভিজতে চাইতাম মিলি বাঁধা দিতো(একদম ভিজিনি তা”না-দু একবার আমরা একসাথে বৃষ্টিতে ভিজেছি)কিন্তু আজকের হিশেব আলাদা।
আজ আমাকে বাঁধা দেয়ার সাধ্য কারো নেই।
আচ্ছা মিলিকে অবাক করে দিয়ে যদি বলি-আহা!কতদিন বৃষ্টিতে ভিজা হয়না-চলো মিলি আজ আমরা ইচ্ছে মতো বৃষ্টিতে ভিজি-কেমন হবে?
না-তা হয়না। যতো কাছের মানুষই হোক তাকে সাথে নেয়া যায়না-
ঝুমবৃষ্টিতে সবসময় একা ভিজতে হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।