আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুহিনের গান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং প্রতারিত পাঠক

আলোয় ভুবন ভরা

আব্দুন নূর তুষার - এর এ লেখাটি যায়যায়িদন ছেপেছে..... ২১ নভেম্বর ২০০৭, দৈনিক যায়যায়দিনে শামসুজ্জামান সিদ্দিকী শাহীনের লেখা পড়লাম। তার লেখায় কিছু যুক্তি আছে। সমস্যা হলো কখনো কখনো যুক্তি দিয়ে বিষয়কে জটিল করে তোলা একটি কৌশল। এটা করা হয় তখন যখন লেখকের উদ্দেশ্য থাকে নৈতিকভাবে দুর্বল কোনো বিষয়ের পক্ষ নেয়া। সাধারণ পাঠকরা এ রকম লেখা পড়ে বিভ্রান্ত ও প্রতারিত হন।

লেখাটির সারমর্ম হলো বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্য ও উন্নয়নের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার বিষয়টি ক্ষতিকর হবে। যারা এ দাবি তুলছেন, তাদের উদ্দেশ্য ক্ষমতায় যাওয়া ও জনগণকে বোকা বানানো। আমরা কয়েকটি ব্যাপারে একমত হতে না পারলে লেখাটি নিয়ে আলোচনার দরকার থাকে না। আসুন লেখার শুরুতেই আমরা কয়েকটি বিষয় ঠিক করে নেই। সব অপরাধের বিচার হওয়া উচিত।

অপরাধ প্রমাণিত হলে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হওয়া উচিত। যদি অপরাধ এমন হয় যার জন্য আইন যথেষ্ট শক্ত নয়, তবে প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করা উচিত। কোনো মহল বা কারো ভুলের জন্য অপরাধী পার পেয়ে যেতে পারে না। আবেগ দিয়ে নয় বরং বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে, তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার কাজ পরিচালিত হবে, যাতে যে কোনো অপরাধের শাস্তি যথাযথ হয়। আপনারা সবাই যদি উপরের শর্তগুলোকে সঠিক মনে করেন তবে এ লেখাটি পড়–ন, অথবা এখানেই পড়া শেষ করুন।

আমার ধারণা সবাই উপরের কথাগুলোর সঙ্গে একমত। এমনকি শাহীনও একমত হবেন। মুহিন কে? সে ১৯৮৩ সালে জন্মেছে এমন কোনো ছেলে, (শাহীন বলেছেন)। শাহীনের আত্মীয় হবেন বলে মনে হয়, কারণ তিনি লিখেছেন যে এটি তার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ। পুরো লেখাতে মুহিনের বিষয়টি এসেছে আবেগের মসলা হিসেবে।

মুহিন কি চায় সে কথা কোথাও আসেনি। বরং মুহিনের গল্প বলে শাহীন তার নিজের বিভ্রান্তিকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন পাঠকদের ওপর। লেখক প্রশ্ন করেছেন, হোমোজিনিয়াস একটা জাতির মধ্যে কেন এতো বিভেদ? এ প্রশ্ন আমারও। এর একটা উত্তর আছে। শুধু ভাষা এবং ভূখ- জাতিকে হোমোজিনিয়াস করে না।

চেহারা আর ভাষা এক হলেই ভাবনা এক হয় না। বিভেদ ১৯৭১ সালেও ছিল। তারপরও আমরা স্বাধীন হয়েছি। কারণ তখন নেতারা বলেছিলেন এ দেশ সবার। বাংলার মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, ক্রিশ্চিয়ান আমরা সবাই বাঙালি।

কিন্তু দেশে অগণতান্ত্রিক শাসনের সঙ্গে সঙ্গে এলো উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া নানা মতবাদ। আমরা কি বাঙালি নাকি বাংলাদেশি। সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম কি আমাদের জাতীয়তার একটি উপাদান? তাহলে হিন্দু, বৌদ্ধ, ক্রিশ্চিয়ান তারাও কি আমাদের জাতির অংশ, নাকি নয়? পাহাড়িরা কি আলাদা জাতি? মিয়ানমারে যে চাকমারা থাকে কিংবা ইনডিয়ায় তারা কি ইনডিয়ান, নাকি চাকমা? বাংলাদেশে যারা থাকে তারা তাহলে কি? সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর বিশ্বাস যদি সাংবিধানিক হয় তবে অন্যান্য ধর্মের অনুসারী যারা আছেন তারা কি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন না করে, সংবিধানের বিরোধী কাজ করছেন? ইসলামের নিয়মে ঈমান শুধু আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন নয়, হযরত মুহাম্মদ (দ.) আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল এ সত্যেও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। সংবিধানে রাসূল (দ.)-এর খাতামান্নাবিয়্যিনের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করার কথা নেই কেন? সৃষ্টি করা হলো সংশয়, বিকৃত করা হলো ইতিহাস। অপ্রয়োজনীয় পিতা আর ঘোষক বিতর্কে, শাহনামার সোহরাব রুস্তমের গল্পের মতো পিতা পুত্রের লড়াই লাগিয়ে দিয়ে লাভবান হলো কারা? লাভবান হলো যারা ধর্মের তকমা লাগিয়ে ক্ষমতার অন্বেষণ করেন, তেমন কিছু সুযোগসন্ধানী লোক।

যারা এ বিভ্রান্তির সুযোগে এ দেশের জন্মের বিরোধিতা করার পরও মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি পাকিস্তানিদের পক্ষ নেয়ার পরও বাংলাদেশের পতাকা, গাড়িতে-বাড়িতে লাগিয়ে মন্ত্রী হতে পেরেছিলেন, তারাই লাভবান হয়েছেন এই বিভক্তিতে। তাই হোমোজিনিয়াস জাতির এ বিভক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়ানো এক নৈতিক এইডসের জীবাণু। যা আমাদের সংবিধানকে বিতর্কিত করেছে, ইতিহাস বিকৃত করেছে এবং এখন রাষ্ট্রকেও দুর্বল করে তুলেছে। ২ লেখক ছোটবেলা থেকে যুদ্ধাপরাধীদের কথা শুনেছেন ঠিকই কিন্তু অর্থ বুঝেছেন বলে মনে হয় না। যদি বুঝতেন তবে অরাজনৈতিক শব্দটির পর ব্র্যাকেট বন্দি প্রশ্নবোধক ব্যবহার করতেন না লেখক।

যুদ্ধাপরাধ কি? এর যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে সেটি আবার পুনরায় উল্লেখ করতে চাই। যে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা (সামরিক বা বেসামরিক) কর্তৃক যুদ্ধ আইন বা যুদ্ধের নীতিমালা ভঙ্গ করা যুদ্ধাপরাধ। এ আইনের ভিত্তি হলো জেনিভা কনভেনশনের মাধ্যমে স্বীকৃত আন্তর্জাতিক নীতিমালা। যুদ্ধাপরাধের মধ্যে আছে যুদ্ধবন্দিদের প্রতি অসদাচরণ ও হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, বেসামরিক জনগণকে আক্রমণ, নারী ও শিশু হত্যা, পরিবেশ ও প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন নষ্ট করা ইত্যাদি। এ দেশে রাজাকার, আলবদর ও পাকিস্তানি আর্মির সঙ্গে হাত মেলানো রাজনৈতিক দলগুলো এসবই করেছে।

লেখক উইকিপিডিয়াকে বাইবেল হিসেবে ধরে নিয়ে বলেছেন, সেখানে তিনি ৩১০ জন যুদ্ধাপরাধীর নাম পেয়েছেন। বাংলাদেশের কারো নাম সেখানে নির্দিষ্ট করে বলা নেই। তবে উইকিপিডিয়ায় ১৯৭১ সালে অভিযুক্তদের জায়গায় লেখা আছে পাকিস্তানি আর্মিও এর সহযোগী। তার মানে একটা বিষয়ে আমরা একমত হলাম যে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে এবং এতে পাকিস্তান আর্মি ও তার সহযোগীরা জড়িত ছিল। এরপর প্রশ্ন এই সহযোগী কারা ছিল? আমরা জানি এরা কারা ছিল।

তখনকার পত্রিকায় তাদের নাম আছে। সিদ্দিক, সালিক ও ফরমান আলীর ডায়রিতে তাদের কথা আছে। এখনো জীবিত আছে তাদের অপরাধের কোনো কোনো সাক্ষী। তারা যেটা চেয়েছিল, তা হলো বিভ্রান্তির কুয়াশায় জড়িয়ে রেখে সময় পার করতে। যাতে সময়ের আবর্তনে সাক্ষীরা আর বেচে না থাকে, প্রমাণ নষ্ট হয়ে যায়।

তাই এখনি কিন্তু শেষ সুযোগ এ তালিকাটি তৈরির। তালিকা কে তৈরি করবে এ প্রশ্ন করাটা এক ধরনের চাতুরি। কুযুক্তির প্রয়োগে সুযোগ নেয়ার শামিল। দুদকের দুর্নীতিবাজদের তালিকা কে তৈরি করলো? কে তৈরি করলো সন্ত্রাসীদের তালিকা, যার ওপর ভিত্তি করে র‌্যাব ক্রসফায়ার করে? কে বানালো ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা? রাষ্ট্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের উদ্যোগেই এটা করেছে। এসব কাজ যদি রাষ্ট্র নিজ উদ্যোগে করতে পারে তবে সব অপরাধীর সেরা অপরাধী, রাষ্ট্রবিরোধী রাজাকার-আলবদরদের তালিকা প্রণয়ন করতে বললেই সবার গলা শুকায় কেন? তালিকা তৈরি করতে এতো কষ্ট হলে বাজার থেকে ‘একাত্তরের ঘাতক দালালেরা কে কোথায়’ বইটা কিনে নিলে, সেখানে একটি তথ্যসমৃদ্ধ তালিকা পাওয়া যাবে।

সেটাকে প্রাথমিক তালিকা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তালিকা উইকিপিডিয়াতে থাকলেই সেটা গ্রাহ্য হবে আর না থাকলে নয় এমন ভাবাটা বোধকরি ঠিক নয়। উইকিপিডিয়ার জন্মের আগেই এই বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। জেনারেল অগাস্টো পিনোশে কিংবা মিলোসেভিচের বিচার করা গেলে, আমাদের দেশে যাবে না কেন? অতএব বিচারের ক্ষেত্রে তালিকা প্রণয়ন কোনো বিষয় নয়, সদিচ্ছাটাই আসল। লেখকের প্রশ্ন হচ্ছে এমন যে, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাধবে কে? আর তার উত্তর হচ্ছে এমন যে আসুন আমরা বিড়ালকে বরং মাছ খেতে দেই।

৩ বিচারের কথা উঠলেই সিমলা চুক্তি আর প্যাকেজ ডিলের কথা তুলে নানারকম দোষারোপের চেষ্টা করা হয়। মুজিব সরকারের আরো অনেক ভুল আছে। তারা বাকশাল করেছিলেন। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। পত্রিকা বন্ধ করেছিলেন।

অনেক কলকারখানা জাতীয়করণ করে বারোটা বাজিয়েছিলেন ব্যক্তি খাতের। এসব ভুল আমরা সংশোধন করতে পারলাম। তাদের এসব ভুলের বেলায় কেউ বললো না যে ভুল যখন মুজিব সরকার করেই ফেলেছে তবে এর আর কোনো বদল হবে না। শুধু সিমলা চুক্তির বেলায় অন্য সুর কেন? সিমলা চুক্তিতে পক্ষ হলো ইনডিয়া আর পাকিস্তান। তার মানে এর দায় আমরা না নিলেও চলে।

আর পরবর্তী যে এমওইউ, তার মধ্যে ১৯৫ জন কারা সে তালিকাটি আমরা জানতে চাই? লেখক বলতে চেয়েছেন শেখ মুজিবের সরকার আর তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন যে ভুল করেছেন সেটি আর কখনো সংশোধন করা যাবে না। কেন, এটা কি কোনো স্বর্গীয় বিধান নাকি? পাক ভারতের মধ্যের দ্বন্দ্ব মেটানোর পথে, আমরা আমাদের মধ্য থেকেই বেরোতে পারিনি এ কথা বলে লেখক কি বোঝাতে চেয়েছেন? পাক ভারতের দ্বন্দ্ব আর মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা, ধর্ষণ আর বুদ্ধিজীবী নিধনকারীদের সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব কখনোই এক নয়। পাক ভারতের দ্বন্দ্ব হচ্ছে সীমারেখা ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা নিয়ে। যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব জায়গা-জমির দ্বন্দ্ব কিংবা পাইক পেয়াদা অস্ত্রশস্ত্রের দ্বন্দ্ব নয়। এটা আদর্শের লড়াই।

ভালো আর মন্দের লড়াই। ধর্ষণকারীর বিচার নিয়ে কি পাক ভারতের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে? কিংবা বুদ্ধিজীবী নিধন নিয়ে। কোনো পাকিস্তানি কি ইনডিয়ায় গণহত্যা করেছে কিংবা কোনো ইনডিয়ান পাকিস্তানে? এরপর শাহীন হাস্যকরভাবে বলেছেন, যদি মাওলানা সাহেবরা দেশে ধর্মহীন রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন তাহলে নাকি আমরা বিপদে পড়বো। ঢালাওভাবে মাওলানা সাহেবদের প্রতিপক্ষ বানানোর মতো বিকৃত চিন্তা লেখক কিভাবে করেন? যুদ্ধাপরাধীরা কি শুধু মাওলানা কিংবা ধর্মীয় ব্যক্তি? এটা একটা কূটকৌশল যাতে পাঠক যুদ্ধাপরাধী আর মাওলানা সাহেবদের এক করে ফেলে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার মানে কখনোই ধর্মীয় কোনো ব্যক্তি বা পেশার বিরুদ্ধে কোনো প্রক্রিয়া নয়।

বরং প্রকৃত ধর্মপ্রাণ মাওলানা সাহেবরাও হত্যা, ধর্ষণের বিচার চাইবেন বলে আমার বিশ্বাস। প্রকৃত মাওলানা সাহেবরা ধর্মের বেশ ধরে রাজনীতি কিংবা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করেন না। ফলে আমি শাহীনের ঢালাওভাবে মাওলানা সাহেব শব্দটি ব্যবহার পছন্দ করিনি। তারপর প্রশ্ন করি, জেএমবি কি তাগুতি আইনের কথা বলে এ দেশের সংবিধান এবং বিচার ব্যবস্থাকে সরাসরি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়নি? সেই সময় সংসদের বেশকিছু সদস্য এমনকি যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত তৎকালীন কোনো একজন সংসদ সদস্য সরাসরি জেএমবির পক্ষ নিয়েছিলেন। তারপর কি রাষ্ট্র ও সরকার জেএমবিকে প্রতিহত করছে না? আইনের বিচারের কারণে বিরোধিতা করে কেউ সন্ত্রাসী হয়ে যাবে এই ভয়ে বিচার বন্ধ থাকবে? জুজুবুড়ির ভয় দেখানোর মতো এই যুক্তি আমার কাছে হাস্যকর ও চালাকি মনে হয়েছে।

এমন কথা তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তারা বলেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন কথা কি তারা বলেননি? তারা কি তাদের মওদুদী সাহিত্যে সরাসরি গণতন্ত্র, ভোট এবং নারী নেতৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করেননি? তারাই আবার নারীর শাসনের পক্ষ নিয়েছেন, ভোটে দাড়িয়েছেন। শাহীন সাহেব প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন বলে আমার মনে হয় না। অন্যায়ের বিচার করতে হলে এবং ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করতে হলে সরকারের সিদ্ধান্ত যদি হয়, তবে তা হবে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। রাষ্ট্র কি জেএমবিকে নিষিদ্ধ করেনি? লেখক নিজের মতামত স্পষ্ট করে না বলে, ঘুরিয়ে পেচিয়ে নানারকম প্রশ্নের অবতারণা করেছেন, কিন্তু কোনো উত্তর দেননি।

আপনাকে সহজ একটা প্রশ্ন করি। আপনি কি চান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক। চাইলে হ্যা বলুন। নইলে না। উত্তর না হলে বলুন আপনার যুক্তি কি? হ্যা হলে আসুন ঠিক করি বিচারের উপায় কি? কূটযুক্তি দিয়ে লোক হাসানোর দরকার কি? আপনার যুক্তি হলো এ রকম যে, শাস্তির ভয়ে সাপ যদি কামড় দেয় কিংবা কামড়াবে বলে, তাই সাপের ভয়ে আসুন আমরা ঘরে ঘরে সাপ পুষি।

তারপর আরো একটি বিশেষণ তিনি ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশে নাকি প্রচলিত আছে ধর্মহীন রাজনীতি। তিনি নিজে কি বিশ্বাস করেন যে দেশের রাজনীতি ধর্মহীন? রাজনীতির কি ধর্ম হয়, নাকি মানুষের ধর্ম হয়? যদি ধর্ম মানুষের হয়, তাহলে ধর্মপ্রাণ মানুষ যে দলেই থাকুন, সেটা ধার্মিকদের দল হবে। আর ধর্মের নামে ধর্ষণ, হত্যা করে দলের নামের সঙ্গে যতোই ধর্মের নাম জুড়ে দেন না কেন, সেটা ধার্মিকদের দল নয়। যে দলের নেতারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রসঙ্গে সরাসরি জনসমক্ষে মিথ্যা বলেন, তারা কি ধর্ম পরিপন্থী কাজ করছেন না? ধর্মে কি মিথ্যা বলা সঙ্গত? লেখক কি কানাডাতে বসে একটা ইসলামী দল কিংবা হিন্দু দল খুলতে পারবেন? কোনো হিন্দু কি ইসলামী দলের সদস্য হতে পারে? লেখকের যুক্তি মানলে তো দেশের ধর্মহীন রাজনীতি বাদ দিয়ে হিন্দু দল, মুসলিম দল, ক্রিশ্চিয়ান দল, বৌদ্ধ দল খুলতে হবে।

তাহলে কি জাতীয় ঐক্য আরো জোরদার হবে? তারপর লেখকের মনে হয়েছে, তিনি কানাডায় বসে দিব্যচোখে দেখতে পেয়েছেন যে, দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে ধরে ধরে ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের ফাসিতে লটকানো হবে। তাদের লাখ লাখ অনুসারীদের বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া হবে। এমন বর্বর চিন্তা কেবল কোনো মূর্খের মাথায়ই আসতে পারে। বাংলাদেশ কি কোন বর্বর দেশ যে সেখানে আইন নেই? এমন চিন্তা বরং যুদ্ধাপরাধী সেইসব গণহত্যাকারীদের মতো বিকৃত বর্বর মর্ষকামী ভাবনার ফসল। অপরাধের বিচার হবে আইনের অধীনে।

এখানে লটকানো, ঝাটানোর মতো অসভ্য শব্দ কি করে আসতে পারে। আইন কি কাউকে লটকায়, ঝাটায় কিংবা সাগরে ফেলে দেয়? ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা মানে ধর্মহীনতা নয় বরং ধর্ম নিয়ে লোভ, ক্ষমতা আর কুটিলতার প্রতিযোগিতা বন্ধ করা। এ রাজনীতি বন্ধ হলে প্রকৃত মাওলানারা রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে কার্যকর সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে মূলধারার রাজনীতিতে ধার্মিকতার প্রসার ঘটাবেন। নীতিহীন ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির অভিশাপ দূর হবে। ৪ লেখক বলেছেন, ক্ষমতায় যাওয়ার সিড়ি হিসেবে কাউকে ব্যবহার করতে না পারলে বারবার বোকা জনগণকে স্যান্ডউইচ বানানো হয়।

আমি জনগণের সামনে বোকা শব্দটি ব্যবহারের প্রতিবাদ করছি। এই জনগণকে যারা বোকা বলেন, ভাবেন, তারাই বরং মূর্খশিরোমণি মূর্খাচার্য। এ কথা অসত্য যে গ্রামের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের বছরটিকে গ-গোলের বছর বলে। এ দেশে যুদ্ধ করেছে মূলত গ্রামের মানুষ। তখন এবং এখনো এ দেশের অধিকাংশ সেনাসদস্যরাও গ্রাম থেকেই আসেন।

তাই যুদ্ধ করেছে গ্রাম। অসংখ্য শহুরে পরজীবী মানুষকে তারা নয় মাস পেলেছে এবং যুদ্ধ হয়েছে সেখানেই। সম্মুখসমরে নিহত যুদ্ধের অধিকাংশ বীর সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধার কবর আজো গ্রামের মাটিতে। শাহীনের মতো পরদেশে পরজীবীরা, শহরের সুবিধাজীবীরা এবং যুদ্ধাপরাধীরা একে গ-গোল বলে, বলে এটা গৃহযুদ্ধ। এদের কাছে তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা।

সাত বছর কানাডাতে থেকে তিনি এ দেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ নিয়ে সবজান্তার মতো মন্তব্য করেছেন। তিনি আমদানি আর রফতানির পার্থক্য বোঝেন। মাথাপিছু ঋণের দায় বোঝেন? বোঝেন কি যে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি এমনকি ভুটানের সঙ্গেও আছে, যে দেশের প্রধান আয় শ্রমিক জনশক্তির পাঠানো ডলার আর সস্তা নারীশ্রমের গার্মেন্ট যার কাচামালের জন্য আমরা বিদেশের ওপর নির্ভরশীল, সে দেশে তেলের দাম বাড়লে যে প্রভাব, কানাডার মতো দেশে সেই একই প্রভাব পড়ে না। পণ্যের দামের বেলায় কানাডার উদাহরণ দেন, রাজনীতির বেলায় দেন না কেন? কানাডায় ধর্ম নিয়ে রাজনীতি চলে? কানাডায় কেউ কি ফতোয়া দিয়ে রাষ্ট্রের আইনকে অগ্রাহ্য করে? সাত বছর কানাডার কোনো মসজিদ থেকে মিছিল বের হতে দেখেছেন? কানাডাতে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বলেন যে, কানাডার ইতিহাসের বীর সৈনিকেরা নারী আর টাকার লোভে যুদ্ধ করেছেন? কানাডাতে কি জাতীয় নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল? কানাডায় কি তাদের প্রেসিডেন্ট হত্যাকারীর বিচার ৩২ বছর ঝুলে থাকে? ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে দেশের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সেক্টর কমান্ডার, দুজন প্রেসিডেন্টসহ মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব মেরে সাফ করে দেয়া হলো। কানাডায় কি এটা সম্ভব ছিল? শাহীন সাত বছর আগ


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।