আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ে আমরা মানুষকে শ্রেণীবিন্যস্ত করি। শিক্ষার ভিত্তিতে, অর্থের ভিত্তিতে, ধর্মের ভিত্তিতে। আমরা এই সব শ্রেণীর সদস্য হিসেবে জন্ম হই না। মানুষই আমাদের বিভিন্ন শ্রেণীর সদস্য করে। অথবা কেউ হয়ত বলবে সমাজ।
আমরা জন্ম হই সততা নিয়ে। শিশু ক্ষুধা পেলে কেঁদে জানান দেয় তাকে খাবার দিতে হবে। কিন্তু, বড় হলে তাকে শেখানো হয়, নিজের বাসা ছাড়া অন্যত্র ক্ষুধা পেলেই বলতে হয় না। আস্তে আস্তে সমাজ আমাদের কিছু নিয়ম শেখায়। কিছু কঠিন নিয়ম, যা মন মেনে নিতে চায় না।
এর মধ্যে একটি হল পূর্ণ আত্মসমর্পণ। সমাজ আমাদের শেখায় কারো প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে একমাত্র “প্রভুভক্ত কুকুর”। এটা মানুষের বৈশিষ্ট্য নয়।
একটু চিন্তা করুন, জীবনের প্রথম প্রেমের কথা। যে কোন পুরুষ তার সর্বোচ্চ সততা নিয়ে সে সম্পর্ক পালন করে।
সামান্যতম ত্রুটিও তার মনে সহ্য হয় না। কিন্তু পূর্ণ আত্মসমর্পণের, প্রতিদানে সে পায় বঞ্ছনা। সততা কমতে শুরু হয়, এক পর্যায়ে অসততাই জীবনের নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়।
অথচ, সেই ছেলেটা ১০০% সৎ ছিল নিজের কাছে। একদিন পরীক্ষা আগে সে জানতে পারল, প্রেমিকার কাছে নোট নেই।
ঝড় বৃষ্টি রোদ উপেক্ষা করে সেই নোট দিয়ে আসা। কারন, একটাই দু’জনেই পড়ব। ছেলেটির মন যে একটুকুও কম দিতে চায় না। পান থেকে চুন খসলেই ছেলেটির মন তাকে জ্বালিয়ে মারে। সে মানতে পারে না, সে সামান্যতম ত্রুটি করেছে।
অন্যদিকে প্রেমিকার কাছে, “এটাই নিয়ম, ছেলেদের তো এটাই কাজ”।
পূর্ণ প্রেমে নিবেদিত ছেলেটির অন্য কোথাও চোখ নেই। সে শুধু তার প্রেমিকার প্রেমেই সুখি। মনের শান্তির জন্য তার আর কাউকে চাই না। বার বার বলে যায়, “আমি ভালবাসি”।
প্রেমিকার চোঁখ স্থির হতে দেখলেই, বুক কেঁপে উঠে। যদি চলে যায়, তবে বাঁচব কি করে? কিন্তু, বোকা ছেলেটি ভাবে অপর পক্ষেও একই ঘটনা ঘটছে। কিন্তু, সেখানে চলে উলটো খেলা। প্রেমিকা ভাবে, “ওতো আছেই, থাকবে। যাবে কই? আমাকে ছাড়া বাঁচতেই পারবে না’’।
সে নতুন বন্ধু খোঁজে। সেটা অবশ্যই ছেলে বন্ধু। অন্য বান্ধবিরা বা প্রেমিক তাকে পূর্ণ শান্ত করতে পারে না। নতুন বন্ধুর প্রতি সে চরম তৃপ্ত। মনে হয়, বন্ধুটি আর যাই হোক, সম্পর্কের সুইটনেস ধরে রাখতে জানে।
তার (প্রেমিকা) আর সেই বন্ধুর মাঝে প্রেমিকের উপস্থিতি (এমনকি চিন্তার মাঝেও) খুবই বিরক্তির উদ্রেক করে।
ছেলেটি প্রেমিকা কে একদিন ফোন করে যায়, দেখে ফোন ব্যস্ত। একদিন প্রেমিক ব্যাপারটা বুঝতে পারে কিন্তু, তার প্রশ্নও প্রমিকার কাছে বিরক্তিকর মনে হয়। মনে হয় এমন একটা সংকির্ণ ছেলের সাথে সারা জীবন কি করে চলবে? সে বলে, প্রেমিক তাকে খাঁচায় বন্ধি করতে চায়। প্রেমিকা মুক্তি চায় সে প্রেমিকের কাছ থেকে।
ছেলেটা কষ্ট পায় খুব। তার প্রথম প্রকাশ পায় রাগের মাধ্যমে। কিন্তু, প্রেমিকা পাত্তা দেয় না। সে ভাবে, “কতদিন রাগ করবে, রাগ করে কতদিন বাচতেই বা পারবে বলদটা”। প্রেমিকার পাত্তা না পেয়ে প্রেমিক ছেলেটা প্রেম ভিক্ষা চায়।
তার কাছে পৃথিবী কন্টকময় হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে প্রেমিকা খানিকটা দয়া দেখায়, যদিও তার নতুন বন্ধু ও তার মাঝে প্রেমিককে এখনও সহ্য করতে চায় না। প্রেমিকের কষ্ট বাড়তে থাকে। কষ্টকে সিগারেটের ধুয়ায় উড়াতে উড়াতে, একদিন লক্ষ্য করে আসলে সে নিজের প্রাণশক্তি উড়িয়ে দিচ্ছে।
এভাবে চলে কয়েকটি মাস।
ছেলেটি দেখে সে নদীর গভীর চলে এসেছে। পায়ের নিচে আর মাটি নেই। সে ডুবতে বসেছে। তখন সে বাস্তবে ফিরে আসে। বাঁচার জন্য নিজের মন প্রান দিয়ে দেয়।
জীবনকে সে এই নদীতে শেষ করতে চায় না। তার সামনে ফুঁটে উঠে দেশের জন্য, পরিবারের জন্য, নিজের জন্য দেখা স্বপ্ন গুলো। সেগুলো তাকে বাঁচার প্রেরণা দেয়। ছেলেটি শান্ত হয়। নিজেকে গুছিয়ে নিতে শুরু করে।
তাকে সাহায্য করে, ছোট বেলার কিছু বন্ধু। ছেলেটি ভাবতে শুরু করে, কেন এ যুদ্ধ করতে হল। যেহেতু সে কষ্ট পেয়েছে, ফলে নিশ্চয়ই কোন না কোন পাপ সে করেছে। নইলে, শুধু শুধু শাস্তি কেন পেল? প্রতিবার একটা পাপের নামই মনে উঠে আসে, সেটা হল “প্রেমের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ”।
সেই থেকে ছেলেটির জীবন আজ অন্যরকম।
সেই প্রেমিকা আজও আছে। কিন্তু, ছেলেটির সেই পূর্ণ আত্মসমর্পন আর নেই। ছেলেটির আর একটা নতুন বান্ধবি জুটেছে। মন খারাপ হলে, বা ভাল থাকলে ছেলেটি সেই বান্ধবিকে ফোন করে। এতটুকুই।
মাঝে মাঝে কথা একটু লম্বা হয়ে যায়। প্রেমিকা অনেক্ষণ ফোন ব্যস্ত দেখে জানতে চায় কার সাথে কথা হচ্ছিল। কিন্তু, ছেলেটি মিথ্যা উত্তর দেয়। এই প্রথম মিথ্যা বলা। এরপর থেকে টুকটাক মিথ্যা চলতে থাকে।
সিগারেট চলে ঠিকই, কিন্তু খুব বেশি না।
ছেলেটার দিন ভালই কাটছে। পৃথিবীতে চলা সে শিখেছে, পৃথিবীই তাকে শিখিয়েছে। এ পৃথিবীতে মানুষের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পন করা পাপ। কিন্তু, মন প্রতি মূহুর্তে কারও প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করতে চায়।
ছেলেটার কোথাও ভাল লাগে না। হয়ত, এ পৃথিবীতে তার জন্য আর ভাললাগা নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।