আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোহাম্মদ ইলিয়াসঃ ত্যাগী রাজনিতীক হিসাবে আজো স্মরনীয়

সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...

"জন্মিলে মরিতে হয়, চিরদিন কেহনাহি রয়", কিন্তু জন্ম ও মৃত্যুর এই মধ্যবর্তী সময়ে মানুষের জীবন যাপন ও কর্মের উপরই নির্ভর করবে লোকায়িত ব্যাক্তিকে কতকাল স্মরনে রাখবে মানুষ। এই বিচারে মোহাম্মদ ইলিয়াসকে বহুকাল মনে রাখার কথা থাকলেও আজ নিরবে নিভৃতেই চলে যায় তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী। কেউ খোঁজ রাখছে না তার পরিবার পরিজনদের। যিনি সমস্ত জীবন শুধু দিয়েই গেছেন, নেননি কিছুই। ২০ বছর আগে তার অকাল প্রয়ানের পর সবাই কতইনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে কি করা হয়েছে? আজও অভাবের ঘানিটেনে চলছে তার অসহায় পরিবার।

জম্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার ছিল এক বন্যাঢ্য জীবন। ‘মানুষ মানুষের জন্য’এই মহান ব্রত নিয়েই ছিল তার পথ চলা। তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম বীর সৈনিক, স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়ক, গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, বাঙ্গালীর জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেতা, শুষনমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় দেশ বরেন্য অকুতভয় সাহসী সংঘঠক। মোহাম্মদ ইলিয়াস ১৯২৯ সালেয় ১লা অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার খুলাসপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়ায় অভাব-অনটন, সুখ-দুঃখ সবই সয়ে গেছেন নিরবে।

যৌবনে সাহসী সৈনিক, সফল সংগঠক জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস শিক্ষা ক্ষেত্রে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাএ ছিলেন। মোহাম্মদ তোয়ারা, শহীদুল্লা কায়সার, নাদেরা বেগম, গাজীউল হকসহ আরও অনেকের সংস্পর্শে এসে তিনি ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। ভাষা আন্দোলনে ছিলেন ছালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারের সহযোদ্ধা। তিনি ছিলেন ছাত্র ইনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগ দেওয়ায় প্রায় একদশক আত্মগোপনে থেকেও মেহনতী মানুষের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন।

১৯৫৪সালে ৯২/ক ধারায় এবং ৫৮সালে সাময়িক আইনে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলে ৬২ সাল পর্যন্ত তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল। ৭০’এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আহব্বানে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে এম,এন,এ নির্বাচিত হন তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামে সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজে তার ছিল বীরত্বপূর্ন ভূমিকা। তিনি ছিলেন ৪নং সেক্টরের রাজনৈতীক সমন্বয়ক। ৭১’এর ১২ এপ্রিল সিলেট জেলা (তৎকালীন) প্রাদেশিক পরিষদের মৌলভীবাজার মহকুমার প্রসাশকের দায়িত্ব পালন করেন।

তার আদর্শ, নিষ্টা ও সততার জন্য তিনি ১৯৭৩, ১৯৭৯ এবং ১৯৮৬ সালে পর পর তিন বার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন। শিক্ষানুরাগী হিসাবে ও তার রয়েছে অনেক অবদান। তিনি ছিলেন কমলগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। একজন দক্ষ ট্রেড ইউনিয়ন নেতা হিসাবে চা বাগান কর্মচারী ট্রেড ইনিয়নের সম্পাদক, সভাপতি ও উপদেষ্টা পদে যুক্ত ছিলেন বেশ কিছুদিন। ট্রেড ইউনিয়ন করতে গিয়ে চা শ্রমিকদের সুখে দুঃখে তিনি ছিলেন তাদের প্রাণ।

বঙ্গবন্ধু আদর্শের ধারক ও বাহক হয়ে তিনি আদর্শের হাল ধরেছিলেন মুক্ত হাতে। তাইতো মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন আওয়ামীলীগের পার্লামেন্টারী কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এমপি হয়েও তার জীবন যাপন ছিল আতি সাধারন। তিনি নিজ হাতে ব্যাগভর্ত্তি বাজার নিয়ে পায়ে হেটে বাসায় ফিরতেন। তখনকার দিনে আজকের মত বি,এম, ডব্লিউ, নিশান, পাযারো গাড়ি না থাকলেও শহরের রিকসা পাওয়া যেত।

শুনেছি তিনি বাজার হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পরিচিত জনকে বলতেন আমি এমপি হয়েছি খামখাই, আমার ডাকে একটি রিকসা ও আসেনা। ব্যক্তি জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দকে উপো করে জনতার কাতারে থেকে মেহনতি মানুষের অধিকার কায়েমের জন্যই সারাটা জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। ধন দৌলত ও বিলাশী জীবন তাকে বার বার হাতছানি দিয়ে ডাকলেও তিনি সততার আর নীতির সাথে এবং নিজের আদর্শে বিশ্বাস ঘাতকথা করেননি কোনদিনও। দৈন্যদশার মধ্যে দিয়েই কাটিয়ে গেছেন সারাটা জীবন। তাই আজও নুন আনতে পান্তা ফুরুনুর চিন্তা থেকে কাটিয়ে উঠতে পারেনি তার পরিবার।

দেশ ও দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করতে গিয়ে নিজের জন্য ভাববার সময়টুকুও পাননি তিনি। প্রতিটি নির্বাচনেই জায়গা জমি বিক্রি করে নির্বাচনী খরচ যুগিয়েছেন। তিনি ছিলেন মনে প্রানে রাজনৈতিক। নিজের স্ত্রী ও সন্তানের জন্য মাথা গুজার ঠাইটুকুও করে জাননি তিনি। নাকি মাতৃভূমির জন্য কোন ত্যাগই বাকি রাখেননি।

তিনি চরিত্র সম্পদের এত সমৃদ্ব ছিলেন যে, তার পক্ষে তুচ্ছজ্ঞান মনে হয়েছে বাহ্যিক ধন সম্পদ। তাইতো ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল তার দেশপ্রেম, অপরীসীম নিষ্ঠার কষ্টি পাথরে উত্তীর্ণ তার কর্মজীবন। আবহমান বাংলায় ত্যাগ ব্রতীদের অয় ইতিহাসে স্বর্ণারে যাদের নাম লিখা থাকবে মোহাম্মদ ইলিয়াস তাদেরই একজন। আজ দূর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিষবাষ্পে চর্তুদিক যখন বিষাক্ত, তখন দেশের এই সঙ্কটময় মূহুর্তে তার মতো মানুষের বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। আজ তার ২০তম মৃত্যু বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধার সহিত স্মরন করছি তাকে।

তার মতো মানুষ যেন অধিক সংখ্যায় জন্ম নেয় এই বাংলায়, তবেইনা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হতে পারবে এইদেশ। তার আর্দশই হোক আমাদের আগামী দিনের চলার পথের পাথেয়। তার মত সৎ, নির্লোভ ও উদার মনের মানুষের মৃত্যু নেই। মোহাম্মদ ইলিয়াস আজও বেঁচে আছেন দলমত নির্বিশেষে সাধারন মানুষের অন্তরে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.