আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের চিন্তার দিক ও দর্শনের পরিবর্তন জরুরী!

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

প্রবাসী মানুষ হিসাবে বাংলাদেশের যে কোন ভাল বা মন্দে আমরা আন্দোলিত হই। উদ্বেলিত হই। আতংকিত হই। চেষ্টা করি সমস্ত সম্ভাব্য সোর্স থেকে তথ্য নিয়ে আসল ছবিটা দেখতে। সিডর'র প্রলয়ের পরদিন যখন খবরটা পাই যে, ১৭ লক্ষ মানুষের সাথে তখনও যোগাযোগ করা যায়নি - চিন্তিত হয়েছি।

পরে দেখলাম - আশংকা অনেকটা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এটা হয়েছে উড়িরচড়ের ঘটনার বাস্তব চিত্র দেখার আলোকে। যাই হোক - বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং উন্নয়ন সম্পর্কে একটা চিত্র উপস্থাপনের চেষ্টা করছিলো বেশ কিছু দিন যাবত - বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দ্রব্যমূল্য বিষয়ে এদের দৃষ্টি ভঙ্গী দেখে মনে হয়েছে - দেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান অনেক বেড়েছে। সেটার প্রতিফলন হয়েছে ঝড়ের পর সরকারের বোধদয়ের বিলম্ব দেখে। সরকারের প্রধান ঘোষনা দিলেন তাদের কোন বিদেশী সাহায্য দরকার নেই।

কিন্তু তখনও বিধ্বস্থ অঞ্চলের বিরাট অংশের খবর সরকারের কাছে পৌছেনি। সুতরাং ধরে নিতে পারি - সরকারের প্রস্তুতি ছিল যথাযথ। এই অবস্থায় ইউএস সহ অনেক দেশ সহায়তার কথা বলেছে। সেটা ছিলো ওদের উদারতা। যতটুকু দেখলাম - আমেরিকা ২.১ মিলিয়ন ডলার সহায়তার কথা বলেছে।

অন্যদিকে সরকার নিজে ৩৬ কোটি টাকার গৃহনির্মান সহায়তার কথা বলেছে। যেখানে একটা পরিবারের জন্যে ৫০০০ টাকা হিসাবে ধরা হয়েছে। সেই হিসাবে ২.১ মিলিয়ন ডলারে কমপক্ষে ২৫.০০০ বাড়ী নির্মান সহায়তা সম্ভব। এই সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়। তা ছাড়া ইইউসহ অনেক দেশ সহায়তার বিষয়ে কথা বলছে।

এই পর্যন্ত যারা সহায়তা করেছে : ডাইরেক্ট রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল - ২,৮০,০০০ ডলার আমেরিকা: ২০ টা হেলিকাপ্টার ও দুইটা শীপ (বাংলাদেশ সরকারের চাহিদা সাপেক্ষে) জার্মান: ৭৩০,০০০ ডলার ইইউ ২.২ মিলিয়ন ফ্রান্স: ৭৩০.০০০ ডলার (সরকারের হিসাব মতে এই অর্থ দিয়ে এক লাখ বাড়ী পুনির্মান সম্ভব) উপরের লিস্টে সিডা, কেয়ার, অক্সফাম, রেডক্রস বা সেইভ দ্যা চিলড্রেনস এর মতো সংস্থাগুলো নেই। এরা প্রথম দিন থেকেই সাহায্য উঠাচ্ছে। (২) উপরের বিষয়গুলো একটু ভিন্নভাবে দেখা যেতে পারে। যেমন বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয় আর বিদেশী রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে গত কয়েক বছর। ঝড়ের খবর শুনার পর থেকেই প্রবাসীরা যথাসাধ্য অর্থ প্রেরন শুরু করেছে।

সব কিছু বিবেচনা করলে - বাংলাদেশ সরকারের ৩৬ কোটি টাকার বরাদ্ধটা বরঞ্চ অযৌক্তিক মনে করা যায়। দেশে এতো বড় দূর্যোগের পরও দেখি সরকারী অফিসে সুট টাই পড়ে লোকজন অফিস করেন। এরা যদি এয়ায় কুলারের খরচটাও কমাতো বা তাদের নিজেদের ভোগবিলাস কিছুটা কমাতো - তাতে দুবলারচরের কয়েকশত মানুষের ঘরবাড়ী তৈরী করা যেত। দেশের মানুষের একবেলার খাবার পরিমান অর্থ দিলে উপদ্রুত এলাকায় মানুষ ১৫ দিন খেতে পারবে। এগুলো কি বিবেচনা যোগ্য নয়।

কিন্তু বাংলাদেশের টিভিগুলোতে সেমন কোন দিকনির্দেশনামুলক আলোচনা দেখিনি। আমাদের প্রিয় ব্লগ টেকোলজি উন্নয়নের পর সহায়তার সুযোগ করে দেবে বলে জানিয়েছে। কোনটাই দুর্যোগোর ভয়াবহতার সাথে খাপ খাচ্ছে না। হয়তো আমরা বসে আছি - বিদেশী সাহায্য আসবে - নতুবা নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। অভিযোগ করছি বিদ্যুত বিভ্রাটের জন্যে।

শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই কয়েকলক্ষ মানুষ ঝড়ের দিন পলিথিনে নীচে বসে রাত কাটিয়েছে - কই তাদের দিকে আমাদের প্রসারিত হাত যাচ্ছে বলে শুনিনি। (৩) এখনই সময় শক্ত হয়ে দাড়ানো। সমুদ্রের উপকুলের দ্বীপের জেলে আর সচিবালয়ে বসে এসি চালিয়ে তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রনের ভান করা মানুষগুলোকে একই মর্যাদার মানুষ ভাবার। ঢাকার উন্নয়নই যে দেশের উন্নয়ন নয় - সেই কথা উপলদ্ধি করার সময় এসেছে। ঢাকাকে তিলোত্তোমা করার চাইতে - সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের নিরাপদ আশ্রয় তৈরী করার অনেক বেশী জরুরী -এটা সমানভাবে উপলদ্ধি করতে হবে পরিকল্পনাবিদদের।

(৪) ৯১ এর ঘুর্নিঝড়ের পর একটা মহাপরিকল্পনার কথা অনেকে বলেছিলেন। কিন্তু সুবিধাবাদীরা দ্রুত লাভের আশায় বিচ্ছিন্ন ভাবে সেলটার নির্মানের পরিকল্পনার দিকে সরকারকে নিয়ে গেছে। সেলটার যে কার্যকরী না - সেটা প্রমানিত। সুতরাং সমন্বিত মহাপরিকল্পনার কথা ভাবা জরুরী। আর আমাদের মডেল হতে পারে - নেদারল্যান্ডস।

নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। সম্পদ আর কমদক্ষ জনগোষ্ঠি অভাব বাংলাদেশে নেই। শুধু অভাব একদল স্পপ্নদর্শ সাহসী মানুষের - যারা দেশের মানুষকে এই বিরাট কর্মকান্ডে সম্পৃত্ত করতে পারবে। বিদেশী সাহায্য যা এসেছে - তার জন্যে তাদের ধন্যবাদ জানানো এবং ভবিষ্যতে যাতে কোন সাহায্য না নিতে হয় সেই দিকে চিন্তা করা দরকার - কোন অভিযোগ নয়। তারপরও বলি - বিপদে বন্ধুত্বের হাতকে কখনওই ছোট করে দেখা ঠিক নয়।

শেষ কথা হলো - নিজেদেকে যারা নিজেরা সাহায্য করতে ব্যর্থ - সেই জাতি বা সমাজের উন্নতি করা কঠিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।