কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...
রাষ্ট্র বিষয়টা নিয়া প্রশ্ন তুলতে গিয়া অনেক সময় অহেতুক সময়ক্ষেপন মনে হয়...আধুনিক যুগের প্রারম্ভে যখন জাতি রাষ্ট্রের শুরু তখনও কি মানুষ এইরম প্রশ্ন তুলতো?
...............................................................
রাষ্ট্র বিষয়ক চিন্তার ক্ষেত্রে আমার উপলব্ধ হয় শাসকেরা নিজেগো মতোন ডিজাইনেই রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্ধারন করছে, ক্ষমতা আর সমতার বন্টন করছে, সীমানা চৌকিদারীর দায়িত্বকৌশল বিবেচনা করছে...আমার মতোন সাধারন মানুষ যারা রাষ্ট্ররে খোলাচোখে দেখতে পাই না (চোখ বন্ধ কইরা ভাবতে হয়!), তাগো কাছে চিরকাল রাষ্ট্র কনসেপ্ট নিয়া প্রশ্ন থাকে...বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভূমিকা, তার মান-ইজ্জত আর সংবিধান সমুন্নত রাখা নিয়াও আমার সকল অহেতুক প্রশ্নই আছে...
এই জাতি রাষ্ট্রেরও শুরু পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রীয় সংগঠনের মতোনই...সময় বিভাজনে শত্রুর চরিত্র হয়তো পাল্টাইছে...পাল্টাইছে রনকৌশল...কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের ক্ষমতা হাতবদলের শ্রেণী পাল্টায় নাই কোনখানেই...বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর ঠিক যাগো হাতে ক্ষমতা যাওনের কথা ছিলো, যাগো হাতে সংবিধান রচনার দায়িত্ব অর্পিত হওনের কথা ছিলো, যাগো নির্বাহী প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত প্রদানকারী হওনের কথা ছিলো তারাই সেইসব পাইছে...আর তাই একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরও একটা দেশে কখনোই জনগণ কোন ধরণের নীতিনির্ধারণের পরিমাপক ফ্যাক্টর হয় নাই।
গোষ্ঠীর বিচারে যেই সিদ্ধান্ত ঠিক মনে হইছে, ঠিক সেইসব সিদ্ধান্তই নিয়ম হিসাবে সামনে চইলা আসছে...তয় উন্নত পুঁজিতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের সাথে কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় এক্সপ্রেশনের বেলায়। পুঁজিতন্ত্র বিকাশের আগেই এই দেশে পুঁজির মালিকানা বন্টনের অভ্যাস শুরু করতে হইছে সারাবিশ্বের সাথে তাল মিলাইয়া চলতে গিয়া...আর এই অভ্যাসের যেই সংস্কৃতি সেইখানে স্তরে স্তরে রইয়া গেছে পুরানাকালের সামন্তীয় মনোবৃত্তি...যেই কারনে এই দেশে সকালে আমরা জানি না কোন নিয়ম চাপাইয়া দেওয়া হইবো বিকালের সেশনে...
একটু বিস্তারিত বর্ণনায় গেলে কওন যায়, যারা আমাগো নির্বাহী আর আইনী প্রশাসনের ক্ষমতার শাসন করনের ভার পায়...বা যাগো কাঁধে ন্যস্ত হয় আমাগো নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব...তারা জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হইলেও পূর্বোক্ত সংস্কৃতির চর্চ্চার কারনে হইয়া উঠে শাসক...যেই শাসক ছিলো এককালে জমিদারেরা...নিয়মের খাতা কলম যারা কুক্ষীগত কইরা রাখছিলো...যারা উপর থেইকা দেখতে জানে কিন্তু কখনোই নিজেরে নিয়মের অন্তর্গত ভাবে না।
ঠিক সেইরমই শাসকগোষ্ঠীরা এই দেশে সাধারন মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার কথা না ভাইবাই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীগো অপরাধের বিচার না কইরা বরং সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করে...নিজেগো প্রয়োজনে তারা লঘুপ্রজাতির যুদ্ধাপরাধীগো নিজেগো শাসন শাসন খেলার সাথী বানাইয়া ফেলে...জনগণের সামাজিক সাংস্কৃতিক উপলব্ধির পড়োয়া না কইরা যুদ্ধাপরাধীগো সামাজিক ভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে। যুদ্ধাপরাধীগো সামাজিক ভাবে খালি পুনর্বাসন না...বন্ধুস্থানীয় চরিত্র চিত্রনের নজীরও সকল শাসক প্রতিনিধিরই প্রকটভাবেই আছে।
দেশে এখন তোলপাড় চলতাছে যুদ্ধাপরাধের বিচার করণের দাবীতে...ভাবতেই কষ্ট হয় ৩৬ বছর পরেও একটা দেশে যুদ্ধাপরাধী কারা আর তার ক্যানো বিচার করতে হইবো এই বিষয়ে যুক্তির অবতারণা করতে হয়। রাষ্ট্র তার স্বভাবমতোন নিয়মের দোহাই দ্যায়...সীমাবদ্ধতার কথা কয়। কিন্তু এইখানেই আমার রাষ্ট্র সম্পর্কীত প্রশ্ন আবার উজ্জীবিত হয়...এই প্রশ্ন রাষ্ট্রের অপারগতা কিম্বা ব্যর্থতা নিয়া না, এই প্রশ্ন রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নিয়া তৈরী হওয়া সংশয়ের প্রশ্ন।
রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া কিম্বা রাষ্ট্রের বর্তমান শাসক প্রতিনিধিগো সমর্থক খবরের কাগজের ভূমিকা আর রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশীদারী সংগঠনের প্রতিনিধিগো বক্তব্য আমার কাছে কেরম গন্ধযুক্ত বোধ হয়। যেনো তারা চায় জনগণ যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে যেই চাপা ক্ষোভ পুইষা রাখে তার বিচ্ছুরন ঘটাক...তারা ফাইটা পরুক বিদ্রোহে...তারপর শুরু হোক যুদ্ধাপরাধীগো বিচারের প্রক্রিয়া...খুব ভালো শোনায় এই পর্যন্ত।
কিন্তু তারপরই রাষ্ট্রের ভূমিকা আবার ধোঁয়াটে হয়...তারা এই বিচারের দায়ভার নিতে চায় না। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাওয়া অপরাধীগো দায়ভার নিতে হইবো সাধারন মানুষরে! যারা রাষ্ট্রের ক্ষমতার সাংবিধানিক অংশীদারী থাকনের পরও কোনরম নিয়মে নাই...কেবল অনিয়মে আছে...
আমার মনে হয় দেশের শাসকেরা এতোকাল যুদ্ধাপরাধীগো সামাজিক ভাবে যেই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করছে...তারই রেশ টাননের আরেক নতুন খেলা খেলাইতে চায় এইবার। ঠিক যেমনে এই দেশে গোলাম আযম নাগরিকত্ব পায়, ঠিক যেমনে এই দেশে চিহ্নিত রাজাকাররা জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হয় তারই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধীগো আইনীভাবেও পুনর্বাসনের এক গভীর ষড়যন্ত্র চলতাছে...
আমাগো যারা শাসক তারা নিয়ম চাপাইতে জানে...আমাগো যারা নিয়ন্ত্রক তারা নিয়মের অনিয়মতান্ত্রিক ব্যবহার করতে জানে...তারা যুদ্ধাপরাধীগো এতোকাল রক্ষা কইরা গেছে...এইবারে তাগো প্রতিষ্ঠিত করবার চায় বইলাই আমার কাছে প্রতিভাত হইতেছে! অনিয়মের নিয়মে কখনো অপরাধের শাস্তি মেলে না...সাধারন মানুষ নির্যাতিত হয়...শারিরীক আর মানসিক...দুইভাবেই। শাসকগোষ্ঠির এই অপরাধ আমার কাছে যুদ্ধাপরাধীগো সমান অপরাধই মনে হয়। এইখানে আইসা জামায়াত, আওয়ামি, বিএনপি আর সুশীল মানুষগো কোন পার্থক্য থাকে না...সব ভেদ ঘুচে যায়...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।