কিছুদিন ধরে আমি বেশ কিছু নারী সমাবেশে যোগ দেয়ার সুযোগ পেয়েছি। শুনছি বিভিন্ন দেশের নারীদের কথা। তাদের সুখ, দুঃখ অনুভুতি। নিয়ম আর সংস্কৃতি আচার আচরণ।
যে সব নারীরা কথা বলছেন, তারা বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থান থেকে আসা।
বিভিন্ন বয়সের নারী। তাদের প্রত্যেকের গল্পগুলো ভিন্ন। অভিজ্ঞতা আর সঞ্চয় আলাদা।
প্রত্যেকের জীবনের কথা লিখে আলাদা ভাবে বাস্তবভিত্তিক উপন্যাস বা গল্পের এক একটা বই হয়ে যেতে পারে। প্রত্যেকের কাহিনী জায়গা সময় আলাদা।
সবার কাহিনী তাদের কষ্ট এবং তাদের যন্ত্রনা তাদের চাওয়া পাওয়া এবং সুখ মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। যখন তারা সুখের কথা বলছে তাদের হাসি এবং তাদের ভালোলাগার অনুভব ঠিক একই ভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে উপস্থিত প্রতিটি মানুষের মাঝে। সবাই হেসে ফেলছে, প্রত্যেকে এক ধরনের স্বস্থি এবং হালকা অনুভুতিতে জড়িয়ে যাচ্ছেন এবং সুখের শ্বাস ফেলছেন।
আবার যখন তারা তাদের কষ্টের কথা ব্যক্ত করছেন। তাদের যন্ত্রনা তাদের চেপে রাখা কষ্টের ভার অন্য সবার উপর আরোপিত হচ্ছে।
তাদের অশ্রুর সাথে উপস্থিত সব শ্রোতা একাত্মা হয়ে যাচ্ছেন। সজল হয়ে উঠছে চোখ বক্তার দুঃখ অনুভব করে। বুকের মধ্যে যন্ত্রনা ছড়াচ্ছে, ভারী হয়ে উঠছে পরিবেশ দীর্ঘশ্বাসে।
কিন্তু সব শেষে আমার মনে হচ্ছে প্রত্যেকের গল্প এক। একটা সীমারেখায় বাঁধা।
উত্তর, পশ্চিম, পূর্ব দক্ষিণ, শিক্ষা, নিরক্ষরতা বা উন্নত বিশ্ব বা অনুন্নত বিশ্বের প্রভাব নেই। শুধু আছে নিয়ম।
পারিবারিক নিয়ম, ধর্মিয় নিয়ম, সামাজিক নিয়ম । অসংখ্য নিয়মের অনুশাসনে জর্জরিত চারপাশের নারীরা। জন্মের পর থেকে তারা শুনে এসেছে নানা রকম বাঁধা নিষেধের বানী।
প্রতিদিন, প্রতি মূহুর্তে এক কথা শুনতে শুনতে মনো জগতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেন জড়িয়ে গেছে সে অনুশাষন, বাধা নিষেধ।
নিজের জ্ঞান ঝিলিক দিয়ে নতুন কথা বলতে চাইলেও কিছুতেই তারা সে নিয়মের বেড়া জাল ভেঙ্গে বেরুতে পারে না। তাদের জীবন কুড়ে কুড়ে খায় সে নিয়মের বেড়াজাল। আর এক সময় তাদের সে নিয়মের শিকল তারা পরাতে শুরু করে তাদের অধিন তাদের চারপাশের কাছের বিশেষ করে মেয়েদেরকে। যে নিয়মের মধ্যে নিজেরা বেড়ে উঠেছে সে সংস্কার তারা মুছে ফেলতে চাইলেও নিজের অজান্তে প্রয়োগ করতে থাকে নিজের মেয়ের উপর।
কথা হচ্ছিল এ্যাবয়রিজিনাল মহিলা সেপ্টেম্বরের সাথে। প্রচণ্ড হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত মহিলা। কেউ দেখলে বুঝবে না, বুকের ভিতর কী মরণ যন্ত্রনা কামড় দিয়ে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে। যে কোন কাজে অসম্ভব শক্তি ও সাহসে ভর দিয়ে এগিয়ে যায়। কিন্তু মাঝপথে থেমে যায়, থমকে ভাবে আমি কী যাবো নাকি ফিরব? ঘামতে থাকে, বুক ধরফর করে অস্থিরতা নিয়ে বসে পরে।
কোন কাজ সঠিক ভাবে শেষ করতে পারে না। কী যেন তাড়িয়ে বেড়ায়। কানে বাজে মা ও নানীর কণ্ঠস্বর। কিছুতেই বেড়িয়ে আসতে পারে না তাদের অনুশাসনের ভয়াবহ কণ্ঠ ভেদ করে।
সেপ্টেম্বর এভাবে বর্নণা করে আমাদের অনেক রকম পালাপর্বণ।
সব কিছুতেই ছোটবেলা থেকে অংশ গ্রহণ করতে হয়েছে হাসিমুখে। শরীর ভালো কী মন ভালো নেই তার তোয়াক্কা কেউ করবে না। সেই ছোটবেলা থেকে হয়ত প্রচ- পেট ব্যাথা নিয়ে অনুষ্ঠানে নেচে যেতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। চোখের পানি মুছে হাসি মুখে। কারণ পুরুষরা হয়ত যুদ্ধে যাবে, হয়ত শিকারে যাবে।
অথবা বিয়ে করতে যাবে। তার সমস্ত আয়জনে মেয়েদের হাসিমুখ উপস্থিতি চাই। সাহস এবং সুন্দরের প্রতিক হয়ে। কিন্তু মেয়েটির মনে কতটা সুখ কতটা কষ্ট সে হিসাব কেউ করবে না। তার এই উপস্থিতি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় কারো কাছে।
কিন্তু অসুস্থতার জন্যও ঘরের কোনে বসে থাকা চলবে না। তাকে অংশ নিতে হবে প্রতিটি কাজে।
মা এবং নানী দাদীরা এই ভাবে জীবন যাপনে অভ্যস্থ সেটা পুরোপুরি সঠিক ভাবে মেয়ে যেন পালন করে সেজন্য তারা খরগ হস্ত হতে মোটেও দ্বিধা বোধ করেন না। মেয়েদের নিজস্ব কোন ইচ্ছা অনিচ্ছা নেই।
সেপ্টেম্বর বলে চোখের জল ফেলতে ফেলতে শুভ কাজে জড়িয়ে যাই হাসি মুখে।
যেন অনুভূতিহীন রোবট। অভ্যস্থ্ হয়ে গেছি এইভাবে নিজের অনুভব ঢেকে রেখে চলতে। যদিও এইসব কাজ অর্থহীন মনে হয়। তাই চেষ্টা করছি এসব থেকে বেড়িয়ে পরতে কিন্তু সংস্কার ভাঙ্গতে অনেক কষ্ট হয়। নিজে এক স্বাধীন স্বত্তা না হয়ে নিয়মের রোবট হয়ে চলা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে সেপ্টেম্বর এখন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।