একাত্তর সালে মূসা মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে পাকিস্তানী ‘দালাল’ হামিদুল হক চৌধুরীর ‘দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার’ প্রতিনিধি হিসেবে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে হংকংয়ে গিয়ে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। ওই সময় মূসা বলেছিলেন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছে না, সেখানে হিন্দুস্তানী দুষ্কৃতিকারীরা পাকিস্তানের সংহতির বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। বর্তমানে মূসা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন বলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঐতিহাসিক ৬ দফা প্রণয়নকালের ‘তৃতীয় শ্রেণীর নেতা’ বলেছেন।
শুক্রবার রাতে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ একথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু তৃতীয় শ্রেণীর নেতা ছিলেন এমন উক্তি করে তিনি (মূসা) যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ, অশোভন কটূক্তি করেছেন তা নিতান্তই অনাকাক্সিক্ষত ও দুর্ভাগ্যজনক।
যা কেবল একজন মানসিক ভারসাম্যহীন, বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তির মুখেই শোভা পায়। সরকার ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের চরিত্র হনন, গণতান্ত্রিক সরকারের সাফল্য ম্লান করার মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে এবিএম মূসা কার্যত বিএনপি-জামায়াত জোটের ষড়যন্ত্রকেই প্রকারন্তরে সহায়তা করে চলেছেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান দিবসে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এবিএম মূসা শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বলেন, ৬ দফা প্রণয়নের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় শ্রেণীর নেতা ছিলেন। ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হওয়া মূসার ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে আওয়ামী লীগ এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে।
মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, এ বি এম মূসা কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের ‘দরদী’ সেজে সরকারের কর্মকা- সম্পর্কে ক্রমাগত ‘ভিত্তিহীন কল্পকাহিনী’ প্রচার করে চলেছেন।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তিনি (মূসা) তাঁর প্রকৃত উদ্দেশ্য আর লুকিয়ে রাখতে পারছেন না। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় অবতীর্ণ হওয়া এবিএম মূসা ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী স্বার্থে শেখ হাসিনার সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার জেহাদে অবতীর্ণ হয়েছেন।
এ বি এম মূসাকে ‘স্বঘোষিত বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগপ্রেমী’ অভিহিত করে হানিফ আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে কোনো ভূমিকা পালন না করে ‘খুনী মোশতাক ও সামরিকচক্রের’ অপকর্মের পক্ষে সাফাই গাইতে কলম ধরেছিলেন মূসা। দেশের বয়োজ্যষ্ঠ কলামিস্ট হিসেবে আমরা তাঁকে শ্রদ্ধার আসনেই দেখতে চাই। কিন্তু তিনি ইতোমধ্যেই সকল সরকারের কাছ থেকে ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিজের যে স্বার্থান্ধ, ক্ষুদ্র মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই বেদনাদায়ক।
সাংবাদিক মূসা একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমতি চেয়ে না পাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমতি চেয়ে না পাওয়ায় তিনি তাঁর ক্ষোভ নানাভাবে ব্যক্ত করে চলেছেন। তিনি এখন শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ এমনকি বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নানা রকম বেসামাল উক্তি করে নিজের মনের জ্বালা মেটাতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে ধরনের ‘বিষোদগার’ করেছেন তা ‘উš§াদের প্রলাপ’ ছাড়া আর কিছুই নয়। নূরে আলম সিদ্দিকী ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনের ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে ছাত্রলীগের সভাপতির পদটি বাগিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর প্রতিবাদ না করে তিনি সামরিক স্বৈরশাসকদের পদলেহন করতে দ্বিধা করেননি।
তিনি অভিযোগ করেন, সামরিক স্বৈরশাসকদের উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করে তাদের নির্দেশে এই নূরে আলম সিদ্দিকীরা আওয়ামী লীগ ভেঙ্গেছিলেন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ডলার বাজারে নয়-ছয় করে তিনি (নূরে আলম সিদ্দিকী) কোটিপতি হয়েছেন। গণবিচ্ছিন্নতার কারণে দলের মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেননি। ওয়ান ইলেভেনের পর তিনি কিংস পার্টি গঠন করার চেষ্টা করেছেন।
এবিএম মূসা ও নূরে আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, তাদের ওই বক্তব্যের জন্য আইনি কোন ব্যবস্থা নেয়া স্বিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি।
আমরা আশা করি এই প্রতিবাদের মাধ্যমে ভবিষ্যতে সবাই সতর্ক হবেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক লুৎফুন্নাহার মুন্নি প্রমুখ।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।