আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একাত্তরে গণহত্যঃ আজও ক্ষমা চায়নি পাকিস্তান

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
দীর্ঘ চার দশক পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চায়নি পাকিস্তান। একই সঙ্গে ঝুলে আছে উত্তরসূরি রাষ্ট্র হিসেবে অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায়, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন এবং বাংলাদেশকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ প্রদানের মতো জরুরি তিন ইস্যু। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান যেভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তা রীতিমতো বিস্মিত করেছে এ দেশের কূটনীতিকদের। তবে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে বিদেশিদের সমালোচনাকে সরকার আমলে নিচ্ছে না।

জানা গেছে, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগে শুরুতেই পাকিস্তান বিচলিত হয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এমনকি ঢাকার গুলশানে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কের নামকরণেও পাকিস্তান আপত্তি তুলেছিল। জানা গেছে, ৩০ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশ যেমন তার দাবিতে অনড়, তেমনি পাকিস্তানের দিক থেকেও ওই দাবিগুলো পূরণে ইতিবাচক সাড়া নেই। ঢাকার সূত্রগুলো মনে করে, স্থবিরতার জন্য পাকিস্তানই দায়ী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোর কাঙ্ক্ষিত সমাধান দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করতে সহায়ক হবে।

গত বছর উন্নয়নশীল আট দেশের জোটের (ডি-৮) শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার। তাঁর কয়েক ঘণ্টার সফরেই ক্ষমা চাওয়ার দাবিটি সামনে এনেছিল বাংলাদেশ। জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অতীতকে পেছনে ফেলে সামনে এগোনোর আহ্বান জানান। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, এটিই পাকিস্তানের অবস্থান। বাংলাদেশ ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানালেও পাকিস্তান চায় অতীতকে পেছনে ফেলতে।

শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানে ডি-৮ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি- কেউই যাননি। ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর ফেব্রুয়ারিতে নতুন নেতৃত্বকে শুভেচ্ছা জানাতে বাংলাদেশ সফরে আসেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জিয়া এম ইস্পাহানি। সফরের অংশ হিসেবে তিনি সাক্ষাৎ করতে এলে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার দাবি তোলেন। পরে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অন্য বৈঠকগুলোতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়।

২০১০ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে বাংলাদেশ সুদৃঢ় অবস্থান তুলে ধরে। এ ছাড়া দীর্ঘ অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ইস্যুগুলো সমাধানের দাবি জানায় বাংলাদেশ। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে আসা প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার ঢাকায় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে রক্ষিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ব্যাংকের লাহোর শাখায় স্থানান্তর করা হয়। ওই অর্থ সরাসরি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে।

সূত্র আরো জানায়, ১৯৭১ সালের আগে অখণ্ড পাকিস্তানের প্রায় ৪৩২ কোটি ডলারের হিস্যার জন্য বাংলাদেশ দাবি জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশ মনে করে, ১৯৭১ সালের আগে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ ওই সম্পদের ৫৬ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবদান বিবেচনায় ৫৪ শতাংশ এবং সমতার নীতি অনুসরণ করলে ৫০ শতাংশের মালিক। আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ পাকিস্তানকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। তবে এ ব্যাপারে অনুকূল সাড়া মিলছে না। ২০০৬ সালে জাতিসংঘে শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) সমীক্ষা অনুযায়ী সে সময় বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানির সংখ্যা ছিল প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার।

সূত্র আরো জানায়, ২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস বাংলাদেশের দাবিগুলো জোরালোভাবে উপস্থাপন করেন। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশের দাবিগুলো জটিল ও স্পর্শকাতর। তবে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভবিষ্যতে সব ফোরামে বাংলাদেশের উত্থাপিত ইস্যুগুলো নিয়ে মুক্ত আলোচনার ব্যাপারে পাকিস্তান সম্মতি জানায়। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া এ দেশের মানুষের প্রাণের দাবি। স্বাধীনতা আন্দোলনে এত নৃশংসতা, হতাহতের ঘটনাও ইতিহাসে বিরল।

পাকিস্তান যত দিন ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য ক্ষমা না চাইবে তত দিন এ ইস্যু দুই দেশের সম্পর্কে বড় বাধা হয়ে থাকবে। জানা গেছে, বাংলাদেশ নিয়ে পাকিস্তানের বর্তমান প্রজন্মের মনোভাব ইতিবাচক। সাবেক ক্রিকেটার বর্তমানে রাজনীতিক ইমরান খানের মতো নেতারা বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির পক্ষে অনন্য অবদান রাখা বিদেশিদের সম্মাননা অনুষ্ঠান উপলক্ষে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ সফর করেছেন অনেক বিদেশি বন্ধু। তাঁরা বা তাঁদের প্রতিনিধিরা ১৯৭১ সালের উত্তাল দিনগুলোর কথা স্মরণ করেছেন।

গত মার্চে ঢাকা সফরকালে পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মীর কালের কণ্ঠকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ১৯৭১ সালে তাঁর বাবা ওয়ারিস মীর এক দল ছাত্রকে নিয়ে বাংলাদেশে এসে দেখেছিলেন কিভাবে মানুষ হত্যা চলছে, মানুষের লাশ কুকুরে খাচ্ছে। তিনি বলেন, 'বাবা দেশে ফিরে গিয়ে আমাদের এ দেশে গণহত্যার কথা বলেছিলেন। সেদিন বাবা ও মাকে কাঁদতে দেখেছি। তাঁরা বলেছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তানিরা কিভাবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আমাদের বাঙালি ভাইবোনদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল। ' হামিদ মীর বলেন, '১৯৭১ সালে এ দেশে যা হয়েছিল, তা অবশ্যই গণহত্যা।

আমার বাবা ও তাঁর সফরসঙ্গীরা পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে এ কথা তুলে ধরার পর তাঁদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয়। তাঁদের দেশদ্রোহী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ' হামিদ মীর মনে করেন, পাকিস্তানের অনেকেই বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে। তবে এর ঘোর বিরোধী জামায়াতের মতো কিছু দল। মার্চে ঢাকা সফরকারী পাকিস্তানের মানবাধিকার নেত্রী আসমা জাহাঙ্গীর কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, '১৯৭১ সালে এ দেশে পাকিস্তানি বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে আমি গণহত্যা ছাড়া আর কী বলব? পশ্চিম পাকিস্তানের বাতাসে তখন উন্মত্ততা।

মানুষ নিজের দায় অস্বীকার করত। ভুল তথ্য প্রচার করা হতো। আর স্বল্পসংখ্যক যাঁরা সত্য কথা বলেছেন, তাঁরাই চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। ' গত ৫ অক্টোবর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধু পল কেনেট ১৯৭১ সালের দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেছেন, সারা বিশ্ব নীরব থেকে বাংলাদেশে গণহত্যা সংঘটিত হতে দিয়েছে। বিশ্ব আরো আগে সরব হলে এত হতাহতের ঘটনা ঘটত না।

সুত্র পাকি কুকুরেরা না জানা থাকলে দেখে নে এইখান থেকে http://www.genocidebangladesh.org/
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.