আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিসরীয় ‘সানী’



শুনলাম হোয়াইট হাউসে একটি কুকুর এসেছে। সংবাদদাতারা বলেছেন, কুকুরটি খুব সুস্থ সবল ও সোহাগী হওয়ায় আদর করে এর নাম রাখা হয়েছে সানী। ওবামা পরিবার ‘সানী’কে শুধু উষ্ণ সংবর্ধনাই জানায়নি; বরং তার উন্নত থাকা-খাওয়ার সব রকম ব্যবস্থার জন্য ফরমানও জারি করেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবার সানীর আগমনে যারপরনাই আনন্দিত। আমেরিকানদের নজিরবিহীন কুকুরপ্রীতির কারণে আশা করা যায়, কয়েকদিন তারা ওকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন।

নতুন এই অতিথিকে তারা হোয়াইট হাউসের সবকিছুর সাথে পরিচয় করাবেন, সেখানকার রীতিনীতি শিক্ষা দিবেন। কখন ঘেউ ঘেউ করবে আর কখন শুধু লেজ নাড়াবে এ সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন। আমার বিশ্বাস, কখন ছুটে এসে মনিবের পায়ে পড়তে হবে আর কখন শুধু আওয়াজ করামাত্র হুকুম তামিল করতে হবে-সব কিছুই ওবামার সানী খুব দ্রুতই রপ্ত করতে সক্ষম হবে। ভেতরের খবর-অবগতরা বলেছেন সানীও নাকি বেজায় খুশি। তার আনন্দ যেন আরা ধরে না।

আনন্দের আতিশয্যে পারলে সে গোটা হোয়াইট হাউসটাই চেটে ফেলে! এর কারণ সম্ভবত এই যে, সানী জানে সে সঠিক জায়গায় সঠিক জনের কাছেই এসেছে। মিসরে শাহাদত বরণকারী শত শত মানুষের প্রতি ওবামা সাহেবের কৃপা ও প্রীতি থাকুক বা না থাকুক ঐ কুকুরটি নিশ্চিত যে, তার প্রতি রয়েছে বারাক ওবামার খাঁটি মহববত। আর শুধু সানীই নয়, হয়তো এমন অসংখ্য কুকুর আছে যাদের নামও আমরা জানি না। আর এই এক সানী সম্পর্কেও তো আমরা জেনেছি লোকমুখে শুনে। এ ছাড়াও নিশ্চয়ই নাম না জানা অনেক কুকুর এমন আছে, যারা ঐ প্রীতি ও কৃপার ভরসায় বেঁচে আছে।

এদের মধ্যে কিছু তো আছে নিঃসন্দেহে কুকুর। আর কিছু সম্পর্কে অস্বীকার করা যায় না যে, ঐ প্রীতি ও কৃপা লাভের আশায় ‘কুকুর’ বনে গেছে। কুকুর হওয়া তো সহজ কাজ নয়। দীর্ঘ অনুশীলনের পরই কেউ ‘কুকুর’ হতে পারে। তাছাড়া তার মধ্যে কুকুরের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ও যোগ্যতা বিদ্যমান থাকাও জরুরি।

যেমন উচ্ছিষ্ট হাড্ডি ছাড়া নিজের জাহেরি পালনকর্তার কাছে অন্য কিছু আশা না করা। যখন যেখানে যা পাওয়া যায় তা দিয়েই উদরপূর্তি করে নেওয়া, প্রভুর ইশারায় ওঠা, তার ইশরাতেই বসা। আওয়াজ দেওয়ার সাথে সাথে ছুটে যাওয়া, আর চোখের ইশারায় থেমে যাওয়া। প্রভুর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার পালিত অন্য কুকুরদের সাথেও সুসম্পর্ক রাখা। তাদের হাড্ডি কিংবা প্রাপ্ত অংশের বিরুদ্ধে ঘেউ ঘেউ না করা।

শিল্পসম্মত পন্থায় তালু চাটার নিয়ম রপ্ত করা। কখনো তালু না পেলে পাদুকা চেটে দেওয়া। গলায় বেল্ট ঝুলিয়ে গর্ব বোধ করা এবং পূর্ণ সতর্ক থাকা যেন প্রভু ছাড়া অন্য কেউ সেই বেল্ট ধরে টান দেওয়ার দুঃসাহস না করে। শুধু একটি ‘জবরদস্তিমূলক রাষ্ট্রে’র হেফাযতের বাহানায় নিরপরাধ নাগরিকদের লাশের স্ত্তপের উপর বসে নিজের বর্বরোচিত সকল পদক্ষেপকে সঠিক সাব্যস্ত করার জন্য সজোরে ঘেউ ঘেউ করা। দেশকে সেক্যুলার ও ইসলামীদের মাঝে বিভক্ত করে রক্তের হোলিখেলা উপভোগ করা।

গীর্জা-চার্চে আগুন দিয়ে মসজিদগুলোতে হামলার দৃশ্য মজার সাথে দর্শন করা। ধর্মীয় সম্প্রীতি ছিন্নভিন্ন করে সহনশীলতার চরম অবমাননা করা। হকদারের হক ছিনিয়ে নেওয়ার পর এমনভাবে তার গর্দান কামড়ে ধরা যেন সে টুঁ শব্দটিও করতে না পারে। বছরের পর বছর একত্রে বসবাসকারী মুসলমান ও কিবতী খৃষ্টানদের পরস্পরকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া। পিরামিডের অভ্যন্তরে অশান্ত ফেরআউনী মমিগুলোকে মানব দেহের মাংসপিন্ড দ্বারা প্রস্ত্তত শান্তির মালা দ্বারা পুনরায় সজ্জিত করা।

অসহায়ের রক্ত দ্বারা ঐ কফিনগুলোকে রঙিন করা এবং তাদের মানুষখেকো স্বভাবকে তুষ্ট করার জন্য ভীতসন্ত্রস্ত মানুষদের শিকার করা ইত্যাদি কুকুরের বৈশিষ্ট্য থাকা চাই। এ বিষয়ে আমার কোনো কৌতূহল নেই যে, মুসলিম উম্মাহর কোন কোন শাসক ও বাদশাহ মিসরীয় ‘সানী’র সহযোগী কিংবা কীসের ভিত্তিতে তারা তাদেরকে ‘ঘুমপাড়ানি হাত বুলানি’ দিয়ে যাচ্ছে কিংবা তাদের গালে সোহাগের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে তবে ইতিহাসের একজন সামান্য ছাত্র হিসেবে আমি সেই দৃশ্যগুলোর আগমনে বিশ্বাস করি, যা ইতিহাসের পাতায় বিপ্লব নামে আখ্যায়িত। স্মরণ রাখা দরকার, যে ভূমি রক্ত দ্বারা সিঞ্চিত হয় তা কখনো ক্ষমার ফসল জন্মায় না। ঘৃণার থুথু নিক্ষিপ্ত হলে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে ওঠা তো একটি স্বাভাবিক বাস্তবতা, যা অস্বীকার করে ঘরের কোণে আত্মগোপনকারীরা পরের দিন খবরের পাতায় লাশ হয়ে ছাপা থেকে কখনো বাঁচেনি, কখনো বাঁচবেও না। হত্যাকারী অন্যকে যেভাবে হত্যা করে সে নিজেও সেভাবে নিহত হয়।

কী-ইবা করা যাবে! ইতিহাস বারবার নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে আগ্রহী। সময়ের কোনো বাঁকে সে তা থেকে বিরত থাকেনি। দুর্বল বাদশাহদের থেকে পাওয়া সহযোগিতার কাদা পানি দিয়ে রক্তের দাগ তো ধুয়ে ফেলা যায় কিন্তু একেবারে মুছে ফেলা যায় না। মুরশিদ বাদী’র মেয়ে ও জামাতার শেষ চিৎকার ঐ হাজার হাজার মিসরীয়র রক্তচিহ্নের সাথে সংরক্ষিত আছে, যারা হাশরের দিন সেসব রক্তচিহ্ন নিয়ে আল্লাহ তাআলার বেনিয়ায দরবারে ইনসাফের মামলা দায়ের করবে। একটি বড় আর্ন্তজাতিক খেলার অংশ হিসেবে মিসরীয় সানী হয়তো এই দুনিয়ায় সোনার গলাবন্ধ লাভ করবে, কিন্তু আখেরাতে লাঞ্ছনা ছাড়া তার জন্য আর কিছুই নেই।

শক্তির মোহ, ক্ষমতার স্বাদ আর হুকুমতের দম্ভ গ্যাসের বেলুনের মতো, যা বাহ্যত উপরে উঠলেও ধারণ ক্ষমতার অভাবে যখন তা ফেটে যায় তখন বিক্ষিপ্ত হয়ে মাটিতে পড়ারও সুযোগ পায় না। এখনতো সব কিছুই মধুময়, নিকটজনেরা বাহবা দিয়ে মাথা ঘুড়িয়ে দিয়েছে, বড়ত্বের নেশা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য ভুলিয়ে দিয়েছে। আলাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য থেকে পলায়ন করে বিশ্বচোরদের সাথে গাঁটছড়া বাধা তো হাতে গোনা কয়েকদিনের বিলাসিতামাত্র। এরপর কি হিসাবের পর্ব নেই? পথে-ঘাটে, জেল-হাজতে ও বাড়িতে বাড়িতে যাদের হত্যা করা হচ্ছে সবাই কি ‘মুবাহুদ দম’ হত্যাযোগ্য? মুরসী ও ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ‘অপরাধ’ কি এতই কলঙ্কপূর্ণ যে, মিসরের সংবিধানের উপর লেগে যাওয়া এই কালিমা মোছার জন্য জলজ্ব্যান্ত মানুষগুলোর নিধন জরুরি হয়ে পড়েছে? আর এই গণহত্যার সংবাদ কি এতই গুরুত্বহীন যে, পাকিস্তানের নির্ভরযোগ্য পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় তা স্থান পেল না? যদি বিষয়টি এমনই হয় তবে আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি ইসলাম, ইসলামের নবীকে ও কুরআন বাণীকে বোধহয় বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি! যদি বিজাতির দাসত্বেই (নাউযুবিলাহ) ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও স্থায়িত্ব তাহলে কেউ কি আছেন আমার গলায়ও ‘সানী’র মতো একটি গলাবন্ধ পরিয়ে দেবেন! যদি ইসরাইলকে রক্ষার জন্য ইখওয়ান ও তার হাজার হাজার অনুসারীকে হত্যা করা বৈধ হয় তবে আমি নিজের এই অকাট মূর্খতার জন্য লজ্জিত! আর এই গণহত্যার সংবাদপ্রচার যদি এই কারণে নীতিবহির্ভূত হয় যে, ‘‘এটা অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ’’ তাহলে আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের নবজাতককে নিয়ে ধারাবাহিক ৫ দিনের সংবাদ প্রকাশ ও ব্রেকিং নিউজগুলোকে ব্রিটেনের রাজকন্যার জন্ম-সংবাদ মনে করে বসেছিলাম।

হায়! কেউ যদি এই নির্বোধ আমিকে একটু বুঝিয়ে দিতেন যে, প্রিন্স উইলিয়াম তো আমাদের, কেট মিডলটনও আমাদের, তার আর তাদের শিশুকন্যার কাছে আমরা সবাই ঋণবদ্ধ, ওবামা আমাদের দুধপিতা, আর ক্যামেরনই তো আমাদের প্রকৃত প্রধানমন্ত্রী! এরাই আমাদের আপন, অন্যরা সব পর! তাহলে কি আমি এতক্ষণ ধরে প্রলাপ বকি? আর অকারণে হাহাকার করি? ‘‘আমরা বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বাঁচাতে থাকলাম নিজের ঘর, কিন্তু/ কুরসীর কিছু কীট গোটা দেশটাই নিল খেয়ে। ’’ [একটি বিদেশি দৈনিক পত্রিকা থেকে অনূদিত। অনুবাদ : আবদুল্লাহ ফাহাদ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।