কবি
১.
আর আমরা শিল্প আর অশিল্পের তাড়ির ভাড়ে মিশিয়ে দিচ্ছি বিকৃতির হারবাল। এই বিষ দাঁত ওঠা জীবনকে কোন এক নাম না জানা বৃক্ষে সাথে তুলনা করলে দেখা যায় ইহা সেই বৃক্ষ যার মূলকান্ড এক বিশাল সবুজ পাতা আর সেই পাতা থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি মত নির্গত হচ্ছে হাজারে হাজারে নীল পালক। আসলে এই বৃক্ষে কোন শাখা প্রশাখা নেই। আছে কেবল বৃক্ষ নাম যেন বা এই জীবনের মত অর্থহীন এক সবুজতা মাত্র। আর আমরা হৃদয়হীন মাতালের দল মুখে সাপের জিহ্বা দিয়ে অনুভন করছি এই জীবন শিল্পের কম্পনশীল মহিমা।
কবিতা চিত্র চলচ্চিত্র যাপিত জীবন সর্বখানে একই এক বিকৃতির জল। এই জল থেকে উঠে আসছে শিল্পের কেলাস। আমাদের এই নিওলিথিক্যাল শহর আর তার পোষমানা মানুষ-দানবের মন সোনার ডিমের মত চাঁদের বুকে এঁকে দিচ্ছে ক্রুশকাঠ। যিশুর রক্তে মাখা লাল চাঁদ ছাড়া কিছু আর দেখা যাচ্ছে না থাইগ্লাসের জানালার বাইরে, অন্ধকার আকাশে, কোনখানে কিছু।
আমরা সবাই কবি মুচি আমলা বাদামওয়ালা মূর্খ সাংবাদিক আনারস বিক্রেতা কাঠ মিস্ত্রিরি আলকাতরা প্রস্তুতশারক কিংবা মোমের দোকানী গায়ক সিঁদেল চোর মোটা গোঁফ দারোগা পটকা কন্সটাবল উকিল মোক্তার রেডিওর প্রিয়তমা উপস্থাপিকা মেথরাণী বাংলা বই এর পরিচালক মশলা প্রস্তুতশারক ভালো ছাত্র মন্দ ছাত্র অথবা বেরসিক গল্প পাঠিকা অপন্যাস লেখক রাজমিস্ত্রি সুতোর কারবারী হোটেল ম্যানেজার কার ড্র্াইভার কর্মী কর্মহীন জমির দালাল বেশ্যা মিডিয়া ম্যান কাম কামনার বাগান মডেল তারকা অথবা স্টার সুপার স্টার কাগজ বিংবা বোতল কুড়ানী বড় রাস্তায় দৌড়ে চলা পপকর্ণ হকারশিশু, সবার এক শিল্পের মহাজগতে বসবাস।
কিভাবে ? সবাই ভাবে, ভাবতে ভাবতে বেঁচে করে। তারা কি ভাবে একা একা গোপনে গোপনে ? আমাদের দিন যায় বসে বসে রঙে রূপে রসে - মাথা কাটা এক বিকৃত পেঁচা উড়তে থাকে মনের ভেতর - ভাবতে থাকি একা একা গোপনে গোপেনে দিবসরজনী। এই আমজনতার ভাবনা যদি শিল্প না হয় তবে শিল্পী কোন সে মেজাজি ভাবনা নিয়ে বসে আছে আর্শি নগরে ? শিল্প চৈতন্য নিয়ে বাকবিস্তারের দিন কি তবে শেষ হয়ে এলো ?
আলাদিনের দৈত্য এক ফুৎকারে যদি মনের সব গোপন ইচ্ছা পূরণ করে দিতো - যাদ তাই হতো তবে এতো এতো ফ্যাশান পোশাক লজ্জাবর্ম - তার কি হতো ?
আদিগন্ত উলঙ্গ দৈত্যের নাচ। আর এই পোশাকহীন পৃথিবীতে সত্যি সত্যি যারা সাধু , তারা সমুদ্রের নীল জলে সমস্ত জীবন বসে ভাবতো কবে ফিরবে পোষাক সভ্যতা !
কবি শিল্পী আর সৃজনকার হলো এই সমস্ত সাধু। নীল জলে উলঙ্গ বসে আছে; সন্মুখে তার আদিগন্ত নগ্ন ভেজা নোনা পা।
তাঁরা ঠিক সইতে পারে না আর। সৃষ্টিকার আসলে আচরণে উভয়চর, কুমীর প্রাণ; জীবনের বাইরে বসে সে যা দেখে তা স্রেফ বিকার, আর কিইবা দেখার আছে অবশেষ।
২.
আসলে আমরা পরে আছি আধুনিকতার শেষ ভাঙা দুর্গে। এই ভাঙা দুর্গের লাল পোড়া মাটির ধুলো বিদেহী আতœার মত বিতৃষ্ণা নিয়ে ছুটে যাচ্ছে আমাদের রক্ত লোহিতে। তাই এই অনন্তের বিকার নিয়েইতো আমরা পার হচ্ছি মরা অজগরের পিঠের তৈরি রাজপথ, স্লোগান।
আমাদের এই সুসময় প্রবণতা কে আমি “প্রান্ত-আধুনিক” নামে ডাকি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।