আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্যা, আশ্রিত হরিণ আর ব্লগার পরিবার



বেশ ভালো লাগলো ব্যাপারটা শুনে। ব্লগ! পরিচিত, অপরিচিত সবাই একটা জায়গায় তাদের কথা শেয়ার করছে। আনন্দ-বেদনার কথা, মতামত, অভিমত, আলোচনা, আড্ডাবাজি, জোকস্ ... সবই! অনেকে লিখছেন, সবাই শুনছেন। উল্টোটাও হচ্ছে। পত্রিকার চিঠি-পত্র বিভাগের মত না, যেখানে সম্পাদকের হাতে নিজের লিখা কাটা-ছেঁড়া হতে পারে।

কি অদ্ভুত সুন্দর বিষয়! উৎসুক হয়ে উঁকি দিলাম এই সাইটে। মজা পেলাম। অনেক বিষয়ে জানার মত একটা উৎসও পেলাম মনে হলো। অভিভূত হলাম। তারপর... হঠাৎ হোঁচট খেলাম।

কেউ একজন ভুল কিছু লিখেছেন আর উত্তরে বেশ কড়া আক্রমণ অথবা গালি। কেউ কেউ যাচাইমুলক কোন প্রশ্ন না করেই এটি করছেন এবং প্রায় নিয়মিতই। কারো ক্ষেত্রে মনে হলো তাদের লিখার স্টাইলই এরকম হয়ে পড়েছে। কষ্ট পেলাম। বেশ কষ্ট।

অনেক কথা জমে ওঠে কখনো। নিজের কিছু কথা শেয়ার করতে একটা আশ্রয় খুঁজি আমরা। একটা সুন্দর জায়গায় তা শেয়ার করতে গিয়ে যদি এমন অভিজ্ঞতা হয়? এমন দু'একজনের আক্রান্ত হতে দেখে ক'বছর আগের পত্রিকায় প্রকাশিত একটা খবরের কথা মনে পড়ে গেলো: বন্যায় প্লাবিত সুন্দরবনের পার্শবর্তী একটা গ্রামের বাড়ীতে একটা হরিণ আশ্রয় নিলে বাড়ীর কর্তা সেটিকে জবাই করে খেয়ে ফেলেন। বেচারা হরিণ খাবারের জন্যেনা, বন্যায় ভেসে যাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছিলো। পরিনতি... এখনো খবরটার কথা মনে হলে যন্ত্রণায় ভুগি।

ব্লগ-সাইটের এই মুক্ত মঞ্চের আশ্রয়ে কথা বলতে এসে আক্রান্ত হতে দেখার কয়েকটি দৃষ্টান্তে একই রকম মনে হলো আমার। রেডিও, টিভি, পত্রিকা সহ অনেক সংবাদ মাধ্যমের উপর আমাদের আস্থা অনেকটুকুই নড়বড়ে। খোলাখুলি ভয়ে বা নির্ভয়ে কথা বলার জায়গাগুলো বা পরিস্থিতি দিনদিন কমেই যাচ্ছে। নতুন মিডিয়া হিসেবে ব্লগ হয়তো একটু আশা নিয়ে এসেছে অগনিত মানুষের জন্যে। সেখানেও যদি এমন হয় তাহলে যাবো কোথায়? অনেক মানুষের ভীড়েও একা বোধ করি আমরা সবাই।

কেউ কম, কেউ বেশী। কেউ কখনো কখনো, কেউ ঘন ঘন। এই একাকীত্বের রকমটাও বেশ বিস্তৃত আর িচিত্র। আমি নিজেকে নিয়ে একা হয়ে পড়লেই সঙ্গী খুঁজি। তারপর দুজনে মিলে একা হয়ে খুঁজি আরো কাউকে।

তৈরী হয় পরিবার। একটা একা পরিবার খুঁজে নেয় আরেকটা পরিবার। চলতে থাকে কথা বলা, শেয়ার করা, অন্যকে জেনে নিজেকে জানা। এভাবে সবটুকু পৃথিবী... একটা পরিবার হয়... । তারপর? তারপর পুরো পৃথিবীটাই একা।

আর কী কেউ নেই কোথাও? আরেকটা পৃথিবী? সঙ্গী খুঁজি মহাশূন্যে। ছুঁড়ে দিই শব্দ। আমাদের অস্তিত্বের নমুনা - ছবি, সিম্বল, অক্ষর। সচেষ্ট, উদ্বিগ্ন কান পেতে থাকি, থাকি চোখ মেলে আলোয়, অথবা নিশ্ছিদ্র অসীম অন্ধকারে অনন্তকাল, বংশ পরম্পরায়। হাজার আলোকবর্ষ দূরে কোন অস্তিত্বের মৃদু আভাসে উদ্বেলিত হই।

নতুন উৎসাহে আবারো দূরবীনে চোখ রাখি। আবারো ছুঁড়ে দিই শব্দ। উদ্বিগ্ন কান পেতে থাকি। চোখ মেলে থাকি আলোয়। অথবা নিশ্ছিদ্র অসীম অন্ধকারে।

অনন্তকাল... সাড়া আসবে। আশা নিয়ে বসবাস। ভয়ও হয় এখন। আক্রমণ আসবেনাতো? তাহলে? চাইনা আক্রমণ। আশ্রয়ওনা।

বরং প্রশ্ন আসুক। প্রশ্ন। নয়তো? নীরবতাই ভালো। একা নীরবতা...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।