জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।
সেই ছোটবেলা থেকে ঈদের কিছু ব্যাপার আছে, যেগুলো না থাকলে আমার কাছে ঈদ মনে হয় না। এবার ইউনি ছিল আগের দিন শুক্রবার, তারপরেও বাদ গেল না। মাকে রান্না বান্নায় সাহায্য করলাম। তারপরে বাসার সবাই মিলে বসলাম গল্পে।
খুব প্রিয় মুভ্যি দেখে প্রিয়জনদের সাথে যেভাবে গল্পে, আড্ডায় মেতে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করা যায়, আমাদের গল্পটা ছিল সেরকমই উচ্ছ্বাস আর ভালো লাগার, কিন্তু কোন মুভ্যি নিয়ে না, আমাদের সবচেয়ে প্রিয় সেই সত্ত্বাকে নিয়ে। ঈদের আগের রাতের এই ব্যাপারটা না থাকলে ঈদ অসম্পূর্ণ হয়ে থাকে আমার। গল্প করতে করতে মায়ের হাতে মেহদীর আল্পনা আঁকলাম। আমার হাতে আগের মেহদী ছিল, না হলে মেহদী দিয়ে, হাতে পলিথিন বেঁধে ঘুমানো হতো।
পরের দিন সকালে ফজরের পর থেকেই বাথরুম নিয়ে যুদ্ধ।
পাঁচজন মানুষ, একটাই বাথরুম। একজন ঢুকে তো আরেকজন হুমকি দিয়ে আসে, 'পাঁচ মিনিট!' কিন্তু কারও কি আর পাঁচ মিনিটে হয়? সেই নিয়ে আরও কয়েক দফা হয়ে যায়। সবার আগে গোসল সেরে বিছানা গুছাতে গুছাতে, হাসতে হাসতে নাটক দেখলাম। তারপর সাজুগুজু। তারপর, টেবিলে এক সাথে বসে এক সাথে সকালের সংক্ষিপ্ত নাস্তা।
পায়েশ, দই বুন্দিয়া, মিষ্টি, প্যাস্ট্রি। আরও দু'টো ঐতিহ্য আছে, আমার ভীষণ ভালো লাগার ঐতিহ্য। মা নিজ হাতে আতর লাগিয়ে দেয় বাবা আর ভাইয়াকে। তারপরে সবাই এক সাথে কোলাকোলি। আমাদের সারাদিনের প্রথম কোলাকোলি।
তারপরে, গাড়ি বোঝাই হয়ে সেই অলিম্পিক পার্কে।
হ্যা, দুই হাজার সালে অলিম্পিক হয়েছিল এখানেই। দারুণ সুন্দর পার্ক, কারণ আন্তর্জাতিক ভেন্যু। সবুজ, সবুজ আর মাঝে নীল ঝিল। পাখির মেলা।
বিশাল বড় পার্ক। এই পার্কেই গত কয়েক বছর বিশেষ অনুমতি নিয়ে ঈদের জামাত হচ্ছে।
খোলা আকাশের নিচে, ঈদগাহ স্টাইলে ঈদের জামাত।
বাঙালিদের না, ভারতীয় উপমহাদেশের কারও না, শুধু আরবদেরও না।
সারা সিডনী থেকে মুসলিমরা আসে খোলা আকাশের নিচে ঈদগাহী স্টাইলে নামাজ পড়ার লোভে।
সেখানেই যাওয়া। আমার কি যে ভালো লাগে! পার্কের সামনের রাস্তায় আসলেই বিশাল গাড়ির বহর। প্রতিটা গাড়িতে হিজাবী মেয়েরা কিংবা সুন্নতী কায়দায় দাড়িওয়ালা ছেলে, নিদেনপক্ষে পোশাকে আশাকে বুঝা যায় মুসলিম বলে।
আবহাওয়া ছিল ঝাকানাকা টাইপের। আগের রাতে ঝড় হয়েছিল, সবাই ভয় খেয়েছিল।
পার্কে নামাজ হবে না? ভোজবাজির মতই সকালে আকাশ এক দম পরিষ্কার। বাতাসটাও ঠান্ডা।
আমার বন্ধুদের অনেকেই এসেছে। জানতাম সবাই আসবে যে। উচ্ছ্বাস প্রকাশ আর কোলাকোলি হলো।
নামাজও হলো।
নামাজে মানুষ হয়েছিল দশ হাজার।
হু, ১০ হাজার।
আর সিডনীর সবচেয়ে বড় মসজিদে মানুষ হয়েছিল চল্লিশ হাজার। ৪০ হাজার।
ন্যাশনাল নিউজে এসেছিল সেই মসজিদ।
দশ হাজার মানুষের সাথে এক সাথে সেই সত্ত্বার কাছে খোলা আকাশের নিচে সিজদা অবনত হওয়ার অনুভূতিটাই অন্যরকম!
আমাদের তো সিডনীতে চেনা পরিচিত মানুষ কম নেই। যাদের যাওয়ার জায়গা নেই, তাদের জন্য পার্কটা দারুণ উপভোগের জায়গা। নামাজের পরে হরেক রকমের ঈদের খাবারের ব্যবস্থা। ছোটদের জন্য ফ্রী ললি ব্যাগ।
খেলার জন্য জাম্পিং কাসেল আর বালুর ঢিবি। আমি মুগ্ধ হয়ে শিশুদের বালু ঘাটাঘাটি দেখছিলাম। ঈদের কাপড় নষ্ট হবে, সেই বিকার নেই, এই বিকারহীন, অস্বস্তিহীন ছোট ছোট মানুষগুলো দেখতে এত্ত সুন্দর!
তারপরে আর কি, বাসায় বাসায় ঘুরাঘুরি।
সারাদিন অসংখ্য বাসায় যাওয়া হলো।
রাতে বাসায় আসলো এক গাদা মানুষ।
মানে পুরাপুরি পারিবারিক ঈদ!
সামাজিকতা, তবু খারাপ লাগছিল না। সবাই এত্ত খুশি! পিচকিগুলা গুটুশ টাইপের মাঞ্জা মেরেছে!
পরের দিন অনেকটা আমার ঈদ ছিল। বন্ধুদের বাসায় গিয়ে আড্ডাবাজি হলো। রাতে বাসায় বন্ধুরা আসলো। পরের দিন সবার কাজ ছিল, তাই সবাই আগে আগে ঘুম।
আমাদের আড্ডাবাজি রাত এগারোটাতেও শেষ হতে চায় না। ঈদের খাবারে মন উঠে যাওয়ায় ততক্ষনে আচার আর চিপস চিবুচ্ছি।
ঈদ এপিসোড এখনও শেষ হয় নি। আসছে শুক্রবার, ঈদের দ্বিতীয় পর্ব। যেই বন্ধুদের সাথে এখনও দেখা হয় নি, তাদের সাথে সাগর তীরে ঈদ।
------------------
ছবি:
পার্কে পাখি, পিচকিদের ঈদ আর গিজগিজে মানুষ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।