মানব সেবাই আমার মূল ধর্ম এই পোস্ট 'দৃষ্টি আকর্ষণে' রেখে প্রবাস শ্রমিকদেরর সহায়তা করবেন অনুরোধ রইল মডারেটরদের ধন্যবাদ।
নিজের ও পরিবারের ভাগ্য বদলাবার লক্ষ্যে এক মধুর স্বপ্ন নিয়ে দেশের মায়া ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি জমায় এদেশের লক্ষ লক্ষ শ্রমিকরা। কিন্তু ২০০৭ সালে বিশ্বে অর্থনীতিক মন্দার পর থেকে নিত্য নতুন অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকরা। কাজ না পেয়ে, খেয়ে না খেয়ে থেকে, অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়ে কেউ শূন্য হাতে, কেউ বা লাশ হয়ে প্রতিনিয়ত ফিরে আসছে এই মাতৃ ভূমিতে। কষ্টের গল্পে লেখা হচ্ছে তাদের শ্রমের ভাগ্য।
প্রবাস জীবনের ২০০৭/২০০৯ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে নিয়ে এই প্রতিবেদন লিখেছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
লাশ হয়ে দেশে ফেরত: পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য ঋণ করে ভিটে জমি বিক্রি করে বিদেশের চাকুরীর আশায় গিয়ে যে শত শত বাংলাদেশী শ্রমিক লাশ হয়ে দেশে ফিরছে। ২০০৮ সালের জানুয়ারী থেকে গত ১৫ মাসে ২৯৭২টি লাশ দেশে ফিরেছে বলে বিমান বন্দরের সূত্রে জানা যায়। সবচেয়ে বেশী মারা গেছে সৌদিআরবে ২১১জন, মালেয়শিয়া থেকে ফিরেছে ১০৭টি, ওমান থেকে ২১টি, কুয়েত থেকে ৪৭টি, দুবাই থেকে ৩৯টি, আবুধাবী থেকে ২০টি, কাতার থেকে ১৯টি, আমেরিকা থেকে ১৭টি এবং বাহরাইন থেকে ১৪টি লাশ দেশে ফিরেছে। এর মধ্যে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারী সবচেয়ে বেশী লাশ দেশে ফিরেছে।
এসব লাশের মধ্যে হৃদরোগে ২৭৭ জন, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১৯৮ জন, সড়ক দুর্ঘটনা ৪১ জন, বিভিন্ন অসুস্থ জনিত কারণে ৬৮ জন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ ও অজ্ঞাত কারণে ৩৮জন মারা গেছে। অনেক শ্রমিক জাল ভিসায় বিদেশে গিয়ে মাসের পর মাস কারাগারে কিংবা বনজঙ্গলে থেকে অর্ধাহারে অনাহারে নানা রোগব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।
কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মনপাড়ার উপজেলার মহালক্ষ্মী পাড়ার গ্রামের দরিদ্র কৃষক ফরিদ মিয়ার বড় ছেলে দুলাল মিয়া ২০০৬ সালে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা ঋণ করে পাড়ি জমায় আরবআমিরাতে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন না থাকায় বিদেশ যাওয়ার ১১ মাসের মাথায় চলতি বছরের মে মাসের ৮ তারিখ প্রচন্ড গরমের মধ্যে কাজ করার সময় হিটস্ট্রোকে ২০ বছর বয়সী দুলালের অকাল মৃত্যু ঘটে। তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ওভার টাইম কাজ করে দেশে প্রেরন করে মাত্র ৭০ হাজার টাকা।
মৃত্যুর ৮ দিন পর গত ১৬ মে নিহতের লাশ প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসে। একদিকে পুত্রের মৃত্যু অন্যদিকে ঋণের বোঝা নিহতের পরিবারের শোকের পাশাপাশি হতাশা নেমে আসে।
চলতি বছরের গত ১৭ মে মালদ্বীপে কর্মরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কুমিল্লার দাউদকান্দির লামচড়ি গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে মনির হোসেন। বছর খানেক আগে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ঋণ করে প্রবাসী এক বন্ধুর মাধ্যমে মনির হোসেন মালদ্বীপের মাইসান কনট্রাকশন কোম্পানীতে যোগদান করেন। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র এবং আইডি কার্ড না থাকায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনির হোসেন কোম্পানীতে কাজ করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় মালদ্বীপ থেকে বাংলাদেশে লাশ আনার সুব্যবস্থা না থাকায় মনির হোসেনের লাশ ১৯ মে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে দাফন করা হয়।
প্রবাস থেকে লাশ হয়ে ফিরে আসা শ্রমিকদের পরিবার ক্ষতিপূরণ হিসাবে যে টাকা পাওয়ার কথা তা নিয়েও তাদের পরিবার হয়রানির শিকার হচ্ছে। প্রবাস থেকে লাশ হয়ে ফিরে আসা শ্রমিকদের পরিবার (এক লক্ষ টাকা) ক্ষতিপূরণ টাকা পেতে নিহতের উত্তরাধিকারে প্রমাণ দিতে হয় সবার আগে। আদালতের মাধ্যমে উত্তরাধিকারের সমস্যা নিষ্পত্তি করে আসতে হবে। লাগবে জেলা জনশক্তি অফিসারের সম্মতি পত্র ও।
নামে জেলা জনশক্তি অফিসার বলা হলেও এ অফিস দেশে আছে মাত্র ১৭টি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো ক্ষতিপূরণ হিসাবে যে টাকাটা দেওয়া হবে সেটা কিন্তু শ্রমিকদেরই টাকা। বিদেশে কাজ নিয়ে যাওয়ার আগে তাদেরকে ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ তহবিল নামের একটি তহবিলে রাখতে হয়েছে এই টাকা।
মহিলা শ্রমিকদের নির্যাতনের কাহিনী: ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী লক্ষাধিক মহিলা শ্রমিক বিদেশে বিভিন্ন পেশায় কাজ করছে। চলতি বছরের গত ৪ মাসে কাতার, ওমান, আরবআমিরাত, লেবানন ও সৌদিআবরসহ বিভিন্ন দেশে মোট ৫৩৪০ জন মহিলা শ্রমিক বিদেশে গেছে।
এদের বেশীর ভাগই বাসাবাড়ির ও হাসপাতালে ক্লিনার ও বুয়ার কাজ করছে। বিশ্বে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বিশেষ করে যৌন নির্যাতনের শিকার। কেউ কেউ সর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফিরে আসছে। এমন সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মহিলারা আবেগ প্রবণ বিধায় সহজে প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে যায়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক যশোরের শার্শা উপজেলার এক মহিলা সংসারের দারিদ্রতা গোচানোর জন্য এক দালাল চক্রের মাধ্যমে জমিজমা বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে লেবাননে যান। সেখানে গিয়ে সে জানতে পারে তাকে আড়াই হাজার ডলারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। দালালরা তাকে যৌন কাজে বাধ্য করার জন্য চাপ দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় তাকে গরম রড দিয়ে শরীরে ছ্যাকা দেয়। প্রচন্ড মারদর করে অজ্ঞান করে ফেলে।
পরে সে কৌশলে পালিয়ে গিয়ে এক মসজিদের ইমামের সহায়তায় গত ৮ এপ্রিল দেশে ফিরে আসে।
ঢাকার রামপুরার বাসিন্দা ছালেহা (ছদ্ম নাম) গত ২ বছর পূর্বে বহু কষ্ট করে ঋণ করে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে এক দালালের মাধ্যমে ওমান যায়। সে একটি ফ্যাক্টরীতে কাপড় আয়রণের কাজ করত। প্রবাসী অনেক বদ চরিত্রের লোক তাকে কর্মক্ষেত্রে অর্থের লোভ দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দিত। ওমান যাওয়ার ৭/৮ মাসের মাথায় প্রবাসী এক লোক সন্ত্রাসী কায়দায় তাকে হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করে বন্দি করে রাখে।
এভাবে এক বছর বন্দি থাকার পর ঐলোকটি পুলিশের হাতে ধরা পড়লে ২৩ বছর বয়সী ছালেহা বহুকষ্টে দেশে ফিরে আসে।
ঢাকার মীরপুরের বাসিন্দা রানু (২০) গত ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জামসেদ নামে এক দালালের কাছে এক লক্ষ টাকা দিয়ে লেবানন যান। দালাল তাকে বলেছিল লেবাননে ২৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে। বিদেশ যাওয়ার পর তিন মাস রানুর কোন খোঁজ না পেয়ে দুশ্চিন্তাই রানুর ভাইবোন ইমা রিসোর্স ফাউন্ডেশন নামে একটি মানবাধিকার সংস্থার সরনাপন্ন হয়। সংস্থাটি লেবাননে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে রানুকে লেবাননে একটি বাংলোয় আটকে রেখে যৌন কাজে বাধ্য করা হচ্ছে।
সংস্থাটি রানুর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে রানু লেবানন থেকে কাঁদতে কাঁদতে জানায় তার উপর দৈহিক নির্যাতন হচ্ছে। সে বাঁচতে চায়, মায়ের সাথে শেষ দেখা বুঝি হবে না। রানুর পরিবার উদ্বিগ্ন অবস্থায় এখন দিন কাটাচ্ছে। তাদের মেয়ে আদৌ দেশে ফিরে আসবে কিনা?
খালি হাতে দেশে ফিরতঃ অনেক আশাা নিয়ে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য এদেশের শ্রমিকরা বিদেশে পাড়ি জমায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, তাদের এ স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।
খালি হাতে ফিরে আসে দেশে। হতাশা বিরাজ করে তাদের মাঝে।
কুমিল্লার ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের গঙ্গানগর গ্রামের চার সন্তানের জনক মোসলেম মিয়া (৪০) গত ২ বছব পূর্বে পারিবারিক স্বচ্ছলতার আশায় অনেক কষ্টে সে ও তার স্ত্রী মিলে টাকা জোগাড় করে বিদেশে যান। বিদেশ যাওয়ার পর সেখানে চাকুরী না পেয়ে হতাশ হয়ে ৭/৮ মাস পর দেশে ফিরে আসেন। এ ৭/৮ মাস স্ত্রী অফুলা খাতুন স্থানীয় কিছু লোক থেকে টাকা ঋণ করে সংসার চালায় স্বামীর বিদেশের টাকা আশায়।
৮ মাস ব্যর্থ হয়ে স্বামী শূন্য হাতে দেশে ফিরলে পাওনাদাররা টাকা পরিষোধের জন্য চাপ দেয়। পাওনাদারদের ভয়ে অফুলা খাতুন বাপের বাড়িতে পালিয়ে যায়। সেখানেও পাওনাদাররা গিয়ে উঠে। গত ২২ মে পাওনাদাররা অফুলা খাতুনকে মাবাবার কাছ থেকে বাহিরে নিয়ে যায়। মেয়ে নিজ ঘরে ফিরে আসছেনা বিধায় মাবাবা খোঁজাখুজি করতে থাকেন।
খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে আনুমানিক রাত ১০ টার সময় অফুলার চাচা কুদ্দুস মিয়া রান্না ঘরে মৃত ঝুলন্ত ফাঁসি অবস্থায় দেখতে পেয়ে সবাইকে খবর দেয়। অভিযোগ রয়েছে পাওনাদাররা ঘর থেকে নিয়ে হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছে। এই ভাবে হতভাগি অফুলা খাতুন স্বামীর বিদেশে যাওয়ার ঋণের টাকা জীবন দিয়ে শোধ করল।
কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানার সীমান্তবর্তী এলাকার প্রবাস ফেরত জলিল, তাহের, রাসেল, মামুন জানায় ২০০৭ সালের প্রথম দিকে তারা দালালের মাধ্যমে প্রত্যেকে ২ লক্ষ টাকা করে দিয়ে ৪/৫ মাস ঘুরে মালেশিয়ার কুয়ালা লামপুর বিমান বন্দরে গিয়ে পৌঁছে। তারপর শুরু হয় নির্দয় কাহিনী।
বিমান বন্দরে চার দিন আটকে থাকল তারা সহ বাংলাদেশী আরো ১৩২ জন শ্রমিক। এই চার দিন বাংলাদেশী শ্রমিকদের কোন খাবার মিলনা। চার দিন পর মালেশিয়ার একটি কোম্পানী অর্ধমৃত ১৩২ জন শ্রমিককে রিসিভ করে চারটি গাড়িতে করে গোডাউনে নিয়ে গেল। এক রুমে ১৩২ জনকে রাখা হলো। প্রচন্ড গরম আর গাদাগাদিতে দম বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা।
এর পরদিন সকাল বেলা তাদেরকে ১৬/১৭টি গ্র“পে ভাগ করে বনজঙ্গল কাটতে, গার্মেন্টসে, অন্য কোম্পানীতে পাঠিয়ে দেওয়া হল। বনজঙ্গল কাটতে গিয়ে বড় বড় সাপ, মশা কামড় সহ বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হতে হয় তাদের। এভাবে ৫/৬ মাস কাজ করার পরও তারা বেতন পায়নি। বেতনের কথা বললে মালিকরা মারধর করত, খাবার দিত না, ইলেট্রনিক শক তাদের দেওয়া হতো। এরপর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে থানায় মামলা করে তাদের বেশীর ভাগকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হতো।
তাদের কেউ কেউ এক বছর, কেউ চার মাস, কেউ আট মাস জেল খেটে বের হয়ে কয়েক গ্র“প মিলে বেতন পাবার জন্য আন্দোলন করে কাজের যোগদান না করার ঘোষণা দিলে মালিক পক্ষ স্থানীয় সন্ত্রাস দ্বারা আবার হুমকিও মারধর করে। এভাবে দীর্ঘ অত্যাচার বঞ্চনা সহ্য করে চলতি বছর ফেব্র“য়ারী মাসে দেশে ফিরে আসে।
কুমিল্লা শহরের কাটা বিল এলাকার ভুট্টু (২০) ২০০৭ সালে পিতৃবিয়োগের পর সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য আড়াই লক্ষ টাকা খরচ করে এক দালালের মাধ্যমে মালেশিয়া যায়। সেখানে এক বছর ঘুরে কোন চাকুরী না পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। সেখানে একই এলাকার পরিচিত এক লোক তাকে আশ্রয় দেয়।
এক পর্যায়ে আশ্রয় থাকায় বাড়ির (৬ষ্ঠ তলা) ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যা করতে গেলে মিরাকল ভাবে বেঁচে যায়। পরে হাসপাতালে দীর্ঘ ছয় মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরত পাঠানো ভুট্টুকে।
ঢাকার পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জ উপজেলায় গত চার মাসে সৌদিআরব, কুয়েত, মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে শত শত শ্রমিক চাকুরী হারিয়ে দেশে ফিরত এসেছে। ভোক্তাভোগিরা জানায় ২০০৮ সালের নম্বেভর মাসের দিকে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের ৬০ জন যুবক সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য রাজেন্দ্রপুরের এক ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা করে জমা দেয়। টাকা জমা দেয়ার তিন মাস পরে তাদেরকে সিঙ্গাপুর গেটেস মেরিন কোম্পানী নামের একটি সমুদ্র জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়।
উক্ত কোম্পানী যুবকদের গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। বেকার যুবকরা স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে পুলিশ উক্ত কোম্পানীর চেয়ারম্যানকে ডেকে পাঠায়। কর্তৃপক্ষ নিজেদের দেওলিয়া ঘোষণা করায় ইমিগ্রেশন পুলিশ প্রবাসী বাঙ্গালীদের পাসপোর্ট ও ওয়ার্ক পারমিট জব্দ করে। ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাস থেকে তাদের কার্যত দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বম্ব হারিয়ে অবৈধ পথে ভারত থেকে বেনাপোল দিয়ে দেশে ফিরেছেন কুমিল্লা নাঙ্গলকোটের দুই যুবক।
ফিরে আসা দুই যুবক আকমত আলী ও উত্তম কুমার জানায় গত ৮/১০ মাস আগে এক দালালের মাধ্যমে ৪ লক্ষ টাকা করে চুক্তি হয় আফ্রিকায় যাওয়ার জন্য। তারা অগ্রিম হিসাবে ২ লক্ষ টাকা করে জমা দেয়। দালাল চক্র গত মে মাসে ঢাকা থেকে বাসযোগে বেনাপোল হয়ে তাদের তিন জনকে ভারতে নিয়ে যায়। দিল্লী যাওয়ার পর সেলিম নামের এক দালাল তাদের এক ভাড়া বাড়িতে রেখে তাদের কাছ থেকে ডলার ও পাসপোর্ট নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এরপর তারা অর্থের অভাবে ঘর ছেড়ে দিয়ে অনাহারে রাস্তায় ঘুরতে থাকে।
এরপর তারা দিল্লী থেকে বনগা এসে দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে দুই জন বাংলাদেশে ফিরে আসে। ওমর ফারুক নামে অপর জন ভারতীয় বিএসএফের কাছে ধরা পড়ে।
গ্রেফতার কৃত শ্রমিক ঃ অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে যুদ্ধে বিধ্বস্ত ইরাকের নাজাফের কারাগারে বন্দী আছে প্রায় ২ শত বাঙ্গালি শ্রমিক। তাছাড়া সৌদিআরবের রাজধানী রিয়াদের বাথাহ নামক স্থানে চলতি বছরের মার্চ মাসের আড়াই হাজার বাঙ্গালিকে গ্রেফতার করা হয়। আর হুলিয়া মাথা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আরো ১০ হাজার বাঙ্গালী শ্রমিক।
অনেকের বৈধ কাগজপত্র থাকা স্বত্বেও সৌদি পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। তাছাড়া সিঙ্গাপুর, মালেশিয়াতেও অনেক বাঙ্গালী শ্রমিক গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছে বলে প্রবাসে অবস্থানরত শ্রমিকরা জানায়। বর্তমান ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রবাশী শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ চলছে। এমন কোন তথ্য কারো জানা থাকলে মোবাইল বা ই-মেইলে জানাতে অনুরোধ করা হলো।
লেখক: সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মোবাইল: ০১৬১১-০০৮৪৬৯ ই-মেইল ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।