প্রবন্ধ
লুঙ্গি কাহিনী : লাইফ-স্টাইল রাজনীতির দুই চাইর কথা
অরূপ রাহী
প্রিয় ব্রাত্য*,
সেদিন কথা বলে ভালো লাগলো। একটা জিনিস আপনাকে বলা হয় নাই। আমি আপনার পোশাকের ব্যাপারে বিশেষ করে আপনাকে শ্রদ্ধা করি।
ধরে নিচ্ছি এটা আপনার রাজনৈতিক অবস্থান থেকেই এসেছে। সে তো আমাদের সকল কাজের েেত্রই সত্য।
তবে কথার সাথে কাজের যেখানে এতো ফারাক থেকে যায়, সেখানে আপনার চলা ফেরার েেত্র পরিস্কার অবস্থান রাখেন দেখে আমার খুব ভালো লাগে।
আপনাকে অভিনন্দন।
শহিদুল
..........
ডিয়ার শহিদুল*
আমি তো এক বছর ধইরা অষ্ট্রেলিয়ায়
।
আমার ধারণা আপনি রাহীর সঙ্গে আমারে মিলায়া ফেলছেন। মানে লুঙ্গি পরা রাহী।
আমি জানি না। জানায়েন।
এমনিতে আমি ভালো । কিন্তু পোশাক তো আমার রাজনৈতিক না। আর যদি আপনি আমারে রাহী বইলা ভুল করতেছেন তবে বলি রাহীর ওই লুঙ্গি পরা আমার আপত্তির কারণ।
পোষাক যদি নিশান হয়া দাড়ায় তা নিয়া...আগে নিশ্চিত হয়া লই, পরে কথা বাড়ামু।
ভালো থাকবেন।
রাইসু
......
রাইসু,
হ ভাই, আমি ভুলই করছি। এবং তর্ক করতে রাজি আছি। তবে যোগাযোগ তো হয়া গেলো।
গোলামী পোশাক ছাড়া আমরা ভদ্র হইতে পারি না, এটা আমার জন্য খুব বিরক্তির ব্যাপার। তবে এইটা নিয়ে লম্বা আলাপে ঢুকতে চাই না। এর বাইরেও অনেক কাজ আছে।
ভালো থাইকেন।
শহিদুল
আলাপের বাইরে আপনের অনেক কাজের খবর অবশ্য পাই।
লম্বা আলাপে আমারও ইচ্ছা নাই। দুই লাইনে সারি। আমাগো ভদ্র হওয়া যে দরকার তাও সাহেবরা শিখায়া গেছে। ভদ্রতা আমদানী করা জিনিস, গোলামীর মতই। তাইতে ওইটা উনাগো পোশাকেই হইতে হবে, যেমন উনাগো আচারেই ভদ্রতার প্রকাশ।
গ্রামের সব মানুষ বিপ্লব না করতে না করতেই লুঙ্গি পরতেছে। শহরের বিকল্প বুদ্ধিজীবী হইতে গেলে বিকল্প পোশাক তো একটা লাগবই। আর এনজিও-ওয়ালারা এই রকম রুরাল (অরগানিক) বুদ্ধিজীবী দেখলে অনেক খাতিরও করে। কি আর করা! আপনে লম্বা আলাপে ঢুকবেন না।
আপনারে সালাম জানাই।
ভুলের কারণে যে আপনের কথা শোনা গেল তাতে আমার অনেক আনন্দ।
রাইসু
(শহিদুল আলম ও ব্রাত্য রাইসুর মধ্যে পত্রালাপ ২০০৪)
১.
সাল এর হিসেবে ২০০০-এ শুরু এই ঘটনার। আমরা তখন কয়েকজন বন্ধু মিলা লোকজ নামে একটা সংগঠন শুরু করছি। শ্যামলীতে একটা বাড়ির পিছন দিকের অংশে, নীচতলায়, দুইরুমের একটা জায়গা ভাড়া কইরা আমরা সেই খানে কাজ করি, থাকি। উন্নয়নের রাজনীতি আমাদের একটা গবেষণার বিষয়।
‘রাজনীতি’, ‘এনজিও’ থিকা নানারকম লোকজন আমাদের ওইখানে আসে-টাসে।
এক রুমে আমরা থাকি-ঘুমাই, আরেক রুমে কাজ করি। মাঝখানে একটা ভাঙ্গাচুড়া দরজা।
প্রতিদিন সকালে ’ভিতরের’ রুমে গোসল খাওয়া-দাওয়া সাইরা ’লুঙ্গি’ খুইলা ‘প্যান্ট’ পইরা ‘বাইরের রুমে’ আইসা ‘অফিস’ করি। আমার বন্ধুরাও দুএকজন তাই করে।
প্রতিদিন এই ‘ঘর’ ‘বাহির’ করি। ‘অফিস’ এ ‘বাইরের’ লোকজন আসে, আমি লুঙ্গি খুইলা, প্যান্ট পইরা তাদের সঙ্গে সালাম-আদাব করি। কিন্তু, যেমন, ‘বাজার’ করতে যাই ’লুঙ্গি’ পইরা। ‘বাজার’এও অনেক লোকের সাথে দেখা হয়। ‘লুঙ্গি’ পইরা সালাম আদাব করি, অসুবিধা হয় না।
আমার একটু কেমন কেমন লাগে।
মানুষ লুঙ্গি পরলে এক রকম, প্যান্ট পড়লে আরেক রকম!...
নিশ্চয় পোশাক ছাড়া আরেক রকম!
তখন ঘরে থাকলে সেটা ঘরের ভিতরে আরেক দুনিয়া! বাইরে থাকলে আরেক!
সেইটারে বাইরের জগতে মিলায়া ফেললে লোকে তারে ’পাগল’ বলে, ‘অপ্রকৃতিস্থ’, ‘অ-সংস্কৃত’, ‘আনকালচারড’ বা আরো কিছু বলে।
আমি ভাবলাম, অতদুর না হয় নাই গেলাম। লুঙ্গি-প্যান্ট-এর আইল ভাঙলে ‘বাইরের জগতে’ কি হয় একটু দেখি।
২.
আমি লুঙ্গি পইরা সালাম আদাব করা শুরু করলাম।
‘অফিস’ এ বসা শুরু করলাম , বাইরে, অন্য ‘অফিসে’ যাওয়া শুরু করলাম লুঙ্গি পইড়া। সাথে আছে লম্বা চুলের ঝুটি আর ওড়না। আমারে দেইখা ‘শিতি’দের কেউ আড়ালে, কেই সামনে দিয়া মুচকি হাসে, কেউ বলে ’বাউল’, কেই বলে ’নগর বাউল’, বলে ‘কাদের সিদ্দিকীর দলে গেছেন নাকি’, কেউ বলে ‘আসল’, কেউ বলে ‘লোকজ’, কেউ বলে ‘ভং ধরছে’। ‘বামপন্থী’ কেউ বলে ‘অ্যানার্কিস্ট”,...
গ্রামের ‘সাধারণ’ নারী-পুরুষ অনেকেই বলে, ‘মেয়েদের মতো’। ‘শহরে’ তো বটেই।
কেউ কয় ‘হাফ লেডিস’...। গরীব রিক্সাওয়ালা কিংবা ঢাকার লোকাল বাসের কন্ডাকটরের কাছে আমি কখনো ‘আপনি’, কখনো ‘তুমি’। কখনো কয় ..‘লেডিস নামব’..কখনো ‘সাধু’/ফকির, কখনো অন্য কিছু। ...এনারা দেখছি প্যান্ট-শার্ট পরা লোকজনরে ভাই এবং আপনি সম্বোধন করেন। .... পুলিশ যে কতবার ধরছে, চেক/সার্চ করছে তার ইয়ত্তা নাই।
তাদের ‘সন্দেহ’ হয়। দেইখ্যা ‘ভদ্রলোক’ মনে হয় না। (থ্রি-কোয়ার্টার পড়লে খালি ভদ্রলোক মনে হয় তাই না, এলিট-এলিট একটা ভাব আসে! আহা, একদিন থ্রি কোয়ার্টারও পুরান/্যাত হয়া যাবে! আসবে নতুন কিছু! এলিট /স্মার্ট ভাবের নতুন কিছু!) ‘জঙ্গি’ (দাড়ি-চুল আছে, ফতুয়া, সাদা ওড়না/গামছা আছে,), ‘গাঁজাখোর’, এমন কি ‘বেশ্যার দালাল’ও মনে হয় হয়ত !
মাল্টিকাল্টি জাতিসংঘের বা তার শাখা-প্রশাখার কোনো মিটিং-এ সমস্যা হয় নাই। আর্ন্তজাতিক কোনো বেসরকারী মিটিং-এ তো নয়ই। কোনো তারকা হোটেল বা ব্র্যান্ড খাবার দোকানেও না।
কিন্তু বাংলাদেশে বসুন্ধরা শপিং মল, স্টার সিনেপ্লেক্স, কুপারস খাবার দোকান..লা ভিঞ্চি ...এইসব (‘প্রথম শ্রেণী’র নাগরিকদের) জায়গায় লুঙ্গি নিয়া ঝামেলা হইছে। ওই সব জায়গায় ‘লুঙ্গি পরিহিত ব্যক্তির প্রবেশ নিষেধ’। আমি তাদের ‘পোশাক বিধি’ ও ‘বিধাতা’র কর্তৃত্ব নিয়া জানতে চাইছি। এবং আমার ‘পরিচয়’ দেয়ার পর সেখানকার কর্তারা আমাকে ‘যাচাই-বাছাই’পূর্বক প্রবেশাধিকার দিছেন। আমি যে ‘আর্টিষ্ট’, ‘কবি’, ‘গায়ক’!....আমি ছোটোলোক লুঙ্গিপরা/রিক্সাওয়ালা কিংবা ভিাজীবী তো হইতে পারি! ছোটোলোকরা এইরকম দামী জায়গায় ঢুকলে ‘বড়লোকদের দোকানের অপমান!
অনেকে ‘চুপ’ থাকে।
কিছু বলে না। অনেকে আড়ালে মন্তব্য করে। সামনে করে দু-একজন। আমি তখন যেখানে যেরকম বইলা সারি। অনেক অফিসে যাইতে নিরাপত্তাকর্মী আটকায়।
অনেক অফিসের ‘প্যান্ট পরা বড় বস’ আমারে ‘দেখতে পারে না’। ...
‘বিদেশ’ও মিটিং-সিটিং এ যাই লুঙ্গি পইরা। চাই বা না চাই, এই ‘এক্সোটিক’পোশাকের কারণে ‘একস্ট্রা’ ‘খাতির’ কইরা কেউ নগদ নারায়ণ সাধে নাই। মিটিং-সেমিনার-সম্মেলনে যারা আসে-টাসে তারা পোশাকের এই ‘লুঙ্গি’ ঘটনায় বেশির ভাগই নির্বিকার। আমার ধারণাও ছিল সেইটা।
অনেকে এইরকম ‘অর্গানিক’,‘লোকাল’, ‘রুরাল’, ‘ইন্ডিজেনাস’, ‘স্পেশাল’ মাল অনেক দেখছে। অনেকে দেখলেও খেয়াল করে না। অনেকের দেখার দরকার বা ইচ্ছা নাই। সুবিধা নিতে চাইলে তার লাইন আলাদা। ফল হয় কি-না আমি জানি না।
৩.
আমি , সাধারণ বিচারে একজন ‘ শিতি মধ্যবিত্ত’, ‘সমতলের বাঙালি’ ‘পুরুষ’ হিসেবে পাবলিক-প্রাইভেট/ঘর-বাহির-এর যে অভিজ্ঞতা লুঙ্গি কাহিনী মারফত পাইলাম, আমি নিশ্চিত ‘নারী’ বা অন্য পরিচয়ের কারো েেত্র তা অন্যরকম । সমাজে পুরুষের পাবলিক জগত এক রকম, নারীর আরেক। সাধারণভাবে পুঁজিবাদ পাবলিক-প্রাইভেট ভেদ দিয়া কাম সারে। নারীর বেলায়ও তার প্রমাণ পাওয়া যাইব। কিন্তু সমাজে নারীত্ব ও পৌরুষের সংজ্ঞাও তো নির্মিত ও পরিবর্তনশীল।
ফলে বিশেষ অবস্থার বিশেষ অভিজ্ঞতা হবার কথা। ....
আমরা নানা কাজেকর্মে ও চিন্তায় ’আধুনিকতা’ শিা’, ‘ভদ্রতা’,..এই সব নিয়া প্রশ্ন তুলি। অনেকেই এই প্রশ্ন আজকাল করেন। বলি যে ‘কোক’-‘পেপসি’, মাইস্পেস, হাই-ফাইভ, ডিজুস, থ্রি-কোয়ার্টার, বিলিয়ার্ড, পুল, মাংসপেশি, নাভি, টাটু,...ঝুটি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, হাফ-পাতি-ফুল-লিবারেল ‘ফ্রেন্ডশীপ’ এবং ‘প্রেম’ দিয়া কি আমরা ‘স্মার্টনেস’ বুঝব? বলি যে আমরা যা করি, যা পরি, যা খাই, যা ভাবি, যা বলি, যা গোপন করি, যা প্রকাশ করি, যা প্রকাশ্য গোপন করি, যা গতরে রাখি, যা মনে রাখি, যা চাই কিন্তু পারি না,...সব দিয়াই আমি/আমরা আমাকে/আমাদেরকে বুঝবো। সবই অবস্থা, থাকা, না থাকা, ইচ্ছা, অনিচ্ছা,আকাক্সা...ইত্যাদির প্রকাশক।
যে শর্টস পরে, থ্রি-কোয়ার্টার পরে, নাইকির জুতা গেঞ্জি পরে, কিংবা নাম না জানা কোম্পানীর মালপত্র পরে, তারও পোশাকের সামাজিক নাম-নিশানা আছে। একে অন্যের চিহ্নায়ক। সমাজের, প্রতীক ব্যবস্থার অংশ। ভাষা। আমি আপনি চাই-না চাই, জানি-না-জানি।
নিশান না থাকারও নিশান আছে। সকলেই নিশান উড়ায়া চলতেছে। না টের পাইলেও উড়তেছে ঠিকই। কি নিশান, কেন নিশান, কিসের নিশান--সেইটা বড় বিষয়।
নিখাদ, নিরপে, কেবলমাত্র ‘ফ্যাশন’ বইলা কিছু নাই।
পিওর স্টাইল কিছু নাই। দেখতে ‘সুন্দর’/‘মজার’/‘দারুণ’/‘নতুন’/ ‘সাধারণ’ একটা কিছু পিনলেই/নিলেই/খাইলেই হইল? এত নিরীহ এবং সরল? নির্বিকার ‘সরলতা’ অন্যায় সন্ত্রাসের পে যায়। ‘নিরপেতা’ও। ‘হাজার বছর’ ধইরা লুঙ্গি পরা হইল ‘হাজার বছর’ ধইরা তার নিজের নির্মাণ-আবিষ্কার-বিনির্মাণ-প্রকাশ-গোপন-ভাব-অভাব। খেয়াল-খুশি মাত্র না।
শীত-গরম শুধু না। স্বীকৃতি আদায় বা নিজের অস্তিত্ব জাহির মাত্র না। আসনা-বাসনা পূরণ মাত্র না। এক বা একাধিক, নানা মাত্রায়। এর ইতিহাস-ডিসকোর্স-কুরসিনামা-রাজনীতি-অর্থনীতি আছে।
‘আমি’র শুধু টেকনোলজি না, প্রতœতত্বও আছে। তা কেবল অতীতের না। বর্তমানের। ভবিষ্যতের।
উপনিবেশ, তার ‘ভদ্রতা’, পুঁজিতন্ত্র, তার ‘উদারতা’, ব্যক্তিমালিকানা ও তার সংস্কৃতির দাপট, পুরুষতন্ত্র, দমনতন্ত্র--এসবের কারণে আপাত নিশানবিহীনতা, প্রতীকবিহীনতা ঘটে।
প্রতিরোধে নতুন নিশান/প্রতীক/চিহ্ন দরকার হয়। প্রতিরোধ নতুন নিশান/প্রতীক রূপলাভ করে।
হায়ারারকি কবে থাকবে না, আমি দিন-তারিখ দিতে পারব না। তার আগ পর্যন্ত তাই নিশানের চর্চা জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের অন্যতম করণীয়।
এইখানে বইলা রাখি, ‘গণতন্ত্র’ বইলা আমরা যে জিনিস সমাজে/জগতে দেখি, শুনি, তা সমাজ-শাসনের পদ্ধতি হিসাবে, আদর্শ হিসেবে, সংস্কৃতি হিসেবে চইলা আসতেছে।
এর নানা রকমফের-তরিকা আছে। যেমন পশ্চিমা ধাঁচের ‘গণতন্ত্র’। এর বয়স পুঁজিবাদের সমান। মৃত্যুও পুঁজিতন্ত্রের সাথেই।
বিকশিত/উদার পুঁজিবাদ প্রাইভেট খায়েশের/ইচ্ছার/অনুভূতির/মূল্যবোধের পাবলিক ভোগ ততখানিই অনুমোদন করে, যতণ তা উদারনৈতিকতার ফ্যাসিবাদকে চ্যালেঞ্জ না করে।
এর ব্যাত্যয় ঘটলে সে, যেমন, ’হিজাব’বিরোধী আইন করতে পিছপা হয় না। পুঁজিবাদ তার জ্বালানী সংগ্রহ করে নিজ ও পররাষ্ট্র জনগণকে শোষণ করে।
আপাততঃ আমরা যারা পুঁজিতন্ত্রের ফাঁপড় ও দাবড়ানি চাই না, তারা সমাজ-ব্যবস্থা চালাইতে একটা অংশগ্রহণমূলক, অর্ন্তভূক্তিমূলক, সংহতি ও সহযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থা, ব্যক্তিমালিকানার দাপটহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চাই। গণতন্ত্রের নামে যদি ব্যক্তি ও সিন্ডিকেট শাসন চলে, তবে তার বিনাশ করার মাধ্যমে সেটার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তার বহু নাম হইতে পারে।
যেমন, জনগণতন্ত্র। এই ব্যবস্থা বাংলাদেশে এখনও প্রতিষ্ঠা পায় নাই।
যেই সব নীতি, চর্চা, প্রতিষ্ঠান, আদর্শ আমি মানি না, তার চিহ্ন আমি স্বেচ্ছায় বহন করব না। জোর করলে তা প্রতিরোধ করব। সেই ব্যবস্থার চর্চা আমি করব না।
‘নিজের’টা, ‘নিজে’র মত করব, যতখানি, যেভাবে পারি। যে বা যারা জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব চায়, সে বা তারা এইটা করবে। এর নাম জীবনধারা, জীবনচর্চা। লাইফস্টাইল।
অধিপতি শ্রেণী/মতাদর্শ ও তার পোষ্যরা যেখান থেকে যে লাইফস্টাইল নিক না কেন, নিজে যেটাই ভোগ করুক না কেন, সে চায় অন্যপকে কোনো এক বা একাধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে।
শাসন করতে। পণ্যপুঁজিবাদ নাম-নিশানা-চিহ্ন-প্রতীক দিয়াই তো পাবলিকরে খাওয়াইয়া পরায়া কাম সারতেছে। বাসনা যন্ত্র, পুঁজি ও মুনাফা যন্ত্র চালু রাখতেছে। রাষ্ট্র, আধিপত্যমূলক সমাজ-শাসন এবং ‘বিজনেস অ্যাজ ইউজুয়াল’ নিজের সুবিধামতো লাইফস্টাইল চায়, মানুষকে সে অনুযায়ী চলতে বাধ্য করার চেষ্টা করে, নানা কায়দায় তাকে ‘উপভোগ্য’, ‘লোভনীয়’ করে তুলতে কসুর করে না। লাইফস্টাইল তাই রাজনীতি।
লাইফস্টাইল যার যা তার সেই রাজনীতি। যিনি যে লাইফস্টাইলের প,ে তার সেই রাজনীতি।
আমি যদি পুঁজিতন্ত্র, পুরুষতন্ত্র, নির্বিকার ভোগবাদ, নিপীড়ক মতাকাঠামো--এইসব জিনিস না চাই, আমি যদি ‘উপনিবেশ’, ‘আধুনিকতা’র কোনো আছর নিজের মাথা এবং সমাজ থিকা ফেইলা দিতে চাই, তবে আমি ঘর-গেরস্থালী, সমাজ-জামাত-পাবলিক জগত, সম্ভব সব রকম ‘ফ্রন্টে’ তার বিরূদ্ধে লড়ব। শরীর সেই লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট। এর নাম লাইফস্টাইল রাজনীতি।
এটা গোপন-প্রকাশের ধারণা পাল্টায়া দেয়। সদর-অন্দর পাল্টায়া দেয়। মতার বিন্যাস পাল্টায়া দেয়। কাজটা হইতে পারে সমালোচনা, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ, বিদ্রƒপ ও উন্মোচন, সম্মুখসমর, মাথা-শরীর ও সমাজে স্বাধীন অঞ্চল/মুক্তাঞ্চল গঠন, এর পরিধি বাড়ানো। কিভাবে, কখন, কোন মাত্রায়--সেটা বিবেচনা।
কোনটা কাজ না? যারা, ধরা যাক, ‘ভবিষ্যত’, ‘মুক্তি’ ইত্যাদিতে আস্থা রাখেন না, বর্তমানে, নগদে চান, তাদের জন্য তো এই লড়াই আরো জরুরী!
কিন্তু লুঙ্গি-শাড়ী-স্যুট-সাফারি জাতীয়তাবাদের আলু-মুলা না। জাতীয়তাবাদ নিজেরটা পাওয়া হয়া গেলে অন্যের ওপর আগ্রাসন চালাবে না তার গ্যারান্টি নাই। লাইফস্টাইল জনগণতন্ত্রায়নের সিদ্ধান্ত, স্বাধীনতা, স্বায়ত্বশাসন ও সংহতির সিদ্ধান্ত। স্বাধীনতা, স্বায়ত্বশাসন ও সংহতির জন্য চাই লাইফস্টাইলের জনগণতন্ত্রায়ন।
‘জাতীয়তাবাদী’, ‘দেশপ্রেমিক’, ‘জনগণের পরে’ দাবীদার যে কারো মৌলিক করণীয়ের মধ্যে পরে জনগণতান্ত্রিক লাইফস্টাইল ও সমাজ সংগঠন ও ব্যবস্থাকে সমর্থন করা।
না পারাটা তাদের স্ববিরোধের প্রকাশ।
Eida gelo ek dik. Poshaker aro sthan-kal-patro bhed thakbe (jemon thandar deshe gele ami ki korbo?). Kintu tar che boro kotha amar pratyahik jibon o shomaj. Poshaker protibesh-rajniti (political ecology) ebong rajnoitik orthonitir dik ase. sei alochonao dorkar...
…shobar jonno lungi pora joruri na. abosshok o na.
amio je sharajibon, shobshomoy lungi porbo--emon protigya kori nai. karon, bishoyta lorai korar. Onushiloner maddhome tar protik o koushal nirdharoner. jara amar ei `cultural monopoly’ bhangte chan, tara swagoto!
প্রশ্ন হয় : লাইফ-স্টাইল কতদুর যায়? পুঁজিবাদ তো ‘বিপ্লবী’ লাইফস্টাইলকে পণ্য বানাবে। আর সমাজের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন তো টি-শার্ট পড়ার মত ‘সহজ’ কর্ম নয়।
উত্তর : পুঁজিবাদ ‘বিপ্লবী’ লাইফস্টাইল পুরোটা নিতেও পারে না। চায় ও না।
আর ‘বিপ্লবী’ লাইফস্টাইল কোনো খাপে মোড়া জিনিস না। লাইফ-স্টাইল/জীবনধারা শুধু লুঙ্গি-শাড়ী-চুড়ির মামলা না। এইটা জীবন-সমাজ-জগত সম্পর্কে ভাবনা ও অনুশীলনের মামলা। এতে তাই ‘বিপ্লবী’ সৃজনশীলতা, সতর্কতা ও কৌশলের ব্যাপার আছে। ‘বিপ্লব’ টিশার্ট-ফতুয়া পড়ার মত সহজ কর্ম না।
ঠিকই তো।
জনগণতান্ত্রিক লাইফস্টাইল ‘উদার/ বুর্জোয়া’ পরিবেশে আরামছে করার কোনো ব্যাপার না। এটা একটা লড়াই। এটা মুক্তবাসনার অনুশীলন। কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক বাসনা পূরণ না।
সমাজের স্ববিরোধের প্রকাশ শুধু না। জনগণতান্ত্রিক লাইফস্টাইল বুর্জোয়া ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ না। জনগণতান্ত্রিক আচার-অনুশীলন। ‘ব্যক্তি’-‘ব্যক্তি’, ব্যক্তি-সমাজ, ব্যক্তি-সংগঠন, ব্যক্তি-উপায়/উপকরণের এমন সম্পর্ক চর্চা (লাইফ-স্টাইল), যা ঘরে-বাইরে, সমাজে অ-ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সম্ভব করে তোলে। যা ব্যক্তি ও সমষ্টির সুরা ও বিকাশ নিশ্চিত করে।
এর জন্য দরকার একটা পারষ্পারিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে চর্চিত সামষ্টিক প্রক্রিয়া ও উদ্যোগ।
কিন্তু কর্তা কে? যে বা যারা সিদ্ধান্ত নিয়া একটা কাজ করে; ঘটনায় তার অংশগ্রহণ এমন যে তা ঘর-বাহিরের সীমানায় ধাক্কা দেয়। নাড়ায়ে দেয়। সরায়া ফালায়। ভাইঙ্গা দেয়।
কায়েমি স্বার্থের আরাম হারাম করে। ঘটনা এবং অবস্থা ও ব্যবস্থার নতুন বিধি-বিধান তৈরী করে। তখন রাজনীতি বদলায়। প্রেম বদলায়। বিজ্ঞান বদলায়।
শিল্প বদলায়। সংস্কৃতি বদলায়। সমাজ বদলায়। এ সবের মধ্য দিয়া সত্য প্রকাশিত হইতে থাকেন।
৪.
রঙের পরলাম।
‘নিরঙ্গা’ও পরলাম। পার দেওয়া, পার ছাড়া, নকশা করা...নানা রকম। লুঙ্গির সাথে ওড়না, ফতুয়া, এইসব নিয়াও অনেক পরীা-নিরীা আমি করছি। কিন্তু মামলাটা আমার কাছে শুধু তিনটুকরা কাপড়ের না। এবং আমি শুধু তিনটা কাপড় পরি নাই।
পায়ে আলতা-নুপুর শুধু পরি নাই। কপালে ফোঁটা শুধু পড়ি নাই। চুলের খোঁ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।