আমার জন্য বেদনারা দরজা খুলে দাড়িয়ে থাকে; আমি ভেতরে ধুকতেই ওরা আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমাকে নিয়ে খেলা করে,আদর করে,চুমু খায়, আর আমি নীরবে কেঁদে উঠি; আজ কোথায় তুমি,ও আমার সুখ গৃহিণী।
লুঙ্গি দেহের নিচের অংশে পরার একধরনের পোষাক, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা এবং মায়ানমারে এর প্রচলন দেখা যায়। যদিও এটির সূচনা দক্ষিণ ভারতে কিন্তু এটি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক সম্প্রদায়ই ব্যবহার করে থাকে। যদিও এক রঙের লুঙ্গিই বেশী জনপ্রিয় কিন্তু সাধারণত এটি বিভিন্ন নকশা এবং রঙে সুতায় বুনা হয়। নকশা ও রঙ ছাড়াও লুঙ্গির উপরে এবং নিচে সাদা বা কালো রঙের ডোরা কাটা দাগ থাকে।
ধুতি চাদরের মত হলেও লুঙ্গি স্কার্টের মতন করে গোল করে সেলানো থাকে। বিভিন্ন সম্প্রদায় ভেদে লুঙ্গি পুরুষ ও মহিলা উভয়ই, বিভিন্নভাবে কোমরে বেঁধে পরে থাকে যা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে বিয়ের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পরা হয়। দৈনন্দিন পরার ক্ষেত্রে লুঙ্গি সাধারণ দুই গেড়ো বাঁধন বেশি জনপ্রিয়, কারণ এতে লুঙ্গি খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। লুঙ্গি সাধারণত নিজের স্বস্তিপূর্ণভাবে পরা হয়, যাতে এর দৈর্ঘ্য সহজেই ঠিক করে নেওয়া যায়। যে সকল অঞ্চল গরম এবং আর্দ্রতার কারণে আবহাওয়া অসহনীয় হয়ে উঠে সে সব অঞ্চলে এটি পরা হয়।
লুঙ্গি অথবা লোঙ্গাই মায়ানমারের জাতীয় পোষাক হিসেবে স্বীকৃত।
উৎস
গবেষণায় দেখা গেছে, এর সূচনা হয়েছে দক্ষিণ ভারতে বর্তমানে তামিলনাডুয়। ভেস্তি নামক এক ধরনের পোষাককে লুঙ্গির পূর্বসূরী বলে মনে করা হয়। ইতিহাসে উল্লেখিত আছে মসলিন কাপড়ের ভেস্তি পোষাক তামিল থেকে ব্যবিলনে রপ্তানী হত। ব্যবিলনের প্রত্নতাত্বিক নিবন্ধে 'সিন্ধু' শব্দ খুঁজে পাওয়া যায়।
তামিল ভাষায় সিন্ধু অর্থ কাপড় বা পোষাক। 'বারাদাভারগাল' নামের তামিলনাডুর জেলে সম্প্রদায় পশ্চিম আফ্রিকা, ইজিপ্ট বা মিশর এবং মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে লুঙ্গি রপ্তানীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সময়ের সাথে, সাদা কাপড়ে ফুল এবং অন্যান্য নকশা চিত্রিত হয়ে পরবর্তীতে লুঙ্গিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে লুঙ্গি বার্মা, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় এটি বেশি জনপ্রিয়।
আঞ্চলিক প্রভেদসমূহ
বাংলাদেশ
লুঙ্গি সাধারণতঃ বাংলাদেশী সকল সম্প্রদায়ের পুরুষদেরই পরতে দেখা যায়, যদিও এটি কোন বিশেষ অনুষ্ঠান বা দিনে পরা হয় না।
বাংলাদেশে লুঙ্গি বেশিরভাগ পুরুষই দৈনন্দিন নিত্য ব্যবহার্য পোষাক হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। যদিও সুতায় নকশা করা, বাটিক করা অথবা সিল্কের লুঙ্গি কখনও কখনও বিয়ের উপহার হিসেবে বরকে দেওয়া হয়। কোন বিশেষ দিন উপলক্ষে শিক্ষক এবং মসজিদের ইমামদের লুঙ্গি উপহারের রীতি এখনও চালু আছে। যদিও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উপজাতীয় মহিলারা একই পোষাক পরিধান করেন, বাঙালি মহিলারা লুঙ্গি পরিধান করেন না। উপজাতীয়দের কাছে এ পোষাক থামি নামে পরিচিত।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুরুষের দৈনন্দিন পোষাক হিসেবে ধুতির পরিবর্তে লুঙ্গির জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন কোন বাঙালি লুঙ্গি পরেন না, কারণ তারা মনে করেন লুঙ্গি খুবই অনানুষ্ঠানিক এবং মানানসই নয়, যদিও এটি আরামদায়ক এবং অনেকেই ব্যবহার করছেন। যদিও আস্তে আস্তে লুঙ্গির ব্যবহার কমে আসছে, কিন্তু তা এখনও বাংলাদেশের প্রায় সকল গ্রাম্য পুরুষের পরিচ্ছেদ পোষাক।
দক্ষিণ ভারত
কেরালায় লুঙ্গি পুরুষ ও মহিলা উভয়েই পরে থাকেন। এটিকে খুবই অনানুষ্ঠানিক এবং দিনমজুরদের পোষাক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এখানে লুঙ্গি সাধারণতঃ রঙ্গিন এবং বিভিন্ন নকশা করা থাকে। সাদা রঙের নকশা ছাড়া লুঙ্গির সংস্করণকে মুন্ডু নামে ডাকা হয়। কোন অনুষ্ঠানের (যেমনঃ বিয়ে) ক্ষেত্রে, মুন্ডুতে কখনো কখনো সোনালি সুতায় এমব্রয়ডারি করা থাকে যা কাসাভু নামে পরিচিত। লুঙ্গি সাধারণতঃ বিয়ে বা অন্য কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরা হয় না। জাফরান রঙের মুন্ডু কাভি মুন্ডু নামে পরিচিত।
রঙ্গিন লুঙ্গিকে কারনাটকে ডাকা হয় মুন্ডা বলে। লুঙ্গির মত সাদা রঙের নকশা ছাড়া দুই ভাঁজের কাপড়কে ডাকা হয় পাঞ্চে বলে। পাঞ্চে যা লুঙ্গির বিপরিত পরা হয় বিশেষ অনুষ্ঠানসমূহে। অন্ধ প্রদেশেও এগুলো ব্যবহার করা হয়।
কেরালায় স্থানীয় পুরুষেরা সাধারণতঃ তাদের মুন্ডু ও লুঙ্গিকে গুটিয়ে পরেন।
কাপড়ের নিচের অংশ ভাজ করে গুটিয়ে তুলে আবার কোমরে বাঁধা হয়। এভাবে পরলে মুন্ডু বা লুঙ্গি দিয়ে কোমর থেকে হাটু পর্যন্ত ঢাকা থাকে। এ ধরনের কাপড় পরা অনেকটা ভাঁজ ছাড়া স্কটল্যান্ডের স্থানীয় ঘাগড়ার মত দেখা যায়।
তামিলনাডুয় শুধু পুরুষেরা লুঙ্গি পরিধান করেন এবং কেরালার লোকদের মত করেই ব্যবহার করেন। দক্ষিণ তামিলনাডুয় এটি কাইলি অথবা সারং/চারাং বলে ডাকা হয়।
মুন্ডু মত ভেত্তি বা ভেস্তি যা আসলে ভারতীয় ধুতি কোমরে পেঁচিয়ে পরা হয়, যা লুঙ্গি ভেবে ভুল হতে পারে।
মায়ানমার
মায়ানমারে বার্মিজ ভাষায় লুঙ্গিকে লোঙ্গাই বলে ডাকা হয়। পুরুষের জন্য এটি ঘর থেকে কাজে জীবনের সর্বত্রই ব্যবহৃত হয়। সাধারণতঃ শুধু সৈনিকগণ পায়জামা পরেন এবং যে সকল যুবক পাশ্চাত্য চিন্তাধারায় মত্ত তারা বাড়িতে লোঙ্গাই পরে থাকেন। মহিলাদের জন্য এটি তামাইন হিসেবে পরিচিত, যা খুবই জনপ্রিয়।
বিভিন্ন সুতায় বোনা যেমন সুতি এবং সিল্কের লুঙ্গি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক সময়ে পরিধান করা হয়।
ইয়েমেন
ইয়েমেনে এ ধরনের পোষাককে মা' আউইস বলে ডাকা হয় এবং সকল বয়সের পুরষই এ পোষাক পরিধান করেন।
সোমালিয়া
সোমালিয়ায় মা' আউইস এর হুস গুনতি পুরুষদের পরিধেয়। এটি বয়োজ্জ্যেষ্ঠ পুরুষই বেশি পরে থাকেন যারা সাথে কুফি বারাওয়ে পরেন, এটি সাধারণতঃ অনেক সোমালীয় পরিধান করেন যখন বাড়ীতে অবসর সময় কাটান। এ পোষাকের ঐতিহ্যবাহী রঙ হচ্ছে সাদা নকশা ছাড়া, কিন্তু এশিয়ার প্রভাবে এবং সোমালিয়া মসলা রপ্তানীর পথিমধ্যে হওয়ায় এশিয়া বণিকদের ব্যবহৃত রঙ্গিন লুঙ্গির সাথে এ দেশের মানুষের পরিচয় ঘটে।
সবশেষে এটা দেখেন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।