যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
[গতকাল ভিডিওতে পাইরেটস অভ ক্যারিবিয়ানের ২য় পর্ব দেখছিলাম ... গাঁঝাখুরী গল্পে ঘুম চলে আসছিল ... মনে হলো পাইরেটসদের নিয়ে এর চেয়ে মজার কিছু করা যায় ]
*********************************************
হায়দার যখন তার সাম্পানের নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে পাড়ি দিয়েছিল সে সময়ের কথা; এরকম ভ্রমনে সাধারনত সবাই ভয়াবহ ঝড়ে পড়ে, হায়দারই বা বাদ যাবে কেন? ঝড়ের কবলে পড়ে ভাসতে ভাসতে কেউ যদি কোন জনমানবহীন দ্বীপে এসে ল্যান্ড করে তখনই কেবল সে গল্পের নায়ক হয়, হায়দারও তাই। সেজন্যই সামহোয়ারের পেইজে তার কথা।
তো আন্দামানের যে ছোট্ট জনমাবহীন দ্বীপে এসে হায়দার পড়েছিল, সেখানে কোন নারকেল গাছবা অন্যকোন গাছ ছিলনা, ছিল শুধু রহস্যময় ছোট ছোট মাথার খুলি। হায়দার খুব সাহস করে একটি খুলির কাছে গেল, ভালমতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেই তার চোখে পড়ল খুলির ভেতরের চকচকে একটা জিনিস। হ্যাঁ, যা ভেবেছেন তাই! স্বর্ণমুদ্রা।
পুরো খুলি ভালমতো হাতড়ে বিছড়েও সে এই একটার বেশী মুদ্রা পেলনা। হঠাৎ তার মাথায় খেয়াল চাপল, আরে, তাইতো!!
ভালমতো গুনে দেখল পুরো দ্বীপে মোট চল্লিশটি খুলি আর বুঝতেই পারছেন, প্রত্যেক খুলির ভেতরে লুকোনো একটি করে স্বর্ণমুদ্রা। হায়দার মনের আনন্দে সবগুলো মুদ্রা একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে, ব্যাগটাকে জড়িয়ে ধরে নাক ডাকিয়ে দিল এক ঘুম। এই জনশূন্য বৃক্ষশূন্য দ্বীপ থেকে শহরে না ফিরতে পারলে যে এই মুদ্রার কোন দাম নেই, সবেমাত্র গুপ্তধন খুঁজে পাওয়া হায়দারের মাথায় সেই চিন্তাটাও আসলনা।
বিকেলে যখন তার ঘুম ভাঙে তখন সে দেখে তার সামনে বিকট দর্শন তিন লোক, হ্যাঁ, এরাই 'দ্য পাইরেটস অভ আন্দামান।
' তিন পাইরেটসের নাম যথাক্রমে বুডু, মুডু (মডুরাম নহে) আর ছুডু, এবং বুডু সবচেয়ে বড়, মুডু মেঝ, ছুডু সবচেয়ে ছোট। স্বর্ণমুদ্রা দেখে জলদস্যু তিনজন হায়দারকে তাদের 'বস্' মানল।
সেখানে ঠিক হলো, তিন পাইরেটস মিলে বস্ হায়দারকে শহরে পৌঁছে দেবে যদি হায়দার মুদ্রাগুলো চারজনের (হায়দার আর তিন জলদস্যু) মাঝে ঠিকভাবে ভাগ করে দিতে পারে।
যে শর্তগুলো দেয়া হলো, তা হলো,
১. বস্ ভাগ করে দেবে মুদ্রা।
২. ভাগবন্টন দেখে সবাই ভোট দেবে এরপক্ষে (হ্যাঁ) বা বিপক্ষে (না)
৩. হ্যাঁ জিতলে ঝামেলা শেষ, সবাই সুখী; কিন্তু না জিতলে
বস্-কে ফাঁসী দেয়া হবে, এবং এরপর বয়সের ক্রমে সবচেয়ে বড়জন বস্ হবে।
মানে হায়দারের ফাঁসী হলে বস্ হবে বুডু।
যখন মোট সদস্যসংখ্যা জোড়, তখন হ্যাঁ ভোটকে জিততে হলে অর্ধেকের চেয়ে অন্তত ১ টি ভোট বেশী পেতে হবে। সমান-সমান হলে 'না' ভোট জিতবে।
যে ব্যাপারগুলো হায়দার জানে,
১. জলদস্যু এবং সে নিজে, তাদের সবার মাথায়ই নিজের সবচেয়ে ভালটা বোঝার মতো যথেষ্ট বুদ্ধি আছে।
২. চারজনের সবার কাছেই সবচেয়ে মূল্যবান হলো 'নিজের জীবন', এরপর 'স্বর্ণমুদ্রা'।
৩. জলদস্যুরা সবাই কাউকে ফাঁসী দেয়া খুব পছন্দ করে, কাজেই কোন জলদস্যু যদি বুঝতে পারে যে এখনকার বস্-কে
ফাঁসী দিলেও পরের বস্ তাকে সমানসংখ্যক মুদ্রাই দেবে তাহলে সে এখনকার বসের বিপক্ষে হাত তুলবে, মানে 'না' ভোট দেবে।
৪. বুডু, মুডু, ছুডু এদের সবার সাথে সবার সম্পর্ক খারাপ। কেউ পরস্পর কোন চুক্তিতে আসবেনা, কারণ সে জানে যে যেকোন মুহূর্তে আরেকজন চুক্তি ভাঙতে পারে। সবাই নিজের সর্বোচ্চ স্বার্থ দেখবে।
এখন বলুনতো দেখি, হায়দার নিজে কয়টা স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে বাড়ী ফিরেছিল?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।