খোকার গ্রহ, সেখান থেকে তার বিদায় এবং এখানে আসার কাহিনী সর্ম্পকে, প্রতিদিন নতুন কিছু আবিষ্কার করছিলাম। তার কথা গুলিই আমার মনে একটা ছবি তৈরী করল। এভাবে তৃতীয় দিনে বটগাছের করুন কাহীনি শোনলাম। সেটা ভেড়াটার কারণেই। অনেকটা অপ্রাসংগিক ভাবেই খোকা আমার কাছে জানতে চাইল, যেন কোন জটিল অংকের সমাধান খুজছে:
এটাতো ঠিক যে, ভেড়া সব রকমের ঘাষই খায়?
হ্যাঁ, এটা ঠিক।
খুব ভাল, আমি এতে খুব খুশী।
আমি বুঝতে পারলাম না, ভেড়া সব রকমের ঘাষই খায়, সেটা এত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল কেন? খোকা আবার বলল:
তাহলে ভেড়াতো বটগাছও খায়।
খোকাবাবুকে বোঝালাম: বটবৃক্ষ কোন ঘাস নয়। সেটা মসজিদের মিনারার চেয়েও উচু একটা বৃক্ষ। একপাল হাতিও একটা গাছ খেয়ে শেষ করতে পারবে না।
হাতির কথাটা শুনে সে একটু হাসল।
হাতিগুলি একটার উপর আরেকটা দ্বারাতে হবে। তার পর জ্ঞানী লোকের মত বলল:
বটবৃক্ষওতো একসময় ঘাষের মতই ছোট ছিল।
তা বটে, কিন্তু তোমার ভেড়া বট গাছের চারা খাবে কেন?
ঠিক আছে, দেখা যাবে।
যেন দিবালোকের মত পরিস্কার।
কিন্তু আমি খুব মনোযোগ না দিলে ব্যাপারটা বুঝতেই পারতাম না।
অন্য সব গ্রহের মত খোকাবাবুর গ্রহেও ভাল-মন্দ দু'রকমের গাছই ছিল। যার কারণে ভাল-মন্দ দু'রকমের বীজও ছিল। কিন্তু বীজতো সংগোপনে মাটির বুকে ঘুমিয়ে থাকে। একদিন সুযোগ মত আড়মোড়া দিয়ে জেগে উঠে।
ধীড়ে, অতি সন্তর্পনে, কঁচি পাতাটি মেলে ধরে স্যূর্যের আলোতে। যদি মূলা বা গোলাপ গুচ্ছ হয়, তবে নির্দিধায় বাড়তে দেয়া যায়। কিন্তু আগাছা বা ক্ষতিকারক বৃক্ষের চাড়া হলে, চেনা মাত্রই তা অঙ্কুরেই উপড়ে ফেলা উচিৎ। খোকাবাবুর গ্রহ এমন ক্ষতিকারক বটবৃক্ষের বীজে ভরা ছিল। বটগাছ অঙ্কুরেই মূলসহ তুলে না ফেললে আর কখনই তোলাযায় না।
একটা গাছই পুরো গ্রহটা দখল করে নেয়। শিকর দিয়ে গ্রহটা ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলে। খোকার গ্রহের মত এমন ছোট একটা গ্রহে দু'একটা বটগাছ হলেই গ্রহটা চূড়মার হয়ে যাবে।
নিয়মানুবর্তিতার ব্যপার। নিজের প্রাতক্রিয়া শেষ করে, গ্রহের প্রাতকৃয়ায় হাত দিতে হয়।
এটাই নিয়ম। প্রতিদিন মনোযোগ দিয়ে সবগুলি অঙ্কুর দেখতে হয়। গোলাপ গুচ্ছের পাশে বটের চাড়া দেখলেই তুলে ফেলতে হয়। সেটা খুব সহজ নয়। কারণ: খুব কঁচি অবস্থায় সব অঙ্কুর দেখতে একই রকম লাগে।
কাজটা একটু একঘেয়ে বটে তবে পরিশ্রম লাগেনা করতে।
একদিন খোকা আমাকে বলল: এখন যা বলব, ভাল করে তার একটা ছবি আঁক। যাতে তোমার গ্রহের বাচ্চারা বুঝতে পারে। কোনদিন ভ্রমনে গেলে সেটা তাদের কাজে লাগতে পারে। কোন কোন কাজ একটু দেরীতে করলে কোন ক্ষতি নেই।
কিন্তু বটগাছ অঙ্কুরে তুলে ফেলাই ভাল। না হলে বড় রকমের ক্ষতি হতে পারে। আমি একটা গ্রহ চিনতাম। সেখানে খুব অলস একজন লোক থাকতো। সে তিনটা বটগাছের চাড়া তুলতে ভূলেগেছে।
খোকার বর্ননা অনুযায়ী আমি সে গ্রহের ছবিটা এঁকে দিলাম। আমি কোন নীতিবাদীর সুরে কথা বলতে চাই না। তবে এইটুকু বলব যে, বটবৃক্ষের ভয়ঙ্করতা সর্ম্পকে কেউই তেমন কিছু যানেনা। পথ ভূলে কেউ একটা ছোট গ্রহে চলে এলে, এবং সেখানে কোন বটগাছ থাকলে যে কি বপদ, সেই কথা ভেবে এই একটি বারের মত আমার নীরব দর্শকের ভূমিকা ত্যাগ করলাম। আমি বলছি: ছোট্ট বন্ধুরা, বটগাছ থেকে সাবধান হও! বন্ধুরা আমার, তোমাদেরকে একটা বিপদ সর্ম্পকে অবহিত করছি।
এই বিপদ তোমার আমার, আমাদের সকলের। এবং এই জন্য আমি অনেক কষ্ট করে এই ছবিটা এঁকেছি। এছবি থেকে তোমরা যা শিখতে পারবে, তাতেই আমার শ্রম সার্থক হবে। তোমাদের মনে প্রশ্ন যাগতে পারে; এই বইয়ে বটগাছের ছবির মত এত সুন্দর ছবি আর নাই কেন? জবাবটা খুবই সহজ, চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। বটগাছের ছবিটা আঁকার সময়, আমি তার গুরুত্ব খুব বেশী পরিমানে অনুধাবন করেছি।
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।