পঞ্চম দিনের বিষয় হল আবার ভেড়াটা। যা খোকার একান্ত একটা ব্যাক্তিগত ব্যাপার উম্মোচিত করতে সাহায্য করল। কিছুটা আপ্রসংগিক ভাবেই, কোন ভূমিকা না করে, সে আমাকে জিজ্ঞেস করল। যেন দীর্ঘ নিরবতায় পরিপক্ক কোন দুর্ভাবনার ফল কুড়াচ্ছে:
ভেরা যখন সবকিছুই খায়, তখন তো ফুলও খায়।
ভেড়া মুখের সামনে যা পায়, তাই খায়।
যে ফুলে কাঁটা থাকে সে সব ফুলও?
হ্যাঁ, কাটাসুদ্ধু ফুল।
তা হলে কাঁটা রেখে, ফুলের লাভটা হল কি!
আমার তা যানা ছিল না। আমি আমার উড়োজাহাজটার ঝংধরা একটা নাট খোলা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম। আমি খুব চিন্তিত ছিলাম। কারণ যান্ত্রিক গোলমাল যত সহজে মেরামত করা যাবে বলে ভেবেছিলাম, এখন আর তত সহজ বলে মনে হচ্ছে না।
এদিকে জলও ফুড়িয়ে এল।
কাঁটার কাজটা কী, তাহলে?
খোকাবাবু কোন প্রশ্ন একবার করলে, তার উত্তর না পাওয়া অব্দি সান্ত হত না।
আমি আমার ঝংধরা নাট নিয়েই ব্যাস্ত ছিলাম। এবং সোজা বলে দিলাম:
কাঁটার কোন কাজ নেই। ফুলগুলি দুষ্ট বলেই কাঁটা গজায়।
ওহ হু!
ও কছুক্ষন নীরব রইল। কিন্তু তার পর আমাকে খোঁচা মারার অভিযোগ করল।
তোমার কথা আমি একটুও বিস্বাস করি না। ফুলগুলি দুর্বল। যে ভাবে পারে তারা আত্মরক্ষা করে।
তারা দুষ্ট নয়। তারা মনে করে, কাঁটা থাকায়, তাদের খুব ভয়ঙ্কর দেখায়।
আমি কোন উত্তর না দিয়ে নিজে নিজেই বললাম:
যদি এই নাটটা না খোলে, তবে একে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে খুলতে হবে।
খোকা আমার ভাবনায় আবার বাধা দিল:
তোমার সত্যিই মনে হয় ফুলের......
না না, আমার মনে হয় না। আমি কোন কিছু না ভেবেই বলেছিলাম।
দেখছনা আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে ব্যাস্ত।
খোকার দৃস্টিতে তাচ্ছল্য।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার!
ও দেখছিল, কি ভাবে আমি তৈল চটা হাতে, হাতুড়ি নিয়ে, মাথা নীচু করে একটা যন্ত্রের উপড় ঝুকে ছিলাম। যা তার কাছে খুব বিশ্রী মনে হচ্ছিল।
তুমি বড়দের মত কথা বলছ।
আমি লজ্জা পেলাম। কিন্তু ও নির্দয় ভাবে তার সঙ্গে যোগ করল:
তুমি সব কিছু এলোমেলো করে তালগোল পাকিয়ে ফেল।
খোকা রাগে মাথা নাড়ছে, আর তার চুল হাওয়ায উড়ছে।
আমি একটা গ্রহ চিনি, সেখানে লাল মোরগের মত একজন মানুষ থাকে। সেই লোকটা কখনো কোন ফুলের সুবাস পায়নি।
কোন তারা দেখেনি। সে কাউকে ভালবাসেনি। যোগ ছারা জীবনে সে আর কিছুই করেনি। দিণ রাত শুধু বলত: আমি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি। গর্বে তার বুকটা ফুলে উঠতো।
কিন্তু এটা কোন মানুষ নয়। ও হচ্ছে একটা ফেনার মত বস্তু।
একটা কী?
একটা ফেনার মত বস্তু।
রাগে খোকার মুখটা লাল হয়ে গেছে।
হাজার বছর ধরে ফুলেরা কাঁটা গজায়।
হাজার বছর ধরে ভেড়াগুলি কাঁটা শুদ্ব ফুল খেয়ে ফেলে। তুমি মনে কর বিষয়টা একেবারেই গুরুত্বহীন, যদি কেউ প্রশ্ন করে, কেন ফুলগুলি এত সাধ্য-সাধনা করে বৃন্তে কাঁটা গজায়, যে কাঁটা কোন কাজে আসেনা। ফুলের সঙ্গে ভেড়ার এই লড়াই গুরুত্বহীন? কোন একজন মোটা মানুষের যোগ বিয়েগের চেয়ে গুরুত্ব হীন? এবং যদি আমার একটা ফুল থাকে, যা পৃথিবীতে শুধু একটিই আছে, আমার ভূবন ছাড়া যা আর কোথাও নেই, এবং যদি একটা ছোট ভেড়া যার কোন বোধ শক্তি নেই, কোন এক সকালে সেই ফুলটা এক কামড়ে বিনাষ করে ফেলে, সেটা কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়?
বলতে বলতে খোকা উত্তেজনায় লাল হয়ে যাচ্ছিল।
যদি কেউ এমন একটি ফুলকে ভালবাসে, যা রাশি রাশি তারকা কুজ্ঞে এখটিই আছে। তবে একবার আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকালেই সে সূখী হতে পারে।
তার পর খোকা নিজে নিজেই আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল: আমার ফুলটি ঐ ওখানে কোথাও। কিন্তু যদি ভেড়াটা আমার ফুলটা খেয়ে ফেলে! তাহলে আমার সব তারা নিভে যাবে। সেটা কী কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার না?
আর কিছু বলতে পারল না, অধিক শোকে পাথর হয়ে গেল খোকা। রাতের আঁধার নেমে এল ধীরে ধীরে। হাতের যন্ত্রপাতি রেখে দিলাম।
হাতুড়ী, নাট-বল্টু, তৃষ্ণা, মৃত্যুর ভয় সব কিছুই আমার কাছে তুচ্ছ মনে হল। একটি তারায়, একটি গ্রহে, আমার ভূবন এই পৃথিবীতে একটি শিশুকে সান্তনা দেওয়াই এখন সব চেয়ে বড় কাজ। আমি তাকে কোলে নিয়ে কানে কানে বললাম:
তুমি যে ফুলটাকে ভালবাস, তার কোন বিপদের আশংকা নেই। আমি ভেড়াটার মূখে একটা ঠুলি এঁকে দেব। ফুলটার চার পাশে বেড়া এঁকে দেব।
আমি..... আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, আমার কি করা উচিৎ। নিজেকে খুব বোকা লাগছিল। কি ভাবে তার মনের ব্যাথা বুঝব, কি বলে তাকে সান্তনা দেব...... কত অচেনা সেই অচিনপূরী, অশ্রুর দেশ। চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।