বছর ছ'য়েক আগে,সাহারা মরুভূমিতে জরুরী অবতরনের আগ পর্যন্ত,আমি একাই ছিলাম। কথা বলা যায় এমন কোন মানুষই ছিলনা। আমার উড়োজাহাজে যান্তিক গোলমাল শুরু হল। কোন সহযাত্রী বা মিস্তিরী সঙ্গে না থাকায়, যন্ত্রটির কঠিন মেরামতের কাজে আমাকেই হাত দিতে হয়। আমার জন্য এটা জীবন মৃত্যুর প্রশ্ন।
পানীয় জল যা ছিল তাতে কোন রকমে এক সপ্তাহ্ চলতো কিনা সন্দেহ।
প্রথম সন্ধ্যায় জনমানব হীন মরুর শুকনো বালির উপড় ঘুমিয়ে পড়ি। একজন ডুবেযাওয়া জাহাজের খড়-কুটো আকড়ে থাকা নাবিকের চেয়েও বিপদজনক অবস্থা ছিল আমার। কাজেই তোমরা আমার আশ্চর্য্য হওয়ার কারণ বুঝতেই পারছ, যখন ভোরের আবছা আলোয় একটা অদ্ভূত কঁচি কন্ঠ আমাকে বললো;
একটা ভেড়া এঁকে দেবে !
কী?
একটা ভেড়া এঁকে দাও না !
তরিতাহতের মত লাফ দিয়ে উঠলাম। হাত দিয়ে চোখ মুছে ভাল করে তাকালাম।
অদ্ভূত ক্ষীনকায় একটা লোক আমার দিকে খুব আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমার যতটুকু মনে পড়ে ছবিটা দেখতে অনেকটা এরকম; সত্যিকারের মানুষটি ছবির চেয়ে অনেক অনেক সুন্দর। আর আমি ভাল করে ছবি আঁকাও শিখতে পারিনি। মাত্র ছ'বছর বয়ষেই সবাই আমাকে ছবি আঁকতে বারন করেছে ! আমি শুধু অজগরের ভেতর আর বাইরের ছবিটা আঁকতে পারি। ছানাবরা চোখ নিয়ে ছোট-খাট লোকটির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ভূলে যেওনা আমি মানব বসতি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে সাহারা মরুভূমিতে ছিলাম। ক্ষীনকায় মানুষটিকে পথভ্রন্ত বলে মনে হলনা। এও ভাবতে পাড়লামনা যে, সে ক্লান্তি, ক্ষীধা, তৃষ্ণা বা ভয়ে ভূগছে। মোটকথা, মনুষ্যবিহীন মরুর গর্ভে হাড়িয়ে যাওয়া, দিশাহারা, কোন শিশু তাকে মনে হলনা। কোন রকমে মুখ দিয়ে যখন কথা বের হল, বল্লাম;
কিন্তু - তুমি এখানে কি করছ!
বিণীত ভাবে সে পূণরাবৃত্তি করল;
একটা ভেড়া এঁকে দাওনা।
যেন কোন বিষেশ গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার।
আগন্তকের উপস্থিতি এমন মোহাবিষ্ট করলো যে, সকল দ্বিধা ঘূচেগেল।
যত হাস্যকরই মনে হোক, জনমানবের কোলাহল থেকে লক্ষ্য যোজন দূরে, মরুর মৃত্যু উপত্যকায়, অবলিলায় থলে থেকে খাতা-কলম বের করলাম। কিন্তু তখনই মনে পড়ল; আমি তো ভূগোল, ইতিহাস, অর্থনীতি আর ভাষা ছাড়া কিছুই শিখিনি! তাই ক্ষীনকায় লোকটিকে বল্লাম: আমিতো আঁকতে পাড়িনা।
ওটা কোন ব্যাপারনা।
একটা ভেড়া এঁকে দাও।
সহজ জবাব তার।
ভেড়ার ছবি আঁকার অভিজ্ঞতা না থাকায়, যে দুটো ছবি আঁকতে পাড়তাম, তার একটা তাকে এঁকে দিলাম। হাতি গেলা অজগরটা। শুনে অবাক হলাম যখন ক্ষীনকায় লোকটি ছবিটা দেখে বলল:
বপরে বাপ! মস্তবড় একটা হাতি গিলে ফেলেছে! অজগর আমার চাইনা।
ইয়া বড় একটা অজগর খুবই ভয়ংকর। আর মস্ত একটা হাতি রাখার যায়গাও আমার বাড়িতে নেই। আমাকে একটা ভেড়া এঁকে দাও। কাজেই আমাকে আঁকতে হল। ক্ষীনকায় মানুষটি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখছিল।
সে বলল:
না, এটা খুব রোগা। আর একটা আঁক।
আমি আঁকলাম। আমার বন্ধুটি মুচকি হেসে বলল:
দেখতে পাচ্ছনা ? এটা কোন ভেড়া নয়। পাঠা এঁকেছ।
এটার শিং আছে।
আমি আবার আঁকলাম। কিন্তু এটাও আগের মতই প্রত্যাখ্যাত হল।
এটা খুব বুড়ো। আমি একটা বাচ্চা ভেড়া চাই, যেটা অনেক দিন বাঁচবে।
আমার ধৈর্য্য শেষ হল। আমার উড়োজাহাজটা মেরামতের সময় চলে যাচ্ছে। তাই এই বাকসটি এঁকে বললাম:
এই নাও। এর ভেতর তোমার ভেড়া আছে। আর্শ্চয্য! আমার শিশু সমালেআচকের মূখে তৃপ্তির হাসি।
আমি ঠিক এই রকম একটা ভেড়াই চেয়েছিলাম।
তোমার কি মনে হয়? ভেড়াটা অনেক ঘাষ খাবে?
কেন?
কারন আমার বাড়িতে সবকিছুই খুব ছোট ছোট।
কোন অসুবিধা হবেনা। আমি তোমাকে খুব ছোট্ট একটা ভেড়া দিয়েছি।
মুখটা ছবিটার উপড় এনে খুব ভাল করে দেখে বলল:
এত ছোট নায়।
কিন্তু দেখ..... ভেড়াটা ঘুমিয়ে পড়েছে।
এভাবেই খোকাবাবুর সঙ্গে আমার পরিচয়। চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।