আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুভি রিভিউ : দারুচিনি দ্বীপ

গভীর কিছু শেখার আছে ....

দারুচিনি দ্বীপ উপন্যাসটি পড়লে বোঝা যাবে তা থেকে আকর্ষণীয় একটি মুভি তৈরি করা কতোখানি কঠিন। কিছু তরুণ-তরুণী সেন্ট মার্টিনসে যেতে চাইছে ও নানাভাবে তাদের অনেকেই সে ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছে। আদৌ যেতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। এমন কাহিনীর মুভিতে আকর্ষণীয় তেমন কিছুই থাকার কথা নয়। কিন্তু দক্ষ পরিচালক তৌকীর ঠিকই সেই আকর্ষণটা আনতে পেরেছেন।

সেন্ট মার্টিনস বা দারুচিনি দ্বীপকে এসব তরুণ-তরুণীর কল্পনায় তুলে এনেছেন, এটাই মুভির মূল আকর্ষণ। দারুচিনি দ্বীপের কল্পনাকে ফোকাস করেই মুভিটি বানিয়েছেন তৌকীর। সবার চিন্তাতেই ছিল শুধু দারুচিনি দ্বীপ ও সাগর। এজন্যই তরুণ-তরুণীরা ছাড়াও আনুশকার বাবা, যিনি জাহাজের ক্যাপ্টেন। তার কল্পনাতেও দেখানো হয়েছে সাগরে কাটানো তার অসাধারণ মুহূর্তগুলোকে।

একটি সাধারণ কাহিনীর একটি উপন্যাসের দারুণ চলচ্চিত্র রূপদান করেছেন তৌকীর। উপন্যাসের অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো ছেটে ফেলেছেন তিনি। বাণিজ্যিক চিন্তা থেকে চমৎকার দৃশ্যায়নের একটি গান সংযোজন করেছেন। তৌকীরের সিকোয়েন্সের জ্ঞান খুবই ভালো। মুভির প্রতিটি দৃশ্যের ধারাবাহিকতা সঠিকভাবে রক্ষা করা হয়েছে।

কাহিনীর পুনর্বিন্যাস যেসব জায়গায় করা হয়েছে তা প্রয়োজনীয় ছিল এবং দক্ষতার সঙ্গেই তা সম্পন্ন হয়েছে। যেমন বইয়ে ছিল মোনা জামা কিনে দেয়ার কারণটা বল্টুকে চিঠিতে বলে। কিন্তু মুভিতে সেটা সে সামনাসামনিই বলে। তৌকীরের মাথায় ছিল মোনার চরিত্রে রূপদানকারী মুনমুন একজন লাক্স সুন্দরী। তাকে অভিনয়ের সুযোগ দিতে হবে।

পরিচালনায় এ রকম বুদ্ধিমত্তা মুভির আরো বহু জায়গায় দেখিয়েছেন তৌকীর। ফজলুর রহমান বাবুর চরিত্রটি নোংরামি নিখুতভাবে ফুটিয়ে তুলতে বইয়ের অতিরিক্ত বেশ কিছু জিনিস সংযোজন করেছেন তিনি। সম্পূর্ণ সেন্ট মার্টিনসে চিত্রায়িত যেখানে যাবো হারিয়ে গানটি ও এর দৃশ্যায়ন সম্পর্কে না বললেই নয়। চমৎকার সুর ও কম্পোজিশনের গান। দৃশ্যায়নও দারুণ।

এই তরুণ-তরুণীদের স্বতঃস্ফূর্ততা ভালোভাবে এসেছে গানটিতে। ড্রেসগুলো ছিল চমৎকার। পুরো মুভিতে সাগর ও দ্বীপের দৃশ্যায়নগুলো খুব ভালো হয়েছে। এসব দৃশ্যের সঙ্গে বিভিন্ন সময় যেসব ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে তা মন ভরিয়ে দেয়ার মতো। সামিনা চৌধুরীর গাওয়া রবীন্দ্র সঙ্গীতটি শুনতে খুব ভালো লেগেছে।

অধিকাংশ দৃশ্যায়ন ভালো হলেও ক্যামেরা ওয়ার্কেই মুভিটির ছোট একটি দুর্বলতা ধরা পড়েছে। বেশ কিছু দৃশ্যেই সব চরিত্রকে পুরোপুরি এক ফ্রেমে আনা যায়নি। বিশেষ করে গানটিতে যেসব দৃশ্যে সবাইকে দেখানো হয়েছে সে সময় দু-একজন চরিত্র মাঝে মধ্যেই ফ্রেমের বাইরে চলে গেছেন। এছাড়াও ক্যামেরার পজিশন অনেক দৃশ্যেই স্থির থাকেনি, ওঠানামা করেছে। বিশেষ করে মম রিয়াজকে ধরে স্টেশনে হাটার দৃশ্যটিতে এটি পরিষ্কার বোঝা গেছে।

মুভির শেষ দৃশ্যটা আরেকটু আকর্ষণীয় হতে পারতো। ট্রেন না দেখিয়ে শেষ দৃশ্যে দারুচিনি দ্বীপ দেখানো যেতো। এবার কলাকুশলীদের প্রসঙ্গ, প্রথমেই মুভির মূল আকর্ষণ তিন লাক্স সুন্দরীর কথা। তিনজনই আশাতীত ভালো অভিনয় করেছেন। প্রধান নারী চরিত্র মম খুব ভালো করেছেন।

দারুণ মানিয়ে গেছে তাকে চরিত্রটিতে। বিন্দুর অভিনয়ও দুর্দান্ত, তিনিও ছিলেন প্রায় নিখুত। খুব গ্ল্যামারাস লেগেছে তাকে। আর মুনমুনের অভিনয় তো এক কথায় অসাধারণ। তার স্বতঃস্ফূর্ত, সাবলীল অভিনয় দেখে মনেই হয়নি এটা তার প্রথম মুভি।

অন্যদের মাঝে রিয়াজ, মোশাররফ করিম, ইমন, বাবু, আবদুল্লাহ আল মামুন প্রত্যেককে যার যার চরিত্রে দারুণভাবে মানিয়ে গেছে। অর্থাৎ মুভিটির কাস্টিং ছিল দুর্দান্ত। তারা সবাই দারুণ অভিনয় করলেও আলাদাভাবে বলতে হবে বাবুর কথা। তিনি এমনই অভিনয় করেছেন যে দর্শক তাকে ঘৃণা না করে পারেনি। চরিত্রটির ডিমান্ডও ছিল সেটাই।

এছাড়া বাকি সব সিনিয়র আর্টিস্টের প্রত্যেকে যার যার নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। জয়যাত্রায় তৌকীর বুঝিয়েছিলেন সিরিয়াস মুভি নির্মাণে তার দক্ষতা। বাণিজ্যিক মুভি নির্মাণেও তার সমান দক্ষতার কথা জানালো দারুচিনি দ্বীপ। কৃতজ্ঞতা স্বীকার : নাবিল হোসেন দীপ ফটো ক্যাপশন : দারুচিনি দ্বীপ মুভির কয়েকটি দৃশ্য।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.