যখন যেমন
প্রথম যৌবনে প্রচণ্ড মন খারাপ হলে ঘরে যখন একদম ভালো লাগত না, কাজ করতেও না, তখন প্রায়ই প্রখর রোদে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এক পুরিয়া গাঁজা টেনে বড়ো রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকতাম। তারপর খুঁজতে থাকতাম নতুন গলি-ঘুপচি, যেদিকে কখনো যাইনি। এরকম দিনে 'প্রবেশ নিষেধ' বা 'প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত' জাতীয় কোনো সাইনবোর্ড চোখে পড়লে আর রক্ষে নেই, ওখানে আমি ঢুকতামই। এরকম কত সাইনবোর্ডের বক্তব্যকে যে আমি উলটে দিয়েছি তার সঠিক হিসেবনিকেশ নেই।
এরকমই একদিন চারপাশে উঁচু দেয়াল ঘেরা একটা বাড়ির পেছন গেট খোলা পেয়ে ঢুকে গিয়েছিলাম এক বড়োলোকের আঙিনায়, ওখানে যদিও কোনো নিষেধাজ্ঞাযুক্ত সাইনবোর্ড ছিল না, ছিল চাপচাপ অদেখা বিস্ময়।
গিয়ে দেখি হাজারো জাতের গাছ-গাছালি, পাখি, বিশাল বড়ো পুকুর, বাঁধানো ঘাট। জেলা শহরে এত বড়ো বাড়ি(!), এত বড়ো আঙিনা(!), এত সুখ(!) সহ্য হয়! যেখানে আমার মতো গরিবদের বসলে শোবার জায়গা হয় না, শুলে বসার! আমার রোখ চেপে যায়, কিন্তু করব কী, চোর-ডাকাত নই যে কিছু একটা মেরে ফুটব। কিছুই করতে না পেরে শেষে ছায়া সুনিবিড় একটা ঝোপ দেখে তার নিচে বসে ধোঁয়া ফুকতে ফুকতে সাত-পাঁচ ভাবছিলাম। এসময় ঘাটের দিকে তাকিয়ে রীতিমতো চমকে উঠি। দেখি স্নানদৃশ্য, এক বালিকার।
এত আরামে এমন উন্মুক্ত স্নানদৃশ্য আমি এর আগে বা পরে আর কখনো দেখি নি। জীবনে কখনো কবিতা লিখিনি, কিন্তু ওখানে বসে মনে মনে দুই লাইন কবিতামতোও রচনা করে ফেলেছিলাম, যে লাইন দুটি পরে ডায়রিতে লিখে রেখেছিলাম স্মৃতিটা ধরে রাখার জন্য। আমার মনের অবস্থা তখন কেমন হয়েছিল, এই দুই লাইন পড়লে সেটা বোঝা যাবে।
আগুন জ্বলে পুকুরঘাটে তাপ কেন গাছতলায়
সুখের দাহে যাচ্ছি মরে ক্লান্ত দুপুরবেলায়।
প্রথমবার মরার পরে আরো ২০ বছর ধরে বেঁচে আছি।
ওরকম মরণ আমার আর দ্বিতীয়বার হয় নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।