আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্রেনে আগুন ও মানুষ হত্যা নিয়েও বিতর্ক : আগুন যেন সারাদেশে ছড়িয়ে না পড়ে



দেশের রাজনীতিতে আবারও সঙ্কট সৃষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। নাটোরে উপজেলা চেয়ারম্যানের হত্যাকাণ্ড, কুমিল্লায় যুবদলের সম্মেলনে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া এবং সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে ট্রেনের ধাক্কায় মানুষের মৃত্যু ও ট্রেনে অগ্নিসংযোগের তিনটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রধান দুই দলের নেতা-নেত্রীরা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। তারা একে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। ট্রেন ট্র্যাজেডির কথাই ধরা যাক। উদ্বেগের কারণ হলো, সাত-সাতজন মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত মর্মান্তিক হলেও প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যে মনে হচ্ছে যেন পূর্বপরিকল্পনার ভিত্তিতে বিএনপির লোকজনই ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।

মৃত্যুর জন্যও ক্ষমতাসীনরা বিএনপিকেই দায়ী করেছেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লাশ ফেলে ‘ইস্যু’ সৃষ্টি করার জন্য বিরোধী দলের নেত্রী নিজেই নাকি ষড়যন্ত্র করেছিলেন। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার অভিযোগও যথেষ্ট গুরুত্ব অর্জন করেছে। তিনি বলেছেন, একটি বিশেষ এজেন্সিকে দিয়ে সরকারই হত্যা ও অগ্নিসংযোগের কাজ দুটি করিয়েছে। এমন চিন্তা থেকেই প্রথমে মানুষের ওপর দিয়ে ট্রেন চালিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে বিএনপির কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ট্রেনের ওপর হামলা চালায় এবং ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বাস্তবেও তেমনটিই ঘটেছে। আমরা মনে করি, সয়দাবাদের এত বড় ট্র্যাজেডিকে হালকাভাবে নেয়ার বা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণের অস্ত্র বানানোর সুযোগ থাকতে পারে না। এখানে কিছু বিষয়কে গভীরভাবে বিবেচনায় নেয়া দরকার। যেমন বিএনপি প্রথমে উল্লাপাড়ায় সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেখানে একই স্থানে একই সময়ে আওয়ামী লীগ হঠাত্ করে সমাবেশের ঘোষণা দেয়ায় বিএনপিকে স্থান পরিবর্তন করে সয়দাবাদে সমাবেশের আয়োজন করতে হয়েছে।

আওয়ামী লীগ পাল্টা সমাবেশ না করলে নিশ্চয়ই ঝুঁকিপূর্ণ একটি স্থানে বিএনপিকে সমাবেশ করতে হতো না। এটা একটি দিক। দ্বিতীয়ত, মঞ্চ বানানোসহ সমাবেশের প্রস্তুতি চলেছে কয়েকদিন আগে থেকে। বিএনপি জেলা প্রশাসনকেও লিখিতভাবে অবহিত করেছিল। সুতরাং এমন বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না যে, সরকার বা রেল কর্তৃপক্ষ সমাবেশ সম্পর্কে কিছুই জানত না।

কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল চালককে সতর্ক করে দেয়া। কিন্তু সেটা করা হয়নি। যিনি চালাচ্ছিলেন সেই সহকারী চালক রাজগোবিন্দ বলেছেন, তারা সমাবেশ সম্পর্কে জানতেন না। তৃতীয়ত, সংবাদপত্রে প্রকাশিত চিত্র এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রদর্শিত ভিডিও ফুটেজ দেখে কিন্তু মনে হয়নি যে, ট্রেনে আগুন দেয়ার ব্যাপারটি আকস্মিক বা তাত্ক্ষণিক। কারণ একসঙ্গে অনেক বগিতে একইভাবে আগুন জ্বলতে পারে না।

তথ্যাভিজ্ঞরা ধারণা করছেন, ট্রেনের বগিগুলোতে আগে থেকেই দাহ্য পদার্থ রেখে দেয়া হয়েছিল। বিষয়টি আমাদের ভারতের গোধরায় সংঘটিত ট্রেন ট্র্যাজেডি ও অগ্নিসংযোগে হাজারের বেশি মানুষ হত্যার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এটা বিএনপির পক্ষে সম্ভবও হওয়ার কথা নয়। সাতজন কর্মী-সমর্থকের মৃত্যুতে উত্তেজিত হয়ে হামলা তারা চালিয়ে থাকতেই পারে; কিন্তু তাই বলে এতগুলো বগিতে একই পরিমাণে আগুন জ্বলে উঠবে? এ ধরনের আরও অনেক প্রশ্নই উঠেছে। আমরা মনে করি, সত্য উদ্ঘাটনের সদিচ্ছা থাকলে বিষযটি তদন্ত কমিটির ওপর ছেড়ে দেয়া এবং নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা উচিত।

অন্যদিকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত অভিযোগসহ বক্তব্য রাখায় তদন্ত কাজ প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থা সমর্থন করা যায় না। কারণ, এভাবে অতীতে হত্যা-সন্ত্রাসের অনেক ঘটনাই আড়াল হয়ে গেছে। আমরা বেশি উদ্বিগ্ন আসলে প্রধানমন্ত্রী বর্ণিত ‘ইস্যু’র কারণে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ‘ইস্যু’ বানানোর ব্যাপারে কেউই কিন্তু পিছিয়ে থাকছেন না।

এর ফলে একদিকে অন্য অনেক ঘটনার মতো সয়দাবাদ ট্র্যাজেডিও চাপা পড়ে যেতে পারে; অন্যদিকে পার পেয়ে যাওয়া অপরাধীরা নতুন নতুন অপরাধ সংঘটনে উত্সাহিত হয়ে উঠতে পারে। প্রসঙ্গক্রমে কুমিল্লায় অস্ত্র মহড়ার কথাও উল্লেখ করা দরকার। সেখানে ছাত্রলীগের এক ক্যাডারের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেছে ছাত্রদলের একজন ক্যাডার। মনে হতে পারে, ছাত্রলীগ তথা ক্ষমতাসীনরা ছাত্রদলের ভেতরে সন্ত্রাসীদের হয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন, নয়তো তাদের যোগসাজশেই ছাত্রদলের একশ্রেণীর ক্যাডার অস্ত্রের মহড়া চালাচ্ছে। এটা অবশ্যই গভীর উদ্বেগের বিষয়।

কারণ, আওয়ামী লীগের বিকল্প দল হিসেবে যে বিএনপিকে চিন্তা করা হয়, সে বিএনপির লোকজনও যদি সত্যি সত্যি আওয়ামী লীগের মতোই সন্ত্রাসে ও অস্ত্রের মহড়ায় মেতে ওঠে, তাহলে জনগণ কাদের ওপর ভরসা করবে? এজন্যই শুধু প্রতিপক্ষের ওপর দোষ চাপানোর পরিবর্তে প্রধান দল দুটির নেতাদের যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এমন কিছু বলা উচিত নয়, যার ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে তিক্ততা বাড়বে, সংঘর্ষ ঘটবে এবং সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে। আমরা আশা করতে চাই, সময় থাকতে রাজনৈতিক নেতারা যথেষ্ট সংযমী হবেন। না হলে এমন আশঙ্কার কারণ শক্তিশালী হচ্ছে যে, তাদের হানাহানিতে সয়দাবাদের আগুন এক সময় সারাদেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.