বাবলু পরিবহন ছাড়ার সময় দেখা গেলো- ব্রেক ঠিকমতো কাজ করছে না। সব ঠিকঠাক করে রাত ১১ টার গাড়ী ছাড়লো- ১১.৩৮ মিনিটে। গন্তব্য ঠাকুরগাঁও। ২.০৭ মিনিটে কঠিন জ্যামে পড়লাম- অ্যালেংগাতে।
৩.৩৩ মিনিটে ফুড গার্ডেনে নামলাম আমরা, মোট ১৫ জন।
২/১ জন ছাড়া সবাই রাতের খাবার খেয়ে এসেছি। তবুও সবার জন্য রুটি আর সবজী দিতে বললাম। ১০ মিনিট পর বেয়ারা এসে বললো- সবজী নেই। বাধ্য হয়ে গরুর গোশতের কথা বললাম। গোশতের যা হাল !? ২ পিস গোশত আর ৪ পিস করে হাড্ডি।
হাড্ডি পাল্টাতে বললে-এর ফেরত দেয়া হাড্ডি ওকে, ওরটা একে- এভাবে কিছুসময় চললো। বিরক্ত হয়ে কোনো রকমে উঠে পড়লো সবাই। এদিকে গাড়ী ছেড়ে দিচ্ছে। ১২ পিস রুটি, ৩/৪ বাটি গোশত, ১০ টা চা আর ২ লিটারের ১ বোতল পানির দাম গুনতে হয়েছে মাত্র ৪৭৬ টাকা।
ফুড গার্ডেন থেকে ৪.০৩ মিনিটে গাড়ী ছাড়লো।
বাসে উঠেই শুরু হলো ফুড গার্ডেন এবং খাবারের আলোচনা, সমালোচনা। অবশেষে সবাই একমত হলো-
১.সিরাজগনজে বন্যার কারনে ঘাস নেই, ফলে গরুর শারীরিক অবস্থা ভালো না
২.হোটেলের নাম যেহেতু- ফুড গার্ডেন, সেহেতু খাবারের মধ্যে গার্ডেনের ময়লা আবর্জনা তো থাকবেই
৩.গোশতের সাথে দেয়া হাড্ডিগুলো- নিশ্চিত “চোষা হাড্ডি”, অন্য কারো খাওয়া...
৪.৪৫ মিনিটে শেরপুর পার হলাম। কী বিশ্রী রাস্তার অবস্থা ! ৬.৫৩ মিনিটে পার হলাম সৈয়দপুর। ৭.৪০ মিনিটে দিনাজপুরের দশমাইল যখন পার হচ্ছি- তখন সবার মধ্যেই অন্যরকোম এক অনুভূতি। এই সেই দশমাইল... ইয়াসমিন...পুলিশ কতৃক ধর্ষণ... পুলিশের গুলি... অনেকগুলো তাজাপ্রাণ...
শুক্রবার সকাল ৮.৩৫ মিনিটে ঠাকুরগাঁও পৌঁছলাম।
১০ টায় নাস্তা সেরে বড় একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য তেঁতুলিয়া। ঠাকুরগাঁও থেকে ৭৫ কিলো। তেতুলিয়ায় নেমে মিষ্টি সমুচা আর চা পান। ঝিরঝির বৃষ্টি।
পাশেই মহানন্দা নদী। এপারে বাংলাদেশ, ওপারে ভারত। নদী থেকে পাথর তোলা আর আখ চাষই এখানকার মানুষের প্রধান পেশা।
এবার বাংলাবান্ধা বন্দরের পথে। মাত্র ১৭ কিলো।
ঠাকুরগাঁও থেকে ৯২ কিলো, ঢাকা থেকে ৫৩২। ৫/৭ টি ট্রাক, ৬/৭ জন বিডিআর জওয়ান। জিরো পয়েন্টে ছবি তুলে ফের রওয়ানা। আসার পথে কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট ঘুরে আসলাম। দৈনিক আজকের কাগজের সম্পাদক কাজী শাহেদ আহমেদের চা বাগান।
এখানে ছোট ছোট কিছু বাংলো আর ডরমেটরি আছে। ঢাকা থেকে বুকিং দিয়ে গেলে আপনি থাকতে ফারবেন। এখানকার অতিথিদের জন্য দুটো নিয়ম আছে। ১. এটি ধূমপান মুক্ত এলাকা ২. এখানে আগত অতিথিদের জন্য নো মাছ, নো মাংশ। শুধুই সবজী।
আমরা ২০০৫ সালে ‘সূর্য উতসব’ করেছিলাম এখানে। বিকেল ৪ টা নাগাদ ফিরে আসলাম ঠাকুরগাঁও। এসে এক বিয়েতে (আমাদের এক বন্ধুর বন্ধু) খাবার দাবার সেরে আবার দে ছুট।
এবারের গন্তব্য- দিনাজপুরের কান্তজীউ’র (এটিই সঠিক বানান) মন্দির। যার স্থানীয় নাম কান্তনগর মন্দির।
এটি নির্মাণ করেন- দিনাজপুরের জমিদার মহারাজা প্রাণনাথ ও তাঁর পোষ্যপুত্র রামনাথ। সময় লেগেছে ৪৮ বছর (১৭০৪ থেকে ১৭৫২)। এটি ৩ তলা বিশিষ্ট, ৫০ ফুট বর্গাকৃতির। ইট দিয়ে বানানো। এ মন্দিরের সারা গায়ে অসাধারণ শিল্পকর্ম আছে।
যার মধ্যে উদ্ভিদ, প্রাণীকূল, জ্যামিতিক নকশা, রামায়ণ ও পৌরাণিক দৃশ্যাবলী এবং সে আমলের সামাজিক ও অবসর বিনোদনের দৃশ্যাবলী। ১৯৬০ সালে কান্তজীউ’র মন্দিরকে ততকালীন সরকার কতৃক সংরতি প্রাচীনকীর্তি হিসেবে ঘোষনা করা হয়। ১৭৫২ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত এটি ছিলো ৫ গম্বুজ বিশিষ্ট। বর্তমানে একটি গম্বুজও নেই। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে গম্বুজগুলো ভেংগে যায়।
কান্তজীউ’র মন্দির দেখতে দেখতে সূর্য ডুবে। আমাদের মাইক্রো ঠাকুরগাঁয়ের পথে ছুটে। রাত ৮.৩০ নাগাদ মূসা ইব্রাহীমের বাসায় পৌঁছে একটু ফ্রেশ হয়ে নেই সবাই। রাতের খাবার সেরে আবার দৌড়াই বাস স্টেশন। এবার বাবলু নয়, হানিফ এন্টারপ্রাইজ।
সবাই ভয়ানক কান্ত। বাস ছুটছে, ঢাকার পথে। আমার মনে হয়, ক- তো- দি- ন (আসলে মাত্র একদিন) আমার ছেলে আর তার মাকে দেখিনা...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।