এই বৃষ্টি ভেজা রাতে তুমি নেই বলে...সময় আমার কাটেনা....
এইচ এস সি পরীক্ষার আর মাত্র একমাস বাকি....মানে এইত কয়েকমাস আগের কথা । আমাদের ওখানে মোবাইল সিগারেট সবই ত নেওয়া নিষেধ । আমাদের এক ফ্রেন্ড সাব্বির তার ডার্লিং-সাথে কথা বলার জন্য মোবাইল নিয়া আসছে । ভাল কথা, আমরা ত খুব খুশী...সামনে পরীক্ষা । এইটা খুব কাজে লাগবে...।
ধরা খাইলে কিনতু খবর হয়ে যাবার কথা। তার কয়েকদিন পরে একটা ভয়াবহ কান্ড ঘটে গেল ।
আমাদের কলেজে ঢোকার সময় আমাদের সবার ব্যাগ চেক করে ঢুকায়..আমাদের কোন অবৈধ কোন কিছু কলেজে আনতে হলে আমরা অনেকগুলা একসাথে কলেজে ঢোকার একদম শেষ সময়ে হাজির হই ...তখনই আসলে সবাই ঢোকে....তাড়াহুড়ার মধ্যে দুয়েকটা ব্যাগ পাচার করে দেয়া খুব একটা কঠিন কাজ না ।
আমরা ৮ জন স্মোকার হাউজে । সামনে পরীক্ষা , এছাড়া আমাদের শেষ টার্ম এজন্য বিশাল পরিমাণ সিগারেট স্টক করে নেয়া হল ।
৮ প্যাকেট গোল্ডলীফ ব্যগে ঢুকিয়ে পাচার করা হল।
ভাল কথা পাচার করা শেষ। এই ৮ প্যাকেট দিয়ে আমাদের ২৫ দিন চালাতে হবে । ২৫ দিন পর আমাদের প্যারেন্টস ডে ( যেদিন প্যারেন্টরা আমাদের দেখতে আসেন ) , তখন কোনরকমে আনানো যাবে ।
কিসের ২৫ দিন !!১৪ দিনের মাথায় সব শেষ!!কি করা যায়!!তাড়াতাড়ি করে আনানোর ব্যাবসথা করা হল ( কিভাবে হল বলবনা , কোন ক্যাডেট কলেজের স্যারেরা এইটা পড়লে আমাদের বেচারা ছোট ভাইরা বিপদে পড়বে )।
যাই হোক সেইটাও শেষ । অসুবিধা নাই , প্যারেন্টসডে চলে আসছে..
তখন এস এস সি পরীক্ষার্থীরা বাসায় আছে । তাদেরই এক জনকে দায়িত্ব দেয়া হল । আমার ফ্রেন্ড হক মোবাইলে কল করে সব নির্দেশ দিয়ে দিল....। ২৪ প্যকেট আনতে হবে ।
টাকা কলেজে এন দেয়ার পরে দেয়া হবে । হেই ব্যাটার নাম সিফাত । আগেই বলে রাখি ....কত কিসিমের মানুষ আছে না যারা নিজেদের খুব বস মনে করে , অথচ আসলে তারা কিছুই না..এই ছেলেটা ওই ধরণের । কিন্তু কি করব আমাদের উপায় ছিল না।
পরের দিন শুক্রবার ।
আমাদের সবার প্যারেন্টস এসেছে । ওই ছেলে গাড়ি নিয়ে এসেছে । খুব ভাব!!!আরে বাবা,তুই তোর কাজ করে তারপর যা খুশী কর না ক্যান !! তা না,সে ড্যাং ড্যাং করে সারা কলেজ ঘুরে বেড়ায় , যারে দেখে তার সাথেই আলাপ করে....আমাদের যারা ব্যাগ চাক করে (স্টাফ)তাদের সাথে দাত কেলাইতেছে....। আমরা ওকে ডাকলাম ওকে ৬০০ টাকা দেয়া হল বললাম বাকিটুকু একটু পরে দিব। তুমি তাড়াতাড়ি নিয়া আস ।
সবকিছুর একটা নিয়ম আছে । এত বড় প্যাকেট নিয়া আসবে সে একটা ব্যাগ নিয়ে আসবে না!! তা না করে একটা গামছার মধ্যে প্যাচিয়ে নিয়ে সবার সামনে দিয়ে নিয়ে আসে । দেখেই মনে হচ্ছে ভিতরে বোমা!!!!যে কারোর সন্দেহ তো হবেই । হলও তাই । ওকে ধরে নিয়ে গেল ।
জিগ্গাসাবাদের মুখে পড়ে গড়গড় করে শালা সব বলে দিল। হক ভাইয়া নাকি গতকাল রাত দশটায় তার ডিজুস নাম্বার থেকে কল করেছে , মাকসুদ ভাইয়া (আমি)নাকি তাকে ৫০০ টাকার নোট দিয়েছে সে আবার ২০০ টাকা আমারে ফেরত দিছে....আরো অনেক কিছু ।
স্যার রা তো মহা খুশী!!এ যে কাচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেড়িয়ে পড়ল!! ধরল সিগারেট,বের হল মোবাইল!! মোবাইল সিগারেটের চেয়ে অনেক বড় কজ!
তারপরের ঘটনা তো ইতিহাস । সবার আগে হককে ডেকে বলল যাও বাবা মোবাইলটা নিয়া আস!ও তো অবাক ! ও যে এত গাধা সেইটাতো আমরা আগে বুঝিনাই । আরে বললেই তো হত আমরা সকালে এসে ওকে কল করেছি।
প্যারেন্টস ডের দিন আমাদের কাছে যে মোবাইল থাকে সে তো সবাই জানে । আমাদের সাথে আলোচনা করার পর আমরা ঠিক করলাম ধরা খেলে সবাই একসাথে খাব। দলবেধে সবাই গেলাম ....স্বীকার করলাম । আব্বা আম্মারে ডাকল । জরিমানা করল আরো অনেক কাহিনী.....তবে সবচেয়ে কঠিন পার্ট চিল বাবা মা কে ম্যানাজ করা ।
কী কস্ট করা যে তাদের বুঝিয়েছি যে আমি পরিস্থিতির স্বীকার, আমাকে ফাসানো হইছে, আমি কি কখনো সিগারেট খেতে পারি বল??ইত্যাদি ইত্যাদি
বাসায় এ কারণে এখনো বাতাস থমথম করে!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।