পাগলা ছেলের... আউলা ব্লগ... যা বুঝি তাই লিখি... মাথা কম ঘামাই
আমাদের ম্যাথ টিচার সেদিন তাঁর নিজের জীবনের এক কাহিনী বললেন। কাহিনী টা অনেকটা এরকম...
সালাম সাহেব(আমাদের স্যার)মেট্রিক দিয়েছিলেন ১৯৭৬ সালে। পরীক্ষার আগে টেস্টেউনি ৭ বিষয়ে ফেল করেন। তারপরেও স্যাররা দয়া করে নাকি তাকে ফরম ফিলাপের সুযোগ দিয়েছিলেন। যাই হোক অবশেষে সালাম সাহেব ফরম ফিলাপ করে পরীক্ষার আগের ৩ মাস পড়লেন এবং ১ম ডিভিসন পেয়ে ঐ স্কুল থেকে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করে বের হলেন।
রহস্যময় তাই না?... হা হা হা হা
তারপরে সালাম সাহেব কলেজে ভর্তি হলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন যে অংক রাখবেন না সাবজেক্ট হিসেবে। তাই নিজের মত করে বায়োলজী বই কিনলেন। কিন্তু যে কোন কারণেই হোক তিনি অংকের প্রথম ক্লাসে ছিলেন, যদিও উনার সাবজেক্ট অংক না। ক্লাসেরস্যার রীতিমত প্রথম প্রশ্নমালা দিয়ে শুরু করলেন। মাঝখানে সমস্যা করলো একটা স্ট্যান্ড করা মেয়ে, সে বলে উঠলো”স্যার এইগুলা সহজ অংক, হয়ে গেছে”।
তারপরে স্যারো আর এগুলেন না।
পরের দিন রীতিমত অংক ক্লাসেসালাম সাহেব ছিলেন এবং একই ঘটনা ঘটলো মেয়েটা আজকেও বললো “স্যার এইগুলা সহজ হয়ে গেছে। ” তৃতীয়দিন সেই ঘটনা যখন ঘটলো তখন সালাম সাহেবের মনে খুব লাগলেন। উনি ভাবলেন মেয়ে হয়ে যদি সে অংক নিয়ে এত ভালো করতে পারে তাহলে আমি কেন পারবনা? মোটামুটি জেদের বশেই সালাম সাহেব সিদ্ধান্ত বদলে ফেললেন। সেদিনই বায়োলজি বইটা ১৩ টাকাইয় বিক্রি করে ৩৬ টাকা দিয়ে অংক বইয়ের সেট কিনলেন।
আর শুরু করলেন দিন-রাত অংক করা। যে করেই হোক ঐ মেয়েকে তো ঠেকাতে হবে নাকি?
ঠিক ৫ দিন স্যার বলে উঠলেন ক্লাসে “স্যার এইগুলা সহজ অংক আমার শেষ”। সব ছেলে মেয়ে উনার দিকে অবাক দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারা ভাবতেও পারে নাই ঐ মেয়ের মত আরেক ঝামেলা ক্লাসে আর আছে।
সালাম সাহেব বেচারার মনে হয় কপাল খারাপ, সেদিনই ছাত্ররা প্রতিবাদ করলো স্যার এইভাবে হলে তো আমাদের অংক শিখা হবে না, তাহলে আমরা কি করব?
স্যার পরামর্শ দিলেন তোমরা সালামের কাছে অংক বুঝে নাও।
সবাই প্রথমে দ্বিধা-দ্বন্দে থাকলেও কিছুদিন পর, সালাম সাহেবের অসম্ভব ভালো পারদর্শীতার পরিচয় পেয়ে সবাই ছুটতে লাগলো উনার কাছে প্রাইভেট পড়তে। দলে দলে সবাই আসতে লাগলো। ঘটনা শহরময় ছড়িয়ে পড়লো। সালাম সাহেবের পুরা অবস্থা কাহিল নিজের পড়া পড়বেন নাকি স্টুডেন্ট পড়াবেন। ঘুম জিনিসটা উনি আস্তে আস্তে হারাতে লাগলেন প্রায়।
কষ্ট করলে কেষ্ট করলে কথা আছে না? ঠিকই সালাম সাহেবের নাম পুরা ময়মন্সিংহে ছড়িয়ে পড়লো। পরিশেষে খুব ভালো রেজাল্টের সাথে এইচ,এস,সি পাস করে বের হলেন চলে আসলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অনার্স- মাস্টার্স প্রথম শ্রেণীতে প্রথম গণিত বিভাগ থেকে।
আমি ধন্যাবাদ দিতে চাই সেই মেয়েটাকে যার জন্য আজ সালাম সাহেব ঝলমলে একটা ক্যারিয়ার গড়তে পারলেন। আসলেই ইচ্ছা আর মনের জোরের সাথে পরিশ্রমের সংযোগ ঘটাতে পারলে সবই সম্ভব জগতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।